মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়ের গদ্য ---



   আরাকু ভ্যালিতে সন্ধ্যে     

যখন ছোট্ট স্টেশনটায় পা রাখছি, গার্ড সাহেব বললেন, বোরাগুহালিতে নেমে গেলেন না কেন? গুহা দেখে এখানে চলে আসতেন।
আমি বললাম, ফেরার ট্রেইনটাও কি দেরী করবে?
হেসে বললেন, আলবাত।
আমি আর ওনাকে বললাম না, যাওয়ার যেমন একটা আসা থাকে তেমনই আসার একটা যাওয়া।

আমি না হয় এসে যাবো - এমনটাই ভাবতে ভাবতে
যখন বাইরে বেরোলাম, বেশ রোদ মাথা চাড়া দিচ্ছে।
আমি খাবো। রাস্তার ধারের দোকান থেকে খাবো। মোটা মোটা আঙুলে ধরা চালের রুটি আর সাথে টক সব্জী গোটা কয়েক টোল পড়া বাটিতে কয়েক গাছা চুরি পরা হাত ঢেলে দিচ্ছে।
একটু ঘুরতেই দেখলাম খোঁপায় ফুল। মন ভরে গেলো।
ফিফটিন রুপি।
কফি?
নো কফি
আমি মৃদু হেসে একটা লম্বা গোল্ডফ্লেক ধরিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

'সিঁদুর গাছ দেখেছো কোনোদিন? 
সিঁদুর ফল? এমন সোহাগী নাম আর কোন গাছের নেই, পুরো লাল হয়ে থাকে, কী তার রূপ!'

যাক মেঘ বলে নি, এই রক্ষে!
দেখেই আসি বলে উপত্যকার অটোতে উঠে বসলাম।
আদিবাসী সংগ্রহশালা (বিস্ময়কর বড় একটা কিছু নেই, যদিও সেটা আদিবাসী অবিষয়ক বরং, সংগ্রহশালা বিষয়ক কিছু বেশী) থেকে বেরিয়ে প্রথমেই টাকরায় টান পড়লো। 

ঋষিকোন্ডায় একবেলায় আমরা তিন ভাই সমুদ্রস্নানের আগে ও দু ভাই সমুদ্রস্নানের পরে(আমি আগে ও পরে দুটোতেই ছিলাম) মোট ১৭টা বীয়ার হাঁমুখ উঁচিয়ে নির্বেদের মতো করে পান করেছিলাম।
আলট্রাম্যাক্স ১৩০! ভাবা যায়!
এ বঙ্গে বর্মীবাক্সে খাজনা ভরতে ভরতে জীবন শেষ।
অথচ, সমুদ্রের ধার বাঁধানো রাস্তা, পরিমিত শাদা আলো আর কী অপূর্ব মানুষ মানুষী জন।
এ অঙ্গে অবশ্য সারদা নারদা নেই।

তা টান পড়লো টাকরায়।
নো বার। অনলি শপ। 
বুঝে গেলাম। অগত্যা বোটানিকাল গার্ডেন্স। 
ঢুকেই একটা খেলাগাড়িতে উঠে পড়লাম। বাল ও খিল্য। কিন্তু না, সিঁদুর গাছ আমি দেখতে পেলাম না। 

'সিঁদুরগাছ তুমি খুঁজে পাবে না এটাই স্বাভাবিক। খুঁজে পেলেই অবাক হতাম। দুহাত ভর্তি সিঁদুর ফল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো তুমি, এ সৌভাগ্য তোমার!!??  তোমার জন্য এই ব্লাইন্ড ভ্যালি। এই অন্ধ উপত্যকা...!'

পাতাছায়াঢাকা পথ দিয়ে গাড়িটা যখন উড়ছে তখন মনে হলো এই উপত্যকাটা মাথার ভেতর দিয়ে ঢুকে যায় তারপর চোখের চৌকাঠে আটকে থাকে। অন্ধেরই তো চোখ! দিন বা রাত্রি হোক। 

বোরাগুহালিতে অবশ্যি যাবে।
জল পড়ছে, তার ভেঙে  যাওয়া দেখতে ও শুনতে পাবে। পারলে রেকর্ডিং করো।
মনে মনে ভাবলাম বধিরেরই তো কান।

কাকে যে দেখাই আর কাকেই বা শোনাই!

আপাতত আমি দেখছি কফি ক্ষেতের নীচে যে মেয়েটি আমাকে কফি করে দিচ্ছে। কফিবীজের রং তার চোখে। শুনছি সে মেয়েটি, যে থরে বিথরে কান বিঁধিয়েছে আর বাঁশের টুকরো কানে নিয়ে ভেতরের পাখির টুকরোর অবস্থান জেনে নিচ্ছে।

গোলকোন্ডা থেকে খুলে যাচ্ছে উপত্যকার বৃত্তীয় বিস্তৃতি। খুলে যাচ্ছে পাতার অভ্যন্তরস্থ পাতার কুচি রং। কুচি গন্ধ। যা, এই উপত্যকাকে মনোরমের গড়ে তুলছে। 
আহা বসন্ত। 
হায় কে যে অন্ধ আর কে যে বধির!

কিন্তু গুহাভ্যন্তরে এতো কৃত্রিম রং আর রঙান্তর যে বিরক্ত ধরে গেলো।
উঠে এলাম।

আবার একটা ও শেষ লম্বা গোল্ডফ্লেক ঠোঁটে ঝুলিয়ে সিঁড়ি বেয়ে এলাম বোরাগুহালি স্টেশনে। ট্রেইন আলবাত লেইট। 

একটা টিলার ওপরে একটাই সূর্য। মেরুকরণহীন ভাবে এসে পড়ছে একটাই গাছে যার সারা শরীর লাল জরুলে ভরে আছে। 
জারুল ফুলের বন্ধুর কথা ভেসে এলো। 
এ সূর্য ডোবা মনে রাখতে নেইকো। ধরে রাখতে নেইকো। 

একটা টিলা জঙ্গল যেন জড়িয়ে মড়িয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে আসছে। আমি ঢুকে পড়ছি তার উদরে। 
বাইরে রেখে আসছি পাখি ওড়া। ও পাখি, কী চেয়েছি তোমার কাছে? তোমার ওড়ার কাছে?

কেন জানি না আমার ভীষণ লিখতে ইচ্ছে করছে :-

Who do I want find in her

A girl in me
Off stage
As she could be as tender 

A reader figuring up 
What I wrote 
Between a no time 
And an other

And, a One who speaks me least
Hears me last 

And, who does she want find in me

A blind mirror and some blunt memory

একটা গোটা উপত্যকা থেকে সামান্য কিছু আগে একটা গোটা সূর্যাস্ত গড়িয়ে পড়ে গেছে।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...