ঘরবাড়ি
ঘরবাড়িগুলি নিকটবর্তী হয়
যে মনোরম আলোয়
আমাদের সম্পর্কগুলি ডালপালা ছড়িয়েছিল
তার গায়ে মৃদু বরফের দাগও লেগে আছে।
আমাদের হাসিআঁকা ছবি, নরম রোদের বোঝাপড়া,
কৈশোর ও কেরিয়ার লাগানো সাইকেল
আবার জীবন্ত হয়ে আসে
বাধ্য ছাত্রছাত্রীর মতো গাছগুলি সার বেঁধে আছে
চিৎকার করে নাম ডাকছে বরফকলের মালিক
আমরা পিছনের বেঞ্চে বসে জীবনের সাথে ফিসফিস করছি
পা
আমাদের পা কীভাবে ছোট হয়ে গেছে টেরই পাইনি।
চারপাশ তালাবন্ধ হয়ে পড়ে আছে।
কর্মহীন হতে হতে ক্লান্ত হয়ে ঘোড়া ঝিমুচ্ছে ছায়ায়
তার ঘামের গন্ধে সন্ধ্যা নামলেও কেউ বাইরে বেরোচ্ছে না।
মানুষের মুখ বন্ধ। চোখ বন্ধ।
প্রতিটি বাড়িতে দরজা যদিও আছে, ঢোকা যায়না,
বেরতেও পারে না কেউ।
টুপি
এক প্রৌঢ় পাঠ করলেন 'এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না'
শ্রোতারা টুপি উড়িয়ে দিল সোনালি আকাশে।
(শ্রোতারা হাততালি দেয় আর যে নারী
কবিতা ভালবাসে তাকে এনে দেয় গভীর রাতের এক টুকরো কেক।)
বাতাসে ভর করে সেই টুপি ক্ষুধা ও মৃত্যুর পিছনে হুইসল বাজালো
ঝড়ের জামা খুলে বেরিয়ে এলো নীলরঙা
পাখি ও জলের শীতল কলসী।
সারাদিন ধুলো রোদ ঝাড়ি
সারাদিন ধুলো রোদ ঝাড়ি, তালতবাহীন বল গড়িয়ে দিই
হইহই করে রোগ ঘুরে বেড়ায় চড়কির মতো
আমাদের কুয়ো বুজিয়ে ঘর তোলা হয়েছে, তার ঠান্ডা জলে
রাতে ঘুমোতে যাই
স্বপ্ন দেখার পর ঘুমের বাচ্চারা যখন হাততালি দিয়ে হেসে ওঠে
সকাল ভেঙে যায়, সারাদিন তার টুকরোগুলি
জোড়া লাগাতে লাগাতে আমাদের জীবন ফুরিয়ে যায়।
অপেক্ষা
জলের অপেক্ষায় গাছ বসে আছে।
তার মুখের কাছে একটা নদী ধরতে হবে
আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষের মুখের কাছে যেমনভাবে কবিতা ধরতে হয়।
এই ফাঁকিবাজি, আলো নিভিয়ে বসে থাকা ঘর,
উন্মাদের তৃষ্ণা, মহার্ঘ ভ্যাক্সিন - এই সবকিছু নিয়ে গাছটি
ডালপালা ছড়িয়ে রাখতে চাইছে।
যে নদী জল দেবে সেও কালো রেখা পার করে
যথার্থ ভগবানের খোঁজে বেরিয়ে পরেছে -
তার গান বৃষ্টির মতো সাদা হয়ে নেমে আসছে বৃক্ষের কানে।
অকারণে
অকারণে একটা দিন কেটে তার টুকরোগুলি
রোদে ফেলে রেখেছ।
এর থেকে গাছ হবে না -
এর আত্মায় মুমূর্ষু সময় লেগে আছে।
অন্ধকার গিলে গিলে রাত পৃথুলা হয়েছে
তার কোমরে জমেছে আশঙ্কা ও মেদ
ভারাক্রান্ত এই শরীর নিয়ে সে চলবে কী করে?
মুখের মাস্ক ঠিক করে সূর্যের সাত অশ্ব
ভোরের কথা বলছে
তাদের হ্রেষা এত মৃদু কানে আসছে না বললেই চলে।
কারো কোন দোষ নেই
তেল দিতে দিতে সবাই এখন ভৃত্যে পরিণত হয়েছে।
এক অন্ধ বাতাস
এক অন্ধ বাতাস বসে বসে জলতরঙ্গ বাজিয়ে চলেছে
তার সুর কখনো মনোরম কখনো মর্মান্তিক।
এত মৃতদেহ, এত জলে ভাসমান রোদ
এসো সুর, মধুময় হোক সবকিছু
বৃষ্টিতে
বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া অরণ্যের গাছে
ঝাঁপিয়ে জোনাকি এসেছে। তাদের সবুজ আলোয়
হাতি আসে, পা টিপে টিপে বাঘ আসে হরিণের কাছে।
গান শোনা যায়। মানুষের পায়ে চলা পথ
এইসব গান ও গানের ছায়ায় ঝিম ধরে বসে আছে।
বরফের পাহাড়
ঘরের ভেতর শরীর পড়ে আছে। কেউ খোঁজ নেয়নি ।
ভোরে খুব বৃষ্টি হয়েছে।
মালী এসে গাছেদের ছায়া ও ঘুম ঝাড় দিয়ে গেছে।
শরীর দেখেনি। তার শেকড়ে জল নেই, সার নেই,
দু একটি পাতা ফুলফলহীন, নামলেখা দরজায় টোকা নেই!
অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার ছায়া বিছিয়ে বসে আছে
এক্সট্রা না-দিলে সে উঠবে না।
তার অপেক্ষায় একা শরীরটি ক্রমশ ঠান্ডা হতে হতে
বরফের নির্জন পাহাড় হয়ে যাচ্ছে।
বৃষ্টির ঠিকানা নিয়ে
বৃষ্টির ঠিকানা নিয়ে আমরা পাহাড় বেয়ে উঠেছি
আমাদের জুতোর গায়ে নরম ঝরনার দাগ।
এভাবে উঠতে উঠতে একদিন সম্ভাব্য সকল
গন্তব্যের ঘ্রাণ আমাদের রোমাঞ্চিত করবে।
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হলে দুরন্ত কটেজগুলি শান্ত হবে,
চিঠি আসবে পুরনো প্রেমিকের।
বৃষ্টি তো মায়াঘোর - চমৎকার বাংলা কবিতার বই।
আসমান জমিন মিলে দূর নিরীক্ষ গান এবং ইন্দ্রজাল।
যদি ক্লান্ত হও, এসো, চুমু ফুটে ওঠা পুকুরের পারে বসি।
মায়াময় আলো এসে আমাদের ঘিরে ধরুক।
এসো, সকল বিষাদ-পঙক্তি মুছে দিয়ে
গাছ ও আকাশের গান ধরি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন