শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩

ডেস্টিনেশন - রাজাভাত খাওয়া - দেবাশিস ভট্টাচার্য

ডেস্টিনেশন - রাজাভাত খাওয়া 



 উঠলো বাই  তো রাজাভাতখাওয়া যাই  

কবি সুবীর সরকারের বাই উঠলেও বলবে চলো রাজাভাতখাওয়া...  রাজাভাতখাওয়া নামটাই আস্ত একটা ইতিহাস  সে ইতিহাস  নাহয় অন্য কোনো দিন... 

আসলে আমাদের মূল আকর্ষণ রাজাভাতখাওয়ার  নৈসর্গিক সৌন্দর্যই। প্রকৃতির টানে আমরা বারেবারে ছুটে যাই, সে টান বড় মোহময় সেই কারনে কবি লেখক তো বটেই ভীড় জমান দেশ বিদেশের পর্যটকরাও। 

 চতুর্দিকেই অরণ্য বেষ্টিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও একের সাথে অপরের ফারাক আছে বিস্তর   তবে  আমার ভীষন ভালো লাগে রাজাভাতখাওয়ার প্রাকৃতিক রূপ লাবন্যতা কোন তুলনা টানছি না , তবে অন্যরকম একটা ডেস্টিনেশন। তাই  সুযোগ পেলেই চলে আসি সবুজের এই স্বর্গরাজ্য রাজাভাতখাওয়ায়  

উদ্বোধন করেন - উত্তরের অন্যতম সাহিত্যিক  
অমিয় ভূষন মজুমদার 
আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে আক্ষরিক অর্থেই  ঢিল ছোড়া দূরত্বে  দমনপুর। এখান থেকেই শুরু হয়ে যায়  অরণ্যের  হাতছানি।  মেসটিকের কালো রাস্তার দুইপাশেই  বক্সা বাঘবনের ঘন জঙ্গল। সারি সারি শাল , শিরিষ , সেগুন , মেহগনী যেন হাত নেড়ে নেড়ে পর্যটকদের স্বাগত  জানায়   একটু দূরেই পানিঝোড়া, পাশেই পাম্পুবস্তি এখানে অরণ্যঅধিবাসীদের বসত।  পাম্পুবস্তিতে কয়েকটি দোকান রয়েছে যেখানে মিলবে সুস্বাদু মোমো ঘুগনি চা ইত্যাদি।  একটু এগিয়েই প্রকৃতিবিক্ষণ কেন্দ্র , প্রজাপতি পার্ক , শকুন প্রজনন কেন্দ্র , রজাভাতখাওয়ার  মিউজিয়ামে মিলবে  প্রাচীন প্রানীর  দেহাবশেষ, ডিম, ডুয়ার্সের জনজাতির পরিচিতি সহ অনেক কিছুই, এখান থেকে অনেক কিছুই  জানতে শিখতে পারি প্রতিনিয়ত। নিশির ডাকের মতো এই অরণ্যের মোহ আমাকে বারবার মোহিত করে, তার কাছে  আসতে আহ্বান করে।  শারীরিক অসুস্থতা কিংবা মানসিক অবসাদ কিংবা নানা  রকম  কষ্ট যন্ত্রণা  এই অরণ্য আমার কাছে নিরাময়ের আশ্রয়

চিত্র-নেট থেকে সংগ্রহ 

 রাজাভাতখাওয়ায় রয়েছে ব্রিটিশ রেল  কোম্পানির তৈরি এক প্রাচীন রেল স্টেশন, অরণ্যের বুক চিরে অজগরের মতো আকাবাকা রেলপথ। আলিপুরদুয়ার শহরে প্রাচীন যে কয়টি নিদর্শন এখনো রয়ে গেছে তার মধ্যে অন্যতম রাজাভাতখাওয়ার ছোট্ট স্টেশনটি। সুন্দর বার্মাটিক লাল রংয়ের, একলা  নির্জন  এই বনানী স্টেশনটি রাজাভাতখাওয়াকে করে তুলেছে আরো আরো মনোরম। বনানীর মাঝে স্টেশনটির রূপ রং যেন আলাদা, এমন সুন্দর স্টেশন আমি খুব কমই দেখেছি।  স্টেশনের প্ল্যাটফরমে বসে আমরা বারবারই  মগ্ন হয়েছি কবিতায় কবিতায়, গানে গল্পে...

একেবারে গা ছম ছম করা অরন্য পথ ধরে এগিয়ে গেলে মিলবে একটি শিব মন্দির একা একজন পুরোহিত  জঙ্গলের ভেতরে মন্দির আগলে রাখেন সর্বক্ষণ। মাঝে মাঝে  বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থী , প্রকৃতিপ্রেমি মানুষজনপর্যটকরা এই মন্দিরে এসে পূজো দেন, পাশে-  সুন্দর একটি ওয়াচ-টাওয়ার তার পাশ দিয়েই চলে গেছে সরু অরণ্য পাহাড়ি পথ যে পথে মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ। এই পথে দেখা মেলে বাইসন হাতি লেপার্ড হরিণ, বাঁদর, ময়ূর হর্নবিল  আর নানান প্রজাতির পাখিদেরএখানে ঝাঁকে  ঝাঁকে রংবেরঙের প্রজাপতি রং ছড়িয়ে উড়ে বেড়ায়। এই পথ দিয়েই বন্যেরা যাতায়াত করে ওদের করিডোরও বটে।  আরেকটু এগিয়েই তিন রাস্তার মোড়। ডান দিকে জয়ন্তী আর সোজা গেলে সান্তালাবাড়ি ঐতিহাসিক  বক্সাফোর্ট আরও উপরে আদমা, লেপচাখা, সিঞ্চুলা ইত্যাদি পাহাড় শিখর।  প্রচলিত একটা  কথা আছে , বন্যপ্রাণী দেখতে নাকি ভাগ্য লাগে কথাটা কখনও সত্যি বলেই মনে হয় না আমার  কারণ  জয়ন্তীতে যাব , আর রাস্তায় হরিণ, , হাতি , বাইশন দেখতে পাবো নাএমন কোনদিনই  হয় নি , হাতি বাইশন না হোক নিদেনপক্ষে  ময়ুর হরিণের দেখা তো মেলেই বাদরের কথা না হয় বললাম না কারণ ওদের সব সময়ই দেখা যায়।  

একটু যদি জয়ন্তীর দিকে তাকাই  প্রথমেই আমাদের চোখে পড়বে বালা নদী- সারা বছর মরুভূমির মতো শুকনো থাকলেও  বর্ষাকালে এই নদী ভয়ংকর হয়ে ওঠে। এখন তো নদীতে ব্রিজ হয়েছে আগে আমরা হেটেই পার হতাম বালি পাথরের চর ডিঙ্গিয়ে জলের পার হয়ে। এই নদীতে হড়পা বান আসে। সে এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। 


তারপর জয়ন্তী আর জয়ন্তী নদী।  এই জয়ন্তীতেই এক সময় রেল স্টেশন ছিল। গড়ে উঠেছিল ডলোমাইট কারখানা এখান থেকে সংগ্রহ করা ডলোমাইটকাঠ ইত্যাদি এই স্টেশন থেকে  রেলগাড়িতে করে  যেত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। জয়ন্তী নদীর উপর একটি সেতু ছিল , ১৯৯৩ সালের বিধ্বংসী বন্যায় ধ্বংস হয়ে গেলেও  , চারটি পিলার এখন সেই সেতুর স্মৃতি বহন করছে, পাহাড়ি জয়ন্তী নদীর কাছে গেলেই  মনে হয় স্বর্গ বোধহয় অনেকটা এমন-, কাকের চোখের মত স্বচ্ছ জল কুল কুল করে বয়ে চলছে বালি, পাথরের এই নদী সাম্রাজ্যে। একটু দূরেই পাহাড়, পাহাড়ের উপর আকাশ  আর আকাশের  উপর ভেসে বেড়াচ্ছে রাশি রাশি মেঘপুঞ্জ।  পাশেই খাড়াই পাহাড়ের উপরে রয়েছে মহাকাল মন্দির। মহাকালের পুজোর সময় এখানে মেলা বসে, দেশ বিদেশ থেকেও প্রচুর মানুষ আসেন এখানে। জয়ন্তী
বর্তমান সময়ের  জয়ন্তী রেলব্রিজ 
থেকেই
হয় জঙ্গল সাফারি শুরু হয়  এই সাফারিতে প্রায় নিরানব্বই  শতাংশ বন্যজন্তুদের দেখা মিলবেই  বাকি এক শতাংশ নির্ভর করে তথাকথিত ওই যে ভাগ্যের উপর  

সানতালাবাড়ি একটি জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ি গ্রাম ।এই সানতালাবাড়ি পর্যন্ত যানবাহন, তারপর পায়ে হেটে অর্থাৎ ট্রেকিং করে পাহাড় চড়তে হয়।  এখানকার জঙ্গল খুব সুন্দর। এখানেও ছুটে যাই ভালো লাগার টানে তবে মূলত রাজাভাতখাওয়াই আমার কাছে বেশি আকর্ষণীয়। 

ডিমা ব্রিজ 
চেকপোষ্টের বাঁদিকে রাজাভাতখাওয়া স্টেশন পেরিয়ে বাজার পেরিয়ে সোজা চলে যাওয়া যায় ডিমানদীর ব্রিজে। শহুরে  মানুষ  ইট পাথরের  কংক্রিট সভ্যতার বাইরে বেরিয়ে এখানে খানিক মুক্তির জন্যে ছুটে আসে রোজ, পাহাড়ের মুখোমুখি দুদন্ড দাঁড়ায়। ডিমা নদীর বালুকাবেলায় প্রকৃতির নিবিড় পাঠ নিতে নিতে প্রেমিক যুগলেরা কেউ কেউ হয়তো প্রেমের গল্প লেখেআর আমি ফিরে আসি পরবর্তী লেখার জন্যে নতুন নতুন রসদ নিয়ে





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...