শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩

রাজর্ষি বিশ্বাস-র ছোট গল্প 'মিছিল'





 মিছিল


চৈত্রের এক বিকেলে যখন নিকষকালো হয়ে ওঠে আকাশ ও শুরু হয় প্রলয়কারী ঝড়, তখন সত্যিই মনে হয়েছিল, আজ নির্ঘাৎ ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবীটা। চতুর্দিকে থেকে ধেয়ে আসে ধ্বংসের বিকট ও কর্কশ শব্দ। একে একে ভেঙ্গে পড়ে বাড়িঘর,গাছপালা সবই। চোখের সামনেই দুমড়ে মুচড়ে উড়ে যেতে দেখি বহুদিনের পুরনো টিনের চাল। তারপর একে একে সব কিছুই খড়কুটোর মতো। হয়ত এবার আমারও পালা। প্রাণভয়ে চোখ বন্ধ করে জপতে থাকি ইষ্টনাম। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরে থাকি ঘরের অতি এক প্রাচীন শাল কাঠের খুঁটি। যে খুঁটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে পরিবারের অনেক ইতিহাস। সেসব গল্পগাছা হয়ত অলৌকিক! আজগুবি! অনেকটাই অর্থহীন ও উদ্ভট! প্রাণ যেখানে বিপন্ন, সেখানে এই উপাখ্যান নিয়ে ভাবা ও বলা বাতুলতা মাত্র এবং তা সময়োচিতও কাজ নয়। 

প্রবল তাণ্ডবলীলা চলার পর যখন শান্ত হল এই ধরণী- তখনও আমি যেন চেতনারহিত। সেই খুঁটিটি ধরেই দাড়িয়ে থাকি খোলা আকাশের নীচে। ভেবে পাই না কি করণীয়

প্রবল ঝড়ঝঞ্জার পর আপাত শান্ত এই পৃথিবীকে দেখে মনে হল- এ যেন শ্মশানের শান্তি। চতুর্দিক শুনশান। কোন পশু-পাখির আওয়াজ পর্যন্ত নেই। পাড়া প্রতিবেশীরাই বা সব গেল কোথায়? যতদূর চোখ যায় পড়ে আছে শুধুই ধ্বংসচিহ্ন। কেউ নেই কোথাও! দেখাও যাচ্ছে না! তবে কি সবাই মৃত

চিৎকার করে উঠি বেশ কয়েকবার। না কোন সারা শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়ে আসে নি। হয়ত আসার কোনও কথা বা সম্ভাবনা- কিছুই ছিল না।

আমার সমস্ত ভেজা শরীরটা থেকে থেকেই কেঁপে  ওঠে। প্রচণ্ড ভয় গ্রাস করে। কুঁকড়ে যেতে থাকি ক্রমশ। অসার হতে থাকে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। 

তাহলে কি সত্যিই দাঁড়িয়ে রয়েছি কোনও এক মৃত্যু উপত্যকায়

এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আমি কি একাই বেঁচে আছি? এভাবে বিপুলা পৃথিবীতে সম্পূর্ণ একাকী হয়ে বেঁচে থাকা কি আদৌ সম্ভব

একটু দূরে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা টিনের চালের তলায় অর্ধেক চাপা পড়ে আছে যে কালির ফটো অপলক তাকিয়ে থাকি সেদিকেই। কাঠের ফ্রেম, কাঁচ সবই ভেঙ্গে চুরমার। শুধুমাত্র লকলকে ওই লাল জিভটিই স্পষ্ট।

হঠাৎই চোখে এল এরই পাশ দিয়ে দিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে চলেছে পিপড়েদের মিছিল।  ধ্বংসস্তূপের মধ্যে প্রাণের অস্তিত্ব ! আমি উত্তেজিত হয়ে পড়ি। টের পাই শরীরে দ্রুতগামী হয়েছে রক্ত সঞ্চালন। হৃদস্পন্দনও স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক। এতক্ষণ যে আদি খুঁটিটি আঁকড়ে ধরেছিলাম, তা-ও ছেড়ে দেই। ভয়ার্ত আমি হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকি ওই পিপড়েদের মিছিলের দিকে

 





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...