শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

 

উৎসব সংখ্যা -২০২৩
প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী
সম্পাদক- শৌভিক বণিক




উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎসবের দিনগুলো বড়ই ফ্যাকাসে লাগে।  চারিদিকে এত ডামাডোল, গেল গেল রব। কিন্তু সৃষ্টি তো আটকে থাকে না গণ্ডির ভেতর আর সাহিত্য তো সমাজেরই দর্পণ।  আসুন সকলে মিলে উৎসব উদযাপন করি লেখায় পড়ায় কবিতা গল্প গানে ভ্রমণে....
সকলকে আগাম শুভেচ্ছা। ভালো কাটুক আনন্দে কাটুক উৎবের দিনগুলো...
      

 সম্পাদক 



গুচ্ছ কবিতা - মোস্তফা মঈন





 স্বপ্নফল

 

যেদিন জেনে গেছি একটা স্বপ্নেরই পিণ্ডিফল এই আমি

সবুজ পাতায় মোড়া, ঝুলে রয়েছি গাছের শাখায়, বাতাসে দোলছি গাঢ় লাল

পাখিরা পাকা ফলে ঠোঁট গলাচ্ছে

ঠোকরে ঠোকরে খাচ্ছে আমারই হৃৎপিণ্ড ফল

 

আমি সেদিনই জেনেছি

পাখিজন্মে যারা নেচে উঠেছিল, আমারই মাতৃজঠরে 

আমি তাদেরই ঠোঁটে জীবনরস চুইয়ে পড়েছি  অনন্তের ফোঁটা  

 

জীবন-বৃক্ষ থেকে কারো স্বপ্নফল গলে গলে

এই আমি, আমারই জন্ম করেছি সার্থক তাঁর চাওয়া

তাঁর তৃপ্ত অহং গলে গলে পাখিদের ঠোঁটে  

 

সাকার


জন্মসূত্রে এই দেহঘরে, আমি আমার সাকার পেয়ে ছিলাম

এই ঘরে ঠাঁই-ঠিকানা হয়ে ছিল আমার

যখন সেই পরম সত্তার

প্রদীপ্ত আলো থেকে সহসা ভ্রমণে বেরিয়ে এসে ছিলাম

আমি

 

ইতোমধ্যেই, আমি জেনে গেছি পৃথিবীর আলো-ঝলমল

এই মনোমুগ্ধকর বাড়িতে আমার আর বেশিদিন থাকা

চলবে না

 

রহস্যঘেরা এই গ্রহের বাসিন্দাদের প্রতিটি মুখে আমি তাকিয়ে দেখেছি

কারো দেহকোঠাতেই আমার দ্বিতীয় কোনো

ঠিকানা নেই

 

কাঠখড় 


কাঠগুলো পোড়াচ্ছি আমার দেহের খড়কাঠ  

আমার সাথে যতরকমের

জৈবিক সম্পর্ক-সংযোগ

পায়ের গোড়ালি থেকে পিঠের শিরদাঁড়া বেয়ে

আমার মাথার খুলিনিজের ভেতর আগুন জ্বালাতে জ্বালাতে

যতটুকু জ্বলতে জানে

 

এই জঙ্গলটাতে যখন

আগুন আর ছাই নির্ভর বাতাস

আমি পোড়াচ্ছি , উড়াচ্ছি নিজের জিভ, কণ্ঠনালি, শ্বাসতন্ত্র 

আমার মাথার চাঁদি

আমার জন্মগত উদ্যোগ

উত্তরেদক্ষিণেসামনেপেছনে— 

হেঁটে যাচ্ছি

আমি ছাই-ছাই বাতাস



গুচ্ছ কবিতা - শশাঙ্ক শেখর পাল





তথাকথিত অকথা


কবিতা বাড়ির জলসাঘরে ক্যাসিনো গোধূলি 

গাবগাছ পার করে সিঁড়ি

জুতো বদলাতে বদলাতে চোখে পড়ে জোনাকি

ভ্যানিটি থেকে দামি মোবাইল তালুতে জ্যান্ত ক‌ই

                          মাইরি ভেবেছিলাম দেশি 

                          আসলে জাপানি টুনি 


এসব খুব চল

যা চাক্ষুষ তাতেও হাজার মুখোশ

ভুতের বেগেও ডজন ডজন সর্ষে খেত

আস্ত মলের ওয়াল মাখামাখি ভারতবর্ষ 

তখন ভূত ভবিষ্যত অক্ষর নতুন গান্ধী নোটে বিক্রি

ময়ূরপুচ্ছ পরা বায়স অদ্ভুত ম্যাজিসিয়ান


জলের ট্যাঙ্কে বসে থাকা কাক 

ম্যগাজিনে পাতা ভর্তি কবিতা

শেলফে সাজানো ব‌ই সব নাটু-নাটু



ছানাপাখির রোজনামচা


খুব কাছাকাছি আছি শূন্য ব্যবধান 

সময়ে ধরছে দিনান্ত রঙের পেখম

সবুজ লুটোপুটির পর বাসন্তী ফুলের খামার 

সে সব পাতাবাহারী ঠেক ভেঙে

                       আমরা এক ফুল এক মালী

বহুদিন জল হয়ে মিশে আছি সাগরে


আকার বা নিরাকার

নির্দিষ্ট কোনো না কোনোভাবে আঁকতে চাইলে

মেরুদণ্ড গুঁড়িয়ে জল বর্ণ গন্ধহীন 

বাউল ভ্রমণ সার করেছি লেখালিখি ছলাকলায়

ব্যঞ্জনবর্ণে চাপা পড়া স্বরবর্ণ ছানাপাখির হাঁ ঠোঁট 

নেই ওড়াউড়ি খুঁটে খাওয়া


মেঘে মেঘে বিষণ্ন আড়ালে হাঁকে চাঁদের আলো

দ্রাক্ষাগাছে টুনি অক্ষর সোচ্চারে দোলে পিকনিক

মধ্যরাতে কবি আরও কবিতা-মাতাল 

এসেছি চলে যাবো বাঁকে পাকে ডাকে কৃষ্ণ বলয়

ছাই মাখা কলিজায় নিরুদ্দেশ তখন

কাঁচা মাটির ছাঁচে শব্দ‌ওয়ালা পিঁপড়ের সারি...


হাঁটে গোলকধাঁধা মাঠ পেরিয়ে আকাদেমি ভবন



স্বদেশ


স্বাধীনতার উৎসব পেরিয়ে প্রিয় স্বদেশবাসী

এসো আমরা গড়ে তুলি কথোপকথনের

                                                    লংরুট


গর্ভবতী জ্যোৎস্নার কাছে বলি

একটা কবিতা সন্তান দিও

                               তার আধো কথকতা

দামাল শিশুর চিহ্ন

ঘর মেঝে উঠোন ছাপিয়ে দেশ

আবার নতুন বর্ণে স্বপ্ন ও স্বদেশ


স্বাধীনতাকে প্রশ্ন নয়

তবু তার বাইরে চাওয়ার কিছু থাকে 

কালো স্রোত ও পাঁক আকির্ণ ভূমি আমার না

দাও বাসযোগ্য বিনির্মাণ

ধর্নামঞ্চশূন্য তারুণ্যের জয়গান 


বাংলার চাঁদমুখে মুখ রেখে চতুর্থ চন্দ্রযান



স্বাধীনতা


বাংলার চাঁদে জ্যোৎস্না ভেজানো স্বাধীনতা

বিপ্লবী শব্দ বিকল্পে

ক্ষুদিরাম মাঠে-ময়দানে রোমান্টিক পিকনিক

আপাতত এইটুকুই আমার অধিকার


ভারতবর্ষ কী অনেক দূর

লালকেল্লা

কদম কদম বাড়চ্ছে দরিদ্র সীমারেখা

যমদূয়ারে ন্যাড়া বেঁধে জিন্স কালচার

লড়াইয়ের গল্প ভুলে রং রুটে 

ফিরে যায় পনের‌ই আগষ্ট


তুমি ভেঁপু বাজাও

পায়রা ওড়ে সাতমহলা জুড়ে

অন্ধ-মেঘে ঘন হয় শকুনের পালক

বংশকৌলীন্যের গলিপথ কুয়ো পারে হাড়হীম 

নিম্নবর্ণ অভাগার ‌ক্ষতবিক্ষত লাশ

বিস্তির্ণ হোর্ডিং গিলে ফেলে অন্দরমহল

টিভি ও একঘন্টা কিচিরমিচির মোহে ডিজিটাল প্রিজম

পিছিলাবর্গ জাতীয় পতাকা হাতে শিশু মোনালিসা 

ছুট আর ছুট মাঠঘাট টিভি ও ছায়ায় ভার্চুয়াল 


ক্ষণ জন্মা প্রতিশ্রুতির গল্পে মায়াপিঠ 



দ্রৌপদীরা 


শহর বলো বা গাঁ-গঞ্জ আমার হাহা উপবাস

এদেশ একাল জুড়ে 

বেদনার চুপকথা মুঠো খুলে দাও ভ্রমর

সমস্বরে শুরু হোক মুক্ত কথোপকথন 

বর্ণমূল সু‍ঁইসুতোয় চেপে ফোটাক প্রতিবাদী অক্ষর 

সে দুপুরে তিস্তার কিং সাহেব ঘাটে পাছড়িয়ে 

                                 মজদুর আমাদের চড়ুইভাতি  

                                 

ধূধূ চরে চিত-কাক্ষে চোখের আয়নায় লাটাইয়ে বাঁধা মেঘ

মুঠো মুঠো বালি বাতাসে ছুঁড়ে দেয়

সেসব কবিতার তূণ বা বিমূর্ত ভাস্কর্য যাই হোক 

জানে কলের শ্রমিক চাষাভূষা ফিরে পাওয়া মুদ্রিত শব্দব্রহ্ম


মহা সমুদ্রের অক্টোপাস

টাইবাঁধা আন্তর্দেশীয় সবাই সূত্রধার 

মন্ত্রী আমলার গামলার মতো ভুঁড়ি 

চেটে চেটে খায় আমাদের স্বাধীনতা 


ছাপোষা মানুষ শিখে নেয় স্বপ্নের লক্ষ্যভেদ

পেঁজা তুলোর জোছনায় শত শত ক্ষেপণাস্ত্র

দ্রৌপদীরা নেমে আসে 

মণিপুর 

সারা ভারতবর্ষ থেকে আসুরদলনী মা ও মেয়ে 

তোমরাই লিখে দাও আক্ষরিক স্বাধীনতা 



একটি কবিতার জন্য


চড়কাবুড়ি 

পেঁজা তুলোর জোঁছনায় দাও শত শত ক্ষেপণাস্ত্র

কবিতার শব্দবন্ধে সসস্ত্র চেতনা

হলুদ পাতার বয়সকালে‌ও সে স্বপ্ন মেটেনি এখনো

বাংলার চাঁদ অন্ধকার দুপুরে গড়িয়ে দাও একটি কবিতা...


অক্ষর সুঁই সুতো বেঁধে সে এক ধুন্দমার শব্দবন্ধ


                              



গুচ্ছ কবিতা - মাসুদুল হক

  


আপেল যন্ত্রণা

 

আমার মনে দমকা বাতাস বইছে

 

অথচ পাথর আমার নিঃশ্বাস

 

বাঘিনীর চুল আর চোখের মধ্যে

মায়া

 

বাঘিনী,যতবার তুমি কামড় দাও;

ততবার তুমি আমার হৃদয় কামড়ে নাও

 

আমি পুড়তে থাকি আপেল যন্ত্রণায়!

 

 

এক চোখা হরিণ

 

বাঘিনী হৃদয় চেয়েছে শরীরী সুঘ্রাণে

বেপরোয়া চুম্বন, ছন্নছাড়া মনে

চায়নি আমাকে

মধ্যরাতের নরম ঘাসের ময়দানে

 

তবু আমি হৃদয়হীন ছায়ার পিছে

ছুটতে ছুটতে মিছে

দাঁড়িয়েছি এসে পুলসেরাতের পুলে

 

ভালবাসার অপরাধে

বাঘিনী চাইলেই পারে নিচে

দোজগের আগুনে ফেলে দিতে

 

ইচ্ছে করলেই পারে বাঁচিয়ে নিতে

পৌঁছে দিতে বেহেস্তি বাগানে

 

আমি বুঝি ভালোবাসার কৃতদাস

সেই এক চোখা হরিণ!

