শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩

কল্প বিজ্ঞানের গল্প 'পরেশনাথের নতুন বন্ধুরা' লেখক মনোজ পাইন

  পরেশনাথের নতুন বন্ধুরা



শেষ পর্যন্ত পরেশনাথ পৌঁছালেন  স্টেশনে।  ইণ্টারসিটি এক্সপ্রেস চলে গেছে মিনিট কয়েক আগে।পরের ট্রেন এখন অনেক দেরিতে। লোকজন চোখে পড়ছে না।ট্রেন মিস, তবুও প্রশান্তি মনে। মানুষজন,ভিড়ভাড় এখন একদম না পসন্দ তার।সন্ধ্যার বাতাস বইছে।শেষ আশ্বিনে হালকা  শীত, একদম বেমানান।আগে হলে এখানে ঠান্ডায় জমে যেতে হতো। মানুষজনের সাথে সাথে আবহাওয়া কত বদলে গেল!পরেশনাথের মনে প্রশ্ন আবহাওয়ার জন্য মানুষ বদলেছে নাকি মানুষের জন্য আবহাওয়া। পরেশনাথের হঠাৎ খেয়াল হলো পুরো স্টেশন চত্তর একদম সুনসান! জঙ্গলের দিকটায়,বেশ আলো আলো ভাব। প্রথম দেখায় যে কোনো মানুষের মনে ভ্রম দেখা দিতে পারে।হলও তাই, পরেশনাথ ভাবলেন দূরে কার্শিয়াং পাহাড়ের থেকে নেমে  আসা সার্চ লাইটের আলো। ভাবনার তাল কেটে যেতেই  মন সচকিত। বুঝতে পারলেন ভুল হচ্ছে। এতো দূর থেকে সার্চ লাইট জঙ্গলের ঐ জায়গায় এতো উজ্জ্বল হতে পারে না।  পরেশনাথের মনে বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা উঁকি দিচ্ছে। এদিকে স্টেশন চত্ত্বরে আরও সুনসান। নিজের এইসব উল্টোপালটা চিন্তা ভাবনায় খুব বিরক্ত হলেন পরেশনাথ। কোথা থেকে আসে এই সব উল্টোপাল্টা ভাবনা কে জানে।পকেট হাতড়ে বার করে আনলেন সিগারেটের প্যাকেট,চিঁড়ে চ্যাপ্টা অবস্থা, তবে সিগারেটগুলো ভালোই আছে। একই ভাবে খু্ঁজে বার করলেন দেশলাই। অন্যমনস্ক ভাবে জ্বালানোর চেষ্টা করলেন, বার কয়েক ব্যর্থ হওয়ার পর খেয়াল হলো,আগুন জ্বলছে না!কিন্তু কেন? মনে মনেই প্রশ্ন করলেন নিজের কাছে, হাওয়ার চলাচল তো নেই! তাহলে? ঝটপট চারিদক ভালো করে পরখ করে নিলেন।না কেউ নেই!  "কোথাও কেউ নেই" - অস্ফুটে বললেন।আবারও চেষ্টা করলেন দেশলাইয়ের গায়ে বারুদ কাঠি ঘষে! কিন্তু এবারেও জ্বললো না।রাগে ছুড়ে ফেললেন সিগারেট সহ দেশলাই,মাটিতে না পড়ে  ফিরে  এলো দ্বিগুণ বেগে,এমন ভাবে  যেন কেউ তীর নিক্ষেপ করছে তার দিকে! অসীম সাহসী মানুষও চমকে যাবে,ভয় মিশ্রিত চোরা স্রোত বইবে শরীর জুড়ে। হলও তাই। পরেশনাথ ভিতু নন কোনো কালেই, তার উপর এমন মানুষজন নিজেদের সঞ্জানে কখনো নিজেকে ভিতু বলে মানেন না। তিনি তড়িঘড়ি উঠে দাঁড়ালেন। তারপর আবার ভালো করে চারিদিকে পরীক্ষা করলেন।  স্টেশনের অদূরে জঙ্গল।সেখানে তখনও উজ্জ্বল আলো। ভাবলেন কি হচ্ছে ওখানে কে জানে,এমন সময় হঠাৎ কেউ যেন ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল তাকে।হুমড়ি খেয়ে পড়লেন স্টেশনের কংক্রিটে।উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করতেই আবার ধাক্কা! পরেশনাথ দ্বিতীয় ধাক্কা খাওয়ার পর প্রচন্ড রেগে গেলেন, কার এতো হিম্মত যে ওকে ধাক্কা দেয়? আবারও চেষ্টা করতেই পুনরায় ধাক্কা।পরেশনাথ রাগের  সাথে সাথে বিষ্মিত।চিৎকার করে উঠলেন। কিন্তু তার গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। ভয়ে মানুষের আওয়াজ বন্ধ হয়! তাহলে কী তিনি ভীত? মনে জেগে ওঠা প্রশ্নটিকে প্রায় গলা ধাক্কা দিয়ে, উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করলেন। তখনই ঘটে গেল অবাক করা এক ঘটনা।চোখের পলকে।তাকে ওই অবস্থায় উড়িয়ে নিয়ে চলল কেউ! আর্ত চিৎকারে ভরিয়ে তুললেন, কিন্তু কেউ শুনতেও পেলনা। নির্জন স্টেশন চত্তর একই রকম নিরুৎসাহিত রইল পরেশনাথে ব্যাপারে। এদিকে ওর তখন অঞ্জান হবার জোগাড়, সে তিনি যতই সাহসী হন।ধীরে পাহাড়ের গায়ে জংগলের মাঝে পরেশনাথকে কেউ যেন নির্বিঘ্নে ল্যান্ড করলো। তিনি এটা বুঝে আশ্বস্ত হলেন যে উনি এখন যার কবলে সে ওনাকে মেরে ফেলবে না। ধড়ে প্রান ফিরে এলো তার।কিন্তু যে ভয় হৃদয়ে সঞ্চারিত হয়েছে তার পরিবর্তন নেই।

সামনে দাঁড়িয়ে আছে অদ্ভুত এক যন্ত্র। আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে আলো। বলা চলে আলোর ফোয়ারা। সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মানুষের মতো কিছু প্রানী। কিন্তু তাদের আকৃতি, অবয়বে মানুষের সাথে অনেক তফাত। পরেশনাথ বুঝতে পারছেন তারা কিছু বলছে,এবং তাকে উদ্দেশ্য করে। তিনি অনেক চেষ্টা করলেন বোঝার, কিন্তু এক বর্ণও বুঝতে পারলেন না। তবে তিনি এই বিষয়ে নিশ্চিত যে এই প্রাণীগুলো অন্য গ্রহের। পরেশনাথের এখন একদিকে ভয় আর অন্য দিকে বিষ্ময়! জেন পণ্ডিতের কাছে ভয় হল  পদস্খলনের যার থেকে তারা শত হাত দূরে থাকেন। তিনি মনে মনে গুরু চ্যান মাষ্টার শেং ইওয়েনকে স্মরণ করলেন । আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে আলো। বলা চলে আলোর ফোয়ারা। সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মানুষের মতো কিছু প্রানী।কিন্তু তাদের আকৃতি, অবয়বে মানুষের সাথে অনেক তফাত। পরেশনাথ বুঝতে পারছেন তারা কিছু বলছে,এবং তাকে উদ্দেশ্য করে।তিনি অনেক চেষ্টা করলেন বোঝার, কিন্তু এক বর্ণও বুঝতে পারলেন না।তবে তিনি এই বিষয়ে নিশ্চিত যে এই প্রাণীগুলো অন্য গ্রহের। পরেশনাথের এখন একদিকে ভয় আর অন্য দিকে বিষ্ময়! জেন পণ্ডিতের কাছে ভয় হল  পদস্খলনের যার থেকে তারা শত হাত দূরে থাকেন। তিনি মনে মনে গুরু চ্যান মাষ্টার শেং ইওয়েনকে স্মরণ করলেন । একমাত্র তিনিই এখন তাকে পথ দেখাতে পারেন। সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মানুষের মতো কিছু প্রানী। কিন্তু তাদের আকৃতি, অবয়বে মানুষের সাথে অনেক তফাত। পরেশনাথ বুঝতে পারছেন তারা কিছু বলছে তাকে উদ্দ্যেশ্য করে, কিন্তু তিনি  নিরুপায়। কিছুই বুঝতে পারছি না। ওই প্রাণীদের একজন এসে তার  মাথায় কিছু একটা ঠেকাল।ঝিম ধরে গেল সারা শরীরে। কিছু সময় পরে  তার কাছে সব একদম পরিস্কার হয়ে গেল।তিনি সব কিছুই স্পষ্ট দেখতে পেলেন।ওদের কথাবার্তা সব একদম ক্লিয়ার।  বুঝতে পারছেন ওদের সব কথা বার্তা।


এইসব প্রাণীরা ভিন গ্রহের। তারা প্রায় মাস কয়েক আগে এই পাহাড় লাগোয়া জঙ্গলে নেমেছে। পৃথিবী আর মানুষ সম্পর্কে গবেষণা করার কাজে।তাদের এখন ফিরে যাওয়ার সময়।কিন্তু  বিপত্তি হয়েছে এক অদ্ভুত যন্ত্র হাতে এসে যাওয়ায়। কিছুদিন আগে রাতে ডাউন ইণ্টারসিটি এক্সপ্রেস সিগনাল না পেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল পরের দিন সকাল পর্যন্ত। ওরা সেদিন রাতে ঘুমন্ত যাত্রীর হাতে চলতে থাকা  মোবাইল দেখে সবাই অবাক, বিস্মিত। সুযোগ বুঝে  তুলে নিয়ে  এসেছে সেই দামী যন্ত্রটিকে।অন্য গ্রহের প্রাণীগুলির প্রব্লেমের শুরুও তখন থেকে। ওরা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মোবাইল চালানো রপ্ত করে নিল,তারপর দিন কুড়ি টানা মোবাইল চালানোর পর ওরা একই রকমভাবে আরও কিছু মোবাইল চুরি করে আনলো। ওরা ফেসবুক, টুইটার আর মেসেঞ্জারে খুব মনোযোগ দিল যার ফল ফললো হাতে নাতে। খুব দ্রুততার সাথে মনোসংযোগ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললো। হারিয়ে ফেললো ভাবনার ক্ষমতা। পরেশনাথ সব শুনে মনে মনে বিড়বিড় করলেন "মোবাইলের ওইসব দৈত্যরা সারা বিশ্বকে পঙ্গু করে ফেলছে,ভিন গ্রহের লোক বলে কি আর ছেড়ে দেবে?" এখন এই প্রাণীরা চাইছে ভাবনার আর মনোসংযোগের ক্ষমতা ফিরে পেতে ।তাছাড়া ওরা৷ ভাবনার ক্ষমতা ছাড়া  ওদের গ্রহে ফিরতে পারছে না। তাই ওরা ওনাকে এখানে ধরে নিয়ে এসেছে।এটা বুঝতে পারলেন যে শিলিগুড়িতে তিনি যে মনঃসংযোগের উপর এক আন্তর্জাতিক সেমিনারের বক্তা ছিলেন সে খবর ওদের জানা। শুধু তাই নয় তিনি যে একজন বিখ্যাত জেন পণ্ডিত তাও ওদের জানা। ওরা ওনাকেই খুঁজছিল। আর তিনি হঠাৎ গাড়ি ঘোড়া ছেড়ে লোকজন ছেড়ে একা একা  গুলমা স্টেশন থেকে রাতের শেষ ট্রেন ধরে তার মায়ের কাছে বনবস্তিতে ফিরতে চাওয়ায় ওদের সুবিধা হয়েছে। ওইসব প্রাণীরা নিজেদের মধ্যে কি সব আলোচনা করল। ই ভাষা বুঝতে পারলেন না পরেশনাথ, মানে পৃথক এক ভাষা। ওদের ওইসব কথাবার্তা হয়ে যাওয়ার পর যা বলল তখন তিনি সব আবার আগের মতোই বুঝতে পারলেন।


এখন পরেশনাথ ধ্যানে বসলেন, তাকে ঘিরে থাকা সকলেই একই রকম ধ্যানভঙ্গিমায়। তিনি সবাইকে প্রভু বুদ্ধের উপর মনন স্থির করতে বললেন, শেখাতে লাগলেন  ধ্যান সূত্রের নির্দেশগুলি। তার মনে ভেতরে  ভেতরে এক গভীর প্রশ্ন, এই গ্রহের প্রাণীগুলি এখন তার ভেতরে থাকা সবকিছু জানে তবুও এরা ওকে গুরু মেনে সবকিছু কেন শিখছে? মনে মনে পরম বন্ধু বলে মানলেন ওদের




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...