শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩

ফেদেরিক গার্সিয়া লোরকার বক্তৃতার ভাবানুবাদ - গৌতম গুহ রায়





 দুয়েন্দে – কোথায় দুয়েন্দে ?

ফেদেরিক গার্সিয়া লোরকা


 লোরকা ১৯৩০-এ হাভানা ও ১৯৩৪-এ বুয়েনস-এ দুটি বক্তৃতায় দুয়েন্দে সম্পর্কে তাঁর অভিমত প্রকাশ করেন । পেঙ্গুইন থেকে বই আকারে তা প্রকাশিত হলে (‘Theory and function of deende’) যে এল গিলি কৃত স্প্যানিশ থেকে ইংরাজীর সেই অনুবাদের সাহায্য নিয়ে এই অনুবাদের চেষ্টা । গোটা বক্তৃতাটির অংশ বিশেষ এখানে রাখা হলো ।  -অনুবাদক- গৌতম গুহ রায় 


    



   
গান প্রসঙ্গে আলোচনায় ম্যানুয়েল তোরেস একবার বলেছিলেনতোমার গলা আছে, স্টাইল আছে, তবুও তুমি তখনই সাফল্য পাবে যখন তোমার দুয়েন্দে থাকবেআমাদের অনন্য প্রকৃতির সম্পদ জুসার, গুয়াদালেত, সিল বা পিসুয়েরজা নদীর মধ্যবর্তী ব্লু-হাইড- গুঞ্জিত হয় এইদুয়েন্দেগোটা আন্দালুসিয়ায় দুয়েন্দে নিয়ে সবাই মেতে থাকেন, জিনের পাহাড় থেকে কেডিজের সাগর এই নিয়ে বুঁদআন্দালুসিয়ার জনপ্রিয় লোকগান দেবলার স্রষ্টা অসাধারণ ফ্লেমেঙ্গ গায়ক এক লেব্রিজিনো ভাষায়যখন দুয়েন্দে ভর করে গাই, তখন কেউ আমার সমকক্ষ নয়, ধারেকাছেও আসতে পারবে না ঐতিহ্যময় জিপিসি নর্তকী লা মালেনা একবার ব্রেলোস্কির ব্যাচ বাজানো শুনে মোহিত হয়ে বলেছিলেনওলে! তো দুয়েন্দে প্রেরিয়!’ অথচ এই মালেনার- গ্লুক, ব্রাহমস না দারিয়েসে মিলহাদের মত বিখ্যাতদের গানের অনুষ্ঠানও বিরক্তিকর মনে হয়আমার প্রিয় শিল্পী, আমার পরিচিতদের মধ্যে সবচেয়ে সংস্কৃতিবান, যার রক্তে শিল্প সেই ম্যানুয়েল তোরেস তার নিজের নাটকনকটারনো দেল জেনরালাইফ- ফালা- কণ্ঠ শুনে মন্তব্য করেছিলেন

'All that has sound, has duende’ 

এইডার্ক সাউন্ডটাই আসল রহস্যএক উন্মাদনা, যা শেকড়ের মতো আমাদের রক্তে ঢূকে পড়ে, নরম মাটির গভীরে সে গাছের মূল যেভাবে ছড়িয়ে যায়, যা আমরা অনুভব করেও উপেক্ষা করি তবুও এটিই হলো শিল্পের সারবস্তুগ্যেটে তেরেসও এই ব্যাপারে একমতগ্যেটে দুয়েন্দের সংজ্ঞা সম্পর্কে অভিমত দিয়েছিলেনএটা এমন এক রহস্যময় শক্তিযা সবাই অনুভব করতে পারে, কোন যুক্তিতেই এর ব্যাখ্যা মেলে না অর্থাৎ দুয়েন্দে হলো এমন এক শক্তি যার কোন আচরণগত ব্যাখ্যা মেলে নাএটা একটা লড়াই, কোন ধারণা নয়প্রাজ্ঞ গীটার শিক্ষকের ভাষায় দুয়েন্দে কন্ঠে থাকে না, এটি উঠে আসে পায়ের পাতা থেকে, তরঙ্গের মতো আচমকা ঢেউয়ের মতোএর মানে হলো দুয়েন্দে জলজ্যান্ত রক্ত-মাংসের সংস্কৃতি আর ক্রিয়েটিভ দিয়ে গড়াএকটি রহস্য শক্তি যা প্রত্যেকে অনুভব করতে পারে অথচ কোন বিজ্ঞানের কাছেই এর ব্যাখ্যা নেই, এটাই আসলেদ্যা স্পিরিট অব আর্থএই সেই দুয়েন্দে যিনি চেপে বসেছিলেন নিতসের মাথায়, যে এর বাস্তব রূপ খুঁজে বেড়িয়েছিলেন রিয়ালতো ব্রিজ আর ব্রিজেটের সঙ্গীত, কিন্তু পাননিতিনি হয়তো জানতেনও না যে গ্রিক থেকে সরে এসেছে দুয়েন্দে, সে এখন আস্থানা গেড়েছে কেডিজের নাচে আর সিলিভারিয়ার গানে, দিয়ানু সিয়াদের রুদালিতেধর্মীয়কল্পের সেই সন্দেহজনক অপশক্তি, নুরেমবার্গে নেশার ঘোরে লুথার যার গায়ে কালি ঢেলে দেন, অথবা সেই দুষ্টু ক্যাবলা ক্যাথলিক পিশাচ যে বেশ্যার ছদ্মবেশে খ্রিস্টীয় আশ্রমে ঢুকেছিল বা সেরভান্তেসের কমেডির সেই কথা বলা বাঁদর যার বিষয়ে ছিল আন্দুয়ার ঈর্ষা বন্যতা, এসবের সঙ্গে দুয়েন্দেকে গুলিয়ে ফেললে ভুল হবে

 

আমি বুক ধরফর করা যে রহস্যময় কুয়াশাচ্ছন্ন দুয়েন্দের কথা বলছি তা সক্রেটিসের স্বেতবর্ণ ব্রহ্মদত্যি যে একই সাথে কঠিন কোমলযা বিষ খাওয়ার সময় আঁচড়ে আঁচড়ে চিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল তার মালিককে এবং দেসকার্তের সেই বিষাদাচ্ছন্ন প্রেতাত্মা, শিশুর মত সরল প্রাণোচ্ছল, যে জটিল জ্যামিতিক ফাঁদ থেকে বাঁচতে পালিয়েছিল জেলেদের কাছে, গান শুনবে বলেনিৎসের ভাষায় বলতে হয়, প্রত্যেক শিল্পীকে পূর্ণ নিখুঁত হতে হলে অসম্ভব লড়াই কষ্টের মূল্যেই তা অর্জন করতে হয়আর তাকে এই লক্ষ্যে নিয়ে যায় এই দুয়েন্দে, কোনো অতি-শক্তির দেবদূত নয়, না, গ্রিক আখ্যানের মিউজ-এর মতো কোন দেবতাও নয়যাই করি না কেন তার লক্ষ্যে পৌছনোর জন্য এই মূলগত পার্থক্যটা বোঝা দরকার সবার আগেদেবদূতেরা সাধারণত পরামর্শ দেয়, পুরস্কৃত করে, অথবা রক্ষা করে না সাবধান করেতারা হঠাতই প্রচণ্ড আলোর ঝলকানিতে চমকিত করে ওপর থেকে করুণা বর্ষণ করে, আর আমরা কোন রকম উদ্যম ছাড়াই সাফল্য চাই! দামাস্কাসের পথে বা আসিসির ছোট জানালার জাফরির মধ্য দিয়ে আনাগোনা করা দেবদূত হোক বা হেনরিক সুসোর মতো সেবাদাস হোলতাদের এই আলোকপ্রভা আটকানো অসম্ভব প্রায়, মুজরা যা করে তা হলো বাধ্যতামূলক নির্দেশ, মাঝেমধ্যে অনুপ্রাণিত করে।  কিন্তু দেবদূতের মতো তারা সাধারণ মানুষের জন্য কিছুই করতে পারে নাকারণ তারা অনেক দূরবর্তী দুস্থআমি নিজেই তাদের চাঙ্গা করতে মার্বেলের হৃদয় দিয়েছি দু-দুবারমিউজ অনুপ্রাণিত কবিরা প্রায়ই দৈব কন্ঠ শুনতে পায়, কিন্তু তার উৎস বা প্রকৃতি বুঝতে পারে নাএরা উৎসাহিত করে আবার ধ্বংসও করেও, যেমন আয়াপেলিনেয়ারের ক্ষেত্রে হয়েছিলরুশো তার ছবিতে যার দুর্দান্ত চিত্রণ করেছেনদেবদূতেরা শিল্পীর বুদ্ধিকে চাগিয়ে দেয়, এমন অনূভুতির সুড়সুড়ি দেয় যে কবি নিজেকে পবিত্র লরেল পাতার মুকুট পরা সম্রাট ভাবতে থাকেঅথচ বুদ্ধি কবিতার শত্রু, কারণ বুদ্ধি কৃত্তিমতার দোসরবুদ্ধিবৃত্তি মানুষকে এমন এক উচ্চতায় তুলে ফেলে যে তখন সে ভাবতে বসে যে একদল পিঁপড়ে তাকে গোগ্রাসে গিলে ফেলছে, একটা সামুদ্রিক মাছ তার মাথায় আছড়ে পড়ছেআসল পান্থশালায় বসে এক চোখে চশমা গায়ে রঙ মেখে বসে থাকা এসব মিউজদের উদ্দীপ্ত করার ক্ষমতাই নেই, এরা একেকটা অকর্মণ্যের ধাড়ি

 

দুয়েন্দে চর্চার কোনো সরল সমীকরণ নেই, ছকও নেইআমাদের ধারণা অনুযায়ী, গুঁড়ো কাচের প্রত্যেক কণার মতো রক্তের প্রতি বিন্দুতে আগুন ধরিয়ে আমাদের নিঙড়ে নিতে পারে দুয়েন্দেপারে আমাদের সযত্ন-লালিত কল্পজগতকে টেনে আনতে, ব্রিটিশ চিত্রের রুপালি জগতকে, গোলাপি রঙিন ঈশ্বরকে পর্যন্ত বাধ্য করতে পারে নতজানু হয়ে রঙ শূন্য কুচকুচে কালোতে ছবি আঁকতেপিয়ারনেসের হিমশীতল  ঠান্ডায় সম্পূর্ণ উলঙ্গ দাঁড় করিয়ে রাখে ১৯-শতকের প্রখ্যাত গীতিকবি মসেন সিন্টো ভাগুদগুয়েলকেস্প্যানিশ কবি জর্জ ম্যানেরিক ওসানার বিপদ্সংকুলতার মাঝে মৃত্যুর প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকেন,

আয়ক্রবেটের সবুজ পোশাকে সেজে ওঠে রিমবেদের শরীর,

বুয়েলভাদে ভোর হতেই কাউন্ট লটড়িমণ্ড- রেখে আসে মৃত চোখ

দক্ষিণ স্পেনের জিপসি বা ফ্লেমেঙ্গ শিল্পী, নাচে গানে যাই করুক না কেন তারা

জানে দুয়েন্দে না থাকলে সত্যিকারের আবেগ অসম্ভবযদি সত্যি তাদের দুয়েন্দে না থাকে তবে ভঙ্গিতে দর্শককে বোকা বানানোর চেষ্টা হবে, এই দুয়েন্দে ছাড়াই আমাদের বোকা বানানোর চেষ্টা অনেক লেখক শিল্পীও করেছেনতবে যদি ঠিকঠাক লক্ষ্য করা যায়, চোখ-কান খোলা রাখলে এই চাতুরি ধরা পড়বেইসাবেকি যাবতীয় ধারণার সমস্ত ব্যাকারণ বা আঙ্গিককে ভেঙ্গেচুড়েই দুয়েন্দে আসেনতুন আলোকচ্ছটা, একঝলক মুক্তির বাতাস যা অসম্ভবকে সম্ভব করার ক্ষমতা রাখে, ক্ষমতা রাখে নতুন শতফুল বিকশিত করার, তৈরি করতে পারে সেই উন্মাদনার যা ধর্মীয় আবেগজাত উত্তেজনার সমানআরবের নাচ-গানে দুয়েন্দেকে স্বাগত জানানো হয় ঈশ্বরের নামে, আল্লাহ, এটা সেই ষাঁড়ের লড়াইয়ের ওলে- মতইদক্ষিণ স্পেনের সঙ্গীতে দুয়েন্দে এলে চিৎকার ওঠেভিভা ডাইসো’, পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে যোগসাজশের এক প্রাণবন্ত মাধ্যম, মানবিক আবেদন মুখরতা এই আবেগ একই সঙ্গে কাব্যিক বাস্তবএই অবস্ট্রাকশন যখন চরমে পৌঁছায় উপস্থিত প্রত্যেকের মধ্যে সঞ্চারিত হয় তার আবেগযে শিল্পী নিছকই অর্থহীন বিষয়কেও মানুষের মনোগ্রাহী করে উপস্থাপন করতে পারে সেই জানে দুয়েন্দের কলাকৌশল , ঠিক তেমনই যে দুয়েন্দেকে আবিস্কার করে এই সংজ্ঞাহীণ রক্তমাংসের উপলব্ধি তা এড়িয়েও যেতে পারে নাকয়েক বছর আগে এক নাচের প্রতিযোগিতায় ছিপছিপে সুন্দরীদের হারিয়ে পুরুস্কার ছিনিয়ে নিয়েছিলেন এক অশীতিপর বৃদ্ধাএকদল মিউজ দেবদূতের লাস্যময়ী শরীর আর উদ্দাম হাসিকে হারিয়ে যার জেতার কথা ছিল তিনিই জয়ী হলেনযে কোনো শিল্পে দুয়েন্দে থাকতে পারে, কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে গানে, নাচে কবিতায় তা থাকার সম্ভাবনা বেশিকারণ সেখানে মাধ্যমটা জীবন্তআর এই শিল্পের নিয়তিই এমন যে জন্ম হয় মৃত্যুর সওগাত হাতে নিয়ে

 

অনেক সময় কবির দুয়েন্দেকে আমরা পাই উপস্থাপকের মুন্সিয়ানায়লেখক যথাযথ না হলেও তার সৃজনের ভেতর উপস্থাপক নিজের ক্ষমতায় এক অনন্য দুয়েন্দে সৃষ্টি করতে পারেনইলানোরা দুসের নিজস্ব ক্ষমতার এভাবেই সাবেকি বস্তাপচা সামগ্রিকে নিয়েই দুর্দান্ত উপস্থাপনা করতেনঅথবা পাগনিনি, গ্যাটের মতে যিনি অপ্রয়োজনীয় জিনিসকেও বানিয়ে তুলতেন অসামান্য মেলোডিআমার নিজের চোখে দেখা একটা সস্তা ইতালিয়ান গান পুয়োর্তো ডি সান্তা মারিয়ার সেই হাস্যোজ্জ্বল মেয়েটির কাছে হয়ে উঠেছিল অমূল্য স্বর্ণ নাগিনীপ্রতিটি জায়গায় উপস্থাপক পুনরাবিষ্কারক, শূন্যগর্ভ দেহে জীবন্ত রক্ত আর শৈল্পিক জিনিয়াসের সম্মিলকযে কোনো দেশেরই শিল্পে তাদের নিজের মত অ্যাঞ্জেল মিউজ দুয়েন্দে আছেজার্মানি বরাবর মিউজের আর ইতিলি অ্যাঞ্জেলেরস্পে চিরকাল দুয়েন্দেরযেখানে প্রভাতের লেবু নিং ড়ানো থেকে দুয়েন্দের শুরু, একতা জাতি যা মৃত্যুতে উৎসর্গীকৃত

যে কোন দেশেই মরণ শব্দের অর্থ অন্তিম যাত্রামৃত্যু আসে আর অন্ধের লড়াই অমীমাংসিত পড়ে থাকেস্পেনে তা হয় না, এখানে মরণকে উৎসাহিত করা হয়স্পেনে অনেক মানুষ মৃত্যু পর্যন্ত চার দেয়ালে অন্তরীণ থাকেনমৃত্যু তাকে মুক্ত করে, প্রথম সূর্য দেখে তখন তাঁরাস্পেনের অনেক মানুষ মৃত্যুর পরই জীবন্ত হয়ে ওঠেন যতই হাস্যকর বলো, যা পবিত্র অথবা গভীরভাবে দেখাতে চাও স্পেনীয়দের কাছে তা ভীষণ চেনাকুইভেদোরকঙ্কালের স্বপ্নবা ভালদিস লিল-এরপচাগলা ধর্মযাজক অথবা তারও অনেক আগের, সেই সপ্তদশ শতকের মারবেল

হাইওয়েতে প্রসব করতে

গিয়ে মরতে মরতে যে বলতে পারে

আমার জরায়ুর রক্ত

ঢেকে দিচ্ছে ঘোড়াগুলোকে

আর ঘোড়াগুলো খুর দিয়ে আগুন

 

জুরবারানের আঁকা চাঁদপানা মুখ, এল গ্রীসোর হলুদের নানা রকমফেরসিগুয়েনজার কথাসাহিত্যগ্যায়ার সমস্ত শিল্প, এল এসকোরিয়ালের গির্জার এপস, আমাদের বিভিন্ন পলিক্রম ভাষ্কর্য, ওসাকার কবরস্থান, প্রভৃতি সবকিছুই সেই সেন্ত আন্দ্রেস দি টেইকসিকো তে অভিযাত্রার শৈল্পিক রূপ, এখানে মরণও পবিত্র সহযোগীনভেম্বরের রাতে লন্ঠনের আলোয় অস্টারিয়ার মহিলার মৃত্যু পরবর্তী শোকগাথা, সিবলদের তোলেরো মেজোরকা- গর্জার নাচ যা শহরের অসাধারণ ষাঁড়ের লড়াইয়ের প্রকাশে মৃত্যুর বিজয়কেই ঘোষণা করেএক্ষেত্রে গোটা বিশ্বের তুলনায় একমাত্র ম্যাক্সিকোই স্পেনের কাছাকছি আসতে পারে মৃত্যুর সামনাসামনি হলেই দেবদূত মাথার ওপর চক্রাকারে ঘুরতে থাকে আর বরফের গুঁড়োর মত অশ্রুকণা ঝরতে , ঝরাতে  থাকেকাঁদতে থাকে আর নিজেই অজস্র এলিজি লিখতে থাকেযেমন লেখেছিলেন কীটস, ভালসান্দিনো, হেরেরা, হুয়ান রামোন গিমনেজআরে বাবা সে কী কাঁপনসরু পায়ের উপর মাকড়সা যেভাবে কাঁপতে থাকে দুয়েন্দে আসবেই না যদি মৃত্যু চেতনা না থাকেমরণের গুহায় ঝাঁপ দেওয়ার আকুতি না থাকলে যদি নিশ্চিতভাবে মৃত্যুর ঝুঁটি ধরে ঝাঁকানোর বাসনা না থাকে ...

দুয়েন্দে মনভরানো বাক্যে তুষ্ট হয় না কখনো, হবেও নাকল্পনায় হোক, কথায় হোক, সৃজনে হোকদুয়েন্দে চায় খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে স্রষ্টার মুখোমুখি লড়াইদুয়েন্দে চায়ভালোবেসে ক্ষতবিক্ষত হতেএই ক্ষতের যন্ত্রণা কখনো নেভে না কবিতার মনমোহনী জাদুর কেন্দ্রে থাকে এই দুয়েন্দেযেই সে ক্ষমতার অধিকারী হোক না কেন তার দিশা ওই কালো গভীর জলের তৃষায়কারণ যেখানে দুয়েন্দে আছে তা সহজেই সংযোগ রক্ষা করতে পারে, এই জন্য তাকে ভালো না বেসে পারা যায় না কবিতার ক্ষেত্রে এই প্রকাশের অভিব্যাক্তি সংযোগের জন্য লড়াই এতটাই তীব্র যে এর সঙ্গে মৃত্যুর যুদ্ধের তুলনা চলে আমরা জানি দুয়েন্দে চূড়ান্ত সংঘর্ষ আত্মাহূতি চায়নকল ভঙ্গি সেখানে অনূভূতিকে চাপা দেয়নি বরং প্রকাশ করেছে অনুভূতির তীব্রতায়স্পেনের মতো অনেক ওরিয়েন্টাল দেশে যে কোন নৃত্য ধর্মীয় আচরণের সঙ্গে যুক্ত সেখানে দুয়েন্দের কোন বন্ধন নেইসে অবাধে খেলে বেড়ায় কেডিজের নৃত্যশিল্পীদের দৈহিক ভঙ্গিতে , যা দেখে যুবকেরা আত্মহারা হয়, সমাজের কেউকেটেরা লাফিয়ে উঠেযে কোন শিল্পে দুয়েন্দে থাকতে পারে, কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে গানে, নাচে কবিতায়ই তা থাকার সম্ভাবনা বেশিকারণ সেখানে মাধ্যমটা জীবন্তআর এই শিল্পের নিয়তিই এমন যে জন্ম হয় মৃত্যুর সওগাত হাতে নিয়েক্লাসিক্যাল জগতের সমস্ত দুয়েন্দের যেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী এই শিল্পের মহা-উৎসবে ভিড় করেছে, যেখানে মহান মানুষ আবিষ্কার করেছে তার ক্রোধ, তার বিষন্নতা, তার দুঃখস্পেনের মৃত্য বা ষাঁড়ের লড়াই আর মানুষকে আকর্ষণ করে না, সে চায় এই একঘেয়ামির হাত থেকে পালাতে

 

আসলে থিয়েটারের মতো এইসব জীবন্ত শিল্পে দুয়েন্দে মানুষ খুঁজে না পেয়ে বিরক্ত হয়ে দৈনন্দিন বাস্তবতা থেকে পালাতে চায় সবচেয়ে গুরুত্বের ব্যাপার হলোশত চেষ্টা করলেও দুয়েন্দের পক্ষে নিজের নকল করা সম্ভব নয়, যেমন উত্তাল ঝড় এলে সমুদ্রের নিজেকে নকল করা কঠিনযে দুয়েন্দে ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে প্রথম কস্পোসতোলার প্রভু মাতেও- সন্তের মুখমণ্ডল রাঙিয়ে দিয়েছিল লাল রক্তে, সেই একই দুয়েন্দে ক্রসের সেন্ট জনের মধ্যে জাগিয়েছিল অসহ্য শোক বা লোপ দি ভোগের সনেটে উলঙ্গ পুড়িয়ে মেরেছিলো পরীদের সে দুয়েন্দে জগিয়েছিল শাহগুণের টাওয়ার বা সরম পাথরকুচি দিয়ে তৈরি করেছিল কালাতায়ুদ বা তেরুয়েল, সেই দুয়েন্দেই গ্রিসকে করেছিল মেঘমুক্ত এবং কুয়েভেদের বৈইলিফও এক সজোড় লাথিতে ভাগিয়েছিলো গ্যায়ার কল্পিত দৈত্যকে

বৃষ্টির রোমান্সে মধ্যে নিজের সাম্রাজ্যের ধূসর জগৎ থেকে নিঃশব্দে বেরিয়ে আসেন ভেলাজকুয়েজ, শীতলতা খুন করতে পারে কিনা দেখার জন্য তুষারের কনকনে শীতে উলঙ্গ দাঁড়িয়ে থাকেন হেরেরা, আর এই সময়ই জ্বলে ওঠে দুয়েন্দে, বেরুগুয়েওকে ছুড়ে ফেলে সেই অগ্নিকুন্ডে, আবিস্কৃত নয়া সংস্কৃতির নয়া দিগন্ত সব শিল্পেরই দুয়েন্দে আছে, কিন্তু তাদের মিলনবিন্দু একটিই, যেখান থেকে ম্যানুয়েল তোরেসের‘’ ধূসর সঙ্গীত উঠে আসে, অতীন্দ্রিয় অনিয়ন্ত্রণাধীন সেই চরম অনুভূতি যা গাছপালা, শব্দ, ক্যানভাস, অক্ষর সবকিছুরই প্রধান ভিত্তি

 

হে ভদ্রমহোদয়েরা, আমি তিনটে তীর তুলে নিয়েছি আর আনাড়ির মতো তা ছুঁড়ে দিয়েছি মিউজ, দেবদূত দুয়েন্দে মিউজ চুপ করে তাকিয়ে থাকে গরুর মতো ঘাসের দিকে লোভাতুরদেবদূত মনে হয় আয়ান্তেনেল্লার মেসিনার চুলের দিকে বা লিপ্পির তিউনিক বা মেসোলিনো রুশোর ভায়োলিনের দিকে

 

দুয়েন্দে - কোথায় দুয়েন্দে? বাতাস ফুঁড়ে ছুটে এলো না তীর, সেখানে শূন্য বাতাস,মনের, যা একনাগাড়ে পাক খেতে লাগলো মৃতের খুলির ওপর, নতুন দৃশ্যের সন্ধানে, অথবা আনকোরা অনভ্যস্ত কোন সৃজনে, একটা বাতাস খেলে যায় যেখানে শিশুর লালাগন্ধ, থ্যাতলানো ঘাসের গন্ধ, ছদ্মবেশী পিশাচি, যেখানে ঘোষিত হচ্ছে অন্তহীন ধর্মান্তকরণ (Baptism) নতুনের বিজয় ধ্বনি বাজে সেখানে








 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...