উস্কানি
যখন রাজহাঁসের ছবি এঁকে
মা হারা ছানাদের সামনে রেখে
পুকুর আঁকতে বসেছি
আমার পেন্সিলে ততক্ষণে গ্রাফাইট শেষ।
তাই মনে আঁকা বহুদিন আগের নদীটিকে
প্রকাশ্যে এনে
ছেড়ে দিয়েছি মা ছানাদের।
আমার হৃদয় দেখি ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভিজে যাচ্ছে
যেমন ভিজে যায় চোখ
মৃত স্বজনের মৃত্যুতে।
যখন ছানাদের আঁকি
মা হাঁসটি তখন নদী আঁকার উস্কানি দেয়।
তোমাকে দেখতে গিয়ে
তোমাকে দেখতে গিয়ে
সূর্যোদয় দেখলাম
নদী পারাপারের নৌকাতে বসে থাকা পাখিটির
কালো কালো দুঃখ মেশা পালকে
সন্ধ্যা নেমে আসতে দেখলাম।
তোমাকে দেখতে গিয়ে
নগরের জেষ্ঠ শামুক-
মাটির শরীর বেয়ে উঠে গেলো জলে,
নৃত্যরত জলের দিকে তাকিয়ে —
তুমুল ব্যঞ্জনা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা
ঘনকালো মেঘের হৃদয় দেখলাম।
তোমাকে দেখতে গিয়ে
আমাকে দেখলাম
ভেঙে যাওয়া কয়েক টুকরো আকাশ
আমার মুখে লেগে আছে
আর ডজনখানেক বিবাগি চিল উড়ে উড়ে
পাড়ি দিচ্ছে জীবনানন্দের ধানসিঁড়ি।
শহরে
শহরে
আমার মতো
কিছু পাখি ভাড়া করে আছে
নিজেকে নিয়ে।
এখানে অজস্র টুকরোতে ভাগ হয়ে হৃদয়
এমন অবস্থা যে
তাকে কুড়িয়ে নিয়েও তেমন আর লাভ নেই।
এমনকি সর্বত্রই কাচের মতো
দুঃখ
ঢেকে রেখেছে শহরের পুরনো ক্ষত।
আমি সারাদিন উড়ে উড়ে গান গেয়ে
ঠোঁটে বসিয়েছি যে আকাশ
তার রোমান্টিক কিছু মেঘ
বিকিনি পরা চাইনিজ মেয়েদের মতো
আমাকে নিয়ে নৃত্য করে।
শহরে
মাইকেল জেকসন কিংবা বব ডিলান
আমার মতো ভাড়া থাকতো
নিজেকে নিয়ে।
কাউকে না পেলে মানুষ তো
নিজেকেই সঙ্গী করে।
দেখতে পেলে
বাতাসকে দেখতে পেলে
কী সর্বনাশটাই না হতো আমাদের।
পাহাড়কে দেখতে না পেলে
ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসা
আমাদের নদীগুলোর কী অবস্থাটাই না হতো।
যদি আল্লাহকে দেখতে পেতাম
একটা হেরেমকে নীচে নামিয়ে আনার জন্য
আমাদের ভেতর কত কত সাঁকোই না তৈরি হত।
আর তোমাকে দেখতে না পেলে
জন্মের অভিবাদন নিয়ে
এই তেরোশো নদীর ভেতর আমি আসতামই না।
আমার দুটি হাত
আমার দুটি হাত
একটি উচ্চবিত্ত, অন্যটি নিম্নবিত্ত
যদিও প্রতিবেশি হিসেবে পাশাপাশি আছে
জন্ম থেকেই
তবুও পিতৃহীন বামহাতটি
যত্রতত্র বাইজি নাচানো ডানহাতটির কাছে
চিরকালীন অচেনা...
আমি বহুবার মিলিয়ে দেখেছি ;
কার্যত কিছুই হয়নি
মাঝখানে প্রবল দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছে
সমস্ত আঙুল
আয়ুরেখা
ভাগ্যরেখা
আমার দুটি হাত
একটি উচ্চবিত্ত, অন্যটি নিম্নবিত্ত...
সুখী হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি
একটু শান্তির জন্য নদীতীরে যাই
সাথে যাওয়া আমারই যাবতীয় অশান্তি
ঠিক নির্জনতা ভেঙেচুরে
আমাকে অশান্তিতে ডুবায়।
ঝর্ণার প্রবল ছুটে চলা জলে কিংবা
সবুজ পাহাড়ে গিয়েও শীতল হই না।
মরালের মতো সমস্ত অসুখ
ডানা ঝাপটায়,
ঝরিয়ে দেয় সবুজ পাতা আর
ভেতরে লুকিয়ে থাকা কিছু অবুঝ সুখ।
জোছনায় দাঁড়িয়ে শান্তি পেতাম
চাঁদ অথবা নক্ষত্র দেখে শান্তি পেতাম
ইদানিং ওসবেও কীভাবে যন্ত্রণা ঢুকে গেছে বুঝিনা।
তাকালেই চোখ জ্বলে যায়।
আমার এখন অন্ধ হওয়ার উপক্রম।
সব ছেড়ে-ছুড়ে তাই
সুখী হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন