"শব্দবাউল ভাষান্তর সংখ্যা"- এক সাহসী অনুবাদ কাজ
মূল সাহিত্যের এক অবিচ্ছেদ্য সমান্তরাল শাখা অনুবাদ সাহিত্য। সাহিত্যে অনুবাদ এক পুরনো ও সমৃদ্ধ শাখা। কোন এক ভাষায় রচিত সাহিত্যকে ভাষাসীমানার গণ্ডি ছাড়িয়ে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনুবাদ সাহিত্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
শব্দবাউল ভাষান্তর সংখ্যা এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সাহস দেখিয়েছে। সম্পাদক শৌভিক বণিক প্রত্যন্ত আলিপুরদুয়ারে বসে এ কাজটি করেছেন।
ঝকঝকে হরফ ও উৎকৃষ্টমানের ছাপার ভেতরে একবার ঢুকে গেলে বোঝা যায় যে, দেশ-কালের গণ্ডি পেরিয়ে কবিতার গতি দুর্বার ও সাবলীল। পত্রিকাটিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়েছে লিটিল ম্যাগাজিন আন্দোলনের পুরোধা সন্দীপ দত্তর প্রতি। দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন ভাষার ৩৮ টি কবিতা/কবিতাগুচ্ছকে সুনিপুণভাবে বাংলায় অনুবাদ করেছেন বাংলাভাষার কবিরা।
প্রথমেই উল্লেখ্য অসমিয়া কবি হীরেন ভট্টাচার্যের লেখার সুদক্ষ অনুবাদ, যা কবি সমর দেবের কলমে এসেছে।
" আমার মায়ের হাত ধরে
দেশ থেকে-
দেশান্তরে চলে যাচ্ছি আমরা " আক্ষরিক অর্থেই সব সাহিত্যপ্রেমীকে "আন্তর্জাতিক" করে তোলে।
ওড়িয়া কবিতার বাংলা অনুবাদের ক্ষেত্রে শ্যামলী সেনগুপ্ত এক সুপরিচিত নাম-
" দেখি একবার চোখের ভেতরের
অখিল ব্রহ্মাণ্ডে সাঁতরানো"। ( "শুধু আজ"/ প্রদীপ কুমার পণ্ডা)
শান্তা মারিয়ার করা উর্দু কবিতার বাংলা অনুবাদ নজর কেড়েছে।
অশোক বাজপেয়ীর হিন্দি কবিতার সাবলীল অনুবাদ করেছেন ইন্দ্রনীল তেওয়ারী-
" তুমি চলে যাবে,
অথচ কিছুটা থেকে যাবে এখানে।"
সাম্প্রতিক তামিল(শ্রীলংকা) কবিতার অন্যতম মুখ রুদ্রমূর্তি চেরান। তার লেখার সুদক্ষ অনুবাদ ঝরে পড়েছে কবি শৌভিক দে সরকারের কলমে-
" খুব আবছা,ধেবড়ে যাওয়া
একটি ছবির মত ছিল
আমার স্বপ্নটি"।
( "একটি স্বপ্নের খোঁজ "/ চেরান)।
সাতজন গ্রীক কবির কবিতার সুন্দর অনুবাদ করেছেন উজ্জ্বল ঘোষ। সেগুলোর মধ্যে নোবেলজয়ী নিকিফরস ভ্রেত্তাকস এর কবিতাটি সর্বাধিক মনোগ্রাহী মনে হয়েছে। প্রখ্যাত কবি সুবীর সরকার পাঁচটি ইংরেজী কবিতার অনুবাদে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন-
" আমাকে ভুলে যেতে দাও
আমাকে নৌকোয় তুলে দিয়ে
ঘুমোতে দাও
অন্ধকারে ভেসে যেতে দাও।"
( "বিনষ্ট দিন"/ফ্রান্সিস কনফোর্ড)।
তাইওয়ানের কবি চি-চু ইয়াং -এর কবিতার অনুবাদ করেছেন মাসুদুল হক-
" আগুন
প্রজ্জ্বলিত ঘৃণার আগুন জ্বলছে"।
(" আমাজনের বন পুড়ছে"/ ইয়াং)।
সোমদেব চট্টোপাধ্যায়ের অনুদিত ব্রাজিলিয় কবিতার পংক্তি নাড়া দেয়-
" এবং আমি তখনই থামব
যখন আমার রক্তমুখ পুরোপুরি বন্ধ হবে"।
(" দর্পণে"/ আরমান্দো ফ্রেইতাস ফিলহো)।
কবি পার্থজিৎ চন্দের অনুদিত কবিতাগুলো বেশ ভালো লাগে।
সুমন গোস্বামীর অনুবাদে অ্যালেন গীনসবার্গের " আমেরিকা" শীর্ষক দীর্ঘকবিতাটি পাঠককে ভাবায়।
সবমিলিয়ে প্রায় সাত ফর্মার এই " ভাষান্তর সংখ্যা" সত্যিই পাঠককে আনন্দ দেবে বলে বিশ্বাস হয়। আর নিয়ে যাবে কবিতার বিশ্ব-দরবারে। কবিতাগুলির অনুবাদ নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়। পরিশেষে শব্দবাউলের নিঃশব্দে কাজ করে যাওয়া সম্পাদকের হৃদয়-লালিত ইচ্ছা( " একটি পূর্ণাঙ্গ কাজ করার ইচ্ছা থাকল") পাঠককে আশায় রাখল। আর এ'ধরণের কাজের পাশে পাঠকতো থাকেই!
সম্পাদক- শৌভিক বণিক
প্রচ্ছদ - কৌশিক বিশ্বাস
শুভেচ্ছামূল্য- ১৭৫ টাকা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন