দিন কি এমন হবে
বিচ্ছিন্ন হতে হতে
আমাদের আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না। ঠিক যেভাবে মানুষের গন্ধ গায়ে লাগলে হস্তীশাবককে তার দল
আর ফিরিয়ে নেয় না, ঠিক সেভাবেই আমাদের হয়তো একদিন ব্রাত্য করে দেবে
প্রকৃতি। সময় কথা বলবে একদিন পৃথিবীতে মানুষ ছিলো...মানুষের জন্য বাড়িয়ে দেওয়া
মানুষের হাত ছিলো।
আর ছিল রোদ উপচে পড়া
একটা সকাল। সে সকালের গায়ে বড় আলতোভাবে আটকে থাকতো ফেলে আসা দিনের গন্ধ। বড্ড মেদুর সে
সব দিনে আমাদের মাথার ওপর...পিঠের ওপর হাত থাকতো পূর্বজদের। হয়তো সে হাত
সময়ের সাথে সাথে রুক্ষ হয়ে এসেছে, কিন্তু আদতে সে হাত বড় মোলায়েম। তার পরশে
শান্তি আসে...আকাশে আসে মেঘ...নামে বৃষ্টি।
চারিদিকে তখন সবুজের
বান ডাকে। পাতায় পাতায় কিভাবে ঘন সবুজ নামে চুঁইয়ে চুঁইয়ে। ক্রমঃশ নীচু
হয়ে আসতে থাকে আকাশের কালো কালো যত মেঘ।আর আরো সবুজ হয়ে আসে সারা
পৃথিবী-মাঠ-ঘাট-মাটি-জল।
সরু রাস্তা থেকে
সাইকেলের চাকা বড় রাস্তায় গড়াতেই যতদূর চোখ যায় একটা মানুষও দেখা গেল না।সন্ধ্যে
তখন পেরিয়ে এসেছে অনেকটাই। ল্যাম্পপোস্টের নীচ থেকে ফিসফিস আওয়াজ পেয়ে দেখি দু
তিনটে মাথা এক হয়ে অন্ধকারে কথা বলছে। কিন্তু এভাবে কেন? কেন এভাবে
ধীরে ধীরে আমাদের সমস্ত শহরকে ধীরে ধীরে ভুতুড়ে করে ফেলা হচ্ছে?তাহলে কি কেউ টের
পেয়েছে এই সব শহর যা একদিন মানুষের ঝলমলে শহর ছিল...ছিল কথাবার্তা-হাসি-গান আনন্দে
ভরপুর, তাকে মৃতদের শহর
করে দেওয়া যাবে সহজেই।
তাহলে কি আমরা শুধু
প্রেত... শুধুই প্রেত হেঁটে বেড়ায় শহরের সমস্ত পথেঘাটে? ফিসফিস কথা
বলে। কথা বলে আগত দিনের ভয় নিয়ে। আর এভাবেই ভয়ের মাত্রা বাড়ে।ভয়ের পরিধি ছড়ায়। একটি ভয়ের
বুদবুদ থেকে সঞ্চারিত হয় আরো আরো ভয়ালো বুদবুদ... তা থেকে
আরো...আরো।যা আমাদের এখন এনে ফেলেছে এক চরম খাদের ধারে।
যেখান থেকে একদিন মেঘে
ঢেকে থাকতো সমগ্র দৃশ্যপট... দূরে সবুজ পাহাড়... তাদের মাথায়
মাথায় বরফ... সেখানে এখন শুধুই নীচের খাদে কালো অন্ধকার... বাকি সব
ঘোলাটে। সেখান থেকে মৃদু আওয়াজ আসছে কারা যেন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে একদিন ঘুরে
দাঁড়াতো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন