শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩

কবিতা - শৌভিক দে সরকার, ধনঞ্জয় ঘোষা, অনিন্দিতা গুপ্ত রায, মাধবী দাস






দেশ রাগ
শৌভিক দে সরকার 


প্ররোচনা ও অংশগ্রহণের জুয়াছক 
অহেতুক একটা বৃত্তের মধ্যে ঢুকে পড়ছি আমি 
সংক্রামিত আবাদ, চীনা পেতলের সামান্য চাবি 
আংশিক বশ্যতা ভেবে আমিও ঢুকে পড়ছি 
বৃত্ত বিন্যাসের ভেতর, ঘিনঘিনে মদ আর আঠার ভেতর 
লক্ষ্য করছি পরবর্তী পান্টারের হাতযশ 
চুনের চলটা, দেওয়াল অবধি বেড়ে ওঠা শ্যাওলার কালো  
দেওয়ালের ঠিক নিচেই নিষ্ক্রিয় রসাতল 
আরশোলার মড়ি, দ্বেষ আর দেশের সরলরেখা




মা

ধনঞ্জয় ঘোষাল 

 

আজ ঠিক এক বছর হলো, বাবুন বলে কেউ ডাকেনি। ডাকবার কথাও নয়, মা এই নামেই আমাকে ডাকতেন। গত বছর এই দিনেই চলে যাওয়ার সময়, শেষ চেয়ে থাকার মধ্যেও নীরব উচ্চারণেও ছিল বাবুন বলে ডেকে ওঠার চেষ্টা।।  চলে যাওয়ার পর সব মায়েরাই মন্দির হয়ে যান,  সেখানেই এ জীবনের যাবতীয় অবাধ্যতার কাছে নতজানু হবার আপ্রাণ চেষ্টা শুরু হয় তখন। বুকের ভিতর এখন মা-কে নিয়ে কতো অপূর্ণ ইচ্ছের আজান তাঁর ছবির সামনে দাঁড়িয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। মনে হয়, আরও কতো কিছু বাকি থেকে গেল, এই অপূর্ণতা থেকে যায় বলেই কি মায়ের বিকল্প কিছুই হয়ে ওঠে না আর? মনকেমনের আশ্চর্য দ্যুতি, যেখান থেকে আমার জন্ম, সেই মায়ের চলে যাওয়ার দিকে পড়ে থাকা সময় আমাকে টেনে নিয়ে যায় আরও সংশোধিত বেঁচে থাকার দিকে। এখন ভুল করলে, কে আর বলে উঠবে এটা তুই ঠিক করিসনি বাবুন? কাকে এখন সদ্য প্রকাশিত বই-এর প্রথম কপি তুলে দেব? কার কাছে ক্ষমা চাইবো, কেই-বা আর মাথায় রাখবে হাত? কেন অনেক অনেক ছবি তুলে রাখিনি মা তোমার সঙ্গে? এখন অপার্থিব আলোর প্রতিশব্দ তুমি। ভালো থেকো মা, এখনও স্পষ্ট শুনতে পাই তোমার সেই বাবুন বলে কারণে অকারণে ডেকে ওঠা।।।





বাসন্তী

অনিন্দিতা গুপ্ত রায়


সীমানা প্রাচীনহীন একটা মাঠ। কাঠের বাড়িটি, ভাঙাচোরা কিছুটা বা হেলে থাকা,একলা এক আকাশমণি গাছ হলুদ ফুলে ঢাকা। একটা টিউবওয়েল। ইট পাতা মেঝে প্লাস্টার হীন। নড়বড়ে কয়েকটা চেয়ার টেবিল। বাসন্তী বলেছিল কোন বানান আমি ঠিক করে লিখব দিদিমণি?  তোমরা ভাষা লিখতে বলো আমার মা তো সেই ভাষায় কথা বলে না---


২২ বছর পর চোখের দিকে সোজা তাকিয়ে বাসন্তী বলল, দিদিমণি কাঠের উনুনের ধারে বসে আমার খুব ইচ্ছে করে আগুনের পরশমণি গাইতে। আমার মেয়ের মাতৃগান আছে, আপনি শিখিয়েছিলেন।


আকাশমনি গাছে একইভাবে ফুল ফুটে যাচ্ছে। কাঠের বাড়ি আজ তিনতলা পাকা বাড়ি। সীমানা দেওয়া মাঠ দিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে বাসন্তী। সীমানা পেরিয়ে, মেয়ের হাত মুঠোয়। একটা তেজি ঘোড়ার মত। দিদিমনিরা কবে যেন ম্যাডাম হয়ে গেছেন। অথচ চাবুকের শব্দে ভয় না পাওয়া বাসন্তী মাতৃভাষা হয়ে উঠেছে নিজেই। 






সৌন্দর্য
মাধবী দাস


তর্জনীর ছোঁয়ায়  অক্ষর স্পর্শকাতর হলে 
চশমার কাঁচে মেঘ জমে ওঠে ।
ফেনিয়ে ওঠে সহস্রা থেকে সাধিষ্ঠা

ঝড় তছনছ করে দেয় ! 
  পারমাণবিক বিস্ফোরণ থেকে 
           পালিয়ে বেড়ানো সাধ্যাতীত ...

চেনা পাহাড়, জঙ্গল আর নদী পেরিয়ে 
তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেড়াই লুকোনোর জায়গা
 নীল আকাশের হলুদ সূর্যটা আরও রঙিন হয়ে 
নৈঃশব্দের কোনায় কোনায় আলো ছড়িয়ে দেয়!

 এ শরতে মেতে ওঠে 
সমান্তরাল সম্পর্কের জড়িবুটি !
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ঘোষণা করে
কলঙ্কের রকমফের আছে

আধিপত্য বিস্তারের প্রবল বাসনা সংযমী হয়ে 
কানের খুব কাছে এসে ফিসফিস করে বলে 
বর্ণহীন জলেরই সৌন্দর্য বেশি...







                                               

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...