উঠলো বাই তো রাজাভাতখাওয়া যাই ।
আসলে আমাদের মূল আকর্ষণ রাজাভাতখাওয়ার নৈসর্গিক সৌন্দর্যই। প্রকৃতির টানে আমরা বারেবারে ছুটে যাই, সে টান বড় মোহময় সেই কারনে কবি লেখক তো বটেই ভীড় জমান দেশ বিদেশের পর্যটকরাও।
চতুর্দিকেই অরণ্য বেষ্টিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও একের সাথে অপরের ফারাক আছে বিস্তর । তবে আমার ভীষন ভালো লাগে রাজাভাতখাওয়ার প্রাকৃতিক রূপ লাবন্যতা । কোন তুলনা টানছি না , তবে এ অন্যরকম একটা ডেস্টিনেশন। তাই সুযোগ পেলেই চলে আসি সবুজের এই স্বর্গরাজ্য রাজাভাতখাওয়ায়
।
উদ্বোধন করেন - উত্তরের অন্যতম সাহিত্যিক অমিয় ভূষন মজুমদার |
চিত্র-নেট থেকে সংগ্রহ |
রাজাভাতখাওয়ায় রয়েছে ব্রিটিশ রেল কোম্পানির তৈরি এক প্রাচীন রেল স্টেশন, অরণ্যের বুক চিরে অজগরের মতো আকাবাকা রেলপথ। আলিপুরদুয়ার শহরে প্রাচীন যে কয়টি নিদর্শন এখনো রয়ে গেছে তার মধ্যে অন্যতম রাজাভাতখাওয়ার ছোট্ট স্টেশনটি। সুন্দর বার্মাটিক লাল রংয়ের, একলা নির্জন এই বনানী স্টেশনটি রাজাভাতখাওয়াকে করে তুলেছে আরো আরো মনোরম। বনানীর মাঝে স্টেশনটির রূপ রং যেন আলাদা, এমন সুন্দর স্টেশন আমি খুব কমই দেখেছি। স্টেশনের প্ল্যাটফরমে বসে আমরা বারবারই মগ্ন হয়েছি কবিতায় কবিতায়, গানে গল্পে...
একেবারে গা ছম ছম করা অরন্য পথ ধরে এগিয়ে গেলে মিলবে একটি শিব মন্দির একা একজন পুরোহিত জঙ্গলের ভেতরে মন্দির আগলে রাখেন সর্বক্ষণ। মাঝে মাঝে বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থী , প্রকৃতিপ্রেমি মানুষজন, পর্যটকরা এই মন্দিরে এসে পূজো দেন, পাশে-ই সুন্দর একটি ওয়াচ-টাওয়ার তার পাশ দিয়েই চলে গেছে সরু অরণ্য পাহাড়ি পথ যে পথে মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ। এই পথে দেখা মেলে বাইসন হাতি লেপার্ড হরিণ, বাঁদর, ময়ূর হর্নবিল আর নানান প্রজাতির পাখিদের , এখানে ঝাঁকে ঝাঁকে রংবেরঙের প্রজাপতি রং ছড়িয়ে উড়ে বেড়ায়। এই পথ দিয়েই বন্যেরা যাতায়াত করে ওদের করিডোরও বটে। আরেকটু এগিয়েই তিন রাস্তার মোড়। ডান দিকে জয়ন্তী আর সোজা গেলে সান্তালাবাড়ি ও ঐতিহাসিক বক্সাফোর্ট আরও উপরে আদমা, লেপচাখা, সিঞ্চুলা ইত্যাদি পাহাড় শিখর। প্রচলিত একটা কথা আছে , বন্যপ্রাণী দেখতে নাকি ভাগ্য লাগে, এ কথাটা কখনও সত্যি বলেই মনে হয় না আমার কারণ জয়ন্তীতে যাব , আর রাস্তায় হরিণ, , হাতি , বাইশন দেখতে পাবো না , এমন কোনদিনই হয় নি , হাতি বাইশন না হোক নিদেনপক্ষে ময়ুর ও হরিণের দেখা তো মেলেই । বাদরের কথা না হয় বললাম না কারণ ওদের সব সময়ই দেখা যায়।
একটু যদি জয়ন্তীর দিকে তাকাই প্রথমেই আমাদের চোখে পড়বে বালা নদী- সারা বছর মরুভূমির মতো শুকনো থাকলেও বর্ষাকালে এই নদী ভয়ংকর হয়ে ওঠে। এখন তো এ নদীতে ব্রিজ হয়েছে আগে আমরা হেটেই পার হতাম বালি পাথরের চর ডিঙ্গিয়ে জলের পার হয়ে। এই নদীতে হড়পা বান আসে। সে এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার।
বর্তমান সময়ের জয়ন্তী রেলব্রিজ |
সানতালাবাড়ি একটি জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ি গ্রাম ।এই সানতালাবাড়ি পর্যন্ত যানবাহন, তারপর পায়ে হেটে অর্থাৎ ট্রেকিং করে পাহাড় চড়তে হয়। এখানকার জঙ্গল খুব সুন্দর। এখানেও ছুটে যাই ভালো লাগার টানে তবে মূলত রাজাভাতখাওয়াই আমার কাছে বেশি আকর্ষণীয়।
ডিমা ব্রিজ |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন