শনিবার, ৯ মে, ২০২০

দেবব্রত দাসের কবিতা


মাধবী দাসের কবিতা


নবকুমার পোদ্দারের কবিতা


অণুগল্প - প্রগতি মাইতি

ধারাবাহিক গদ্য -- মৃদুল শ্রীমানী


দ্বিতীয় পর্ব  

অঞ্জন দাসের কবিতা


অরুণ পাঠকের কবিতা


প্রাণজি বসাকের কবিতা













তাপস দাসের কবিতা

সম্পর্ক মন্ডলের কবিতা






শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০

অনিমেশ সরকারের কবিতা

খুরশিদ আলমের কবিতা

বিকাশ দাস (বিল্টু)-- র কবিতা

অনিরুদ্ধ দেবের কবিতা

তাপসী লাহার কবিতা

শর্মিষ্ঠা দাশগুপ্ত নিয়োগী

গদ্য- মনোজ পাইন




এক জাফরান রঙা সকালে একদল পরিযায়ী হাঁস উত্তর থেকে দক্ষিণের আকাশে উড়ে গেল। একটু আগেই তমসার রঙ যেভাবে গভীর থেকে ফিকে হয়েছে তা বসে বসে দেখেছি নির্জন নদীর তীরে।একদল মানুষ সেই নির্জনতাকে খান খান করে, হৈ হৈ রবে এসে পৌঁছাল।ওরা উল্লাসের আয়োজনে ব্যস্ত।
ওদের একজন আমার পূর্বপরিচিত।লোকটা ছায়াছন্ন বনভূমি পার হতে হতে বিরক্ত হয়ে  বলছিল  , লতাপাতা আর গুল্ম  একে অন্যকে এমনভাবে জড়িয়ে  আছে যে এগোনো মুস্কিল।আমি দূরথেকেই ওর কথা স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি। ভদ্রলোক কাছে এসে নতুন প্রভাতের শুভেচ্ছা জানালেন । তারপর সাবধান করে বললেন,এই জংগলের নাকি খুব বদনাম। আমি ভেতরে ভেতরে খুব বিরক্ত হলুম।ওর এক সাথী বোধহয় বুঝতে পারলেন।তিনি আমাকে ওদের আনন্দের  আয়োজনে নিমন্ত্রন জানালেন।  আমি বিরক্তি প্রবলভাবে চেপে জিজ্ঞেস করলুম যে আনন্দটা কিসের? ভদ্রলোক আপাদমস্তক বিষ্ময়ে বিষ্মিত হয়ে বললেন -পৃথিবীর অসুখ সেরে গেছে! 
         
কবি মনোজ পাইন
একটু দুরে নদীর কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে পুরুষের দলে তখন কেউ হেঁসে উঠছে জোরে,কেউবা গান গাইছে উচ্চস্বরে। তাদের প্রবল আনন্দের উৎসারে বিরক্ত একদল টিয়া উড়ে গেল
গেল পশ্চিমের জংগলে। লোকগুলো আমার নিরুৎসাহিত ভাব দেখে চলে গেল ধীরে ধীরে।
আমি একা বসে রইলাম নদী ও প্রকৃতির সাথে।একজন নারীর তীব্র অভাব বেজে উঠলো। 
   
  এখানেই একসময় নদীর তীরেই ছিল আমাদের পৈতৃিক আবাস।বুভুক্ষু নদী সব কেড়ে নিয়ে আত্মস্থ করেছে।আচ্ছা নদী কী বুভুক্ষু?মানুষের ভুলের কী হবে?একটু আগেই যারা বলে  গেল পৃথিবীর সেরে ওঠার কথা, ভোগের আয়োজনে দূর্ভোগ কাটাতে যারা এখন সমস্ত নদীতীর কল্লোলিত করে তুলেছে তারা কি আরোগ্যলাভ করেছে? এখানেই জংলী লতাপাতায় ঢাকা পড়ে আছে এক ভগ্ন দেউল।খুব ছোট বেলায় এই নদীর সাথে যখন বাবা পরিচয় করিয়েছিলেন, তখন গভীর উৎসাহে চেয়েছিলাম  দেউলটির দিকে।বাবা বলেছিলেন এ হল জন্মগত পাপের ফল।  আমি সেদিন বুঝতে পারিনি! এখন বুঝি জন্মগত পাপের মানে।নদীর বহতাই হল জীবন, দুকূল ছাপানোই হল উচ্ছাস।  মানুষের এক অদ্ভুত রোগ।সবকিছুই নিজের করে নিয়ে, সব পথ জয় করে নেয়! সঞ্জীবনী সুধা তার চাই। তারপর পেগ বানিয়ে সাথে বরফের কুচি ঢালার আমোদিত ইচ্ছে তার বহুদিনের।     

         নদীকে ভুলেছি? ছোটবেলায় রূপকথা, লোককথার মতো যেমন দেখেছি তেমনি কী আছে? গভীর বাঁক নিতে গিয়ে মানুষ না নদী কে বদলেছে,এ প্রশ্ন আমাকে স্মৃতিমেদুর করে তুললো।একটু যখন বড় হলাম, মুখে গোঁফ গজাল, পাড়ার বান্ধবীকে ডেকে আনতাম এখানে। একদিন সেই বান্ধবী প্রাচীন বিশ্বাস নিয়ে জড়িয়ে ধরেছিল। সে আজ আর নেই। ক্যান্সারের গভীর  ক্ষতে হারিয়ে গেছে। তারকাছে আমি একদিন বলেছিলাম পৃথিবীর অসুখের কথা। হেঁসে উঠেছিল সে, তার হাসির চোটে দুটো ভুঁই পেঁচা নদীর তীরের গর্ত ছেড়ে উড়ে গেছিল সন্ধ্যার অবসন্ন আলোয়। হাসি থামিয়ে সে বলেছিলপ্রকৃতির নাকি অসুখ হয় না। মানুষের মৃত্যু হয়, প্রকৃতি  অবিনশ্বর। প্রয়োজন হলেই সে শুদ্ধ করে নেয় নিজেকে।   



                 
                           

পাঠ প্রতিক্রিয়া -- মলয় পাহাড়ি





কবি ও গদ্যকার মলয় পাহাড়ি
১৪ই অক্টোবর১৯৫৪এর কথাএকটু পরেই যখন দু'হাতে দুই কাঁদি ডাবকাঁধে কাপড়ের ব্যাগধুতি পাঞ্জাবী পরা বাড়িমুখো কবিকে ধাক্কা মারবে ২৪নং রুটের বি. এল.জি.৩০৪ ট্রাম। গৌতম মিত্র চেনাচ্ছেন জীবনানন্দকে। কবিদের কথা কেন সত্যি ফলে যায়! কেন লিখেছিলেন "শেষ ট্রাম মুছে গেছেশেষ শব্দ... কলকাতা এখন অন্তিম নিশীথ"?

১৫ই অক্টোবর যখন রক্ত বমি হচ্ছেডাক্তারকে বললেন, ' মরফিয়া দেবেন নাআমার ডায়াবেটিস। '  আমি ভাবছি ডায়েরিতে এই এন্ট্রি যদি প্রকৃতপক্ষে  ১৩ তারিখের হয় , তবে কবি জীবনানন্দ এ কথা লিখলেন কেনতখনও তো দুর্ঘটনা ঘটেনি! 
কম্পাসের উন্মাদনা শিরোনামে গৌতমবাবু লিখেছেন, (প্রসঙ্গত পর্ব গুলির কী অসামান্য শিরোনাম -  অভিভূত চাষালুপ্ত নাশপাতিপ্যারাফিন আলোঘড়ি শিশুরৌদ্রবিম্বব্যর্থ জ্যামিতিক দাগদূরবীনহীন ব্যাপ্ত রাত্রি প্রভৃতি !) নিজস্ব বাড়ি জীবনানন্দের কোনদিন ই ছিল না। ডায়েরিতে লেখা -প্রেসিডেন্সি বোর্ডিংএ তাঁর থাকার ঘরটাকে একেকসময় কফিন মনে হয় ।'চোখে তার হিজল কাঠের রক্তিম চিতা জ্বলে। '
সহজ বিষাদে জীবনানন্দকে এভাবেই দেখেছেন গৌতমবাবু। 

লেখক দেখিয়েছেন জীবনানন্দ দাশের ডায়েরির অনেকটা অংশ জুড়ে আছে হেঁটে বেড়ানোর কথা -'কলকাতার রাস্তায় ঘোরার ও একসময় খুব  value  আছে:one meets person :And that may be better than occupying oneself with some fruitless jobs. কিংবা ' কিছু মানুষ অন্য গোত্রেরদীর্ঘ পথ পেরোনো ইহুদি-হৃদয়ের মতো।  '
লেখক সাল ধরে ধরে সাজিয়ে দিয়েছেন জীবনানন্দের সংগ্রহ করতে পারা  ১২৭টি অপ্রকাশিত গল্পের  নির্মাণকাল । ম্যানিয়াক ডিপ্রেশনে ভোগা এই মানুষটি এক মাসে ৩৭টি গল্প লিখে একটিও প্রকাশ করলেন নাসে কি কেবল নেতিবাচক সমালোচনার ভয়ে নাকি সময় প্রস্তুত হয় নি বলে।

 গৌতম দেখাচ্ছেন জীবনের কেন্দ্র নয়জীবনের কিনারজমির মাঝটি নয় আলমার্জিনঅস্পষ্ট ফুটনোট এর কথাকার জীবনানন্দ।
মৃত্যুর ভষ্মের ভিতর  পান্ডুলিপি কে জীবন্ত করে রাখার দায় ছিল তাঁর। তাই তো কালো ট্রাঙ্ককে সাজিয়ে রেখেগেলেন অসামান্য আগামী কে। 'ঈশ্বরের চোখের নীচে আমিও এক অসামান্য রচয়িতা ।'এতটাই আত্মবিশ্বাস ছিল তাঁর।

নির্জন আঙুল শীর্ষক বনলতা সেন সম্বন্ধীয় আলোচনাটি প্রবল যুক্তিসঙ্গত অথচ মায়াবী। আহা! যদি সত্যিই মহানায়িকা সুচিত্রাই বনলতা সেন হতেন। পান্ডুলিপি উদ্ধৃত করে লেখক দেখিয়েছেন  বনলতা ভুবন সেনের বিধবা বোন ননভুবন সেনের কন্যাও ননলাবণ্য দাশশোভনা মজুমদার কিংবা কোন বারবনিতা ও নন , তিনি বিয়াত্রিচেদান্তের জীবনের অনশ্বর ভালোবাসার মতো। 

১৯৫৪র একটি খাতায় তাঁর প্রিয় বইয়ের তালিকায় বোদল্যের লেখা 'অন্তরঙ্গ জার্নাল ' স্থান করে নিয়েছে। জীবনানন্দের 'লিটারেরি নোটস'  ও বোদল্যের জার্নালের মিল চমকপ্রদ। অথচ অ্যক্সিডেন্ট না হলে জীবনানন্দ হয়তো বা নিশ্চিত ভাবে ডাইরি গুলি পুড়িয়ে দিতেন। 
প্লটে আস্থা নেইনেড়িকুকুর কে নায়ক করে উপন্যাস লিখে ফেলার পরিকল্পনার।তাঁর নির্মাণ পক্ষপাতশূন্য  এক স্পর্শ --কোন ছাঁচে ধরা নয়। 
একটা একটা করে সিঁড়ি ভেঙে নিজের জন্য বরাদ্দ প্রেসিডেন্সি বোর্ডিং এর ঘরটিতে নিজেকে টেনে তুলেছেন দিনের পর দিন। কলকাতাহ্যাঁ কলকাতাবোদল্যের প্যারিসজয়েসের ডাবলিনবেনিয়ামিনের বার্লিনের মতোই জীবনানন্দের অনিবার্য আধার কোলকাতা। 

মা কুসুমকুমারী কবি আমরা জানিমাতামহ চন্দ্রনাথ দাস ছিলেন গীতিকার ও কবিতাঁর তিনখানা বই ছিলমামার বংশধারার কবিত্বশক্তি কালমিনেট করেছে জীবনানন্দে এ কী নতুন করে বলার কথা! 
সংসার সুখের হয়নিস্ত্রী লাবণ্য ও যন্ত্রণা ব্যক্ত করেছেন মিনু সরকারের কাছে ,জীবনানন্দ ও ঘনিষ্ঠ জনের কাছে জানতে চান- ' যদি স্ত্রী আপনার আমন্ত্রণে ঘনিষ্ঠ হবার প্রস্তাবে সায় না দেয় কী করবেন?  ' মূল্যবান এ দেখি, 'ওপরের ঘরটায় উৎপলা আর মনু শোয়। একতলায় মাল্যবানের বিছানা। ' মাল্যবানের মানসিক চলন অনেকাংশেই জীবনান্দের মনোজগতের ছায়ায় আঁকা। 
পুস্তকটি শেষ করে আমি শ্রী মিত্র প্রনিত মুখবন্ধ অংশে আসিসন তারিখ ধরে ধরে অনবদ্য বিশ্লেষণ করেছেন লেখক। বীরেন্দ্রনাথ রক্ষিতকে উদ্ধৃত করে বলেছেন জীবনানন্দের ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীণ সাক্ষ্য খুব জরুরীডায়েরিপ্রবন্ধকবিতাউপন্যাস,চিঠিপত্র প্রভৃতির বুনন প্রত্নছাপ ধরে গভীর অনুসন্ধান দাবি করে। 
জীবনানন্দকে নিয়ে আমার পাঠ খুব সীমিতদেবতাজ্ঞানে পুজা ও করি নাআমার খুব তৃপ্তির পাঠ অভিজ্ঞতা ই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। এটি ১ম খন্ড২য় খন্ডের অপেক্ষায় রইলাম। লেখকের ভরসার হাত শাশ্বতী মিত্রকে ও শ্রদ্ধা জানাই।ধন্যবাদ জানাই প্রকাশক সুমিতা সামন্ত কে। 





গদ্য - শৌনক দত্ত

মরিবার হল তার সাধ 




শৌনক দত্ত
     রাতে বৃষ্টি এলো। এলোমেলো ঘর জুড়ে তখন হরিণ স্বপ্ন ময়ূরের মত পাখা মেলে দিয়েছে। মাঝে মাঝে জীবনানন্দ নিয়ে অপেক্ষায় থাকি। ভার্জিনিয়া উলফ বা সিলভিয়া প্লাথ ডেকে বলে-  মাঝে মাঝে কি হয় জানিনা। আজকাল একা একা বিষন্নতার ধারে গিয়ে বসি। বাঁধের উপর বসে আনমনে ঘাসগুলো ছিঁড়তে থাকি। হঠাৎ চিনচিন কিছু একটা জেগে ওঠে। আমি তখন চুপচাপ বৃষ্টির সাথে কথা বলি আর দেখি জানালার ওপারে কবিতা তার পাশ দিয়ে ভার্জিনিয়া নিজের ওভারকোটের পকেটে নুড়ি পাথরবোঝাই করে হেঁটে নেমে যাচ্ছে খরস্রোতা পাথুরে নদীতে।

     হঠাৎ সেদিন কৃষ্ণচূড়া গাছটা দেখলাম। কাকিমা জল দিচ্ছে। কাকিমা আমাকে বিকেলে পুকুর পাড়ে নিয়ে যাবে? কতদিন ফড়িংয়ের নাচ দেখিনি। পুকুরের জলে তখন অমিমাংসিত ডুব। তুখর সাঁতারু অরুনেষ ঘোষ আত্মরক্ষার কোনো তাড়া বোধ করছেন না। কিংবা আজীবন আত্মভোলা, নিঃসঙ্গ কবির মনে কি তাঁরই স্বরচিত অদ্ভুত আঁধার জেঁকে বসেছিল, তিনি কোনো চিত্তচাঞ্চল্য বোধ করছেন না?
             
