মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২০

পাঠ প্রতিক্রিয়া - সত্যম ভট্টাচার্য

পার্থসারথী লাহিড়ীর হলুদ বাটিকের পাঞ্জাবী

লিটলম্যাগ প্রকাশনার কোন বই নিয়ে কথা বলবার আগে মনে হয় সময় এসেছে আরো কিছু নিয়ে আলোচনা করবার।পার্থসারথী 
লাহিড়ীর নতুন গদ্যের বই হলুদ বাটিকের পাঞ্জাবী”-প্রকাশক এখন বাংলাকবিতার কাগজ।বইটির দাম ১২৫ টাকা।কিন্তু 
প্রথম কথা,শুনতে খারাপ লাগলেও, বইটির দাম কখোনোই ১২৫ টাকা করা উচিত হয়নি।
যদিও এখন বাংলা কবিতার কাগজের বাকি সব প্রোডাকশনের মতো এটিও একটি ঝকঝকে প্রোডাকশন,হাতে নিয়ে পড়তে ভালো লাগবে 
এমন বইয়ের আকার।কিন্তু ১২৫ টাকা দাম করার ব্যাপারে মনে হয় প্রকাশক ও লেখকের সামান্য সিরিয়াস হওয়া উচিত ছিলো
।আর সঠিক দাম করা হলে বইটিকে ফ্রি তা না বিলিয়ে বিক্রীই করা যেত।এবং দ্বিতীয় কথা, বিক্রীর স্থান নিয়ে লিটল ম্যাগ প্রকাশনার 
মনে হয় ভাবার সময় এসেছে।কারণ পার্থসারথী লাহিড়ীর বইটিই যেমন,একজন পাঠক পড়ার পর অবশ্যই আরেকজনকে বলবেন বইটির 
কথা এবং সিরিয়াস পাঠক অবশ্যই বইটি পড়তে চাইবেন।কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে তিনি বইটি পাবেন কোথায়?এক হতে পারে তিনি পরের 
মেলার জন্য অপেক্ষা করবেন এবং যদি সেখানে লি্টল ম্যাগের স্টল থাকে বইটি কিনবেন।অথবা খোঁজ নিয়ে যদি লেখক বা প্রকাশকের 
বাড়িতে যান,তারা আপ্লুত হয়ে তাকে বইটি এমনিই দিয়ে দেবেন এবং এখানেই লিটল ম্যাগের সব থেকে বড় ক্ষতি হবে।কারণ আমরা 
বিনে পসায় সাধারণত যা পাই,তাকে সঠিক দাম দিই না। তাই একটা দোকান থাকা দরকার ,অন্ততঃ জেলা শহর গুলিতে, যেখান 
থেকে পাঠক লিটল্ম্যাগের বই কিনে পড়তে পারবেন।আর তৃতীয় কথা,আমরা যারা লিটল ম্যাগের কর্মী,তারা মনে করি আরেকটি 
লিটলম্যাগের বই বা লিটলম্যাগ বিনে পয়সায় পাওয়া আমার অধিকার,যেহেতু আমিও বই সবাইকে এমনিই দিয়ে থাকি।আমাদের এই 
পদ্ধতির বাইরে অবশ্যই আসতে এবং মনে রাখতে হবে যতদিন আমরা এই ধারণার বাইরে না আসবো আখেরে আমাদেরই ক্ষতি।

এবারে আসি আসল কথায়।শিলিগুড়িতে ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান থেকে ফেরবার পথে যখন পার্থসারথী লাহিড়ীর 

নতুন গদ্যের বই হলুদ বাটিকের পাঞ্জাবীহাতে এলো,ভাবিনি পরবর্তী বাহাত্তর ঘন্টায় বইটি আমাকে 
এইরকম আচ্ছন্ন করে ফেলবে।
পড়তে পড়তে ভাবছিলাম জলপাইগুড়ি কি তবে ব্যাক্তিগত গদ্যচর্চার জায়গা হয়ে উঠলো?গত বর্ষায় জলপাইগুড়িরই 
আর এক লেখক শৌভিক কুন্ডার বই জলশহরের জার্নালআমায় এইরকমই আচ্ছন্ন করে ফেলেছিলো।
মাঝে আরো একটি জলপাইগুড়ি সম্পর্কিত বই এই শহর থেকে বেরিয়েছে- শ্রী রণজিত কুমার মিত্রের কথায় কথায় জলপাইগুড়ি”,যদিও বইটি এখোনো পড়ে ওঠা হয়নি,কিন্তু জানি 
এই বইটিও ভালো হবে,কারণ রণজিত মিত্রের মেদুর ও স্বাদু গদ্যের সাথে আমরা ইতিমধ্যেই পরিচিত।
তো যাই হোক,পার্থসারথী লাহিড়ীর সদ্য প্রকাশিত গদ্যের বই হলুদ বাটিকের পাঞ্জাবীউনিশটি গদ্য দিয়ে 
সজ্জিত চার ফর্মার একটি বই,প্রকাশক এখন বাংলা কবিতার কাগজ।কিন্তু এত সহজ করে কথা বলা যায় পার্থ?যখন আপনি লিখছেন-আমার স্ত্রী যখন আমার পুত্রের জন্ম দেবে তখন পাকা জলপাই মাখা খেতে চেয়েছিল।সেই থেকেই ওই গাছটার জন্ম।অথবা 
একদম শুরুর দিকে যখন আপনার মায়ের কথা বলছেন-বলছেন কি অদ্ভুত একটা হ্যালুসিনেশন এর মধ্যে এর মধ্যে উনি থাকেন আর এই 
জায়গাতেই আপনি সফল হয়েছেন পার্থ যে পাঠককেও আপনি নিয়ে যেতে পেরেছেন সেই ঘোরের মধ্যে আপনার ভাষার সরলতার মাধ্যমে।পার্থ লিখছেন-মার কাছে আমার বাবা ছিল সাক্ষাত শিব।আগামী জন্মে আবার একটা পরিবার হবো।আসলে আমরা সকলেই তো মনের অবচেতনে 
কোথাও এই ইচ্ছেটাই লালন করি যে আমরা সবাই একসাথেই থাকবো যতদিন পারবো।কি সহজ করে পার্থ আপনি বলেছেন-ক্লিনিক 
প্লাসের গন্ধটা ভাল্লাগে।এই বাক্যটি পড়বার সাথে সাথেই আমরা রওনা দিই আমাদের কৈশোর যৌবনের সেই দিনগুলিতে যখন কোথাও সদ্য 
স্নান করে আসা কোন কিশোরী বা মহিলার ভেজা চুল থেকে বেরুনো ক্লিনিকপ্লাস শ্যাম্পুর গন্ধ আমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে ফেলতো।সহজ 
কথা যায় না বলা 
সহজে-এই কঠিন কাজটাই আপনি অনায়াসে করে দেখিয়েছেন পার্থ।কিন্তু প্রিয় পাঠক আপনাকে মনে রাখতে হবে যে পার্থসারথী লাহিড়ী 
প্রথমে একজন কবি।আজ থেকে একুশ বছর আগে  তার প্রথম কবিতার বই বেরিয়েছিলো এক উত্তাল সময়ে এবং তখন তিনি ক্যাম্পাস 
নামে একটি একটি লিটল ম্যাগাজিন করতেন।তারপর দীর্ঘ বিরতি এবং বর্তমানে পার্থসারথী জলপাইগুড়ি থেকে করলাভ্যালি নামে 
একটি লিটল ম্যাগ করেন।তাই গদ্যের সাথে এই বইয়ে পাশাপাশি থাকবে কবিতাও।যখন পার্থ লেখেন-গভীর জঙ্গলে লালপুল পেরিয়ে 
হরিণের চারণভূমি অথবা জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে গেলে বাইরে যে কখন সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়,টের পাওয়া যায় না।গদ্য কবিতার এক 
অনবদ্য ককটেল পাঠক আপনি পান করবেন অনায়াসে।এভাবেই লাইনে লাইনে পাঠককে আচ্ছন্ন করে এগিয়ে চলেন পার্থ-সাথে থাকে
উত্তরের প্রকৃতি-পাহাড়-জঙ্গল নদী।কিন্তু এখানেই পার্থর দেখা শেষ হয়ে যায় না।এই সুন্দর জগতের আড়ালে কি ভয়ানক মাফিয়ারাজ 
চলে তা পার্থ একটি মাত্র বাক্যতে স্পষ্ট করেছেন-রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও যে কোন তাদেরই রাজ।বাদবাকি যারা তারা সব 
সামন্ততান্ত্রিক প্রজা।

আর প্রিয় পাঠক,বিনীতভাবে বলছি-বইটি না পড়লে আপনি অনেক কিছু মিস করবেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...