মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২০

গদ্য -- রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়

                                       

                                          একটি খসড়ার প্রতিলিপি  


শেষ পর্দা পড়ার আগেঃ


দুদিক থেকে দুটি অর্ধাংশ একটি নির্দিষ্ট তাল ও লয়ে পরস্পরের দিকে ধেয়ে আসার মধ্যবর্তী যেটুকু দৃশ্যমান শেষ তাতে পরিচালকের সহাস্য দাড়িমুখ, দু-বাহু বিস্তৃত প্রায় নুয়ে পড়া শরীরের ওপর স্থিরীকৃত দেখা গিয়েছিলো।


এর ঠিক আগে তিনি একটি গঠনমূলক সমালোচনা দর্শকদের থেকে আশা করে দলের ফেসবুক পেজ ও ওয়েবের সাকিন ঠিকানা জানিয়েছিলেন, এবং, পরবর্তী উপস্থাপনার দিন-ক্ষণ ঘোষণা করেছিলেন।


এরও ঠিক আগে, শব্দ যিনি নির্মাণ করেছিলেন, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না বলে মঞ্চের ওপর দাঁড়ানো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কুশী-লবেরা বেশ কিছু অস্বস্তি প্রকাশ করছিলো।


আর এর ঠিক আগে, দলের কনিষ্ঠা সদস্য মূল কাহিনী লেখককে পুষ্পস্তবক দিয়ে বরণ করে নিয়েছিলো।


অবশ্যই, তারও আগে প্রযোজক এই নাটকের নির্মাণ নিয়ে যা কিছু উচ্ছাস, খুব নিয়ন্ত্রিত আবেগে পেশ করেছিলেন।
বলাবাহুল্য, এর আগে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিলো।


শেষ পর্দা পড়ার পরেঃ


একাডেমীর চাকুরীরত প্রহরী তার হাত থেকে টর্চের ঠিকরে ওঠা আলোর সাথে সাথে প্রেক্ষাগৃহ ছেড়ে গেলে যে অন্ধকার ছেয়ে আসে, তা আসলে আলোর এক বিপ্রতীপ ভগ্নাংশ। বসে, দাঁড়িয়ে শুয়ে বা আধশুয়ে থাকা শব্দ-ও-আলোদানগুলি জানে আর মানে, যেহেতু প্রেক্ষাগৃহ, যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রযোজনা চলতেই থাকবে – এরকমটাই প্রাচীন প্রবাদ।


এসময় চেয়ারগুলো আস্তে আস্তে উঠে পড়ে। তারা বৃত্তাকারে নিজেদের পুনর্বিন্যস্ত করে। মঞ্চ থেকে একে একে আবহরা নেমে আসে। এক অদ্ভুত আঁধার সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠে। যেকোন ছটি অথবা, তার গুণিতক সংখ্যক চেয়ার ক্রমবৃত্তের কেন্দ্রে নিজেদের প্রয়োগ করে দাঁড়িয়ে থাকে। এটাই পূর্ব শর্ত এবং অলঙ্ঘনীয়।


প্রথমে তিনটি বা তার গুণিতক, তাদের ওপরে দুটি বা তার গুণিতক, এবং, তাদেরও ওপরে একটি বা তার গুণিতক সংখ্যক চেয়ার একাধিক মুদ্রায় দাঁড়ালে একটি সম্ভাবনার সম্ভাবনা তৈরি হয়।


ক্রমবৃত্তে যারা, তারা ব্যক্তিগত নৈকট্যের প্রশ্নে দল ও উপদলে ভাগ হয় কিন্তু বৃত্তীয় কাঠামোটি ছেড়ে যায় না। কিছু কাষ্ঠল শব্দ ওঠে বটে তবে তা প্রেক্ষাগৃহের নিজস্ব শব্দক্ষেপ বলেই গণ্য হয়।


কেন্দ্রস্থ চরিত্রগুলি বিভিন্ন কসরতে নিজেদের ভেঙেচুরে নিত্যনতুন পুনরাবৃত্তি তৈরি করে চলে। অন্ধকারে যে নিজস্ব ছায়াপাত হয়, তাতে প্রেক্ষাগৃহের ছটি তল ক্রমাগত স্থান পরিবর্তন করে চলে, যদিও তা থেকে বালুহ্রদ বা মরীচিকা সম্পর্কে কোনো সম্যক আভাস মেলে না।


যেকোনো প্রযোজনাই শ্রমসাধ্য, ফলতঃ বিরতি, যা অন্তর্বর্তী ভাবনার স্তর নির্মাণে সহায়ক, তার পরবর্তী পর্যায়ক্রমে চেয়ারেরা কেন্দ্র থেকে বৃত্ত ও বৃত্ত থেকে কেন্দ্রাভিমুখী হয়। এবং, মূক যেহেতু ভাষা, ভাষিক প্রয়োগ গম্ভীর হয়ে পড়ে।


বোঝা যায় বিন্যাসই মুখ্য চরিত্র আর তা যথাসম্ভব গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে নিরন্তর ব্যর্থ হলে চেয়ারেরা সময়কে একটি মাত্রা হিসেবে জ্ঞান করে, এবং, পরবর্তী প্রস্তুতি পর্বের জন্য বিশ্রাম দাবী করে।


তারা তাদের ক্রমিক সংখ্যা অনুসারে নির্দিষ্ট সারীতে ফিরে যায়। বসে, এবং, বসে থাকে।


ফের প্রেক্ষাগৃহে আলো জ্বলে ওঠে। মনুষ্য সমাগম হয়। মঞ্চস্থ হয় নাটক। শেষ পর্দা পড়ে।


প্রাচীন প্রবাদ অনুসরণ করে আবার প্রযোজনাটি জীবন্ত হয়।


                                                                                                                     
                                                                                                                     

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...