মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

কবিতায় -- শূন্য দশক


                            শূন্য দশকের কবি





বাবলি সূত্রধর সাহা 

ইথার তরঙ্গ



       এই বর্ষাতেই জলজ সম্পর্কের যাপন ,
অসম্পূর্নতার মাঝেই দুরন্ত স্মৃতির অবগাহন;
সময়টা বড্ড উত্তাল....
একরাশ যন্ত্রনার লিরিক   !
এখন বৃষ্টিভেজা মানেই অবিন্যস্ত মনের বোঝাপড়া,
 এত মেঘলা তার মাঝেই বিপর্যস্ত স্যালাইনের কাটাছেঁড়া !
ইথার তরঙ্গ বয়ে আনে 
সাঙ্কেতিক শব্দগুচ্ছ .....!!


মানিক সাহা 


গোধুলি

কেমন মুখ ভার করে সূর্য ডুবে যাচ্ছে। 
চাঁদের ক্ষয়াটে চোখে মলিনতা লেগে আছে 
অদ্ভুতভাবে। এখনি পাখিরা হয়তো ম্লান মুখে 
ফিরে যাবে ঘরে। ফুল-ধরা জবাগাছে জল দেবে গৃহস্থ পুরুষ। 
তার ভেজা হাত থেকে কিছুটা প্রশান্তি নেওয়া যাক।
আরো একটু পরেগ্রামীন হাটের বুকে জ্বলে উঠবে কেরোসিন আলো। 
তার ধোঁয়া বেয়ে অজস্র গানলোককথানবান্নের মুগ্ধ পায়েস - 
উড়ে যাবে অনন্ত দ্রাঘিমায়পূর্বপুরুষের ঘরে। 

আমি নিরবে পূর্বজদের পাপঅপচয়খ্যাতি ও বিপন্নতা বহন করে চলেছি। 
এখনও মধ্যরাতে ডানা ঝাঁপটানোর শব্দ হলেতাদের বেসুরো কীর্তন শুনতে পাই। 
দেখতে পাই তারা অসম্পূর্ণ হিসেব মেলাতে চেষ্টা করছে আর খালি পা'য় হেঁটে যাচ্ছে 
ফেলে আসা উঠোনের দিকে। ধোঁয়াটে কুয়াশা মেখে আমি আঙুলের ছাপ খুঁজতে বেরিয়েছি।

যে কখনো ঠিকঠাক গোধুলি দেখেনিসে জানে না,  
মানুষের মৃত্যু হলে তার ছায়া আলো- আঁধারের মাঝে সুক্ষ্ম এক জাল বুনে রাখে।



মনোজ পাইন

সোফিয়া জানে না
     
হাত বাড়ালেই বন্ধু হয় না। সময় বদলে
দেয় তত্ত্বকথাঅনুভব। সেদিন একটা

হনুমানের দিকে হাত বাড়াতেই দাঁত 
খিঁচিয়ে তেড়ে এল!  অযাচিত হাতের   

আহ্বানে বিব্রত সবাই। হাতে হাতে 
শালগ্রাম শিলা মন্ত্রপাঠেও ঘর ছেড়ে

কত যে মানুষকে দেখছি পথে,তার 
খবর লেখার কাগজ কই?অনেকেরই

হাতে হাত বড় প্রিয়।ছোটবেলায় চু কিত্
 কিত্ খেলায়  যার কাছে পরিমাণের চেয়ে

বেশী হেরেছি সেই সোফিয়া সেদিন  কুয়াশা 
ছড়ানো পাহাড়ে পুরানো এক বন্ধুকে তাড়িয়ে

দিয়ে  বলল -এবার বন্ধু বাছতে চুজি হবে সে!
সোফিয়া আরো বলল-পরিচিত নাকি অনেকেই

হয়,সব পরিচিতই বন্ধু হয় না। সোফিয়া যা জানে
না তা হল-সব বন্ধু কখনো প্রকৃত বন্ধু হয় না। 


পৌলোমী সরকার

ষোলকলা 

আত্মশুদ্ধিতে আত্মতৃপ্তি নেই যে নারীর
আসলে পায়ের ছাপ মুছতে মুছতে বেলা 
গড়িয়ে গোটা জীবন থেকে তুলে নেয় 
মেয়েবেলা। ঠাকুর ঘরের ভেতর যেমন 
আলাদা থাকে বাতাসা ও নকুলদানা  
প্রসাদ হবার অপেক্ষায়। নারীর লক্ষ্মীরূপ
উন্মুখ থাকে কোন এক 
তথাগতর আস্তানায়


সত্যম ভট্টাচার্য

মাটির গন্ধ



অথবা আর একদিন 

রাতভর প্রচণ্ড গরমের পর 
ভোরে যখন বৃষ্টি নামল ঝমঝমিয়ে 
জানালার পাশে বসে গন্ধ পাচ্ছি সোঁদা মাটির


বাবার কথা  মনে পড়ে গেলো
বহুদিন আগে 
যখন উঠোন ছিলো 
বাড়ি ছিলো একটা আমাদের
শক্ত জমি ছিল পায়ের নীচে


আর তাতে প্রথম বৃষ্টির গন্ধ 
বাবাই চিনিয়েছিলেন



সুব্রত সাহা 

কোয়ানু
কোয়া হাতে নেমে আসছে রোদেলা
শামুকতলা তুরতুরি
মিশে যাবে শিপ্রার বাঘবনে
মেদুরতা মাখা বিকেল ঠেলে
গল্প বুনতে  থাকবে
                       
আমাদের কবিতারা...

বাউল শব্দ উড়ে যাবে
নীল চোখ সবুজ আলো মেখে
ভুটানের কোয়ানুরা কমলাময়
                 
হয়ে উঠবে নরমে
                                   
পেখমে পেখমে

ঘুমকাতুরে ছেলেটার গা বেয়ে
                                     
গড়াবে রস...
বোতাম খুলে উড়ে যাবে
                               
পরজাপতি...
                                   
ডানায় নতুনের গন্ধ...

আমাদের আমিরা মাখামাখি হবে
কোয়া কোয়া কোয়া রঙে
আসমান আসমান হয়ে উঠবে...


শুভঙ্কর পাল  

স্পটলাইট সিরিজের একটি  

এরপর নিভে আসে রোদ 
কোন এক তুষার যুগের 
মেঘেদের মিথ 
ট্রাপিজ ট্রাপিজ খেলা 
খোয়াই এর মাটি ছড়িয়ে পড়ছে তুষার চাদর

দ্রুত হেঁটে যায় ভিনদেশী নাবিক 
বিকিকিনি শেষে 
মৃত্যুকণার জুড়ে থাকা 
ফসফরাসের মতো সাদা পাতা জুড়ে


এবার ঈশ্বরে দোষ 
হারাবার দিনে 
তুষারে ঢেকে যাবে চোখ মুখ 
মুখবন্ধের এখানেই উপসংহার......


সোমনাথ বেনিয়া

পাখিসংহিতা 

উড়ন্ত কোন শর্তে পাখি অগ্রাহ‍্য করে ভূমিকে
ছায়া বাতাসে আত্মগৌরব রেখে নিভে যায়
প্রখর দৃষ্টিতে বুঝে নেয় -
                            
এই চরাচর কান্নার শিল্প
কুণ্ডলিত বিষাদ পালকের ওমে ধ্বংস ...
মুখ উঁচিয়ে দেখি,
                  
এগিয়ে আসে প্রতিবেশী ছাদ
প্রতিটি ঘরের পাপোশের তলার অন্ধকার -
                                     
এক‌ই পঙ্‌ক্তির অক্ষর
ধুলো বাতাসে উড়লে পাখি বোঝে সংসার তত্ত্ব
তখন গা ঝাড়া দিয়ে নিজেকে বেআব্রু
              
ঠোঁট নাড়িয়ে সহজ অসম্মতি
                      
পায়ের নখে নিষিদ্ধসমগ্র
গাছের ডালে বসবাসপ্রজননঅস্তিত্বরেখাচিহ্ন
মনে হলে একবার অন্তত,
              
আমার হৃদয়কে নীড় ভাবতে পারো .



সূরজ দাশ

অন্ধকার লিখতে পারিনি বলে
অন্ধকার লিখতে পারিনি বলে
দরজার আড়াল থেকে উঁকি দিল বিস্ময়

এসো সময়, সুসময়
জড়িয়ে ধর দুটো হাত

পরবাসী বিহ্বলতা বুকের ভেতর
তোলে উথালপাতাল ঢেউ

কেন বেদনা, কি কথা আছে আর তোমার সাথে
জন্ম জন্ম দূরত্ব মুছে দিক সব ইশারা

ক্রমশ ঘোরালো হোক
অসংখ্য বজ্রবিদ্যুতের এই আকাশ

চোখের ভোরে ঝুলে থাকা ঘুম
আমাকে আড়াল দিক

অন্ধকার লিখতে পারিনি বলে
দরজার ওপার থেকে জোরদার
হাততালি দিচ্ছে শ্রাবণ আকাশ






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...