শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩

গুচ্ছ কবিতা - অঞ্জন দাস



কাগজ ফুলের গাছ


রুমাল হাতে বেঁধে মস্তান মেঘেরা 

তোমার বিশ্বাসের রাস্তায় দাঁড়ালে

তুমি আর একবার অনুসন্ধান করো 

ক্যারাটে স্কুলের হেড দিদিমনিকে 


সমস্ত কায়দার বর্ষাতি ফেটে 

তোমার পিয়ানো আর একবার ভেজে 

ভিজে যায় বাগানের সব পারফিউম

 

গাঢ় জিলিপির রস

কবিতা অথবা গানে গাঢ় করে 

নিশ্বাস 

বাকিটা রাতের বাহারী ছবিকে


তুমি বুঝতেই পারোনা 

কালকে তোমার সকাল 

কেমন হাল্কা হয়ে ফুটে আছে 

কাগজ ফুলের গাছে!





গল্পনদী 


শেকড়ে আমার ঘুমায় মাটির গল্প 

তোমার ভেতরে কতকাল গেছি জলে

পাথুরে জমিতে স্বপ্ন ফলেনি অল্প 

রি-রি রোদে কতো আর পোড়া চলে 


জীবন মানে তো কুল্কুচি জল নয়

বুকপেতে দেখি আকাশের মুখে ক্ষমা

মেড়ে কাদা রং প্রতিমা উঠছে জেগে 

নদী হয়ে যাবে তুমি কি জানতে রমা


কাঁথি হোস্টেল কবে ছুটি হয়ে গেছে

শীতঘুম দেখি বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে 

ছ-বছর পরে আমি মাস্টার মিছে

অনুপ থাকেনা নদী চিরে যায় ব্লেডে।



 ঈশ্বরের চোখে জল


চোখ গড়ালো লোহার গোলক

ভাঙছে অহংকার  

ঢালু ভীষণ আটকাবে কে

শক্তি আছে কার


মাথায় মাথায় সব নিয়েছো 

আড়াল পর্দা সরে

সভ্যতা খুন অসভ্যতায়    

ফিরছি কেমন করে   

 

তোমার হাতে সব ভেবোনা

গণ্ডি কাটি আমি  

পাতাল প্রবেশ আমার লেখা    

বন্দী তোমার তুুমি 


পিতা তোমার ফিতার কি মাপ

আজ বুঝেছি একা

চিনে দেখি চেনার ফাঁসি  

লোহার জলে  লেখা    



 সে


বীরত্ব খসে পড়ে আঙুল ছোঁয়ালে। ফর্দে জমে  ঝমঝম 

টুকরো - কিছু  স্নান । এক সিটি, 

সেদ্ধ হয় যুদ্ধের পেশী। তরবারি ভেঙে দিও-

আপেল বাগান


ফ্রিজে ফেরে যতসব ন্যাস্টিক চলন। টাটকা মোড়ক

খোলো কবিতার ভার। শুনশান

গাড়োয়ান উড়ানে উঠেছে। মাথা হ্যাঙ্গ সিগন্যালে 

ট্রাফিক কুমার 


আশ্রমে আলো লেখে হরিনীর চোখ। সাতক্ষীরে জ্বর কমে ডানা ফিরে গেলে। রং মুখে 

বাঁধা হয় আদালতী রাত। বীরত্ব খসে পড়ে 

আঙুল ছোঁয়ালে




ডাক


কোনো এক প্রলোভন  ডেকেছিলে গাছের আড়ালে   

দেহফেলে কতবার আড়াল হয়েছি ডাল

ডাক সেতো সমদূর 

পাতা পাতা চিঠি অথবা পালক


ইহকাল পরকাল পড়ে ও দেখিনা হায় 

উপায় বিহীন প্রলোভন ময়ূরে কখনো যেওনা

সমস্ত মদের নেশা মাতালের নষ্ট বেচে খায়




ছায়াশূন্য পুরুষ 


রেখারাত চলে গেছে গজলের গানে

আরতির শাঁস নীল পর্দার আড়ালে

পাতা খুললেই শুনি শাঁখের আওয়াজ 

জগৎ বৃষ্টিময় বাঁশি ভাঙি গালে 


এমন বিভূতি রাধে ধুনোদৃষ্টি নদী

বাতাসের মজ্জাও টুকলি করছে খরা

জ্বরা পৃথিবীর দলে বিভাজন খেয়া

সবার থাকেনা চোখ জলমগ্ন যারা


প্যানকার্ড


গাণ্ডীব জানিনা বলে বামপাশে 

শব্দভেদী লুকিয়ে রেখছি। 

প্যান্ডেল দেখেছি অঞ্জলি শুনিনি; পাঠকের প্রতিক্রিয়া বছর না ঘুরতে পরমং তপ-


বিজ্ঞ শহর কেনা, সস্তা মোটেও নয়... 


অন্ধকার দড়িপাক কুঁড়ির দেওয়াল ঠেলে রঙ চোবালেই

দক্ষিণের ছায়াছবি স্যাডোর নায়ক, আঙুল ঠেকিয়ে পড়ল সময়, আরবীয় ভুগোলবিদের  উপন্যাস পাতা


তিনফলা কবিতার লোক 

শব্দভেদী ছাড়িনি কখনো 

এখনো ধারাপাত প্রথম অথবা দ্বিতীয় ভাগের ঐক্য, বাক্য- মাণিক্য 

                  পেরোতে পারিনি 

                  সোজা রাস্তার লোক মেঘ দেখে অন্ধকার হয়নি কখনো

টবের বৈধতা চেনে ব্যালকনি 


             প্রশ্নহীন প্রস্হ বাগান...

আমাকে পেরোতে সব মায়াজাল কেটেকুটে 

অবশিষ্ট হাল

তোমার পেছন থেকে  দূরতর হলে চোখ শুধু 

ক্ষমতা হারাল তাতো নয়, 

লং রুট ট্রাক ড্রাইভার 

মস্ত এক জ্যাম খোঁজে

বিরাম হারানো পাল্কিরা সাদা পায়রার হাড়ে 

চিহ্ন রেখে ডাকাত কামনা করে 


ভয়হীন ভেতরের মফস্বল চেরিফল কোনে 

ওড়না সরিয়ে বরং

বনকাটা আসন্ন বাতাসফলার গভীর উত্তর  

                    ডাকাতের সমস্ত  অবশ জানে 

গাণ্ডীব জানিনা বলে বামপাশে 

শব্দভেদী লুকিয়ে রেখেছি। 



সুড়ং


তুরুপ পুর ও সামলে নেবো নিজের গেরাম থাক

পাকিস্তানি সুড়ং দিয়ে  চিনে গলাই নাক

আফগানে ঠিক তালিবানি সুর পোড়ালো গানে

ওখানে ও ঠাণ্ডা করতে বাংলা একাই জানে

কেমন দিলাম ভোটবাজিতে মানছো নাতো কেউ

চাকরি বাকরি সব নিয়েছি কাঁচকলা সব ম্যাউ

এবার বসবো ঐ গদিতে তখন দ্যাখো মজা

যারা এখন ফাঁদ পেতেছো তাদের হবে সাজা

কাক কোথাকার ঘেউ কোথাকার লজ্জা করেনা

আমি তোদের এত দিলাম নিন্দা ছাড়লি না

বদমায়েশি মুলোরা সব একটু সবুর কর

যন্ত্রখানা বাজছে কেমন লাগেনা তোর ডর

খুনখারাপি দেখেও তোর শিক্ষা হলো না

কি আর করি ভুগবি অনেক অশেষ যন্ত্রণা 

ঘর ছেড়েছিস কেস খেয়েছিস নিসড়ামিটা ছাড়

তোদের দেখিস বাঁধিয়ে দেবো সোনার পুকুর পাড়

পুলিশ আমার আমলা আমার গামলা ভরতি ঘোমটা  

মদ-মাংস চেংড়া ঢালাও ঢায়ঢুস্ তার খ্যামটা 

   ফুচকি নাচন অনেক আছে রাখ সিবিআই ধান্দা  

  আপার সুপার বিদেশ বিভুঁই- রুখকে দ্যাখা বান্দা

ধান্দা রাখি কাঁন্দা রাখি ফোকস উচ্চবাচ্যে 

 হাল্টাহাল্টি পাল্টাপাল্টি চুম রেখেছি সাচ্চে

সাপওআছে ব্যাঙ ও আছে বুদ্ধি খেলাস যারা

তাদের কেমন বুদ্ধু বানাই কিসের গোলাম কারা

সেসব জেনে তবেই লড়িস জানবো মরদ আছিস

তিনপয়সার অসুস্থ সব দেখি কেমন বাছিস

খরিস বুঝে ঢেমনা ছাড়া ছেলে খেলার নয়

গাঁয়ে চরাই গরুবাছুর কখন জ্বরের ভয়

সেসব জেনে তবেই আসিস বোগাস খোকাখুকি

এবার যাবো ঐ খানেতে আর নেবোনা ঝুঁকি 



অস্থায়ী তাবু


একটি নিঃশর্ত ঘুমের কাছে 

নতজানু লবনাক্ত নদী, সারা পৃথিবীর আয়ু


যদিও বায়ুর ভেতর ঘামছে রাত  পাড়ায় পাড়ায় 

পেঁচাদের পাচিল টপকে ঘন হচ্ছে কাল

উপার্জিত গণহত্যা ললিত বাণীর ফেরিঘাট 

তাও এককোণে বিদ্রোহ  ক্ষুধার্ত অঙ্কুর 

