তানাবানা
"আপনি ওয়াফা কি কুছ ইশতরহা মিসাল দে তা
হু
কোই কুছ পুছে তো টাল দে তা হু।
ঠোকরে উসকি খাতা হু
জিসকে পাও সে কাঁটা নিকল দে তা হু..."
তুমি কেন দাঁড়িয়ে?
কেন তোমরা দাঁড়িয়ে? অবিরাম হাসছি। রক্ত রাতের চেয়েও তীক্ষ্ণ হচ্ছে। রং আরও গাঢ়। একটা বোরখা ঘিরে রেখেছে আজীবনের সমস্ত পিপাসা। বোরখা বর্ষা হলে, আমি তার জন্য লাখোবার গাই, 'পিয়া তোরা ক্যায়সা অভিমান...' গোড়ালি ভিজে গেলে আমার হাঁটু ভেজাতে বড্ড ইচ্ছে করে; হাঁটু ভিজলে আমার নেশা বাড়ে, কোমর ভেজানোর।
কোমর ভিজলে আমার বাসনাকুসুম আত্মহত্যা লেখে। আমি আরও বেশি করে জলের কাছে যাই। আমার প্রেম ছুটে যায় কবরখানায়। তখন সম্পূর্ণ বিপরীতে। বোরখা উড়ছে। অথচ, জলের বাইরেই তার যত মন! আরও বেশি হাওয়া, আরও বেশি দুলে ওঠা নৌকো। জলের ভিতর জলের কুহক। প্রেম থেকে প্রেম সরে গেলে জল আরও বিস্তৃত হয়। 'দোল দোল দোলুনি রাঙা মাথায় চিরুনি..' কাজল লেপ্টে যায়। অন্য পাড়ে কাজলকথা জেগে ওঠে ফেলে আসা ঠিকানার মতো । শূন্যের ভিতর আশ্চর্য
গর্ত। গর্তের ভিতর ঢেউ। ঢেউ ভেঙে চুরমার হলে জলসেলাই গুঁড়িরানে এঁকে ফেলে আশ্চর্য আসক্তি ও গর্ভফুল। বোরখা নিয়ম মেনে বর্ষা হয়। ব্রাশোর ফ্রিল-ওয়ার্ক তাকে পূর্ণিমার মায়া-চাঁদের মতো গর্ভবতী করে! তোমার মনে পড়ে, একবার তুমি বলেছিলে যে দু-জন সোলমেটের সন্তানই 'অবতার' হয়ে নাকি জন্মায়; কোথায় একটা শুনেছিলে তুমি...মনে পড়ছে না, সিরাজ? সঙ্গে রাখি মফিজেস্ট..."হাম খুদাকে কসম মুসকুরাতে রহে..." টানা গদ্যের মতো নীল-সবুজ গভীর।
সারাশরীরে ভেজা দুব্বোর গন্ধ! মুদ্রা অনন্ত হলে চিরচেনা লাগে সব! সমস্ত নিষিদ্ধ পিচ্ছিল করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগামী ঘ্রাণ! মাটি আলগা হয় নাকছাবির ধারালো ইশারায়... ক্রমশ এক অদ্ভুত নেশা আমাকে গিলে খায় প্রতিমুহূর্তে। আত্মহত্যার এক ভয়ঙ্কর ইচ্ছে এবং ঠিক ইচ্ছের আগেই আনমনেই সরিয়ে ফেলি হাইফেন। আমি জলের কাছে যাই। জল ভেঙে যাওয়া নদীর তুখোড় পিপাসার কথা শুনি, অথচ এভাবেই গঙ্গা-নেমন্তন্ন; সাগর ভেবে কনের ডাক...
" জল দাও...জল দাও...জল দাও.."
কেউ জল দেয়নি। জলের ভিতর জাল। জলের ভিতর ছল। তারপরও গাঢ় বাদামি মায়ায় গাছ-মানবী শুনিয়ে যাচ্ছিল
আগামী বসন্তের কুহকিনী -সংলাপ। প্রতিটি আশ্বাসের পায়ের ছাপ সেঁটে দিচ্ছি আমারই মতো লাখো মুখের কপালে-কপালে; কাঁটা আর রক্তের যুগলবন্দির ভিতর একটা আনপ্রেডিক্টেবল 'সুহাগ-রাত'; চামড়ায় প্রশ্ন। ভার্জিনিটি এক অনন্য সুর; বরং ব্যাখ্যা থাক; স্রোত থাক। থাক ছলাৎছল। স্রোতের সমবেত গান। সব প্রশ্নের উত্তর দিতে নেই। অনেক প্রশ্নও মুষলধারে 'পাপ' ডেকে আনে। যদিও 'পাপ' আর 'পহেলি' এক ভয়াবহ ডকুমেন্টেড থিওরি.." ক্যায়সি পহেলি জিন্দেগানি..'!
অসতর্ক আলোর পাশে একটা নিবিড় যে-ব্যথাভার, শিরোনামের ভুলে হারিয়ে গেল ভুল জলে। অগণিত তারার ম্যহ্ফিল বেয়ে কেবল নেমে আসে জলের উচাটন। সমগ্র ভেঙে গুঁড়ো -কাচে যে-রাত ফেরি করে মোহময়ী চোখ ও অপ্রকাশিত ঘুম, সেখানেও থেকে যাবে কিছু ঘাতক-মায়া। হ্যাঁ, ঘাতক-মায়া। মায়ার চেয়ে 'ঘাতক' আর কী হতে পারে!
বাকি থেকে যাবে...
ফাঁকি থেকে যাবে...
গহ্বর থেকে যাবে...
শুধু পথ ও ক্ষরণের জড়াজড়ি। অলংকরণ থেকে খুলে আসে চরিত্র। চরিত্র থেকে চরিত্র; মোহ থেকে মায়া। আর লুটেরা অভিমান কেবল জল থেকে তুলে শুকোতে দেয় মন। মরণডেরার একতারাটি ভুলে যায় সুর। একটা, শুধুমাত্র একটা মুক্তিস্নানের জন্য জলছবির দিকে কেবল তাকিয়ে থাকা...
'অপার্থিব জেগে থাকে হলং বালিকা...'
বেসামাল চাঁদ জলে চোখ রাখতে গিয়েও ঘুরিয়ে নেয় দুটি চোখ। চোখজুড়ে জলের সংসার একা থাকার চুক্তি মেনেই কাঙালের মতো কেবল তাকিয়েই থাকে; তাকিয়েই থাকে...
সিরাজ, ইন্দ্রাবতী 'দিঘি' লিখতে গিয়ে সাজা পেল ভুল বানানের অপরাধে। সে এখন কোথায় থাকে, কেউ জানে না!
জল জেনেছিল সোহাগি চাঁদ পুড়ে ছাড়খার হয় ঠিক কত ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
জল পুড়ছে। আগুনও। ঠান্ডাঘরে ভগ্নাংশ লিখে রাখছে অষ্টাদশী তারা এবং তারা। গড়্গড় ও ধোঁয়া জড়িয়ে-মরিয়ে আকাশ হচ্ছে। চাঁদ পুড়ছে, ক্রমশ পুড়ছে।
গলার ভাঁজে-ভাঁজে তখন চব্বিশটি
শ্রাবণের কোলাজ। সামনে যমজ- আয়না। চৌষট্টি কলা...
"আপনি ওয়াফা কি কুছ ইশতরহা মিসাল দে তা
হু
কোই কুছ পুছে তো টাল দে তা হু।"
বোহেমিয়ান আঁচল উড়ে যায় কোনো আশ্রয়হীন পাতা গিঁট দিয়ে। বোরখা থেকে বেহেস্ত; বেহেস্ত থেকে বেহাগ....
গর্ভফুলের চারপাশে
টলটলে সবুজ-নীল...
অথচ, সবটাই সাদা-কালোর নিখাদ হরকত;
স্বপ্নফুল ঋতুমতী আলোয় সবটুকু কান্না রেখে ভেসে গেছে...
সময় ভীষণ কম। রঙের পাশে রং। ইতিহাস বিমুখ হলে জলেই রাধারা খুঁজে চলে সারাজীবনের
সমস্ত বসন্ত-উৎসব...মহাভাবস্বরূপিনী-হ্লাদিনি শক্তি প্ৰণয়িনী শ্রীরাধা..
বেহাগের রং সাদা আর বোরখা কালো...
জলের প্রতিবিম্বে অমৃত; বিষয়ের বিষ....
গর্ভজলের তানাবানা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন