আসলে এই রকমই হয় । গুছিয়ে কিছু করব ভাবলেই এক ঝাঁক দমকা বাতাসে সব একদম খুলে মেলে হাট । এই যে জীবন নুড়ি পাথর কুড়ানো যে জীবন । যে জীবন কুড়িয়ে নেয় সব আলুথালু শোক ও শ্লোক সেসব কিছুই যায় না ফেলা । ভাবতে ভাবতেই একটা গোটা লোকাল ট্রেন উঠে পড়ে ভুল্ভাল ট্র্যাকে । তবুও প্ল্যাটফর্ম কাঁপিয়ে গান গায় আমার ভিতরের সদানন্দ লাবডুবখানি । বাহবা বাহবা বলে অনায়াসে পেরিয়ে যাই সব মৃত উতসব ।
এই তো সেদিন দেখলাম আপনাকে । এতটাই রোগা আর জীর্ণ হয়ে গেছেন যে কিছুতেই স্লিম কথাটা যাচ্ছে না আপনার সঙ্গে । যেন বিষাদ প্রতিমা এক হেঁটে চলেছেন অনন্ত রাস্তায় । খুব চকচকে রংদার প্রচ্ছদ। সে কী তীক্ষ্ণ বিষাদকে মোড়কে ঢেকে দেবেন এই ভাবনায় ! অথচ এমন তো হবার কথা ছিল না । হাজার হাজার ঝাড়বাতি আলোয় ফ্লুরোসেন্ট হয়ে দুজনেই দুজনাতে কুহূতান বাঁচবেন বলেই না আমার কাছ থেকে টেনে নিয়েছিলেন চুম্বকের মতো । আমার তো বরাবরই চৈতখ্যাপা ধরন । অত সাজিয়ে গুছিয়ে পিঁড়ি পেতে জল বাতাসা বেড়ে দেওয়া কোনও কালেই স্বভাবে ছিল না । ছিল না অকারণে পাখার ব্যাজন । জানতাম এবং এখনও এটাই জানি পিপাসা তাড়িত হলে মানুষ নিজেই চেয়ে নেবে জলের সহজ । সেও কিন্তু এভাবেই অভ্যস্ত ছিল বেশ । রিমঝিম বৃষ্টির মল্লার ছিল না সবসময় ঠিকই কিন্তু অহেতুক হেমন্তের ঝাপসা আস্বাদও ছিল না । আপনিও তো জানতেন সবটুকু । একেবারে সেই পাণ্ডুলিপি অধ্যায় থেকেই । যতদুর জানি তারও অভিযোগ ছিল না কোনও এই ভুলে ভরা মানচিত্র নিয়ে । ছিল না শূন্যতাও । তবু আপনি সব জেনেশুনে বকুল বাতাসে যখন তখন ভিজিয়ে দিতে থাকলেন অংশত ক্যারাভান চাতাল । সে তাকিয়েও দেখল না । আপনি কিন্তু থেমে থাকলেন না । চালিয়ে যেতে থাকলেন যাবতীয় অধ্যাবসায় । এই মুহূর্তে শান্ত টলটলে দীঘি হলেন তো পর মুহূর্তেই উদ্দাম স্রোতস্বিনী সাজ । ফুল না ফুটে উঠতেই প্রতিটি পাপড়ির গায়ে ছিটিয়ে দিলেন চন্দনের পেলব । সে হাত পাতার আগেই লীলাকমল রাখলেন মেলে ।সে বাঁশিতে সুর না লাগাতেই আপনি পরে ফেললেন নূপুর । রোদে না পুড়তেই বেড়ে দিলেন ছায়ার মলম । । জল হয়ে নিজেই চলে গেলেন পিপাসা গেলাসে ।
তারপর
তারপর কত আগুন । কত প্লাবন । কত কালবৈশাখী …… আপনি নৌকা ঠিক ভাসিয়ে নিলেন নিজ দরিয়ায় । বিশ্বাস করুন খুব যে বেশি কিছু হারিয়ে ফেললাম এমনটা মনে হয়নি কখনও । বরং । বরং বুকের ভিতর একটা জলফড়িংএর পাখার স্বাধীন উড়ছিল। বেশ ফুরফুরে । ঘরে ফিরবার দায় না থাকলে মানুষ যে আবার নিজেই নিজের তীব্র প্রেমে পড়তে শুরু করে সেটা টের পাচ্ছিলাম বেশ । অথচ সেদিন ......
অথচ সেদিন আপনাকে দেখে মনে হল অংকগুলো কেমন যেন যেন খাপছাড়া হয়ে গ্যাছে আপনারই । যেন পাড়ে ওঠবার আগেই সাঁতার বদলে নিয়েছে তার পাখনার অভিমুখ । অথচ হাজার হাজার ঝাড়বাতি আলোয় ফ্লুরোসেন্ট হয়ে দুজনেই দুজনাতে নুন ও রসুই বাঁচবেন বলেই না এতো জল-পড়া এতো তাবিজ-মাদুলি এমন বশীকরণ মন্ত্র উচ্চারণ ছিল ! আসলে তো আপনার গোলগাল নিপাট সুখী হয়ার কথা ছিল তাই না ! কথা ছিল ত্রিমাত্রিক প্রিজম পুরোটায় হাতের মুঠোয় ধরে রেখে নিছক সাদাকেও রামধনু পসরায় সাজানোর । তবে কেন আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন এক বিষাদ প্রতিমা হেঁটে চলেছে অনন্ত রাস্তার বুক চিরে চিরে । বিশ্বাস করুন খুব খুব কষ্ট হচ্ছে আপনার জন্য । হায়! শুধু আকর্ষণ শিখলেন ! শিখলেন না কীভাবে ধারণ করতে হয় পতোন্মুখ বৃষ্টির পিপাসা । শিখলেন না কীভাবে ঝড়ের লিরিকেও সামলে রাখতে অপ্রীতিকর ঘ্রাণের দৃশ্যহীন রৈখিক জ্যামিতি ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন