সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০

স্মরণে আনিসুজ্জামান --- কলমে শৌনক দত্ত

                                                                 
                                                                আনিসুজ্জামানের রবীন্দ্রনাথ





পাকিস্তানি শাসকবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অংশগ্রহণের ঘটনায় যে কয়েকটি নাম ইতিহাসে শ্রদ্ধার সঙ্গে লেখা আছেতাঁদের অন্যতম অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে জন্মেছিলেন ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরপরই তাঁর পরিবার প্রথমে বাংলাদেশের খুলনায় আসেন এরপর ঢাকাতেই স্থায়ী হয় তাঁর পরিবার একদিকে মেধা, অন্যদিকে বাঙালিত্বের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়েই তাঁর বেড়ে ওঠা ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানি শাসকেরা জানিয়ে দিয়েছিল- রবীন্দ্রনাথের গান পাকিস্তানেরজাতীয় ভাবাদর্শেরসঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়  সেই কারণ দেখিয়ে পাকিস্তানের বেতার টেলিভিশনে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রচার কমাতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।। এই সাম্প্রদায়িক ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা, তারা  নিন্দা জানিয়ে  বিবৃতি দেন সেখানেই প্রতিবাদী উজ্জ্বল নামটি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

নানান বিষয়ে তার পাণ্ডিত্য ছিল মুগ্ধ করার মতো যদিও তার চর্চার বিষয় ছিল মূলত ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস অবিভক্ত বাংলার আঠার উনিশ শতকে ভাষা, ভাবুকতা, সাহিত্য, চিন্তার আন্দোলন সম্পর্কে তার জানাশোনা ছিল একেবারে খুটিনাটি পর্যায় পর্যন্ত যেমন- তাঁর গবেষণার শুরুর কাজের মধ্যে ছিল বাংলা সাহিত্যে মুসলিম অবদান নিয়ে, তিনি মুসলিম মানস এবং তার বিবর্তনের যে ব্যাখ্যা প্রদান করেন তখন পর্যন্ত অন্য কেউ বিষয়ে কাজ করেনি পুরোনো বাংলা গদ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি পুরোনো গদ্যের যেসব নমুনা হাজির করেছিলেন সেখানেও তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী সম্ভবত, গোলাম মুরশিদের সাম্প্রতিক আবিস্কারের আগে পর্যন্ত আনিসুজ্জামানের আবিস্কৃত বাংলা গদ্যের নমুনাই ছিল সবচেয়ে প্রাচীনতম কিন্তু নিছক আবিস্কারেই তার মূল কৃতিত্ব নয়, আবিস্কারকে তিনি প্রাঞ্জল ভাষায় নিপুন বিন্যাসে পাঠকের কাছে উপভোগ্য করে তোলেন এই গুণের কারণে তিনি প্রধান অদ্বিতীয় গবেষক, যিনি সৃজনশীল লেখক শিল্পীদের কাছেও ছিলেন মান্য বরেণ্য তিনি নিষ্প্রাণ গবেষকের মতো নিরস বাক্যপুঞ্জের গোরস্তান হয়ে ওঠেননি: গবেষণার নামে ধারণা ব্যক্তিদের সারি সারি কবরের বিন্যাস ছিল না তাঁর অনুসন্ধানের পৃষ্ঠাগুলো, বরং কোনো সংক্ষিপ্ত পথ অনুসরণ না করে প্রতিটি বিষয়ের গভীরে গিয়েছেন বলে হয়ে উঠেছেন অনুসরণযোগ্য
আমার জেনকিন্স স্কুলের দিনগুলিতে প্রিন্সিপাল কল্লোল চক্রবর্তীর হাত ধরে আনিসুজ্জামানের লেখার সাথে আমার পরিচয় ব্রিটিশ ভারত, পরাধীন পাকিস্তান আর স্বাধীন বাংলাদেশ আনিসুজ্জামানের জীবন প্রায় এক শতাব্দীর ভাঙাগড়া বাঙালির ইতিবৃত্ত পার্ক সার্কাস হাইস্কুলের ছাত্র, ‘মুকুলের মহফিল’-এর সদস্য আনিসুজ্জামান দশ বছর বয়সে কলকাতা ত্যাগ করে খুলনায় আসেন তার পর থেকেই আনিসুজ্জামান মানে প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে ক্ষান্তিহীন সংগ্রাম প্রথম জীবনে ছোটগল্প লিখতেন তার পর জনজীবনের জঙ্গমতাই যেন তাঁকে টেনে নিয়ে আসে প্রবন্ধ-গবেষণার দরবারে

আনিসুজ্জামান কেন বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, রাজনীতি, দেশ,বাঙালি জাতির জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ?‘ষাটের দশক থেকেই তিনি একজন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল ছিলেন দার্শনিক আন্তোনিও গ্রামসি বলেছেন, যিনি জাতির নৈতিক সামাজিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য তৈরি থাকেন, যাকে আমরা পাবলিক পারসুয়েশন বলি, তিনি জনগণকে বুঝিয়ে সঙ্গে নিয়ে সংগ্রামে নামা, সেই কাজটি করেন এই একটা কঠিন দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন এরকম বাংলাদেশে তো বটেই বাংলা শিল্প সংস্কৃতিতেই হাতেগোনা কয়েকজন, যাদের আমরা পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল বলতে পারি তিনি সেই ভূমিকাই পালন করে গেছেন দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই কাজগুলো করেছেন জনমত সংগঠিত করছেন যখনই বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির ক্রান্তিকাল এসেছে, তখনই তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় তিনি ওই জায়গাতে গিয়েছেন, গিয়ে প্রতিরোধ করেছেন সাম্প্রদায়িক চিন্তার বিরোধী ছিলেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি সবসময় উচ্চকণ্ঠ ছিলেন সংস্কৃতির আন্দোলনে সবসময়ই একটা বড় নেতৃত্ব তার ছিল
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা সাহিত্যে অনার্স ১৯৫৭ সালে এম পাস করেন তারপরে মাত্র ২২ বছর বয়সে সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসাবে শুরু করেন কর্মজীবন,  এরপরে ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে যোগ দেন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মুজিবনগর সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন দেশটির স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রতিটি প্রগতি আন্দোলনের সম্মুখভাগেই ছিলেন আনিসুজ্জামান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের বাংলাদেশের সংবিধান বাংলাতে অনুবাদ কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন তিনি  বাংলা অ্যাকাডেমির বাংলা বানান রীতির অভিধান-সহ বিভিন্ন কাজে তাঁর সীমাহীন অবদান ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ১৯৯১ সালের গণ আদালতের অন্যতম অভিযোগকারী ছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

