শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০

পাঠ প্রতিক্রিয়া -- মলয় পাহাড়ি





কবি ও গদ্যকার মলয় পাহাড়ি
১৪ই অক্টোবর১৯৫৪এর কথাএকটু পরেই যখন দু'হাতে দুই কাঁদি ডাবকাঁধে কাপড়ের ব্যাগধুতি পাঞ্জাবী পরা বাড়িমুখো কবিকে ধাক্কা মারবে ২৪নং রুটের বি. এল.জি.৩০৪ ট্রাম। গৌতম মিত্র চেনাচ্ছেন জীবনানন্দকে। কবিদের কথা কেন সত্যি ফলে যায়! কেন লিখেছিলেন "শেষ ট্রাম মুছে গেছেশেষ শব্দ... কলকাতা এখন অন্তিম নিশীথ"?

১৫ই অক্টোবর যখন রক্ত বমি হচ্ছেডাক্তারকে বললেন, ' মরফিয়া দেবেন নাআমার ডায়াবেটিস। '  আমি ভাবছি ডায়েরিতে এই এন্ট্রি যদি প্রকৃতপক্ষে  ১৩ তারিখের হয় , তবে কবি জীবনানন্দ এ কথা লিখলেন কেনতখনও তো দুর্ঘটনা ঘটেনি! 
কম্পাসের উন্মাদনা শিরোনামে গৌতমবাবু লিখেছেন, (প্রসঙ্গত পর্ব গুলির কী অসামান্য শিরোনাম -  অভিভূত চাষালুপ্ত নাশপাতিপ্যারাফিন আলোঘড়ি শিশুরৌদ্রবিম্বব্যর্থ জ্যামিতিক দাগদূরবীনহীন ব্যাপ্ত রাত্রি প্রভৃতি !) নিজস্ব বাড়ি জীবনানন্দের কোনদিন ই ছিল না। ডায়েরিতে লেখা -প্রেসিডেন্সি বোর্ডিংএ তাঁর থাকার ঘরটাকে একেকসময় কফিন মনে হয় ।'চোখে তার হিজল কাঠের রক্তিম চিতা জ্বলে। '
সহজ বিষাদে জীবনানন্দকে এভাবেই দেখেছেন গৌতমবাবু। 

লেখক দেখিয়েছেন জীবনানন্দ দাশের ডায়েরির অনেকটা অংশ জুড়ে আছে হেঁটে বেড়ানোর কথা -'কলকাতার রাস্তায় ঘোরার ও একসময় খুব  value  আছে:one meets person :And that may be better than occupying oneself with some fruitless jobs. কিংবা ' কিছু মানুষ অন্য গোত্রেরদীর্ঘ পথ পেরোনো ইহুদি-হৃদয়ের মতো।  '
লেখক সাল ধরে ধরে সাজিয়ে দিয়েছেন জীবনানন্দের সংগ্রহ করতে পারা  ১২৭টি অপ্রকাশিত গল্পের  নির্মাণকাল । ম্যানিয়াক ডিপ্রেশনে ভোগা এই মানুষটি এক মাসে ৩৭টি গল্প লিখে একটিও প্রকাশ করলেন নাসে কি কেবল নেতিবাচক সমালোচনার ভয়ে নাকি সময় প্রস্তুত হয় নি বলে।

 গৌতম দেখাচ্ছেন জীবনের কেন্দ্র নয়জীবনের কিনারজমির মাঝটি নয় আলমার্জিনঅস্পষ্ট ফুটনোট এর কথাকার জীবনানন্দ।
মৃত্যুর ভষ্মের ভিতর  পান্ডুলিপি কে জীবন্ত করে রাখার দায় ছিল তাঁর। তাই তো কালো ট্রাঙ্ককে সাজিয়ে রেখেগেলেন অসামান্য আগামী কে। 'ঈশ্বরের চোখের নীচে আমিও এক অসামান্য রচয়িতা ।'এতটাই আত্মবিশ্বাস ছিল তাঁর।

নির্জন আঙুল শীর্ষক বনলতা সেন সম্বন্ধীয় আলোচনাটি প্রবল যুক্তিসঙ্গত অথচ মায়াবী। আহা! যদি সত্যিই মহানায়িকা সুচিত্রাই বনলতা সেন হতেন। পান্ডুলিপি উদ্ধৃত করে লেখক দেখিয়েছেন  বনলতা ভুবন সেনের বিধবা বোন ননভুবন সেনের কন্যাও ননলাবণ্য দাশশোভনা মজুমদার কিংবা কোন বারবনিতা ও নন , তিনি বিয়াত্রিচেদান্তের জীবনের অনশ্বর ভালোবাসার মতো। 

১৯৫৪র একটি খাতায় তাঁর প্রিয় বইয়ের তালিকায় বোদল্যের লেখা 'অন্তরঙ্গ জার্নাল ' স্থান করে নিয়েছে। জীবনানন্দের 'লিটারেরি নোটস'  ও বোদল্যের জার্নালের মিল চমকপ্রদ। অথচ অ্যক্সিডেন্ট না হলে জীবনানন্দ হয়তো বা নিশ্চিত ভাবে ডাইরি গুলি পুড়িয়ে দিতেন। 
প্লটে আস্থা নেইনেড়িকুকুর কে নায়ক করে উপন্যাস লিখে ফেলার পরিকল্পনার।তাঁর নির্মাণ পক্ষপাতশূন্য  এক স্পর্শ --কোন ছাঁচে ধরা নয়। 
একটা একটা করে সিঁড়ি ভেঙে নিজের জন্য বরাদ্দ প্রেসিডেন্সি বোর্ডিং এর ঘরটিতে নিজেকে টেনে তুলেছেন দিনের পর দিন। কলকাতাহ্যাঁ কলকাতাবোদল্যের প্যারিসজয়েসের ডাবলিনবেনিয়ামিনের বার্লিনের মতোই জীবনানন্দের অনিবার্য আধার কোলকাতা। 

মা কুসুমকুমারী কবি আমরা জানিমাতামহ চন্দ্রনাথ দাস ছিলেন গীতিকার ও কবিতাঁর তিনখানা বই ছিলমামার বংশধারার কবিত্বশক্তি কালমিনেট করেছে জীবনানন্দে এ কী নতুন করে বলার কথা! 
সংসার সুখের হয়নিস্ত্রী লাবণ্য ও যন্ত্রণা ব্যক্ত করেছেন মিনু সরকারের কাছে ,জীবনানন্দ ও ঘনিষ্ঠ জনের কাছে জানতে চান- ' যদি স্ত্রী আপনার আমন্ত্রণে ঘনিষ্ঠ হবার প্রস্তাবে সায় না দেয় কী করবেন?  ' মূল্যবান এ দেখি, 'ওপরের ঘরটায় উৎপলা আর মনু শোয়। একতলায় মাল্যবানের বিছানা। ' মাল্যবানের মানসিক চলন অনেকাংশেই জীবনান্দের মনোজগতের ছায়ায় আঁকা। 
পুস্তকটি শেষ করে আমি শ্রী মিত্র প্রনিত মুখবন্ধ অংশে আসিসন তারিখ ধরে ধরে অনবদ্য বিশ্লেষণ করেছেন লেখক। বীরেন্দ্রনাথ রক্ষিতকে উদ্ধৃত করে বলেছেন জীবনানন্দের ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীণ সাক্ষ্য খুব জরুরীডায়েরিপ্রবন্ধকবিতাউপন্যাস,চিঠিপত্র প্রভৃতির বুনন প্রত্নছাপ ধরে গভীর অনুসন্ধান দাবি করে। 
জীবনানন্দকে নিয়ে আমার পাঠ খুব সীমিতদেবতাজ্ঞানে পুজা ও করি নাআমার খুব তৃপ্তির পাঠ অভিজ্ঞতা ই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। এটি ১ম খন্ড২য় খন্ডের অপেক্ষায় রইলাম। লেখকের ভরসার হাত শাশ্বতী মিত্রকে ও শ্রদ্ধা জানাই।ধন্যবাদ জানাই প্রকাশক সুমিতা সামন্ত কে। 





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...