নাটককার তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গ
কথা সাহিত্যিক
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা
উঠলে “গণদেবতা” “বেদেনী”
“কালিন্দী " কালান্তর, প্রভৃতি কালজয়ী সৃষ্টির কথা
প্রথমেই উঠবে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের
কাছে এক বিশেষ
গোত্রের কথা সাহিত্যিক ।তাঁর গল্প
উপন্যাসে আমরা পাব
গ্রাম বাংলার প্রান্তিক মানুষজনের হাসি
কান্না সুখ দুঃখ
ভালোবাসার আখ্যান। এই
যে প্রান্তিক নিম্নবর্গীয় মানুষদের কথা
সহজ সরলভাবে আমাদের
সাহিত্যে স্থান পেয়েছে তা
কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই
সম্ভব হল ।রাঢ় বাংলার
প্রান্তিক মানুষের কথা
ইতিহাস হয়ে গেল
।এর
আগে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো
করে আমাদের দেশের
কোন সাহিত্যিকই ধারাবাহিকভাবে এদের
কথা বা প্রান্তিক মানুষদের কথা
ভাবেননি। সেই কারণে
তারাশঙ্করের সাহিত্য আমাদের
কাছে এক বিশেষ
গোত্রের দাবিদার। সারা
জীবনে ছোটগল্প রচনা
করেছেন প্রায় ২০০টি।
উপন্যাস রেখে গেছেন
প্রায় 60টি। এই
বিশাল সৃষ্টির ফাঁকে
ফাঁকে তিনি রচনা
করেছেন নাটক। তিনি পেশাদারী থিয়েটারের নাটককার ছিলেন। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে পেশাদার থিয়েটারের সাথে
তাঁর সংযোগ ঘটে। সাহিত্যিক তারাশঙ্করের পেশাদারী থিয়েটারে আসার
পেছনে মূলত থিয়েটার মালিকদের আহ্বান
ও তাগাদা ছিল।
তারাশঙ্করের ^দুই পুরুষ^
নাটক যাকে বলে
হিট করে যায়
।পেশাদারী থিয়েটারে প্রায়
১০০ রজনী চলে।
তখন মালিকপক্ষ তাঁকে
আরো নাটক লেখার
জন্য তাগাদা দিতে
থাকে। পেশাদারী থিয়েটারে নাটক
যোগান দেওয়ার জন্য
নাটকের অভাব মেটানোর জন্য
নাটককার দের বাইরে
কথা- সাহিত্যিকদের প্রতি
থিয়েটার মালিক পক্ষের
নজর চিরকালই। তার
একটা কারণ ছিল
।কথা
সাহিত্যিকদের জনপ্রিয়তাকে পেশাদারী থিয়েটারে কাজে
লাগানো এবং তার
থেকে পেশাদারী থিয়েটারের নানান
শ্রী বৃদ্ধি ঘটানো
।স্বর্ণকুমারী দেবী
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং
পরবর্তীকালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রাঘব
বন্দ্যোপাধ্যায়
কিন্নর রায় আরো
বহুগুণী কথা- সাহিত্যিক এসেছেন
পেশাদারী থিয়েটারে ।সে পথ
ধরেই তারাশঙ্কর এসেছেন। অন্য
অনেকের মতই তারাশঙ্করেরও বালক কাল
থেকেই নাটকের প্রতি
দুর্বলতা ছিল ।নিজে নাটক
করতেন লিখতেন। 1930 সাল
নাগাদ সাহিত্য সাধনাতেই পাকাপাকিভাবে নিমগ্ন
হবার সাথে সাথে
নাটকে নতুন করে
হাত দেওয়া। তিনি
নাটক লিখেছেন ১০-১২টি ।“
দুই পুরুষ” “পথের
ডাক” “দ্বীপান্তর” “বিংশ
শতাব্দী” “সুমিতার সাধনা”
“অভিশপ্ত” “লীলা কমল”
“মারাঠা তর্পণ” “চকমকি”
“বালাজিরাও” “কালরাত্রি” আর
রয়েছে নিজের উপন্যাস থেকে
কৃতনাট্যরূপ “কালিন্দী” (কালিন্দি )”আরোগ্য
নিকেতন” (আরোগ্য নিকেতন)
“কবি”(কবি )আর
লিখছেন “বিগৣহ প্রতিষ্ঠা” “মহতমা শিশির
কুমার” নামে দুটি
একাঙ্ক। কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর যখনি
যে নাটক লেখেন
না কেন সবের
মধ্যেই তাঁর নিজস্ব
দর্শন প্রতিফলিত হয়েছে। বাণিজ্যিক ভাবনায় কখনোই
থিয়েটার রচনা করছেন
না। তাঁর থিয়েটারে পাচ্ছি
তাঁর দেশপ্রেম এবং
দেশ গড়ার ভাবনা।
সুন্দর ও স্বনির্ভর বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিবাদী ভারত
নাগরিক তিনি চেয়েছেন। তাঁর স্বপ্নের ভারতবর্ষের কথা
খুব সহজ সরল
ভাবেই তাঁর নাটকে
পাচ্ছি। তিনি আরো
একটা কথা বারবার
বলতে চেয়েছেন মেয়েরা পর্দার
বাইরে না এলে
মেয়েরা পুরুষের সাথে
কাঁধে কাঁধ রেখে
না দাঁড়ালে এবং
মেয়েরা শিক্ষিত না
হলে দেশ গড়ে
উঠবে না কখনোই
। “পথের ডাক
“ বা “বিংশ শতাব্দী” সব
নাটকই সে কথা
ফুটে উঠেছে। দেশের
প্রতি মমতা দেশের
নিম্নবর্গীয় নাগরিকদের প্রতি
অসীম ভালোবাসা সবসময়ের জন্যই
তার নাটককে আচ্ছন্ন করে
রেখেছে যেমন তাঁর
সাহিত্যে পাচ্ছি। একটি কথা
দিয়ে আমার লেখা
শেষ করব --"তিনি বলছেন
বাল্যকাল থেকে একটা
কথা শুনে আসছি,
দিন-দরিদ্র অশিক্ষিত শেখে
পন্ডিতের কাছ থেকে"
সে পন্ডিতকে খুঁজে
ফেরাই প্রথম ও
প্রধান কাজ বলে
বিবেচিত হয়েছে, কথা
সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের। তাঁর
সাহিত্য ও তাঁর
নাটকতো সে কথাই
আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে
।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন