মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

কবিতায় -- নব্বই দশক



                                                         নব্বই দশকের কবি 


শৌভিক দে সরকার 
পাঠক
ধরোএভাবেও থেকে যাবে তুমি
সৃজনযাত্রার  শেষদিকে অচেনা বাঘের ভূমিকায়
পদস্খলনের পর দুএকটি লুকানো জুতোর মত
ঐশ্বর্যব্যর্থকাম বুদবুদ
ধরোএভাবেই থেকে যাবে অতিক্রমণের পর
পৃষ্ঠার গোপন অবসরে দর্শকের মুখোমুখি
স্মৃতিনির্ভর রেলিঙের দিকে উড়ে যাওয়া ধুলোবালি
হাওয়ার বিরুদ্ধে জেগে ওঠা ঘাতকের মত
ব্যবহৃত ও প্রতিহিংসাপরায়ণ
পাঠ পদ্ধতি
পলিপ্যাকের যে নিভৃতিটি ধরে রেখেছে তোমার লেখনীর সুষমা
বায়বীয় আধার আর বস্তুর গুঢ় সংগঠনঐদিকে
একটি সটীক কালোর দিকে দৌড়ে যাচ্ছে আমার পাঠকজন্ম
বিন্দুর অগ্রাহ্য ঘ্রাণসহজ রক্তমোচন অমোঘ চামড়া আর চেনা সীসার দাগ
আঙুলের বিভঙ্গ পার হয়ে ঐদিকেই দৌড়ে যাচ্ছে
আমার বাতিকগ্রস্থ প্রাণ
একটি অর্থবহ পরিখা,উদ্ধারকারীর টর্চলাইট
শুধু হাড়মাস কালি হয়ে যাওয়া একটি শকুন
এইসব প্রবৃত্তিগুলি চিহ্নিত করে রাখছে গোপনে।




সুদীপ্ত  মাজি 

নিশি 

রাত্রির রঞ্জনটুকু মেখে নিয়ে ঘুমে যেতে গিয়ে 
দেখলে মলিন হয়ে আসা সেই নিভু নিভু দীপ 
তোমার ঘুমের পথে অনুবর্তী হতে চায় আজ 



কিন্তু তুমি চোখ মেললেমশারির ওপারে অনেক 
আহত অশেষ লোভইচ্ছাক্ষোভদুঃস্বপ্নঈর্ষাআর্তি আর 
শুষে নিতে চাওয়া গ্রীষ্মে তৃষ্ণাতুর হাঁ-মুখ সমাজ 



ধ্রুবতারাটির দিকে একা একা চেয়ে থেকে রাত্রিখানি ভোর করে দিলে!




প্রশান্ত দেবনাথ 

অন্ধকার জল ভেঙে 



মন মরে গেলে 

শরীর কাটামো হয়ে থাকে 
যেন শস্যখেতের কাকতাড়ুয়া... 
তার যাপনের ভেতর 
সারাক্ষণ হলুদ পাতা ওড়ে


কখনও মনের জন্য 
এই শরীর উন্মাদ হয়ে ওঠে 
অন্ধকার জল ভেঙে ছুটে যায় 
সেই ডুবুরির মতো...





সুবীর সরকার 
সাঁতার
আমার পৃথিবী জুড়ে আমকাঠের বেহালা।
ভাঙা আয়নার এই দেশে পেতে রাখা খড়ের
                                                       
বালিশ
দুপুরগুলিকে ভাঁজ করতে শিখে গেছি
তুমি সেতার বাজাও ,আমি সাঁতার
                                                   
কাটি
আমার দিনদুনিয়ায় পেঁয়াজ রঙের কত
                                                      
ঘরবাড়ি
ছবি থেকে ছায়া সরে এলে
গিনিপিগের হাড় ও পিশাচের দাঁত মূলত
                                  
আলোচ্য হয়ে ওঠে
আলপথের হাওয়ায় গান মিশে যায়
কথারা ফিরে আসে
ব্যাঙের ডাক ফিরে আসে
আমি আবার গাছে গাছে ঝোলাতে থাকি
                                         
হাসিমুখের ছবি

সৈয়দ ওয়ালী 

অবোধ্য সংকেত

বরং প্রতিবাদ না করাই
লাশ হয়ে বাঁচা (?)
যদিও বাঁচা প্রশ্নে রয়েছে
অযুত দোলক পথহরিৎ জিজ্ঞাসা...

এই কুৎসিত কৃমি-কালে
ভোগবাদ কীর্তনে মাতে ভ্রষ্ট গাঁটের

প্রতিবাদী লাশ হলে
এই নিঃস্পৃহ নিষ্ক্রিয় মহান সমাজে (?)
চাটুবাদ ওকালতি করে
নষ্ট চাবুকমৃত রাষ্ট্রের বরং সংকটে,

মূক থাকাই
আত্মঘাত
মূকাভিনয়অবোধ্য সংকেত!



ধনঞ্জয় ঘোষাল 

ভুলে যাবে?    


কেন তোমায় মনে পড়ে বারবার?
কেন তোমায় বহন করে নিয়ে যাচ্ছে মনকেমনের দ্যুতি?
হাটে-বাজারে, ঘুমে ও জেগে থাকায় কেন ঘটনাক্রমে
মনে পড়ে যায় তোমার কথা, তোমার উত্তেজনা, তোমার মনখারাপ,
তোমার রাগ ঘৃণা ক্রোধ ও ব্যথা?

কেন ভালবাসে দূরে চলে গেলে পুরুষ বেওয়ারিশ নৌকার মতো
ভেসে যায়? নারী হয়ে ওঠে পাথরের মতো নরম?
কেন ভালোবাসা ভেঙে গেলে বীচের নির্জনতায় সমস্ত হলুদ
মাথা নীচু করে লুকিয়ে নেয় ওড়না?
কিছু কিছু গাছ কেন তবে পাতা খসিয়ে স্মরণ করিয়ে দেয় তোমার জন্মদিন?
এই যে আমি নবদ্বীপ বোলপুর জলপাইগুড়ি করে বেড়াচ্ছি
এই যে আমি কোনো কোনো অচেনা রিংটোন শুনলেই
তোমার কথা ভেসে আসবে বলে সর্তক ভাবে হ্যালো বলছি-
সে কি ভ্রম, সে কি উল্কার খসে যাওয়া আকস্মিক প্রয়াণের
দমবন্ধ দুঃখকে মুঠোয় নিয়ে সুখে থাকার হেঁয়ালি?

ভীষণ মনে পড়ছে তোমায়, ভীষণ মনে পড়ে তোমাকে-
এখন বুঝেছি অভিমান মাপতে গেলে স্মৃতির তটরেখায় কেন হাওয়াকল
একা ঘুরে যায় আমারই মতো-
কেন সমস্ত টোটোকে নিঃসঙ্গ ডাকটিকিট মনে হয় চলে যাওয়ার সী-অফে?
কেন পিওনের ইউনিফর্ম নিয়ে মেঘের ম্যান্ডোলিন বাজায় স্ট্রীট সিঙ্গাররা?
এত জমে থাকা চিঠি, এত মনে রাখা ছিল তোমাকে?
এত ভালবেসেছিলাম তোমাকে? এত আদর, এত উতকন্ঠা আলো লুকিয়ে ছিল
আমার ব্রাউন ওয়ালের কফিসপে?
এখন মরা রোদের খাটিয়ায় শুয়ে আছে আমারই মতো কেউ
নিঝুম ও নিস্তব্ধ হয়ে এলে একে একে নেমে আসে তোমার মুখে
লেগে থাকা পুরোনো পার্কের বেঞ্চিতে ঝুলে থাকা দুপুর,
এই দ্যাখো পাঁচমাথায় ট্যাক্সির ভিতর মনে পড়ে গেল তোমাকে
জাস্ট-বেকড-এ কফির পেয়ালায় তোমার মেরুন লিপস্টিক লেগে আছে আজও
আজও বোলপুর পারমাদান পিংলায় তোমার র্যাপারে আটকে রয়েছে ডেড-সীর নুন।

এত মনে পড়ে বলে এখন আমি সম্পূর্ণ তোমার
যোগাযোগ উঠে গেল বলে তুমিও গোটাটা আমার-
ছেড়ে যাওয়া আসলে সম্পুর্ণ কাছে পাবার একটি হাইফেন,


তাই তোমায় এত মনে পড়ে বারবার?

 অজিত অধিকারী     
   
 এ সব তোমারি দান
 

শিকিয়াঝোরার  বুকে ভেসে যায় রঙিন বোতল এঁটো পাতা
শহুরে মানুষের ক্লান্তি শুষে নেয় পাথর
রমনীরা নেমে আসে পাহারের  বুকে
সূর্যের  আলো এসে পড়ে এই সেই ম্যাজিক দুনিয়া
মানুষের দুঃখ জলে ডোবে ডোবে না
সাহেব উপন্যাস বুনে যান আমি কবিতা আঁকি
জীবন মেতে ওঠে   মানুষের কোলাহল থেকে বহুদৃরে
প্রিয় পৃথিবীর বুকে
জল ও পাথরের দেশে  নেচে নেচে ঘরে যায় আনন্দ বিকেল

কবিতায়-- নব্বই দশক











কবিতায় -- শূন্য দশক


                            শূন্য দশকের কবি





বাবলি সূত্রধর সাহা 

ইথার তরঙ্গ



       এই বর্ষাতেই জলজ সম্পর্কের যাপন ,
অসম্পূর্নতার মাঝেই দুরন্ত স্মৃতির অবগাহন;
সময়টা বড্ড উত্তাল....
একরাশ যন্ত্রনার লিরিক   !
এখন বৃষ্টিভেজা মানেই অবিন্যস্ত মনের বোঝাপড়া,
 এত মেঘলা তার মাঝেই বিপর্যস্ত স্যালাইনের কাটাছেঁড়া !
ইথার তরঙ্গ বয়ে আনে 
সাঙ্কেতিক শব্দগুচ্ছ .....!!


মানিক সাহা 


গোধুলি

কেমন মুখ ভার করে সূর্য ডুবে যাচ্ছে। 
চাঁদের ক্ষয়াটে চোখে মলিনতা লেগে আছে 
অদ্ভুতভাবে। এখনি পাখিরা হয়তো ম্লান মুখে 
ফিরে যাবে ঘরে। ফুল-ধরা জবাগাছে জল দেবে গৃহস্থ পুরুষ। 
তার ভেজা হাত থেকে কিছুটা প্রশান্তি নেওয়া যাক।
আরো একটু পরেগ্রামীন হাটের বুকে জ্বলে উঠবে কেরোসিন আলো। 
তার ধোঁয়া বেয়ে অজস্র গানলোককথানবান্নের মুগ্ধ পায়েস - 
উড়ে যাবে অনন্ত দ্রাঘিমায়পূর্বপুরুষের ঘরে। 

আমি নিরবে পূর্বজদের পাপঅপচয়খ্যাতি ও বিপন্নতা বহন করে চলেছি। 
এখনও মধ্যরাতে ডানা ঝাঁপটানোর শব্দ হলেতাদের বেসুরো কীর্তন শুনতে পাই। 
দেখতে পাই তারা অসম্পূর্ণ হিসেব মেলাতে চেষ্টা করছে আর খালি পা'য় হেঁটে যাচ্ছে 
ফেলে আসা উঠোনের দিকে। ধোঁয়াটে কুয়াশা মেখে আমি আঙুলের ছাপ খুঁজতে বেরিয়েছি।

যে কখনো ঠিকঠাক গোধুলি দেখেনিসে জানে না,  
মানুষের মৃত্যু হলে তার ছায়া আলো- আঁধারের মাঝে সুক্ষ্ম এক জাল বুনে রাখে।



মনোজ পাইন

সোফিয়া জানে না
     
হাত বাড়ালেই বন্ধু হয় না। সময় বদলে
দেয় তত্ত্বকথাঅনুভব। সেদিন একটা

হনুমানের দিকে হাত বাড়াতেই দাঁত 
খিঁচিয়ে তেড়ে এল!  অযাচিত হাতের   

আহ্বানে বিব্রত সবাই। হাতে হাতে 
শালগ্রাম শিলা মন্ত্রপাঠেও ঘর ছেড়ে

কত যে মানুষকে দেখছি পথে,তার 
খবর লেখার কাগজ কই?অনেকেরই

হাতে হাত বড় প্রিয়।ছোটবেলায় চু কিত্
 কিত্ খেলায়  যার কাছে পরিমাণের চেয়ে

বেশী হেরেছি সেই সোফিয়া সেদিন  কুয়াশা 
ছড়ানো পাহাড়ে পুরানো এক বন্ধুকে তাড়িয়ে

দিয়ে  বলল -এবার বন্ধু বাছতে চুজি হবে সে!
সোফিয়া আরো বলল-পরিচিত নাকি অনেকেই

হয়,সব পরিচিতই বন্ধু হয় না। সোফিয়া যা জানে
না তা হল-সব বন্ধু কখনো প্রকৃত বন্ধু হয় না। 


পৌলোমী সরকার

ষোলকলা 

আত্মশুদ্ধিতে আত্মতৃপ্তি নেই যে নারীর
আসলে পায়ের ছাপ মুছতে মুছতে বেলা 
গড়িয়ে গোটা জীবন থেকে তুলে নেয় 
মেয়েবেলা। ঠাকুর ঘরের ভেতর যেমন 
আলাদা থাকে বাতাসা ও নকুলদানা  
প্রসাদ হবার অপেক্ষায়। নারীর লক্ষ্মীরূপ
উন্মুখ থাকে কোন এক 
তথাগতর আস্তানায়


সত্যম ভট্টাচার্য

মাটির গন্ধ



অথবা আর একদিন 

রাতভর প্রচণ্ড গরমের পর 
ভোরে যখন বৃষ্টি নামল ঝমঝমিয়ে 
জানালার পাশে বসে গন্ধ পাচ্ছি সোঁদা মাটির


বাবার কথা  মনে পড়ে গেলো
বহুদিন আগে 
যখন উঠোন ছিলো 
বাড়ি ছিলো একটা আমাদের
শক্ত জমি ছিল পায়ের নীচে


আর তাতে প্রথম বৃষ্টির গন্ধ 
বাবাই চিনিয়েছিলেন



সুব্রত সাহা 

কোয়ানু
কোয়া হাতে নেমে আসছে রোদেলা
শামুকতলা তুরতুরি
মিশে যাবে শিপ্রার বাঘবনে
মেদুরতা মাখা বিকেল ঠেলে
গল্প বুনতে  থাকবে
                       
আমাদের কবিতারা...

বাউল শব্দ উড়ে যাবে
নীল চোখ সবুজ আলো মেখে
ভুটানের কোয়ানুরা কমলাময়
                 
হয়ে উঠবে নরমে
                                   
পেখমে পেখমে

ঘুমকাতুরে ছেলেটার গা বেয়ে
                                     
গড়াবে রস...
বোতাম খুলে উড়ে যাবে
                               
পরজাপতি...
                                   
ডানায় নতুনের গন্ধ...

আমাদের আমিরা মাখামাখি হবে
কোয়া কোয়া কোয়া রঙে
আসমান আসমান হয়ে উঠবে...


শুভঙ্কর পাল  

স্পটলাইট সিরিজের একটি  

এরপর নিভে আসে রোদ 
কোন এক তুষার যুগের 
মেঘেদের মিথ 
ট্রাপিজ ট্রাপিজ খেলা 
খোয়াই এর মাটি ছড়িয়ে পড়ছে তুষার চাদর

দ্রুত হেঁটে যায় ভিনদেশী নাবিক 
বিকিকিনি শেষে 
মৃত্যুকণার জুড়ে থাকা 
ফসফরাসের মতো সাদা পাতা জুড়ে


এবার ঈশ্বরে দোষ 
হারাবার দিনে 
তুষারে ঢেকে যাবে চোখ মুখ 
মুখবন্ধের এখানেই উপসংহার......


সোমনাথ বেনিয়া

পাখিসংহিতা 

উড়ন্ত কোন শর্তে পাখি অগ্রাহ‍্য করে ভূমিকে
ছায়া বাতাসে আত্মগৌরব রেখে নিভে যায়
প্রখর দৃষ্টিতে বুঝে নেয় -
                            
এই চরাচর কান্নার শিল্প
কুণ্ডলিত বিষাদ পালকের ওমে ধ্বংস ...
মুখ উঁচিয়ে দেখি,
                  
এগিয়ে আসে প্রতিবেশী ছাদ
প্রতিটি ঘরের পাপোশের তলার অন্ধকার -
                                     
এক‌ই পঙ্‌ক্তির অক্ষর
ধুলো বাতাসে উড়লে পাখি বোঝে সংসার তত্ত্ব
তখন গা ঝাড়া দিয়ে নিজেকে বেআব্রু
              
ঠোঁট নাড়িয়ে সহজ অসম্মতি
                      
পায়ের নখে নিষিদ্ধসমগ্র
গাছের ডালে বসবাসপ্রজননঅস্তিত্বরেখাচিহ্ন
মনে হলে একবার অন্তত,
              
আমার হৃদয়কে নীড় ভাবতে পারো .



সূরজ দাশ

অন্ধকার লিখতে পারিনি বলে
অন্ধকার লিখতে পারিনি বলে
দরজার আড়াল থেকে উঁকি দিল বিস্ময়

এসো সময়, সুসময়
জড়িয়ে ধর দুটো হাত

পরবাসী বিহ্বলতা বুকের ভেতর
তোলে উথালপাতাল ঢেউ

কেন বেদনা, কি কথা আছে আর তোমার সাথে
জন্ম জন্ম দূরত্ব মুছে দিক সব ইশারা

ক্রমশ ঘোরালো হোক
অসংখ্য বজ্রবিদ্যুতের এই আকাশ

চোখের ভোরে ঝুলে থাকা ঘুম
আমাকে আড়াল দিক

অন্ধকার লিখতে পারিনি বলে
দরজার ওপার থেকে জোরদার
হাততালি দিচ্ছে শ্রাবণ আকাশ






উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...