 

বাঘিনী ক্ষয়া চাঁদ

 

বাঘিনী ক্রমশ ছড়িয়ে দিচ্ছে হাড়-কঙ্কাল;

নিজেকে

           ভাঙ্গতে

                      ভাঙ্গতে

                                  নির্জনে

ঘুম গর্জনে প্রকম্পিত হাসপাতাল

 

আইসিইউ-                     বিছানায়

                     শুয়ে    শুয়ে 

 রক্তকনিকার প্রতিটি ফোটায়

দেখে নিচ্ছে দেহের সমুদ্রে ক্ষয়া চাঁদ

 

জ্বরের চিতা

 

জ্বরের চিতায়

শরীরে অক্সিজেন পুড়িয়ে

নার্সের  আঙুলে

 প্রিয় মাছ ইলিশের গন্ধে

বাঘিনী স্বপ্ন দেখে--

সে চলে গেছে সুন্দরবনে

 

 

কয়েদী হৃদয়

 

নিজের গায়ের গন্ধে বাঘিনী উতলা 

 

খুনের বদলে ক্ষমা প্রার্থনা করে

বাঘিনীর শরীরে জাগে কস্তুরী ঘ্রাণ

 

পরকীয়া-প্রবণ পৃথিবীতে অযাচিত

 প্রেমের আগুন

 

জ্বরের বেহুশতায় শায়িত

ডোরাকাটা দাগ--তুলে আনে

নিঃসঙ্গ জীবনের কয়েদী হৃদয়

 

 

মৃত বাঘিনী

 

কবরস্থানে একটা দরোজা কাটা হয়েছে

 

যতক্ষণ না এটি বন্ধ হয়ে যায়-- উপরের দিকে

তাকিয়ে থাকা আকাশের নিচে

সোনার মোহরের মতো শুয়ে থাকে বাঘিনী

 

চাঁদ উঠে আসে

একটা ধূর্ত শিয়াল পালিয়ে যাচ্ছে

 

প্রতিধ্বনি তুলে স্বর্গ থেকে মৃদু গর্জন উঠে আসছে

এবং পৃথিবী ঢোলের মতো সারা রাত প্রতিউত্তরে মগ্ন



গুচ্ছ কবিতা - রিমি দে

 

  





হে অরণ‍্য    




এক

 

 স্বাদে  রক্ত লেগে থাক

 খাদেও  রক্ত   লেগে  থাক

 

ফাঁকা রাতে জল পড়ে থাকে

নদী  তার হাওয়া নিয়ে চলে

 

 

দুই

 

কী হয়েছে বলো  বিকেলের মাঠ

 

ওদিকে গনগনে আঁচ 

সূর্য মধ্যগগন

পুড়ে যাবে

গালের মেচেতা ঘন হবে খুব

জানি চৈত্রের পাতারা মুচমুচে হয়েও

কতটা উদ্যামে মত্ততা দেয়

 

হে বিকেল খুলে রাখো আগুনের পাঠ

 

শুধু   পরিব্রাজক  হও

 

ধরণীমোহন

 

 

তিন

 

যেভাবেই সাজাই না কেন

ভাঁজ  খুলে যায় 

সাজ মুছে যায়

মুঠোয় দৃশ্য জমে থাকে

যেন আগ্রাসী অঘ্রাণ থেকে থেকে

বুকের ভেতরে ঘুঁসি মারে        বেদনার অতীত

গলায় ্যাঁচানো সাপের ঢেউ

আমি এক মুক্ত কারাগার 

ধরে রাখতে চাই

 

তবুও

শুধু ধুয়ে যাও

 

জলে কেচে  বিগ্রহ করি বারংবার

 

চার

 

ফাঁকি মনে হয় 

 

কন্ঠস্বরে সারল্য মাখামাখি করে রাখো

যেন আমি বুঝেও বুঝি না

 

এইসব অনাহূত তাপ জল আর

ভোরের বিন্যাস

 

মুগ্ধ করে রাখে

 

পাঁচ

 

ফাঁক বুঝে গেছি

ফাঁকতালে আমিও ঝাঁপতাল

 

কাঁটা ফুটে আছে

 

যেন আমি সরে গেছি

যেন তুমি সরে গেছ

 

যেন এক গহন বন




উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...