সুরা ও চুম্বনের কবিতা
গৌরব চক্রবর্তী
মৃত জাহাজের খোলে স্মৃতির পরত লেগে আছে
পুরোনো জলের ঘ্রাণ দাগ হয়ে সেঁটে আছে গায়ে
কবে কোন স্রোত যেন দখল করেছে এ শরীর
কবে কার ভুলচুক সমস্ত তলিয়ে নিয়ে যায়...
কার কত স্মৃতি জমা কার কত স্মৃতি থাকে বাকি
কার কত সমর্পণ কার কত ছেড়ে ছেড়ে রাখা
নিজের ভেতর থেকে তুলে আনা নিজের যতটা
অথবা নিজের করে অপরের হয়ে শুধু থাকা
বুঝিনি অলসযাম সান্ধ্য কসরত ক্ষয়া ভোর
বুঝিনি আলোর রেনু গুঁড়ো গুঁড়ো চাঁদের পসরা
মৃত জাহাজের সেই খোলে লেগে থাকা কিছু ধুলো
পুরোনো জলের ঘ্রাণে হয়তো খানিক তবু ধরা
সুরা ও চুম্বনরত অথবা আলেখ্য স্মৃতিগামী
আমার কলমে থাকে-- আমি শুধু লিখি আর থামি
জার্নি
পীযূষ সরকার
বুদ্ধিদীপ্ত সবুজ ধানখেত। তার ওপর পড়েছে ঘন রোদের সর
লাঙল গ্রামের গা ঘেঁষে এমন দৃশ্য দেখতে দেখতে বক্সিরহাট যাচ্ছি
বাসটি যেখানে সেখানে থামছে। তুলে নিচ্ছে
লাল শাড়ি, কোলের শিশু, বৃদ্ধ, শিক্ষক, স্কুল-পড়ুয়া, উদাসীন যুবতী...
জানালার ঠিক পাশে বসে আছি
অর্ধেক খোলা কাচ। হুহ হাওয়া
সামনের সিটের পিছন দিকে একটি হৃদয়বন্ধনীর ভেতর সযত্নে লেখা - রাজু + নীলিমা
আজ আমার মন ভালো
একজন বয়স্ক জেঠুকে বসতে বলে
রড ধরে দাঁড়িয়ে পড়লাম...
ইভের জন্য
রঙ্গন রায়
আসামের বিহু নাচ কেনার খুব শখ ছিল।
তুমি টোকা কিনে নিয়ে এলে
বললে, আসামের জিনিস ...
ঠাকুরদা রেলে চাকরি করতেন। সাহেব ছিলেন।
এভাবেই আমি আসাম কিনে ফেলি।
যেদিন গণ্ডার দেখলাম প্রথম
বাবার এক অসমীয়া বান্ধবীর দুর্দান্ত স্বাস্থ্য
আমার মনে পড়ে যায়,
কেন পড়ল মনে? এরকম হয়, অনেকেরই হয়
যেভাবে প্রথম আদমের মনে পড়েছিল ইভের কথা –
বেঁচে থাকার কথা
যে শব্দে কবিতা নেই
তাপস দাস
একটি কথা যাতে কবিতা নেই
তাকে তুমি হারমোনিয়াম বাজানোর স্টাইলে,
আঙ্গুলে তুলে নাচাতে শুরু করলে
কেউ তোমার দিকে তাকালো না
তোমার ঠোঁটের কথা চোখের কাছে এল
চোখের কথা ঠোঁটে ডুবে গেল
আয়না থেকে আলো চলে এল ঘরে
এই আলো আমাদের নয়, বেড়া ভাঙতে এসেছে
বেড়ায় না আঁকা রবীন্দ্রনাথের ঘুম কাড়তে এসেছে
একে তাড়িয়ে দাও
আমাদের বিছানা মানে হাওয়া কত উড়ি ওখানে
চিত সাঁতারের উড়ি, ডুব সাঁতারে উড়ি
উপর নীচে শূন্য উবুদ হয়ে শুয়ে
তারও সুগন্ধ নিই
আর বাড়ি ছেড়ে পালাই না
এখন বাড়ি পালায়, বাড়ির পা কল্পনা করি
পায়ে পড়ি
বাড়ি আর আমাতে ফেরে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন