শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩

শূন্য দশকের কবি শৌভিক দত্ত-র মুক্তগদ্য "যে চিঠিতে শব্দ বসেনি কোনওদিন "

 

                      যে চিঠিতে শব্দ বসেনি কোনওদিন                         

                     

                         

    এক

অকল্পনীয় কিছু পাথর রাখার পর গাছের ছাইদান থেকে টোটকা খসে পড়ে। বারো ভূতের পাহাড় এখানে নেই।এসময়, জলসা শব্দের যে কোনও মানে হতে পারে।একটা বিজ্ঞাপন বিরতির পর, ধরো, তুমি স্মৃতি অফ করে উঠে গেছো, আর একাধিক কালো গম্বুজ টেকঅফ করছে, মাথায় সারসার রানওয়ে……তোমার জলকষ্ট হয় না? উঁচু থেকে নেমে আসার পথে, যে সব ধারালো পতন তুমি লক্ষ্য করেছো, তুমি জানো, তাদের কোনও আঙুল নেই।তেমন দাপাদাপি নেই তর্জনীর।এসময় খরিফ শস্যের তেমন বেচাকেনা নেই, সন্ন্যাসী পাখিরা মাধ্যমিক ছেড়ে উড়ে গেছে কবেই, মনে করে দেখো, এই প্রথমবার তুমি গোধূলি হতে চেয়েছিলে,এই সারসত্যে ঘুমের উপস্থিতি তেমন কাম্য নয়, প্রচুর গণিত এসময়,বাজছে,খুলে দিলেই স্পষ্ট হবে জানালার বর্গমালা, ফিয়াঁসি আলোয় ভাঁজ খুলে প্রশ্ন রাখা যাবে,অথচ তোমার অভ্যাস এখনও ভঙ্গুর ও ত্রুটিহীন। ছাই গলাতে দিয়ে তুমি মৃদু ও সরল হতে চেয়েছো, পাখি সঞ্চালনার দায়িত্ব রাখোনি কোনও, তাই কড়িকাঠ ম্লান হয়ে ঝুলে আছে।

 

দুই

খুব দামী দাবীর ভেতর পরিধি বসেছে।এই ছিটেফোঁটা তল্লাট জিভ দিয়ে চেটে দেখছে নিরন্ন বেড়াল।বেড়ালের পেছনেই থাবা গেড়ে এক পেল্লায় চাঁদ বসে আছে,সাপলুডো খেলার এটাই শেষপর্ব,পদকের দিকে দৌড়ে যাবার নিয়মকানুন এই মুহূর্তে প্রযোজ্য নয়,যে কোনও সময় খাদ নেমে আসতে পারে,ভেসে আসতে পারে ঘরভরতি পুতুলের ঠা ঠা আওয়াজ, ছুরির ছলাকলা এখন খাদ্য, ভোজবাজির এই অঞ্চলে ক্ষমা হাঁটতে গিয়েছে বহুদূর।অঞ্চল ভাবলে আমার আঁচলের কথা মনে হয়,মনে হয় কুড়িয়ে পাওয়া এক গন্ধহীন বিকেলের কথা,আর প্রতিশ্রুতির পূর্ব মুহূর্তে যে সব গোলাপেরা শীতের দিকে গিয়েছে, তাদের তর্কযোগ্য কিছু আমিষ উপাদানে, অবাক ফসলের মতো ফলে আছে জমায়েতের মুখ ও মুশায়ারা,আর তীব্র সঙ্গতে রাখা বাঁশী যখন খাপ খুলছে,চিহ্ন লোপাটের এই প্রাণপণ বাতিঘরে বেজে উঠবে প্রমাণ সমূহ, যেন ছায়ার লৌকিকে ভিজে ওঠা যাবে সহজেই,ঘুম ফেলে তৈরি করা যাবে হেরে আসার অদৃশ্য দেওয়াল, যেন অতিরিক্ত হয়ে থাকা যাবে আরও কিছুক্ষণ।

 

    তিন

হাইজ্যাক হওয়ার আগে মেয়েটির পরনে ছিল কালো সালোয়ার, নীল মোমবাতি, আর নাইটল্যাম্প। শব্দের কারুকাজের রিপোর্টকার্ড। নীলবাতি লালবাতির গাড়ি তখনও বাধ্যতামূলক হয়নি। যৌন সুড়সুড়ির ভেতর অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল কিনা জানা নেই,কারণ যে সব ভেড়ারা মাছের চাষবাসে ব্যস্ত ছিল, তারা কেউ পুনরায় খোঁয়াড় দেখেনি।মাছেদের খুব জ্বর হয় এসময়,ঠিকঠাক গাঁথার সময় ফাতনার টোপ ফুরিয়ে খেলা ভেঙে যাবার সম্ভাবনা থাকে।উত্তরের দশদিকে যখন কোনও উত্তর নেই,খোলা চাতালের পায়চারীতে সমস্ত সংবিধান যখন প্রমাণ মুছতে ব্যস্ত,এক আহত বাঘের মতো শীত টোকা দেয় দরজায়,অক্ষরের ফাটল বেয়ে চোরাগোপ্তা নদীর মতো ঢেউ আসে,ঢেউ যায়,তাসের পাল্লায় ছায়া শুকিয়ে রাখার চেষ্টা চলে,আর বুজরুকি ভর্তি এই আলো আর শীৎকারে সমস্ত রাস্তাই যখন এক ঠাণ্ডা দরজার দিকে গিয়েছে,তুমি জানো, ফিরে আসার প্রস্তুতি বাতিল করেছি আমরা দুজনেই,বোঝাপড়া শেষে এক নির্নিমেষ খাদ আমাদের অপেক্ষায়, কোথাও সাঁতার নেই, ভেসে আসা নেই,হাইজ্যাক হওয়ার মুহূর্তে মেয়েটি সম্ভবত এরকমই ভেবেছিল,এক অমোঘ ও আশ্চর্য সংশয় টুঁটি চেপে ধরার আগে হরিণী যতোটা, অথচ এ পর্য্যন্ত বিজ্ঞাপনে কান্নার কতোটা ভুমিকা ছিল তুমি আমি লক্ষ্যই করিনি।

 

 চার

কোনও পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই সংখ্যা নেমে আসছে জলে। এসময়, তোমার সকাল পেরোতে ভয় হয়।কোনও প্রতিশ্রুতিই দীর্ঘ হয় না বলে মানুষ হাতের দায়িত্ব মুছে ফেলে।মুছে ফেলে ফোলা ও শক্ত শিরদাঁড়ার পায়চারী। রাষ্ট্রের হেঁশেলে রাখা রাষ্ট্রের মৃতদেহ।দেখি, টাটকা লাশের শরীরে সন্দেহের মতো ঝুলে আছে পতাকার আয়ু।দেখি, রাস্তার দুধারে সারসার মাংস টাঙিয়ে রেখেছে কেউ।আর অকল্পনীয় কিছু পাথরে যখন বিশ্বাসকে ভাঙতে দেখি প্রতিদিন, দেখি দাবীসনদে রাখা অপুষ্টির ছাপ, ধর্ম খুলতে খুলতে চলো,তুমি আমি তাজা ছুরির মুখোমুখি আসি, নগ্ন হই, পরস্পর আদর করি এই শেষবার,তীক্ষ্ণ বল্লমের মতো রাষ্ট্রের গুহ্যদ্বারে ঢুকে যাই।

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...