শনিবার, ৯ মে, ২০২০

ধারাবাহিক গদ্য -- মৃদুল শ্রীমানী


দ্বিতীয় পর্ব  

                      গানের ভিতর দিয়ে যখন  মৃদুল শ্রীমানী

                            

                                                  



               মৃদুল শ্রীমানী 
গান ছিল শ্রীকৃষ্ণকীর্তন বইটিতেও। গীতি আলেখ‍্যের মতো। এক একটি গান এক এক রাগে। এর ভিতরে রাধাকৃষ্ণ প্রেমকথার প্রাকৃত রুচির বুনোট। বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ মহাশয় সেই প্রাচীন পুঁথিখানি খুঁজে পেলেন গোয়ালঘরের চাল থেকে। হাতে নিয়ে বেশ টের পাওয়া গেল, এ খুবই পুরোনো দিনের লেখা। বাসলীদেবীর উপাসক বড়ু চণ্ডীদাস লিখেছেন এই সন্দর্ভ। দানখণ্ড ভারখণ্ড এই রকম সব নামে এক একটি অধ‍্যায়। শেষটুকুর নাম রাধাবিরহ।
পরবর্তীকালে তো আরো চণ্ডীদাস দেখা দিলেন। সে কালে লোকেরা নিজের নামটুকু চিরস্থায়ী হোক, সেভাবে চাইত না। চিরস্থায়ী নাম রাখবার মতো এলেমদার কলম তো শস্তা নয়। তাই কারো লেখা কালের রথের পদতলে পড়েও টিঁকে যাবে মনে হলে স্বল্প ক্ষমতার লেখকদের ইচ্ছে হত, মহাজনের কলমের আড়ালে গা ঢাকা দিয়ে চুপিসাড়ে টিঁকে থাকার চেষ্টা করা। এই ভুলভাল মানুষী দুর্বলতা থেকে চণ্ডীদাস সমস‍্যা। তবে পরিশ্রমী গবেষকদের চোখকে ফাঁকি দেওয়া শক্ত। শব্দচয়নে, ভাষার অলঙ্করণে এমন কিছু থেকে যায়, যা দুই পৃথক ব‍্যক্তির অস্তিত্ব চিনিয়ে দেয়। পদাবলী রচনা করতে গিয়ে পরবর্তীকালের বৈষ্ণব কবিকে প্রতিষ্ঠানের মান রাখার কথা ভাবতে হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের বেঁধে দেওয়া রুচি, দর্শন চিত্রকল্প ঠিক ঠাক রাখতে গিয়ে কবিত্ব নীরক্ত হয়েছে। শ্রীচৈতন্য দেবের পাবনী প্রভাব বহন করতে গিয়েও পদাবলী হয়ে উঠেছে শুদ্ধ রুচির জিনিস। শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনকারের সে দায় ছিল না। তিনি শিল্পীর স্বাধীনতা প্রাণভরে ব‍্যবহার করেছেন।


বাংলাভাষা গড়ে তুলতে উইলিয়াম কেরী আর তাঁর শ্রীরামপুর মিশনের কথা আসেই। বাংলা পুঁথি খুঁজে বের করে তা ছাপার অক্ষরে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার ভিতরে যে চেষ্টাই থাকুক না কেন, আখেরে তা বাঙালির বিপুল উপকার করেছে, এই কথাটা কিছুতেই এড়িয়ে যেতে পারব না।


বিস্তর পুঁথি ঘাঁটাঘাঁটি করে বাংলা লিপির সর্বজনগ্রাহ্য মান‍্য চেহারা টা ঠিক কী হবে তা বেশ বুঝতে পেরেছিলেন চার্লস উইলকিনস। ভদ্রলোক ছিলেন পুঁথিবিশারদ। পুঁথির লিপি বিশ্লেষণ করতে দক্ষ। পঞ্চানন কর্মকার আর তাঁর জামাতা মনোহর কর্মকার ছিলেন লৌহ শিল্পী। বাংলা অক্ষরের ছাঁদ তাঁদের শিখিয়ে নিলেন চার্লস সাহেব। এরপর ছাপাখানার মেশিন চলে এল কেরী সাহেবের উদ‍্যোগে।




প্রথম পর্বের লিঙ্ক
https://sabdabaul.blogspot.com/2020/04/blog-post_18.html

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...