লেখক শৌনক দত্ত
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শিল্পকলা বিষয়ের ত্রৈমাসিক পত্রিকা 'যামিনী' মাসিকপত্র 'কালি কলম'-এর সম্পাদকমণ্ডলির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শিক্ষা এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য অজস্র পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন গবেষণায় অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে পান বাংলা অ্যাকাডেমি সাহিত্য পুরস্কার শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে  একুশে পদকে সম্মানিত করে শিক্ষা সাহিত্যে অবদানের জন্য তাকে ভারত সরকার পদ্মভূষণ পদকে সম্মানিত করেছে ২০১৫ সালে তাকে বাংলাদেশ সরকার দেশের স্বাধীনতা পুরস্কারে তাঁকে সম্মানিত করে
গবেষণা শিক্ষকতার ক্ষেত্রেও তিনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন যেমন: আমরা বলি উত্তর উপনিবেশবাদের চিন্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ছিল, যেটি এখন আর নেই, আফ্রো-এশিয়ান রাইটার্স ইউনিয়ন এটি আফ্রো-এশীয় লেখকদের একটি সংহতি আন্দোলন এটা কমিউনিস্ট চিন্তা-ভাবনায় প্রভাবিত ছিল রাশা এটার পেছনে ছিল কিন্তু, এটা আসলে উপনিবেশবিরোধী একটা সংগ্রামে রূপ নিয়েছিল তিনি এটার সঙ্গে ছিলেন তো আমরা যাকে মনের উপনিবেশমুক্তি বলি, যে ডিকলোনাইজিং দ্য মাইন্ড, এই বিষয়টা উনার চিন্তা-ভাবনায় একেবারে গভীরভাবে প্রতীত ছিল
তিনি চেষ্টা করেছেন নিজের ঐতিহ্যে ফিরে যেতে তিনি মধ্যযুগ নিয়ে কাজ করেছেন তারপরে কোম্পানি আমলে ব্রিটিশদের যে ফ্যাক্টরি করেসপন্ডেন্স, তার ভেতর দিয়ে ঔপনিবেশিক চিন্তা কীভাবে প্রকাশ পাচ্ছে, এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেছেন তাত্ত্বিক অ্যাকাডেমিক, এই একটা ফিল্ডে তিনি প্রচুর কাজ করছেন এবং তিনি একটা পথপ্রদর্শক হয়ে রয়ে গেছেন
সাংস্কৃতিক আন্দোলন বা সংস্কৃতির সঙ্গে তার ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়া রাজনৈতিক আন্দোলন তিনি করে গেছেন কিন্তু, কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হননি একাত্তরেও তিনি বাংলাদেশের পক্ষে বহির্বিশ্বে জনমত সৃষ্টিতে কাজ করেছেন  একটা দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি একজন সংগ্রামী মানুষ আরেকটা দৃষ্টিকোণ থেকে, এই যে তিনি আফ্রো-এশিয়ান লেখক ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন এবং উপনিবেশবিরোধী চিন্তাগুলো বিভিন্ন জায়গায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও ছড়িয়ে দিয়েছেন, সেখানে তিনি একজন চিন্তানায়ক
আর সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তিনি যে কাজটা করেছেন, একেবারেই বৈপ্লবিক কাজ যখন পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করার একটা পাঁয়তারা চলছিল, তখন তিনি রবীন্দ্রনাথের ওপর একটা বই বের করেছিলেন যেটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল কিন্তু, সাহসের সঙ্গে তিনি কাজটি করেছেন রবীন্দ্রসাহিত্যের বিচার-বিশ্লেষণের নামে যেবন্দন-কীর্তনচালু রয়েছিলো,এর মধ্যে রবীন্দ্র বিচার-বিশ্লেষণের একটি নির্মোহ পাঠসূত্রও নির্মাণ করেছিলেন আনিসুজ্জামান তিনি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কোনোকীর্তনতো করেনইনি, বরং নিজেকে হেফাজত করেছেনরবীন্দ্র গীবতথেকেরবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিশীলতার ব্যক্তিজীবনেরঅসংগতি নানা রূপ উপস্থাপন বিশ্লেষণ করেছেন আনিসুজ্জামানরবীন্দ্রনাথকে হেয় করার কোনো মানসিকতা কাজ করেনি তাঁর মধ্যে বরং কাজ করেছে নির্মোহ নিরাসক্ত গবেষকসত্তা কারণ,তিনি নানারূপের রবীন্দ্রনাথকে খণ্ডরূপে নয়, যতটা সম্ভব অখণ্ডরূপে দেখার প্রয়াস করে গেছেন
নীরদচন্দ্র চৌধুরী, আহমদ রফিক, গোলাম মুরশিদসহ অন্যদের রচনা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণে রেখেই বলা যায়,আনিসুজ্জামানেররবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের অন্তর্লোকপ্রবন্ধটি যেকোনো পাঠককে আকৃষ্ট করবে লেখক এখানে রবীন্দ্রনাথের পূর্ববঙ্গ আগমনের প্রেক্ষাপট, পূর্ববঙ্গের সমাজ, সংস্কৃতি, প্রকৃতি, জলরাশি, জলবায়ু প্রভৃতির সঙ্গে মিলিয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গান, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, পত্রাবলির সন্ধান করেছেন রবীন্দ্র সৃষ্টিসত্তার সঙ্গে পূর্ববঙ্গের অন্তর্লোককে অসাধারণভাবে বিশ্লেষণ করেছেন

১৯৪৮ সালের গোড়ার দিকে ভারতীয় কমিউনিটি পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে রবীন্দ্রনাথকেপ্রতিক্রিয়াশীলহিসেবে চিহ্নিত করে সাংস্কৃতিক তত্ত্ব দেন ভবানী সেন এরই প্রভাবেপূর্ব বাংলার লেখক শিল্পী সংঘরবীন্দ্রনাথকেপ্রগতিবিরোধী বুর্জোয়াহিসেবে গণ্য করে মুনীর চৌধুরী, আখলাকুর রহমান, আবদুল্লাহ আল-মুতী, আলাউদ্দিন আল আজাদসহ সবাই ভবানী সেনের তত্ত্বেই একমত পোষণ করেন দ্বিমত পোষণ করেন শুধু আজিত কুমার গুহ রণেশ দাশগুপ্ত পরবর্তী সময়ে মুসলিম লীগের হয়ে রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকার করেন সৈয়দ আলী আহসান একই প্রেক্ষাপটে বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মুরশেদ, খান সারওয়ার মুরশিদ, সুফিয়া কামালের অনবদ্য সাহসী ভূমিকার উল্লেখ সেই বিতর্কে আনিসুজ্জামানের সম্পাদিত রবীন্দ্রনাথ (১৯৬৭) সংকলনটি সরকারি নীতির উপযুক্ত প্রতিবাদ হিসেবে গণ্য হয়েছিলপাকিস্তান সরকারের রবীন্দ্র-বর্জন থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রে আহমদ শরীফের রবীন্দ্র-বিতর্ক সবটাই এসেছে এই বইয়ে সব থেকে আলোচিত আলোড়িত প্রবন্ধরবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশতে রবীন্দ্রনাথের পূর্ববঙ্গে আগমন থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রচর্চা গ্রহণ-বর্জনেরএক নির্মম ইতিহাস উপস্থাপিত হয়েছে এই প্রবন্ধে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন, লিখেছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তাঁর প্রাজ্ঞতায়, তাঁর অতলসম দৃষ্টিভঙ্গিতে কবিগুরু উপস্থাপিত হয়েছেন ভিন্ন আঙ্গিকে এর মূল কারণ হলো আনিসুজ্জামানের চিন্তার গভীরতা সক্রিয়তা বাংলা সাহিত্য রবীন্দ্র-সাহিত্য নিয়ে তাঁর পঠনপাঠন গভীর এবং পরিব্যাপ্ত শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বেরই অন্যতম শ্রেষ্ঠ রবীন্দ্র-চিন্তক ছিলেন তিনিআনিসুজ্জামানের চিন্তার স্বচ্ছতা, তথ্যনির্ভর যুক্তি, নির্মোহ বিচার-বিশ্লেষণ, অনবদ্য গদ্যভঙ্গি দৃষ্টিভঙ্গির ঔদার্যসর্বোপরি তাঁর প্রাণের ঐশ্বর্যেতাঁর সৃষ্টির পথবইটি রবীন্দ্রসাহিত্য বিচার-বিশ্লেষণে নতুন পথের সন্ধান দেবে


তবে আনিসুজ্জামান চলে গিয়ে একপ্রকার ভালোই হয়েছে, হয়তো তার চিন্তাচেতনার বাংলাদেশ বাংলা শিল্পসংস্কৃতির সামনে যে ক্রান্তিকাল অপেক্ষা করছে সেটা তার পক্ষে গ্রহণ করাও কষ্টকর হতো খুব তিনি বিষয়ে অচেতন ছিলেন তা নয়, ব্যক্তি আলাপে কিংবা বক্তৃতা-বিবৃতিতে তিনি এই আশঙ্কার কথা বার বার বলেছেন, যখন যেভাবে পেরেছেন এর বেশি তার পক্ষে করা সম্ভবপর ছিল না, কারণ তিনি বিপ্লবী নন, তিনি সমাজের অংশ, সমাজ নামক ঘরের একটিস্তম্ভ’, বিশ্বাসে-চেতনা-প্রকাশে তিনিবাঙালিবৃক্ষহয়ে অবিচল থাকার চেষ্টা করে গেছেন, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে গিয়েছেন মনে-মননেবাঙালিত্বকে ধারণ করে, যে বাঙালিত্বে রয়েছে অসাম্প্রদায়িকতা এবং আন্তর্জাতিকতা আনিসুজ্জামান এখানেই অনন্য, ভয়ঙ্কর কোনো বিপর্যয়ে বাংলাদেশে যদি কোনোদিন আনিসুজ্জামানদের চেতনার পরাজয়ও ঘটে তবুও আনিসুজ্জামান ইতিহাসে গাঢ় কালিতেই চিত্রিত থাকবে আর তার বিরোধীতাকারীরা আগের মতোই পাদটীকাই থেকেই যাবেন; পাদটীকা মূল ইতিহাস কখনোই নয়



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...