সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০

স্মরণে দেবেশ রায় -- কলমে সুবীর সরকার

                                       
                                             দেবেশের কথনবিশ্ব:এক বর্নময় মানবজমিন





"এলুয়ার গোরে গোরে
কাশিয়ার তলে তলে
সোনা বন্ধু মোর আইসা যাওয়া করে"
#
দেবেশ রায়। সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন। কথাশিল্পী। এক অপরূপ কথোয়াল। অনেক বছর আগে দেবেশের 'দুপুর' গল্পটি পড়ে আমি চমৎকৃত হয়েছিলাম। তারপর একে একে দেবেশের লেখাপত্তরের গহিনে ক্রমে ডুবে যেতে থাকা।ইতিমধ্যে দেবেশ রায়ের অগ্রজ দীনেশ চন্দ্র রায় আমার মনোযোগ কেড়ে নিয়েছেন। মাত্র 48 বছর বয়সে প্রয়াত দীনেশ চন্দ্র রায় বেঁচে থাকলে বাংলা সাহিত্য ঋদ্ধ হতো। তার 'ঐরাবতের মৃত্যু'
গল্পটি এবং 'সোনাপদ্মা' উপাখ্যানটি বাংলা সাহিত্যের সম্পদ। দেবেশের কথায় দীনেশ চন্দ্র বহুভাবে এসেছেন। দেবেশ ও দীনেশ তাদের কথনবিশ্ব জুড়ে কি এক দার্শনিক বিষ্ময় ছড়িয়ে দিয়েছেন।

লেখক সুবীর সরকার
আচ্ছা মানুষ কি কখনো তার দেশ হারায়!জন্মমাটি,বেড়ে উঠবার যাপনভূমি ছেড়ে তাকে হয়তো চিরতরে নুতন এক দেশে চলে আসতে হয়।সেই দেশকে নিজের দেশ করে তুলতে হয়।কিন্তু মানুষ কিন্তু আদতে তার দেশ হারান না।তিনি তার অভ্যাসে,তার শরীরের পেশি ও মজ্জায় চিরদিনের সেই দেশকেই আমৃত্যু বহন করতে থাকেন।তাকে বহন করতেই হয়। এই তার নিয়তি।হারিয়ে যাওয়া দেশের নদী, বাড়ি,পথ প্রান্তর আর লোকগান খুব নিবিড় হয়ে বইতে শুরু করে,বয়েই যেতে থাকে তার অন্তর্গত রক্তস্রোতের ভেতরেই। দেশ ছেড়ে নুতন দেশে নুতন হয়ে ওঠা জীবন।
ব্যক্তিগতভাবে দেবেশ রায়ের তিস্তাপারের বৃত্তান্ত, তিস্তাপুরান, মফস্বলী বৃত্তান্ত, জলের মিনার জাগাও পড়ে আমি দেবেশের মগ্ন পাঠক হয়ে উঠি। তিনি আমার শিক্ষক হয়ে ওঠেন। পরে প্রান্ত বয়সে এসে তিনি লিখলেন 'বরিশালের যোগেন মন্ডল'। এক মহাকাব্যিক আখ্যান। সময়ের দলিল।কি অসামান্য সমাজ বিশ্লেষণ। ইতিহাসচেতনার অন্তর্লীন স্রোত। কথা দিয়ে,কথার পর কথার জালকে, গল্পের পাকে পাকে পাঠককে ডুবিয়ে মারেন তিনি। দেবেশের ওঠার এই জাদু খুব তীব্র। বিরল।

দেবেশ রায়ের লেখা জুড়ে কেবল অন্তহীন মানুষ। পটভূমি জুড়ে দৃশ্যের পর দৃশ্য।তিনি দেখেন আর দেখান। মানুষ তার রক্ত ও পেশির সঞ্চালনের ভেতর দিয়ে বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকতে থাকতে আস্ত এক জীবন ফুরিয়ে যায় জীবন। এই আবহমান এক চিরকালীনতা দেবেশের কথনবিশ্বের মহামহিম এক অংশ হয়ে ওঠে। এই কারণেই তিনি দেবেশ রায়।              

নুতন ব্যারেজ নুতন তিস্তাপারেরবৃত্তান্ত থেকে এক দৃপ্ত প্ৰত্যাখ্যান নিয়ে চলে যাচ্ছেন বাঘারু।আমরা দেখতে পাচ্ছি মাদারির মায়ের স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের মাথার ওপর নিবিড় চাঁদ।
আবার তিস্তাপুরানের বুড়িমা তার প্রাচীনতা নিয়েই আমাদের ঘুরিয়ে মারেন গোতের অভ্যন্তরে।সেখানে জমির গল্প আছে।বদলে যাওয়া সময়ের গল্প আছে।নদী নদী দিয়ে ভেসে যাওয়া অলৌকিক সোলঙ্গা রয়েছে।তিস্তার চরে চোরাবালিতে ডুবতে থাকা সেই মস্ত 'কানজি হাতির 'গল্প রয়েছে।মানুষের বহুবর্ন যাপনের গল্প ছড়িয়ে পড়তে থাকে দেবেশের পৃথিবীতে।

দেবেশ রায়,এক অপরূপ কথোয়াল।






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...