     তারপর দেখলাম, প্রজাপতিটা নীল পাখা নিয়ে আমার বনশাই এর নতুন পাতা টার ওপর এসে বসলো। মনে হলো বাবার কপালের সব জ্বর কমে গেলো। মা পাশের ঘর থেকে ডাক দিল,সন্ধ্যে বেলা রাই আসবে। আমার ছোট বেলার বন্ধু, কবে যে পরিচয়, কেমন করে যে ওকে আমার সেদিন অর্ধেক চকলেট দিলাম কে জানে। বাড়িতে ভাই এর সাথে যেই চকলেট নিয়ে মাঝেমধ্যেই ঝগড়া হয়। রাই এখন জাটিঙ্গায় থাকে। Human Studies বিষয়।
                   
     ট্রেনে করে বাড়ি ফিরছি। দশ মিনিট ট্রেন দাঁড়িয়ে,দিনহাটা পাস হবে। তারপর সিগনাল। এমন সময় বাদামওয়ালারা পাশ দিয়ে গেলে প্রাণটা আনচান করে ওঠে। ঝালমুড়িওয়ালার পাশে দাড়িয়ে ইয়ানশিনের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করা মায়কোভস্কি। নারকেল চিলতায় কামড় দিয়ে পোলানস্কায়ারকে বিয়ের করার কথা বলছেন মায়াকোভস্কি।বন্দুকের নল নিজের মুখে ঢুকিয়ে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে জোর করে বিক্রি করছেন দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি। পাশের যাত্রীদের আলোচনার বিষয় জন ব্যারিম্যান যিনি তোর্ষাকে মিসিসিপি ভেবে লাফ মেরেছেন। ট্রেন ছাড়লো আর কার্বন মনো-অক্সাইড গ্যাসে ঢেকে গেলো অ্যানি সেক্সটন।
       
     কারিন বোয়ের গাড়ি আর ফেরেনি কিন্তু আমার আজো বাড়ি ফেরার হলে মন কেমন আনন্দে ভরে ওঠে। টেলিফোনে থম্পসন তাঁর স্ত্রীর সাথে সেই যে কথা বলছিলো বলেই যাচ্ছে কোথা থেকে একটা গুলির শব্দে রাতের মত নির্জনতা। এডগার অ্যালান পো তখন ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে মানসিক বিষণ্ণতা থেকে আত্মহত্যার কথা লিখছেন।আর ফোস্টার ওয়ালেস গাড়ির গ্যারেজে ইনফিনিটি জাস্টদড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখছে। গ্যাসের চুলায় তখন মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে সিলভিয়া প্লাথ।
মনে হয় কামরার এমাথা থেকে ওমাথা একটু দৌড় দিই। সে না হয় পরে কখনও হবে। হালকা শীতের স্টেশন দেখতে ভালোই লাগে। মনে হয় যারা প্রেম করতে বেরিয়েছিল তারা গুটিসুটি হয়ে বেশ ভালোই প্রেম করবে। তা করুক। সম্পর্ক টিকে থাক। ভালোবাসা বাঁচুক। দূরের প্রেম গুলোও আরও  জমাটি হোক। কে যে বলেছিলো প্রেমে পড়া বারণ।ট্রেন থেকে নেমে হাঁটছি দেশপ্রিয় পার্কের কাছে ট্রামলাইনে,সঙ্গে জীবনানন্দ বড্ড অন্যমনস্ক ও বিক্ষিপ্ত।আমরা কেউ দেখছিনা যে ঘণ্টি বাজিয়ে  আসছে ট্রাম,চোখে কেবল ভাসছে

শোনা গেল লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে ফাল্গুনের রাতের আধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাদ
মরিবার হল তার সাধ।




গদ্য -- দেবজ্যোতি রায়



কবি ও গদ্যকার দেবজ্যোতি রায়
দুটো রাতের পেষণে চ্যাপ্টা দিনটাকে ঠেলতে ঠেলতে ক্লান্তিতে একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন একটা রামছাগল। নিপুণ অভ্যাসে জনৈকা রেভলন সুন্দরী গালের ভাঁজে খানিকটা খৈনি গুঁজে দিলে তার বক্ষ নিতম্ব থাই বৃক্ক খৈনি বয়ঃসন্ধির সম্মিলিত সুরে বাসের মধ্যেই আমার যুগপৎ বিশ্বরূপদর্শন চূড়ান্ত বীর্যপাত ঘটে গেল। পার্লামেন্টে তখন শুকরীদের জন্যও গর্ভনিরোধক আবশ্যিক কিনা তাই নিয়ে বিরোধী সরকার পক্ষের সদস্যরা পরস্পরের দিকে হাত-পা,বাক্য-অবাক্য,চেয়ার-টেবিল,কাগজপত্র,জামাকাপড়,কফ-থুতু,ঘটি-বালতি,মদের গ্লাস-জলের বোতল,মল-মূত্র,বীর্য মিন্স,চুমু চোখ টেপা যাকিছু হাতের কাছে সহজ সুলভ,এইসব প্রবল আর্তি আর্তনাদ,বৈরিতা ঐক্য,মুগ্ধতা শিহরণের মধ্যে টিভি ক্যামেরার সন্মুখেই জনৈক পুং সদস্যের আচমকা গর্ভপাত হয়ে গেলে মাননীয় স্পিকার স্যার সেদিনের মত সভা,জট তাতেও খোলেনি যেহেতু সরকার নিয়োজিত তদন্ত কমিশনের দশটি প্রমাণ সাইজের ট্রাঙ্কভর্তি নিরলস বাতকর্মেও একথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল যে,অধুনা এই দেশে শুয়োরের বাচ্চাদের তীব্র সংখ্যাধিক্য ঘটেছে এবং সবদিকেই তারা বহাল-তবিয়ত,খুশবুদার,একটা বিশালাকৃতি ষাঁড়ের ইতোমধ্যে বাজারের চওড়া গলিতে,বিষণ্ণ সুন্দর ভিনদেশি গাভীদের গোবর মসৃণ,বে আব্রু,পুরুষ্টু নিতম্বের দিকে শিশ্ন উঁচানো তেড়ে যাওয়া নিয়েও জম্বুদ্বীপের নেতা ধর্মাধিকারী বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ,বিবৃতির লড়াই,দিস্তাদিস্তা কাগজ,সইসাবুদ,চুকিৎকিৎ,গোল্লাছুট,দেওয়ানি-ফৌজদারি ইত্যাদি শুরু হয়ে গেল। 

বেড়ালের থাবা থেকে তখন শাদা জ্যোৎস্নাটা লাফিয়ে নামতেই আমাদের প্রাগুক্ত রামছাগলটার প্রথমে খিঁচুনি হল পরে কপালে তিনটি গভীর ভাঁজ পড়ল। পকেট থেকে বিড়ি বের করে তারপর উল্টোদিকে ফু দিয়ে জ্বালিয়ে শুন্যে একরাশ ধোঁয়া ছুঁড়ে দিলেন তিনি। 

--- জ্যোৎস্নাটি টুঁটি কামড়ে ধরবার আগে শুধু বলে যেতে পারলেন,--- 'হুম' ভিসেরা ঘেঁটে সেটুকুই ধরা পড়েছে। 


পুনশ্চ : 'হা ঈশ্বর ! পোতিষ্ঠান আমাদের শেষ জ্ঞানীটিকেও খুন করে এখন তার মূত্তি বসাচ্ছে !'

            --- জম্বুদ্বীপের জনৈক গ্রামবাসীর ভয়ার্ত বিস্ময়োক্তি।       



                                  

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...