কসাইখানা
প্রদীপ কুমার পন্ডা
মূল কবিতা: ওড়িআ ভাষা
অনুবাদ: শ্যামলী সেনগুপ্ত
এক খাবলা মাংস
যেন এক আঁজলা সতেজ ফুল
কালো বরণ থলথলে কসাইয়ের
ভুড়ি ও বুকে ছিটে ছিটে রক্ত
আঙুলের মতো নলীহাড়ে দেঁতেল হাসির চাঁপ
প্রেমে জরোজরো কলিজা
গাঢ় রক্তের কালো , পূর্বরাগ
বীভৎস সৌন্দর্য
যদি জীবনে প্রেম না এসে থাকে
চলে এসো কসাইখানায়
এক ঝুড়ি চর্বির শ্বেত মন্দারকে
বারণ করো না
লালা পূঁজ বিষ্ঠার মেহক
আহা! রাগ কৌমুদী
শামুকের মতো এই হৃদয়টি
তোরই জন্য
মিটমিটে দু' চারটে তারা
ভেতরের গুর্দা থেকে ইঙ্গিত ছোঁড়ে
যদি সত্যিই তুমি প্রেমিক
এস কসাইখানায়
ছাল ছাড়ানো নেড়ামুন্ডির
করোটি থেকে হিঁচড়ে আনো প্রেমিকার রেটিনা
তোমার ক্ষিদের জন্য এই উপহার
তুমি সত্যিই কি ভোগ করলে এই মাদকতা
তোমার সব বৈরাগ্যের পরীক্ষা আজ শেষ
তুমি উত্তীর্ণ !
যাও, কাটারীতে শান দাও
মেয়ের জন্য একটি কবিতা
রাজেন্দ্র কিশোর পন্ডা
মূল ভাষা:ওড়িআ অনুবাদ: শ্যামলী সেনগুপ্ত
অনেকদূর যেতে হবে৷
কার ওপরে মান করেছিস মেয়ে,
সোনা মেয়ে আমার?
তোর গোঁসাঘরের বাইরে
তোর জন্য অপেক্ষায় জীবন
খুলে দে মা,কপাট খোল
অনেক দূর যেতে হবে,
তুই না ঘর চেয়েছিস !
কল্পবৃক্ষ হলাম বলে ভেবে নেওয়াটাই
প্রায় কল্পবৃক্ষে পরিণত হওয়া
ভেবে নিস... ...
লজ্জাবতী লতার মতো বুঁজে যাস না
কুঁকড়ে যাস না
ছোঁয়া লাগলেই সটান দাঁড়াবি
বৃক্ষের মতো পল্লবিত,মেলে ধরবি
ফুলফলের সম্ভার , কিছু কাঁটাও থাকবে
মেলে দিবি নিজেকে, অন্যকেও
তোর আকাশে শকুন উড়বে
শকুন্ত থাকবে ডানা ঝাপটে
কখনো রক্তাক্ত
কখনো মধুলিপ্ত
তোর রান্নাকরা সুস্ববাদু তরকারী
থু-থু করলে তোর প্রিয়তম
কষ্ট চেপে স্মিত হাসি ঝুলিয়ে রাখবি
অমৃতের বাটি কখনও বিষ পূর্ণ হয় না
অমৃত কখনো এঁটো হয় না,
শুধু যোগ্যতম দেখে দান করবি ৷
রূপকথার বৃদধা রাক্ষসী যেমন
একটা পা উনোনে দিয়ে রাখে
অন্যটিকে সেকতাপে রাখতে
তেমনই তুই বেঁচে থাক.. ..
কখনও মাটিকে দ্বিধান্বিত হতে বলবি না
পুঁতে যাবে আকাশ
উত্তপ্ত তাওয়ার ওপর
মাছের টুকরো ভেজে নেওয়ার মতো
অন্ধকারই দেয়াল.. ..
যেখানে ছাত,মেঝে
যেখানে বিছানা
যেখানে চাঁদ ও কালো
সেখানে রাত কাটাবি
শরতের জ্যোৎস্নারাতের মত
ভোরে ঘুমচোখে বাগানে এলে দেখবি
মাকড়শার জালে বিন্দু বিন্দু শিশির
প্রতিটি বিন্দুতে ঝলমল করছে সূর্যের বিম্ব
শিরশিরে হাওয়ায় জাল ছিঁড়ে যাবে
ভাবতে ভাবতে
মাকড়শার মায়ায় পড়ে যাবে শিকার
মায়া-ঘনঘোর এই সংসার বড় বিচিত্র মা !
জালে বন্দী পতঙ্গের ছটফটানির মধ্যে
নিজেকে সঁপে দিলে
তুই শিউরে উঠবি,যতটুকু যন্ত্রণায়
ততটাই উল্লাসে.. ..
শরতে থাক
বুড়ি হোস না রে মেয়ে
শাপ দিবি না, নিজেকেও নয়
নিয়তিকেও নয় বরং
স্তনদায়িনী হয়ে নিজেকে একটু বদলে নিবি
আঁচলে পাতালগঙ্গার ফোয়ারা
আঁধার ঘন হতে হতে
পাথর হয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেলে
সিঁদুরে আকাশে ফজর ফাটার দৃশ্য...
মাটিকে কখনও বলবি না
দুইভাগ হও, বরং
তুই নিজে ফেটে পড়বি
দেবকীর মতো ৷
ঈশ্বরের জন্মের জন্য
দুয়ার খুলে দিবি…