শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩

প্রথম দশকের কবি সোমনাথ গুহ - র মুক্ত গদ্য "বন্দীর জানলা"



 বন্দীর জানলা     


জানলার ফাঁকে বাতাস যেটুকু আলো নিয়ে খেলে সেটুকুই জীবন। ছোট বেলার কথাই বারে বারে মনে আসে। রূপকথার কাহিনীর এক একটা পাতায় শৈশব, ভোরের তারাটির মতো আড়ালেই থেকে যায়। নাগরিক বোধ ধুকতে থাকা যন্ত্র কে কেবল বাইরে থেকেই আদর করে।ফুলদানির গায়ে আঁচড়ের দাগ লক্ষ্য করছি, বাগানে ফুলেদের মাঝে বহিরাগত সংলাপ লক্ষ্য করেছি। কখনো কখনো একটা ধ্বনি অনেক প্রতিধ্বনি জুটিয়ে ফেলে। ইদানীং রাতের দিকে ঘুম ঘর ছাড়ে। জানলার কাছে মুখ রেখে নিঃশব্দ হই।জানলার গায়ে সাড়ি সাড়ি পিপড়ের দল ছুটে চলে। চাঁদেরকণা পিঠে করে এভাবে কাউকে আগে চলতে দেখিনি। বেঁচে থাকার প্রশ্ন বরাবর ভাবিয়েছে, এখন মৃত্যু ভয় ঘিরে ফেলেছে আমার শহর। পেটের ভেতর মহাশূন্য ফাঁদ পেতেছে। একে একে ছিটকে যাচ্ছে সময় চিহ্নিত ছবি। হারিয়ে যাচ্ছে শান্ত শীতল নিশান। মানুষকে চিনে নিতে কষ্ট হচ্ছে মানুষের।

     ২
একটা সময়ের পর উঠোনে কাপড় মেলার দড়ি গুলো কেমন একা একা ঝুলে থাকে। না থাকে তাদের কোন ভার না থাকে অজুহাত। দুপুর গড়িয়ে শেষে দুটো বুলবুলি কিংবা চড়ুই সেখানে সংসার করে দেখি। ওদের চঞ্চলতায় কোন ঔদ্ধত্য নেই, কেবলই খুনসুটি। ভাতঘুম ছেড়ে ওদের প্রতিরূপ খুঁজি। নিজের বলতে তখন নিজের ছাড়া কেউ নেই। প্রতিটি কোন থেকে সরল মাত্রায় নেমে আসে সুখ, প্রতিটি কোন থেকে সরল মাত্রায় নেমে আসে বিরাগ। কিসের বদলে যকেরধন বুঝতে বুঝতেই জাল বোনা শেষ হয়। শেষ হয় মনের ভেতর অর্ধেক সূর্যোদয়। আগুন নিভে গেলে মিলে যায় প্রতিরূপ। এক সময় বাড়িতে এক বুড়ি আসতো। চাল থেকে পাথর আলাদা করে এক গ্লাস জল চাইতো। মা পয়সা দিতে গেলে, বলতো 'দুটো ভাত দে' তার সে খাওয়ার দৃশ্য আমায় জীবনভর ভিখিরি করেছে। এখন শহরের স্থবিরতা স্থির জলে সেই পাথর গুলোই মিশিয়ে দিচ্ছে।আর আমি আলাদা করছি বসে বসে। বুড়িটার কথা মনে আসছে, মনে আসছে বুলবুলিটা আর চড়ুইটার কথা।



সদ্য অন্ধকারে মিলিয়ে যাওয়া একটা কুহক খুব কাছে এসে চলে যাচ্ছে ফিরে আশার কোন দাবী রাখতে পারছি না। কোন এক গুঢ় সত্য হাত পা অসার করে দিচ্ছে। জাদুকরের অঙ্গুলিহেলনে ইথার তরঙ্গ দুলছে বিছানার কাছে। পায়ে পায়ে হাটার শব্দ ছুঁয়ে যাচ্ছে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত। ঘরের ভেতর এই এক জীবন্মৃত বোধ খেলিয়ে তুলছে অতল গহ্বর থেকে। ঘরের বাইরে যাওয়ার দুটো পথ খোলা। একটি শিউলি ফুলের গন্ধ নিয়ে অপেক্ষা করছে অন্যটি সংক্রমনের নিকট সপে যাচ্ছে নিজেকে। দেখতে দেখতে সাবানের ফেনায় ভরে যাচ্ছে ঘর। এই ঘর এই মেঝে সবকিছুই যেন চরাচর বিহীন। মনে হচ্ছে এক আকাশ তুলো যেন কোথা থেকে উড়ে এসেছে। একটু অন্য রকমের সুখ মিশে যাচ্ছে ঘুন ধরা শহুরে মস্তিষ্কে। উঠোনের ঠিক মাঝখানে ঘাসেরা পাট্টা নিয়েছে তাদের জমি। গর্ত থেকে নজর রাখছি তাদের। অনাবাসীর মতো কাটছে এই ঘরমুখো জীবন। পথ হারিয়ে রিফিউজি ক্যাম্পে যে জীবন অনেককাল আগে কাটিয়ে এসছি সেই উঁকি দিচ্ছে ওখান থেকে। দরজা দুটোই আগের মতো হাসছে কিন্তু গালগুলো আর ফোলা নেই। চারপাশে আলো কমে আসছে ধীরেধীরে, দিন কিংবা রাত নেই এখন। এখন মাঝামাঝি একটা সমঝোতার সন্ধ্যা বা মাঝামাঝির একটা ভোর। চারপাশে শুধু কাকের শব্দ। দরজায় ঝোলানো কদম ফুল খুঁটিয়ে নিতে ভীর করেছে ওরা। ভীরে মধ্যে থেকে ভেসে আসছে মৃত মানুষের স্বর। আর্তনাদের মতো ঘড়ির শব্দ দেওয়াল থেকে পিছলে পড়ছে। কুহক ফিরে যাচ্ছে। কুহক ফিরে যাচ্ছে

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...