শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০

গদ্য- মনোজ পাইন




এক জাফরান রঙা সকালে একদল পরিযায়ী হাঁস উত্তর থেকে দক্ষিণের আকাশে উড়ে গেল। একটু আগেই তমসার রঙ যেভাবে গভীর থেকে ফিকে হয়েছে তা বসে বসে দেখেছি নির্জন নদীর তীরে।একদল মানুষ সেই নির্জনতাকে খান খান করে, হৈ হৈ রবে এসে পৌঁছাল।ওরা উল্লাসের আয়োজনে ব্যস্ত।
ওদের একজন আমার পূর্বপরিচিত।লোকটা ছায়াছন্ন বনভূমি পার হতে হতে বিরক্ত হয়ে  বলছিল  , লতাপাতা আর গুল্ম  একে অন্যকে এমনভাবে জড়িয়ে  আছে যে এগোনো মুস্কিল।আমি দূরথেকেই ওর কথা স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি। ভদ্রলোক কাছে এসে নতুন প্রভাতের শুভেচ্ছা জানালেন । তারপর সাবধান করে বললেন,এই জংগলের নাকি খুব বদনাম। আমি ভেতরে ভেতরে খুব বিরক্ত হলুম।ওর এক সাথী বোধহয় বুঝতে পারলেন।তিনি আমাকে ওদের আনন্দের  আয়োজনে নিমন্ত্রন জানালেন।  আমি বিরক্তি প্রবলভাবে চেপে জিজ্ঞেস করলুম যে আনন্দটা কিসের? ভদ্রলোক আপাদমস্তক বিষ্ময়ে বিষ্মিত হয়ে বললেন -পৃথিবীর অসুখ সেরে গেছে! 
         
কবি মনোজ পাইন
একটু দুরে নদীর কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে পুরুষের দলে তখন কেউ হেঁসে উঠছে জোরে,কেউবা গান গাইছে উচ্চস্বরে। তাদের প্রবল আনন্দের উৎসারে বিরক্ত একদল টিয়া উড়ে গেল
গেল পশ্চিমের জংগলে। লোকগুলো আমার নিরুৎসাহিত ভাব দেখে চলে গেল ধীরে ধীরে।
আমি একা বসে রইলাম নদী ও প্রকৃতির সাথে।একজন নারীর তীব্র অভাব বেজে উঠলো। 
   
  এখানেই একসময় নদীর তীরেই ছিল আমাদের পৈতৃিক আবাস।বুভুক্ষু নদী সব কেড়ে নিয়ে আত্মস্থ করেছে।আচ্ছা নদী কী বুভুক্ষু?মানুষের ভুলের কী হবে?একটু আগেই যারা বলে  গেল পৃথিবীর সেরে ওঠার কথা, ভোগের আয়োজনে দূর্ভোগ কাটাতে যারা এখন সমস্ত নদীতীর কল্লোলিত করে তুলেছে তারা কি আরোগ্যলাভ করেছে? এখানেই জংলী লতাপাতায় ঢাকা পড়ে আছে এক ভগ্ন দেউল।খুব ছোট বেলায় এই নদীর সাথে যখন বাবা পরিচয় করিয়েছিলেন, তখন গভীর উৎসাহে চেয়েছিলাম  দেউলটির দিকে।বাবা বলেছিলেন এ হল জন্মগত পাপের ফল।  আমি সেদিন বুঝতে পারিনি! এখন বুঝি জন্মগত পাপের মানে।নদীর বহতাই হল জীবন, দুকূল ছাপানোই হল উচ্ছাস।  মানুষের এক অদ্ভুত রোগ।সবকিছুই নিজের করে নিয়ে, সব পথ জয় করে নেয়! সঞ্জীবনী সুধা তার চাই। তারপর পেগ বানিয়ে সাথে বরফের কুচি ঢালার আমোদিত ইচ্ছে তার বহুদিনের।     

         নদীকে ভুলেছি? ছোটবেলায় রূপকথা, লোককথার মতো যেমন দেখেছি তেমনি কী আছে? গভীর বাঁক নিতে গিয়ে মানুষ না নদী কে বদলেছে,এ প্রশ্ন আমাকে স্মৃতিমেদুর করে তুললো।একটু যখন বড় হলাম, মুখে গোঁফ গজাল, পাড়ার বান্ধবীকে ডেকে আনতাম এখানে। একদিন সেই বান্ধবী প্রাচীন বিশ্বাস নিয়ে জড়িয়ে ধরেছিল। সে আজ আর নেই। ক্যান্সারের গভীর  ক্ষতে হারিয়ে গেছে। তারকাছে আমি একদিন বলেছিলাম পৃথিবীর অসুখের কথা। হেঁসে উঠেছিল সে, তার হাসির চোটে দুটো ভুঁই পেঁচা নদীর তীরের গর্ত ছেড়ে উড়ে গেছিল সন্ধ্যার অবসন্ন আলোয়। হাসি থামিয়ে সে বলেছিলপ্রকৃতির নাকি অসুখ হয় না। মানুষের মৃত্যু হয়, প্রকৃতি  অবিনশ্বর। প্রয়োজন হলেই সে শুদ্ধ করে নেয় নিজেকে।   



                 
                           

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...