চোখ লাল তপস্বী বাঁচায় সকাল  


বসন্ত জাগে প্রতি গাছে মেহগনি চিরকাল 

অহঙ্কার খুলে প্রতীনারী সামনে দাঁড়ায়

প্রতিবার মেহগনি পাতা  চায় কোলমাটি

একটি নিঃশর্ত ঘুমের কাছে 

একটি করে পর্ব শেষ  মহা পর্ব আবার দাঁড়ায় 


এমন খেলবে যদি  জাগাতে চেওনা

তাহলে অভিজাত ওস্তাদের মহুয়া গজল

কোথায় কেমন রাখি তুমি বলো ব্রহ্ম প্রজাপতি 

এসব করোনা কার হিম্মত আছে তোমাকে বলার

এতকাল  মহামারীর কোনো না কোনো নাম

 রাখা হয় অস্থায়ী তাবুটার কাছে



পাল্টে যাবে কোকিলের রং    


প্রভূত  বাঁশের   কন্ঠে 

অন্ত শতকের কিছু কোকিল এসেছে

সমবেত গানে আমাদের  সূর্য প্রণালী বাহুবন্ধনী 

খসে গেছে  

সম্পূর্ণ সিসের একটি নতুন পৃথিবী জন্ম নিয়েছে

নামকরণ হয়নি এখনো   

খসেগেছে নদী, অরণ্য -পাহাড়।  কোথাও প্রাণের চিহ্ন নেই

 সিসের চাইতে কিছু কঠিন প্রাণীরা

তার চাইতে আর একটু নরম প্রকৃতি তার চেয়ে জল 

তার চেয়ে অন্য অনেক কিছুর এক একটি  সজানো বাস্তুরীতি

আহা নতুন সভ্যতা


ওখানে ভাতের গন্ধ নেই  

ওয়েটিং লিস্ট, নাম নেই   মানুষের 

 নেই অন্য নামের ও কিছু  মানুষ মানুষ 

 মৃত্যু আছে -  মারেনা  

ওখানে  বিপদের বিপদেরা নেই 

চোর নেই জোচ্চুরি নেই রক্ষিতা ছাগলিনী কিছু নেই   

নেই আমার চাইতে বড় বাবার জৈষ্ঠা মেয়ে 

 সমস্ত সিসের গাছ  

লাল নীল ফুল ফল, রেশন সিলিন্ডার কিচ্ছু নেই 

 ভাঙাচোরা প্লাস্টিক, বোতল, লোহালক্কড় 

কোনো গর্বলেখা , তোমাকে  ফেক আমাকে   বলার কোন আইডি নেই     

আয়না প্রসাধনী ফেকুয়া নাটক বাজ   

 চাঁদ নিয়ে চাঁদুদের কোনো খেলা নেই   

হাঁদুদের গোলাপ ঝোলানোর মিথ্যে নাটক ও নেই

সংখ্যা আছে লঘু নেই    

টুকলি অথবা চুকলি বাজের কোন কফি হাউস নেই       

গন্ধ রুমাল, ফেক ম্যাসেঞ্জার নায়ক নায়িকা ব্যাঞ্জো গায়িকা

পরকিয়া দুপুরের বিবাহিত টাকার প্রচলিত ভালোবাসা নেই 

নেই বিষ্ণুপুর লোকাল  রাজধানী 

হৃদপিণ্ড তুলে দেওয়া খুলে নেওয়ার চিঠিপত্র 

ডাকবাক্স, পিতামহী আবিষ্কার, ভরসার মা -মামা কিছু নেই  

সাধু হত্যা নেই  

পিটা পিটি ফেস বুক গুতোগুতি ছুতো 

ষাঁড়াষাঁড়ির কটাল ও নেই      

এমন কি বৃদ্ধাশ্রম ও নেই                             

    

প্রভূত  বাঁশের   কন্ঠে 

অন্ত শতকের কিছু কোকিল এসেছে

সব কিছু কঠিন কঠিন 

 ঘর গেছাবার ফাঁকে কোন একটি নাম 

ঠিক হবে সিসে পৃথিবী      

কয়েক লক্ষ বছরের শান্তি নিয়ে

এখানে আবার  আমি   ফিরে আসবো 

তবে জীবনানন্দের মতো নয়   

ফিরে দেখবে একটি ঋতু বেঁচে  আছে

 পাল্টে গেছে  কোকিলের রং  

পৃথিবীর সাধ নয় কলঙ্কিত সাথীর অন্বেষণে 

আসতেই হবে

আসবো আবার  পাল্টে যাবে কোকিলের রং  




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...