শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩

শিপ্রা পাল -র অণুগল্প

 মুজরা


শীলা মুজরা করতে যায় প্রায়ই, এ নিয়ে ওর শ্বশুরবাড়ির লোকজন ভীষণ অসন্তুষ্ট। কমবয়সী, কোমর অবধি চুল, হালকা-পাতলা গড়নের এই মেয়েটি এবার কাউকে কিছু না বলে এক অবাঙালী পরিবারের সাদীতে চলে গেছে বাংলা ছেড়ে রাজস্থান মুলুকে। বছর খানেকের শিশুটিকে নিয়ে ওর শাশুড়ী পড়েছে মহা-বিপদে— সারাদিন মানুষের বাড়িতে ঠিকা-ঝির কাজ করে সন্ধ্যায় একটি এপার্টমেন্টে ছেলেসহ হোমগার্ডের ডিউটিও করতে হয় তাদের, কারণ মাথাগোঁজার জন্যে এই জায়গাটিতে তারা ঘর বাথরুম সব ফ্রি পেয়েছে — তাই তো এই মুহূর্তে অবস্থাটি দাঁড়িয়েছে মরার উপর খাঁড়ার ঘা। 


শীতের এই রাতে বালতিতে গরম মেশানো জল শরীরে মগ দিয়ে ঢালতে ঢালতে শাশুড়ী বিনয়া একা-একাই বকবক করে, এবার আসুক বাচ্চা কোলে দিয়া ঘর থেইক্যা বাইর কইরা দিমু। শীলার স্বামী মানিক এ ব্যাপারে কিছু না বললেও মনে মনে বেশ খানিকটা অভিমান নিয়ে শীলাকে গালাগালি দেয়। কতো করে বললাম এবার যাস না শীলা— বাচ্চাটা ছোট, তারমধ্যে এ বছর শীতের প্রকোপটা বেশি কিন্তু এভাবে চুপিসারে যে চলে যাবে সবার অলক্ষ্যে, মানিকও তো তা ভাবতে পারেনি। পাঁচ বছর প্রেম করে যখন ঠিক করলো বিয়ে করবে শীলাকে, সেসময়ও ভীষণ অশান্তি। বাবাকে রাজি করানো গেলেও মা কিছুতেই হ্যাঁ করছে না, মা বিনয়ার একই কথা ওই নাচনেওয়ালী মাইয়ারে আমি ঘরে তুলুম না— ব্যাস এ আমি কইয়া দিলাম, এইডাই আমার শেষ কথা।  মানিক অনেক-করে হাতে-পায়ে ধরে, বিয়ের পর আর নাচবে না এই শর্তে মাকে রাজী করিয়েছিল। 



বিয়ের একমাস যেতে না যেতেই শীলার কাছে মুজরা করার প্রস্তাব আসতে থাকে, প্রথম প্রথম একটু নিমরাজি হলেও পরবর্তীতে নিজেকে আর সামলাতে পারে না শীলা। স্বামীকে নানা বাহানা দিয়ে সম্মতি করালেও শাশুড়ী নারাজ, নরম মানুষ শ্বশুরকে তবুও অনেকটা পটকিয়েছে কিন্তু মারমুখী শাশুড়ী বিনয়া। বিয়ের পর প্রথম সেবার স্বামী আর শ্বশুরকে বলে শীলা চলে যায় নাচতে, তারপর যখন এক সপ্তাহ পর এসে প্রথমেই শাশুড়ীর হাতে কড়কড়ে হাজার টাকার একটি নোট হাতে গুছে দেয় শাশুড়ী তখন বড়-বড় চোখে তাকালেও মুখে কিছু বলে না। 



খাওয়া-পড়ার কোনোটাই অসুবিধা হয় না মুজরা করতে গেলে, ভরা বাড়িঘর-লোকজন, জমজমাট পরিবেশ বরং কিভাবে যে আনন্দে সময়গুলো চলে যায় শীলা তা বুঝতেই পারে না, বিয়ে-সাদী নামকরণ পূজা-পার্বণ গৃহপ্রবেশ এমন নানান উৎসবে নানা ধরণের গীত-নৃত্য চলে।  তবে একেকটায় একেকরকম, সব ভিন্ন ভিন্ন নাচ-গান, সব আলাদা আলাদা পোশাক-পরিচ্ছদ। বাজনা বাজে, সুর তোলে আর কোমর থেকে আন্দোলিত হয়ে নেশার মতো শীলার শরীর দুলতে থাকে... দুলতে থাকে, দুলতে থাকে।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...