শনিবার, ৭ মার্চ, ২০২০

কবিতা১

সংকেত
সুবীর সরকার

কথাবার্তা শুরুর আগে একটু ভুট্টাবাগান ঘুরে
                                                      আসি
বন ও ভোজনের মাঝে বসিয়ে দিই
                                        বিপদসংকেত
এই এলোমেলো ভরদুপুরে
তোমার উড়ন্ত চুলে চিরচেনা পাখি এসে
                                                      বসে
কথাবার্তা শুরুর আগে আমরা
সন্দেহ খুলে রাখি।বাঘনখ খুলে
                                          রাখি
সেই বাড়িটা
রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়  

পূবমুখো অতবড় জানলার
একটাই বাড়ি ছিলো
এ তল্লাটে
দক্ষিণ খোলা হু হু বারান্দা
সিঁড়ি দিয়ে ঠকঠক একটা লাঠির আওয়াজ উঠতো
কারো কারো মনে আছে,
বিশেষ করে বেলা সারা হলে
চুল শুকোতে আসতো,
একতলা যখন শেষ হলো
তখন আমগাছটা কার্নিশ ছুঁয়েছে
দোতলা শেষ হলে চিলেকোঠার মাথায় মাথায়
মনে আছে বেশ

কবেকার এসবেসটস থেকে হুল্লাট জল পড়ছে
নিচে বালির সমুদ্রে শুয়ে আছে যে, তার নাভিতে

পিঠোপিঠি বাড়িতে সেই যে আরেকটা সে
সকাল থেকে নেই
অথচ, তার সব চটি জুতো পড়ে
আর সে ঝুলছে ঠাকুরঘরে
কে বাড়ি এসেছিলো
চারগাছা নারকেল দড়ি কেটে
নামিয়েছিলো তাকে

তখন কি একটা পশ্চিমের হাওয়া দিচ্ছিলো
সে ভেবেছিলো একটা দোদুল চেয়ার
বারান্দায় দুলে যাবে
রাতের ফুলগুলো থেকে গন্ধবাষ্প উঠবে
জ্যোৎস্নায় পীড়িত ছাদে
দাঁড়িয়ে থাকবে অশরীরী

দিনের শেষ বাসন মাজা হলে
বাড়িটা হাত পা ছেড়ে দেবে
লাঠিটা নাক ডাকবে
জলঘাটা হাতগুলো বিছানায়
অপত্য হাতড়াবে

একটা দেওয়াল শুধু ডুকরে ওঠার ছিলো
একটা ছাদ খানিকটা নেমে এসে সান্ত্বনা দেওয়ার

পরের ভোর হওয়ার জন্য
দেওয়াল ঘড়িটাকে কতবার ঘুলিয়ে উঠতে হয়
কতবার বাথরুমে জল পড়ার শব্দ
তারপর গ্রীলের দরজা খোলা
বাইকের ইঞ্জিন জেগে ওঠা
আম গাছটায় বউরি বসন্ত এসে বসা

কফির জল ফুটছে
হাতে পাকানো সিগ্রেট
এই তো সে ছেড়ে যাবে
অথবা, বাড়িটাই তাকে
সে তো আর ফিরবে না
বাড়িটার কোনো ঠিকানা নেই
আসলে বাড়িটাই নেই

বাকী সব রয়ে গেছে
     
গ্রীষ্মের কবিতা
সু দী প্ত  মা জি

ধূসর সেই মধুমাসের ভেতর
স্তব্ধ একটা গোলাপ

আমাদের দস্তানা এখনও পাঠানো হয়নি
                                         লণ্ড্রিতে
কুহুতানের ভেতর থেকে জেগে ওঠা
                     অ্যাসাইলামের গল্পে
এখনও নীল সমুদ্রের গন্ধ
আর
মুঠোর ভেতর থেকে ঝরে পড়ছে বালি
বাষ্পচাপহীন

কাটোয়া লোকাল --ষাট
সঞ্জয় সাহা
তোমাকে যে নামেই ডাকি
আসলে তা শূন্যতা
বা শূন্য বিষয়ক

তোমার শব্দগুলিকে অনুবাদ করার চেষ্টা করছি
প্রচলিত যোগ বিয়োগ
বা বারো ক্লাসের অবকলন বিদ্যায়

পরম শূন্য থেকে উঠে আসা যে শব্দ
পরম শূন্যে মিশে যাওয়া যে শব্দ
তাকে অনুবাদ করি
ততটা যোগ্য পুরুষও আমি নই

বরং সাধের লাউ, বীজতলা
গাজর ও মটরদানা লিখি
লিখি গার্হস্থ্য-সবুজ,মেয়ের টিউশন
আর কিছুটা রোদ, জল ও হাওয়া

বনলতা তুমি
মানসী কবিরাজ
বনলতা কোনও কবিতা পড়েনি কখনও
এবং তার নিজের সংসার বলতে কিছুই নেই
বাবুপাড়া মন্ডলপাড়া এসব পেরিয়ে
প্রতিদিন ধুলো মেখে মেখে
তাকে আসতে হয় কাজে
স্বভাবতই পাখির নীড়ের গল্পটাও তার জানা  নেই
তবে দারুচিনি নামে এক মসলার কথা সে আবছা শুনেছে
সে এখন অঙ্গনওয়াড়িতে
যত্নে  রাঁধে মিড-ডে মিল
আর পাহারাদারের চোখে ফাঁকি দিয়ে
আঁচলে ঢেকে নিয়ে যায় বাড়তি খিচুড়ি
এবং অঙ্গনওয়াড়ির বড়কর্তার নাম জীবনানন্দ হলেও
তার পদবি দাশ কিনা সেটা জানে না বনলতা

সে শুধু এইটুকু জানে
জীবন-কর্তা কিছুটা মানুষ মানুষ দেখতে বলেই
বনলতার অন্ধ মা'কে আর ভিক্ষা করতে হয় না...

উচ্চারণ মুগ্ধ গন্ধ
শৌনক দত্ত  
চুপিচুপি গিলে খাচ্ছে দিন
কবেকার ভুল রৌদ্র বিলাপ দীঘল বারান্দায়
অনুবাদ করে স্মৃতি, গভীরে জলের বুদবুদ।

পাখির কাজলদানি
খুঁজে দেখি আকাশ রঙের চাউনি। মেঘলা পলক
নাগরিক পঞ্জি খোঁজে নুপুরের সবশেষ মুদ্রা
পরিচয় দিনলিপি খসে পড়া জানালায় একা

আমার নিরীহ দৃষ্টি অস্তিত্ব সংকট মেখে নিয়ে
ভুল বৃষ্টির বিলাপে উঠানে ভিজছে চুরমার

এখানে সুস্থির নেই স্বপ্নময় কে জাগে জোছনা
জীবন ম্যাজিক,এই
খরগোশ এই কবুতর!


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...