মানুষের পথ
মনোজ পাইন
আদিম গুহা থেকে অত্যাশ্চর্য শহর,
-এতোটা পথ ভালোবেসেই পেরোলে মানুষ !
বসতি গড়ে তুললো একহাতে
তারপর
কাদা মাটি জল জঙ্গলে ছড়িয়ে দিলো
ভালোবাসা।
একমাত্র ভালোবাসাই বশ করল মানুষকে।
মানুষই বললো -ভালোবাসার জন্য,
ভালোবাসার মানুষের জন্য পৃথিবী।
অথচ একদল লোক ক্রমশ ঘৃণা ছড়াচ্ছে!
এই অপরিমেয় জীবন পেয়েও বুঝছে না যে
ভালো না বাসলে নিস্তার নেই।
কে বোঝাবে তাদের
ঘৃণায় পথ ও মত পরিত্যাগ করা যায়
কিন্তু ভালো না বাসলে কেউ সে পথ মাড়ায় না।
গতরাতের কবিতা
রাজীব রায়
ঘুমের ভিতর আঙুল কামড়ে ধরো
জেগে উঠতেই প্রাচীন গাছের মতো
সহিষ্ণু লাগে তোমাকে
বাইরে ততটা জলবিলাসী নও
অথচ শিথিল ঘুমের তলে
তীব্র স্রোতের তর,
চেনা শব্দের কাছে,শীৎকারের কাছে
অচেনা শ্রোতা হয়ে বসি—
ঘুমের ভিতর আঁকড়ে ধরি আঁচল আর
মুঠো ভর্তি ভুল
মুঠো খুলতেই মেঘ সরিয়ে পোশাক তুলে নাও
তাৎক্ষণিক স্মৃতি তখন কুয়াশা করে আসে
কিছু মানুষ
স্মৃতিজিৎ
আমার মস্তিষ্কে মাছেদের স্বাধীন সাঁতার ছিল
আমার ধ্যানে ছিল গাছেদের জৈব চলন
শিশুর মত বিশ্বাস নিয়ে দেখেছি
দেশ এবং মানুষের সমানুপাতিক সম্পর্ক
আজ সাঁতার পরাধীন
আজ বাতাসের কান ভাঙিয়েছে ওজনের ষড়যন্ত্র
বিশ্বাস পুড়ে গেছে
ছাই উড়ছে রুদ্র আকাশে
দেশ ও দ্বেষের ব্যাস্তানুপাতিক হাওয়া ওড়াচ্ছে
কিছু মানুষ---মানুষের সৎভাই
শেষবার রঞ্জনাকে
উদয়ার্ণব
রঞ্জনা দরজার কাছে বাতাসে চিঠি পাঠায়।
রঞ্জনা আমার না বলা প্রশ্নের মুখোমুখি সকাল।
বিরক্তি পুঞ্জের মতো অজস্র প্রশ্ন সমস্ত লোমকুপ জুড়ে।
আরও ভীষণ স্বামী-সংসার তোমাকে আমার থেকে দূর করে রাখে।
রঞ্জনা,প্রতিদিন সূক্ষ্ম তারে তোমার বিবাহিত কোষ
ঝুলে থাকে।
চোখের চাহুনি গল্প পাল্টায়।
শ্যাওলা শরীর ঘিরে বিচ্ছুরিত সূর্যের আলো
এখন মিথোজীবী।
রঞ্জনা এই ঘর কতটা যন্ত্রণাকাতর সহবাস যাপনে?
হলুদ পিপাসা
পৌলোমী সরকার
আমাদের দেখা হয় হলুদ পিপাসার ভেতর
মুঠোভর্তি রোজনামচা
ঘিলু ভর্তি বই ,অক্ষর ,সাধনা
অনেকদিন অক্সিজেন নেই
তথাপি
ভেতরে ভেতরে বসন্তকেই ভালোবাসি
রান্নাঘরে সজনেরান্না হলে বুঝি বসন্ত এসেছে
আম্রমুকুলের ঘ্রাণ টেনে নেবার স্বপ্ন দেখতে দেখতে গরম পোষাক গুলো ধুয়ে শুকাতে দিই
আসলে বসন্ত এসে গেছে
আমাদের দেখা হয়ে যায়
প্রাণান্তকর পিপাসার ভেতর
সে পিপাসাকে বাসন্তী বা কষাটে হলুদ
যা খুশি ডাকতে পারো
অরণ্যচারী
বিবেকানন্দ বসাক
এখানে জঙ্গল বাঙময়
নিবিড় বনপথ ঘিরে থাকে ঝিঁঝিঁপোকারাও
পাম্পুবস্তি আজ
মায়াবী রাতের কাছে দিশেহারা
পথিকের অচেনা পায়ের ছাপ নেই কোথাও
জ্যোৎস্নায় অবগাহন করে রাতচড়া
চৈতন্যঝোরার জলে দেখ
কারা যেন সেরে ফেলে আজন্ম ঋণ
পানবাড়ি
মিহির দে
কতদিন যাইনি পানবাড়ির কাঠ বাড়িতে
যেখানে রোদ্দুর হেলান দিয়ে থাকে বাঁশের মাচায় পটল ক্ষেতে নতুন ফুল;ঘুঘুর ডাকে
নেমে আসা দুপুর
আমিও নদীর পাশে বসে গল্প শুনি,হাওয়া বদলের
হাতির পায়ের ছাপে বুঝে নিই পিঁপড়ের অস্তিত্ব বুনো মহিষের পালে নিজেকে জড়াতে পারিনা
মিশে যাই হরিনের দলে
বেলে মাছ ধরা জেলেটির কোন অভিযোগ নেই একথা জেনেও বিকেলের হাটে বৃষ্টি নেমে আসে...
প্রেম - দুই
সৈকত সেন
ভালবাসি বলেই
একটি দেশান্তরী নদী পুষি বুকের ভেতর
সঙ্গে রাখি কিছু গান আর
তোমার সিঁথির রেখা বরাবর
একমুঠো কৃষ্ণচূড়া
যদি চলে যাও দূরে কোথাও কোনদিন
ক্রমশ কমতে থাকে কোলাহল
পলি জমে অগভীর হতে থাকে অনুভূতি
পুরনো জলের রেখা ছুঁয়ে ছুঁয়ে
হেঁটে যাব কক্ষপথ।
যদি জ্যোৎস্নার গা বেয়ে দীর্ঘ হয় রাত
গতিপথ ঘুরে গিয়ে
ফুরিরে যায় অনন্ত ভৈরবী রাগ
রাত্রি শেষে রমণের ঢেউ ভুলে
লিখে যাব নিশি সংলাপ।
রিয়া
তাপস দাস
বড় পাপবোধ হয় রিয়া, প্রতিটি দুঃখের ভেতর তোমাকে লিখিনি কেনো
দুঃখকে মাটি ভেবে একমাত্র তুমিই তো গেঁথে যেতে পার
যেখানেই হলুদ পাতা পড়ে তুমিই তো বুক পেতে ধরো, বিকেলের মতো বুকে টেনে নাও অনিবার্যতা
অন্ধকারে এত সমর্পণ শেখাও!
চিনিনা বুঝিনা বুঝি কিছু, স্তনে হাত কাদা মনে হয়
ঠোঁটে ঠোঁট দোলাজমি ভরে ওঠে জলে
ভেসে ওঠে শরীরের গান, নেচে ওঠে মননের মাছ
মস্তিষ্কের ফুলে ফুলে জমে ওঠে আদরের জল...
ব্রহ্মজ্ঞান
শুভদীপ সেনশর্মা
এক সন্ধ্যে অপেক্ষা করতে করতে
দেখলাম ব্রহ্মা আমার শরীরে মিশে আছেন
একদিন রাত্রে অন্ধকারে
তাঁকে জাদুকর বলে মনে হয়
তারপর দীর্ঘ সময় দেখা নেই দেব-দেবীর
তাঁরা সিংহাসন থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি
আজও
সম্পর্ক
সপ্তর্ষি বনিক
উবু হয়ে বসে আছি সম্পর্কের সামনে
সম্পর্ক অনেকটা পাখি
আমাদের আয়ুরেখা দেখা যায় না
ক্ষীণ হয়ে আসে নিয়ন আলো
দেখা হবে আবার শেষ পথে
আমাদের রাত
নাদিরা
এখনও রাত্রি নামেনি, থেমে গেছে বলাকার গান
চাঁদ ও মাটির সান্ধ্য প্রলাপে স্তব্ধ সরযূ নদীও ...
যেন প্রাচীন যুগের কোনো এক প্রেমালাপ
কোকিলের ঘুনধরা জীবনে এবার বসন্ত আসে চুপিসারে ;
ক্ষয়াটে চেতনার ডাক শুনি বারবার
কর্কট রোগাক্রান্ত বিকেল মেখে নেয় পাতাঝরা রং.....
রাত্রি এখনও দেরী.... অলস পেঁচার দেখা মেলেনি
এভাবেই কুয়াশার মতো নীরবে সন্ধ্যা নামে
জীবনযাপনে মেতে ওঠে রাতপেঁচা-জোনাকদল ও ঝিঁঝিঁরা....
যুবতীর চুলের মতো আঁধার নিশি হাঁক দেয় নিবিড়ে
চৈতিগান শেষোক্তি নয় ; নবীন প্রভাতী আগমনী
রাত নেমেছে -- ঐ শোনা যায় চাঁদগান ।
সুবীরের জন্য একটা বিস্মৃতির গান
শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস
তুমি কি সুবীর?
মনে হচ্ছে না। তবে
কিষ্কিন্ধ্যা কান্ডের সমাপ্তি ঘটলে একজনকে পেলাম। নাম বললো সুগ্রীব।
রাম-রাবণের যুদ্ধকে বিশ্বসাহিত্যের পাতায় পাতায় থাকো ডিয়ার মডারেটস, বলেই বিচক্ষণ তিনি, সেধিয়ে গেলেন কবরের চিরনিদ্রায়।
শায়িত পীর সাহেব একটা কথা বলেছেন।
মিথ্যে বলার দরকার ছিলো না!! এতটুকু আয়ু জানতে গনৎকারের কাছে গেলে, তিনি বলবেন - হিন্দু, মুসলিম, শিখ...
হাঁসটার চোখের দিকে তাকাও!
দেখবে সুপুরি বাগানের সব গাছ পূবে ছায়া রেখে পশ্চিমে যাচ্ছে।
জলে নামলে হাঁসেদের শরীর হালকা হয়ে যায়।
অনুষঙ্গ ভেঙ্গে দেখি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন