শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩

শূন্য দশকের কবি মানসী কবিরাজ-র মুক্তগদ্য "ত্রিকোণমিতি"


ত্রিকোণমিতি



  আসলে এই রকমই হয় গুছিয়ে কিছু করব ভাবলেই এক ঝাঁক দমকা বাতাসে সব একদম খুলে মেলে হাট এই যে জীবন নুড়ি পাথর কুড়ানো যে জীবন যে জীবন কুড়িয়ে নেয় সব আলুথালু শোক শ্লোক সেসব কিছুই যায় না ফেলা ভাবতে ভাবতেই একটা গোটা লোকাল ট্রেন উঠে পড়ে ভুল্ভাল ট্র্যাকে তবুও প্ল্যাটফর্ম কাঁপিয়ে গান গায়  আমার  ভিতরের সদানন্দ লাবডুবখানি বাহবা বাহবা বলে অনায়াসে পেরিয়ে যাই সব মৃত উতসব

          এই তো সেদিন দেখলাম আপনাকে এতটাই রোগা আর জীর্ণ হয়ে গেছেন যে কিছুতেই স্লিম কথাটা  যাচ্ছে না আপনার সঙ্গে  যেন বিষাদ প্রতিমা এক হেঁটে চলেছেন অনন্ত রাস্তায় খুব চকচকে রংদার প্রচ্ছদ সে কী তীক্ষ্ণ বিষাদকে মোড়কে ঢেকে দেবেন এই ভাবনায় ! অথচ এমন তো হবার কথা ছিল না হাজার হাজার ঝাড়বাতি আলোয়  ফ্লুরোসেন্ট হয়ে দুজনেই দুজনাতে কুহূতান  বাঁচবেন  বলেই না আমার কাছ থেকে  টেনে নিয়েছিলেন চুম্বকের মতো আমার তো বরাবরই চৈতখ্যাপা ধরন অত সাজিয়ে গুছিয়ে পিঁড়ি পেতে জল বাতাসা বেড়ে দেওয়া কোনও কালেই স্বভাবে ছিল না ছিল না অকারণে পাখার ব্যাজন জানতাম এবং এখনও এটাই জানি পিপাসা তাড়িত হলে মানুষ নিজেই  চেয়ে নেবে জলের সহজ সেও কিন্তু এভাবেই অভ্যস্ত ছিল বেশ রিমঝিম বৃষ্টির মল্লার ছিল না সবসময় ঠিকই কিন্তু অহেতুক হেমন্তের ঝাপসা আস্বাদও ছিল না আপনিও তো জানতেন সবটুকু একেবারে সেই পাণ্ডুলিপি অধ্যায় থেকেই যতদুর জানি তারও অভিযোগ ছিল না কোনও  এই  ভুলে ভরা  মানচিত্র নিয়ে   ছিল না শূন্যতাও তবু আপনি সব জেনেশুনে বকুল বাতাসে যখন তখন ভিজিয়ে দিতে থাকলেন অংশত ক্যারাভান চাতাল সে তাকিয়েও দেখল না   আপনি কিন্তু থেমে থাকলেন না চালিয়ে যেতে থাকলেন যাবতীয় অধ্যাবসায় এই মুহূর্তে শান্ত টলটলে দীঘি হলেন তো পর মুহূর্তেই উদ্দাম স্রোতস্বিনী সাজ ফুল না ফুটে উঠতেই প্রতিটি পাপড়ির গায়ে  ছিটিয়ে দিলেন চন্দনের পেলব   সে হাত  পাতার আগেই লীলাকমল রাখলেন মেলে সে বাঁশিতে সুর না লাগাতেই আপনি পরে ফেললেন নূপুর রোদে না পুড়তেই বেড়ে দিলেন ছায়ার মলম জল হয়ে নিজেই চলে গেলেন পিপাসা গেলাসে


তারপর

           তারপর কত আগুন কত প্লাবন কত কালবৈশাখী ……  আপনি নৌকা ঠিক ভাসিয়ে নিলেন নিজ দরিয়ায় বিশ্বাস করুন খুব যে বেশি কিছু  হারিয়ে ফেললাম এমনটা মনে হয়নি কখনও বরং বরং বুকের ভিতর একটা   জলফড়িংএর পাখার স্বাধীন উড়ছিল। বেশ ফুরফুরে ঘরে ফিরবার দায় না থাকলে মানুষ যে আবার নিজেই নিজের তীব্র প্রেমে পড়তে শুরু করে সেটা টের পাচ্ছিলাম বেশ অথচ সেদিন ......

        অথচ সেদিন আপনাকে দেখে মনে হল অংকগুলো কেমন যেন যেন খাপছাড়া হয়ে গ্যাছে আপনারই   যেন পাড়ে ওঠবার আগেই সাঁতার বদলে নিয়েছে তার পাখনার অভিমুখ অথচ হাজার হাজার ঝাড়বাতি আলোয়  ফ্লুরোসেন্ট হয়ে দুজনেই দুজনাতে নুন রসুই বাঁচবেন  বলেই না এতো জল-পড়া এতো তাবিজ-মাদুলি এমন বশীকরণ মন্ত্র  উচ্চারণ ছিলআসলে তো আপনার গোলগাল নিপাট সুখী হয়ার কথা ছিল তাই না ! কথা ছিল ত্রিমাত্রিক প্রিজম পুরোটায় হাতের মুঠোয় ধরে রেখে  নিছক সাদাকেও রামধনু পসরায় সাজানোর তবে কেন আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন এক বিষাদ প্রতিমা হেঁটে চলেছে অনন্ত রাস্তার বুক চিরে চিরে বিশ্বাস করুন খুব খুব কষ্ট হচ্ছে আপনার জন্য   হায়! শুধু আকর্ষণ শিখলেন ! শিখলেন না কীভাবে ধারণ করতে হয় পতোন্মুখ বৃষ্টির পিপাসা শিখলেন না কীভাবে ঝড়ের লিরিকেও সামলে রাখতে অপ্রীতিকর ঘ্রাণের  দৃশ্যহীন রৈখিক জ্যামিতি ...



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...