এ কেমন মায়া...
মধুমিতা চক্রবর্তী
একদিন তুমি সত্যিই একটা মায়াগাছ হয়ে উঠবে ভাবিনি।
আমি তো ফুলগাছ লাগিয়েছিলাম।
ফুলের কী মায়া হয়, হয় যদিও সে তো মোহ বিস্তার করেনা,
'আপন মনের মাধুরী মিশায়ে' একটা বা দু'টো রাত শেষে ঝরে যায়।
এ কেমন মায়া গো
ঐন্দ্রজালিকের দন্ডে সমগ্র খন্ডিত করো, কাটো, মারো...!
আমি তো একটা ফুলগাছই লাগিয়ে ছিলাম!
প্রিয়জনেষু
প্রশান্ত দেবনাথ
পৌষমেলায় যাবার সময় বলেছিলাম
যে-পথ গন্তব্য জানে
আমি হব সেই পথের ভিখিরি
গানে-গানে খুলে দেব সব বন্ধ আগল
মেলা থেকে ফেরার সময় বলেছিলাম
নাস্তিক দোয়েলটিকে ধীর লয় শেখাব
তার লালিত ধারণা আঁকব
ফসলের ঘ্রাণে মাতাল কৃষকের দাওয়ায়
এসব কিছুই করা হয়নি
আজ বাইশে শ্রাবণ
গীতবিতান হাতে নিয়ে বসে আছি
আমার বুকের ভেতর
বয়ে চলেছে অন্ধ ঝড়...
এসো আরো বন্ধ হই
রিমি দে
জ্বলন্ত মোমবাতির আড়ালে স্তব্ধ হয়ে বসে আছি
আটকুঠুরি - নয় দরজা নয় নয় করে
আস্ত এক তিনতলা ঘর ও ঘর্ঘর
ষোড়শ উপচার, জ্ঞান ও অজ্ঞান
ভেতরের নদী ও নর্দমা উপচে পড়া
ছল ও ছলাৎ...
প্রহরের কিচিরমিচিরের গায়ে ঢলে পড়ে
ছাদ থেকে ছাদের নীরব গুঞ্জন
ঢলে পড়ি আমি ও আমার অন্ধ আসবাব
মৌন মিছিলের গায়ে হাত দিয়ে বসে থাকি
বসে থাকি উবু হয়ে
নিজের নৌকার নীচে!
শিল্পের নাম ভাইরাস
দেবাশিস দাশ
আতঙ্কময় দিকদিগন্তে পথঘাট অবরুদ্ধ
প্রকৃতি-শিকারী মানুষ এখন লড়ছে মৃত্যুপাঞ্জা
আকাঙ্ক্ষা খুব ভাইরাল, তার জিভে দাঁতে নাচে যুদ্ধ
স্বার্থপরের লালায় ঘোষিত ধ্বংসের প্রিয় আনজাম।
তবে কার ক্ষতি?
রূপক সান্যাল
যদি বেঁচে থাকি জাতহীন, ধর্ম-আচারহীন, কূলগোত্রহীন
তবে কার ক্ষতি?
যদি কাঠ-খড় খুঁজে আনতে গিয়ে, নূনভাত জোগাড় করতে গিয়ে
কখনো ভালোবেসে ফেলি, যদি আঙুলে আঙুল ছুয়ে
ঠোঁটে ঠোঁট পেতে রাখতে গিয়ে ভুলে যাই পঞ্জিকার কথা
তবে কার ক্ষতি?
যদি মরে যাবার পর শ্মশানে শায়িত থাকি
তুলসী-হরিতকি-মধু-চন্দনহীন, যদি আমার মাথা
উত্তরে থাকবে না পশ্চিমে— এই নিয়ে কোন সিদ্ধান্তই না হয়
তাতে কার ক্ষতি?
যদি ঘড়ির কাঁটা আর দাঁড়ি-পাল্লার মধ্যবর্তী জমিটুকু
স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিই
যদি সব প্রতিযোগিতা থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে
সব পুরস্কারদের হাত নেড়ে বলি,
‘বিদায় ...’
তাতে কার ক্ষতি?
যদি সীমানা শব্দটা অভিধান থেকে মুছে দিই,
যদি সব নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতাকে হাস্যকর মনে করি
কারুর শরণ নেবার কথা স্মরণেও না আনি যদি,
তবে তোমাদের প্রচুর ক্ষতি হবে জানি
তাতে আমার কি ক্ষতি?
অমীমাংসিত
সত্যম ভট্টাচার্য।
তুমি গাড়ি থেকে নামবে বলে
জঙ্গলে বাজতে শুরু করেছিলো
অনেক ঘন্টা
অথচ তুমি তাদের শুনতে পাওনি
তুমি বা আমরা কেউই
একবারও ভাবিনি
একি শুরুর না শেষের ঘন্টা
সাপের মতো কালো পিচের রাস্তায়
তখন কিন্তু পড়েছিলো
অনেক লাল মাদার ফুল...
ধূসর পূর্ণিমা
বাবলি সূত্রধর সাহা
অসহায় ধূসর মানুষ
প্রতিবর্ত ক্রিয়ার যন্ত্রনায়!
লকডাউন ঝুলছে জিরোডিগ্রিতে,
অকাল সন্ধ্যার গন্ধে শূন্যতা....
আলোর দাহ। অপলক চাঁদের ধস্;
পরিত্যক্ত শব্দ ভাঙে বাতাস,
ঘুমের আবর্তে প্রোথিত
বিষাদের মিথ্।
স্যাটেলাইট স্বপ্নে ছকহীন যাপন।
শস্য দানার মত মৃত্যু
পহেলী দে
অদ্ভূত এক মৃত্যু নেমেছে পৃথিবীতে
মাথার উপর সূর্য জ্বলে আলোর ফোয়ারা ছিটিয়ে
তবু অন্ধকার সরে না দৃশ্যের আয়না থেকে
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিময় মৃত্যু
বরফাবৃত পর্বতের মত শীতল মৃত্যু
মাঘের সন্ন্যাসীর মত শীতার্ত মৃত্যু
বিস্তীর্ণ মাঠ ভরে ফোটা শস্য দানার মত মৃত্যু
সাঁই সাঁই করে ঢুকে যাচ্ছে তোমার শিরা উপশিরায়।
চৈত্রের চিতায় বেদম পুড়ে যাচ্ছে
তোমার মুখ, চোখ, পাঞ্জা
আমার অনন্ত আশ্রয়
আমি ছুঁতে পারি না তোমাকে
হাত বাড়িয়ে তুলে আনতে পারি না নিরাপদ আবাসে
শ্বাপদ শঙ্কাহীন কোন পৃথিবী বানাতে পারি না
অপুষ্ট প্রেম ফলে পল্লবে উন্মোচিত হতে পারে।
বাহুডোরে আগলে রাখতে পারি না তোমাকে
একান্তের অধিকারে
নিবিড় সম্মোহনে
অবেলার সহমরণে।
আমার আঙুল আজ সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতক
নিঃশ্বাসে ঢুকে গেছে চোরাবালি
দৃষ্টি রুদ্ধ পাথর সময়ে মৃত্যুর মিছিলে মিছিলে
আমাকে ভরসা করো না হে প্রেম, হে প্রিয়তম
আস্থার দূরত্বে রেখে বাঁচাও নিজেকে
পুড়ে যেয়ো না অস্পৃশ্য আগুনে।
নগর সংকীর্তন - ১
সুব্রত সাহা
একেকটা প্রবাদ এগিয়ে আসে
রুপ কথাও
আবেশে বড় হওয়া
দিঘলী ছায়াটাও
মেপে নিচ্ছে আহ্লাদের কণাগুলো
গোপনে কারো জমা হয়
কান্না ও কথোপকথনও
কঠিন সময়ে
মিশে থাকা আর্তিরা, খিদে ও ভাতের গন্ধ
ডানা মেলছে রোদেরা
পাখিদের পশুদের দেদার দিবানাপন
শুকিয়ে যাওয়া হাড় থেকে আসবে খুলি
শুরু হবে
ন গ র
স ং কী র্ত ন
সুইসাইড নোট
শুভঙ্কর পাল
শুশনিয়া পাতার মতো সবুজ ও নরম অক্ষর
এখানে বসন্তের রিংটোনে ভারী হলদে রাধাচূড়া
মগ্ন বাতাস ও প্রেমে সকালের সূর্য্যের খিলান
তিরতির নদী জল , জল সম্পর্কিত সতর্কীকরণ
শুকিয়ে ওঠা নদী থেকে হারানো জীবনের সুর
বাঁশি সুরে " ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে ..."
মন ভারী হাওয়ার প্রলাপে বালি খাদানের গল্প
এ এক দুঃসহ জীবন
বিবাগী প্রেমিকের চিঠিতে গভীর অসুখ
এই মৃত্যু লিখন
সংযুক্তিগুলির জায়গা
সব
অভিনয়ের
পর
দীর্ঘ
একটা
জিজ্ঞাসা
থাকে।
মিথ্যে
প্রতিশ্রুতিতে
জড়িয়ে
পড়ছে
আরো
একটি
বিকেল।
তোমার
কলমের
গায়ে
যে
কয়েকটা
বারুদ
লেগেছিল,
এখন
অন্ধকার
গাঢ়
হয়ে
জাপটে
ধরেছে
তোমার
শরীর।
তুমি
পালাতে
পারো,
কিংবা
একটু
একটু
করে
ভাঙতে
পারো
দ্বন্দ্বের
সংঘাত।
ইতিহাসের
ধারায়
যদি
তোমার
আবারো
জন্ম
হয়
তবে
মনে
রেখো
কয়েকটা
কাগজের
টুকরো
তোমাকে
ঘরবন্দী
করতে
ছুটে
আসছে।
সর্বনাশী পাঁচালি
সুমিত পতি
মনের ভেতর মনের খেলা চলছে দিবানিশি
আজকে জীবন অন্য রকম ভাতের থালায় খুশি
রাই আমার জীবন-মরণ, শান্ত শীতল পাটি
প্রেমে যতই কলঙ্ক থাক শরীরে আমি খাঁটি।
যমুনাতে জল চলে যায় শব্দ ওঠে বুকে
সংসার যাক রসাতলে, প্রেমটুকু থাক সুখে
আজো কালিদাসের কলম চলে, যক্ষ আছে দুঃখে।
ভৌমজল
পীযূষ সরকার
আরও একা ,আরও একটু অন্যমন হলে
আকাশপুরাণ থেকে বিষহরা গান নেমে আসে ...
একদিন পৃথিবীও নির্মল ছিল , গ্রাম ছিল ,
ধ্যানী বুদ্ধের মতো গাছ...
তুমি কেন শুধু শুধু মিথ ভাঙতে চাও ?
সম্পর্কে ঢেলে দাও ভার্চুয়াল , অনুষ্ণ কোকাকোলা ,আর..
আমাদের ভৌমজল কমে যায়
ভাঙা ডাকঘর জুড়ে সনাতন অক্ষরের শোক
ডুয়ার্স আর রাত্রিজল
অম্বরীশ ঘোষ
স্নিগ্ধ সত্তায় অপরিহার্য আলিঙ্গন
চাঁদআকাশের সারেঙ্গীতে অন্য আবহ
শাল জারুলের কোল বেয়ে হাজারো তানপুরা
জোনাকির চাদরে আটকে গেছে অন্ধকার
জঙ্গলপথ জুড়ে ছড়ানো আদিম ঘ্রাণ
জ্যোৎস্নার প্রেমচুম্বনে পুড়ে চলেছে নদী
আব্দুল ফকিরের দোতারাগান মনে রেখেছে সাঁকো
রাতজেগে জলের প্রবাহমুখে ধরে রেখেছে ডাঙ
পাশে কুড়েঘরে নিশ্চিন্ত ঘুমে আচ্ছন্ন জলপরী
এক উঠোন মাঝে বিছিয়ে চব্বিশ ঘরের সংসার
অবকাশের বাতাসে ভর দিয়ে নিষ্ঠানির্ভর স্বতন্ত্র ডুয়ার্স
পথ কিংবা পথিকের কবিতা- দুই
নীলাদ্রি দেব
নুইঁয়ে আসে ডাল
শালুক দিঘির পাশে শিশু রাজহাঁস
এখনও জানে না ঝড়
ঝড় আসে চৈত্র বিকেলে
ওপারের ফাঁকা মাঠ, ঘন জামবন, বীজতলা ছেড়ে
যে গাভি দাঁড়িয়েছিল একা
মেঘ ওর এত কাছে এসে... ঘন
ছায়া আর পড়ে না উঠোনে, দিঘির আঁচলে
নলঘাসে শেষ কোনো ফড়িং-এর ডানা ছুঁয়ে গেল
এরপর মা
জাপ্টে নিল কোলের শিশুকে
এই চাকা মাঝে মাঝে উল্টো পথে যায়
পথ ভুলে, ভুলের অতলে না-বোঝা অঙ্কই যেন
মাকড়সার রস তীব্র আঠার মত
জীবনের মাস্তুলে জড়িয়েই যায়
আরোগ্য
সৈকত সেন
প্রিয় হয়ে উঠছে ছাদ,ব্যালকনি
ঘরবন্দি অসংখ্য মুখ সুখ খুঁজছে জানালায়
হয়তো ছোট ছোট ঘরে
কত ছোট ছোট গল্প বুনছে কেউ
সুখের,বেদনার,হারানোর।
বাইরে স্তব্ধ পৃথিবী
প্রহর গুনছে অসহায় মানুষেরা।
আমি আজ আর সবটুকু শক্তি দিয়েও
ঢেউয়ের মতো ছুটে যেতে পারিনা
নিবিড়ভাবে কেবল ফিরতে থাকি কেন্দ্রবিন্দুতে
এক অজানা ভালবাসার টানে।
আজ আকাশের মত মাটিকেও
একটাই মনে হয়,সীমারেখাহীন ।
এবার দায়িত্ব নিয়ে ভালবাসতে হবে।
ধ্বংসস্তূপে ডিঙিয়ে হয়ত
কোন নতুন ভোর আসবে।
এক আরোগ্যময় পৃথিবীতে।
বাঁচার শিক্ষা নেব বলে
পার্থ সারথি চক্রবর্তী
একটা গাছ ছিল , ঐ দূরে-
এক আশ্চর্য সুবাস,
সবসময় খেলে বেড়ায়-কি এক অভ্যাসে।
পাখিরা সব আসে
তার স্নেহভরা ডালে -- সকাল হলে ।
একাকীত্ব কাটাতে আমি , ঐ পাখিদের-
চোখে তাকাই। পাতার মর্মর শব্দে,
তারা শুনে যায় জলধারার সংগীত ।
শিকড়ে যাবার আগে, সেই সন্দেশ
আমি আজ নিয়ে যেতে চাই ।
মনে হয় যেন শহুরে সব কোলাহল ,
ছুঁড়ে ফেলে দিই। কাঁচের পুতুল সব-
রাস্তার মোড়ে আছড়ে ভেঙে দিই।
ধীর লয়ে চলে যাই ঐ গাছটির কাছে ।
তার সুবাস সারা গায়ে মেখে নিয়ে-
জড়িয়ে ধরি গাছটিকে দুহাতে ।
রোদ্দুরের দিকে মুখ তুলে চেয়ে থাকি-
সকাল, দুপুর , রাত - অষ্টপ্রহর ।
বালিকা
মানবেশ মণ্ডল
কি বলবে বাড়ি ফিরে সমর্থ মেয়ে কে?
তুমি কেমন ছোট হতে হতে বালিকা হয়ে যাচ্ছ।
তোমার ঠোঁটে রাখা যত্নের লিপষ্টিক
এলোমেলো হয়ে গেল, পরিপাটি চুলে বিচ্ছিন্ন হাওয়া
পোষাকে অযত্নের ঢেউ।
কি বলবে বাড়ি ফিরে সমর্থ মেয়ে কে?
তুমি এখন বর্ণপরিচয়ের পাতা ওল্টাচ্ছো
শিখে নিচ্ছ অ আ থেকে এ বি সি...
আমার প্রতিটা চুমুকে হামি বলে ডাকো এখন
তোমার পা ক্রমশ টলোমলো।
দেখোতো তোমার আমার মেয়েরা কেমন তোমার হাত ধরে
হাঁটছে পড়ন্ত বিকেল গুলোয়...
|
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন