" অপেরা"
কবি সুবীর সরকারের ফ্রেমবন্দি কাব্যগ্রন্থ
কবি সুবীর সরকারের সাম্প্রতিক কাব্যগ্রন্থ"
অপেরা", সব মিলিয়ে ১২ টি কবিতা আছে
বইটিতে।ভিন্নধর্মী কবিতার সমাহার যা কি না শিরোনামহীন।" অপেরা" শব্দের
অর্থ হলো ছোট নাটক।মূলত ইংল্যাণ্ডে এই অপেরার প্রচলন ছিল একটা সময়।তাঁর এক একটি
কবিতা এক একটি " অপেরার " স্বাক্ষর বহন করছে।
কবি একটি
নিঃসঙ্গ দুপুরকে গানের সমাহারে সাজিয়েছেন সাজঘরের মাধ্যমে।হেমন্ত মানেই ফসলহীন মাঠ
আর একাকীত্বের যাপন।" আমাকে নিঃসঙ্গতার দিকে নিয়ে যায় যে দুপুর/ হাতে হাতে
গিটার/ হেমন্তের মাঠ এখন উধাও ধান কবিতা (১)"। বেদনা হাহাকারের সামঞ্জস্য,আতঙ্কিত হয়ে শহরকে দেখা,শ্যাওলা ধরা জীবন ও সম্পর্ক নিয়েই মানুষ
ভ্রাম্যমান জীবন কাটিয়ে দেয়।এভাবেই কবির দেখা " বেদনাগুচ্ছ মানে তো কেবল
হাহাকার নয়/ ভয় পেয়ে যাওয়া মুখ আর শ্যাওলা ধরা দাঁত নিয়েই ভ্রমনে যাব" কবিতা
(২)। অপরাহ্নের আলোয় ম্লান,বিষণ্ণতা ভীড় করে
মনে।জীবনের গতিপথে নুড়িপাথরের মতো বাধা বিঘ্ন এসে দাঁড়ায়।সমস্যা, ব্যর্থতা,যন্ত্রনা কোনটাই চিরকালীন নয়।সময়ের সাথে পারিপার্শ্বিক হানাহানি ও
নির্মমতা জলের মতো বয়ে যায়।" গতিপথে নুড়ি ও পাথর/ ধারাবাহিক জঙ্গল/ জলে নেমে
যাচ্ছে বাঘ " কবিতা (৩)। কবি আশাবাদী।কবির প্রতিটি শব্দে গল্প লুকিয়ে থাকে। ভাঙন আর হারমোনিয়াম জুড়ে থাকে শোক -
সঙ্গীতের পরম্পরায়।আর্মিক্যাম্পের ড্রামবাদক হেসে ওঠেন কোন এক সাফল্যে।"
ভাঙনের দেশে হারমোনিয়াম/ শোক থেকে সঙ্গীত" কবিতা(৪)। নির্লোভ চাহিদাহীন
জীবনেও বরফের মতো কঠিন দুঃখ প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়।যেখানে চোখের জলের মতো বিন্দুতেও হোঁচট
খেতে হয়।কবির ভাবনায়" সন্ন্যাসীদের মতো জীবন কাটাচ্ছি/ তোমার চোখের জলে আমি
হোঁচট খাই।" কবিতা(৫)।
কি
আশ্চর্য সেতুবন্ধন চোখের জল এবং পিছুটানের।সমস্ত পৃথিবী এখন আক্রান্ত।অসুখ, যুদ্ধ,অবসাদ সব মিলিয়ে ভয়াবহ সময়।একজোট হতে পারলেই এই অবস্থাকে অতিক্রম
করতে পারব আমরা।ছোট পিঁপড়ের আর এক নামএকতা।উত্তপ্ত পৃথিবীতে পিঁপড়ের মতো আদর্শই
কবি বোঝাতে চেয়েছেন " জুতোর মধ্যে ঢুকে পড়ছে পিঁপড়ে/ আগুনে পোড়া জঙ্গল।"
কবিতা (৬)। স্মৃতি নাড়া দেয় সকলকে।সময়ের অলিগলি পার করে জীবনের বাইপাস ধরে এগিয়ে
চলে কবির স্মৃতি শহরের ঘোড়া।" জলে ডোবা হাইওয়ে / বাইপাস ধরি / অলিগলির মধ্যে
স্মৃতিশহরের ঘোড়া " কবিতা ( ৭)। হাওয়ার মধ্যে ব্যতিক্রমী হয়ে ওঠা এবং
হাসপাতাল বিছিয়ে রাখে নির্জন দুপুর..... অনবদ্য জ্যামিতিক ভাষা কবির কলমে।কবির নিজস্ব ভাষার গ্যালারিতে
প্রবেশ না করলে বোঝা যাবেনা কবিতার কাহিনি।" হাওয়ায় হাওয়ায় ব্যতিক্রমী হয়ে
ওঠা/ দুপুর বিছিয়ে রাখে হাসপাতাল/ নির্জনতা শুষে খায় হাসপাতাল " কবিতা (৮)।
শান্তির পরম আশ্রয় ঘুম।বেঁচে থাকার পজিটিভ শক্তি পাই ঘুমোলে।আবার চরম অবসাদ ঘিরে
ধরে ঘুমের মধ্যেও।ঝাঁপসা দৃষ্টিকে অনুবাদ করে ফেলে ব্যথার প্রলেপ।" ঘুমের
ভেতর অবসাদ চলে এলে কেমন ঝাঁপসা সবকিছু।" কবিতা(৯)। হিংসা, দ্বেষ কখনই গোপন থাকেনা।শান্ত স্তব্ধ জীবন।ছায়া
ঢাকা মায়াময় যাপন এক নস্টালজিয়া নিয়ে আমরা কাটিয়ে দিই আমৃত্যু।ভেতর থেকে জেগে ওঠার
আর এক নামই বোধহয় সম্পুর্ন ভাবে বাঁচা।" ঈর্ষা গোপন রেখে কি লাভ! / শান্ত
মুখ। শহরতলীর মায়া/ একে কি তবে জেগে ওঠা বলে!!" কবিতা ( ১০)। দুর্বলের ওপর
সবলের প্রতিশোধ স্পৃহা সব সময়ই চলে আসছে।অলস সময়ের ফাটলেই ঢুকে পড়ে হিংস্র সরীসৃপের দল।ঝাপসা স্মৃতি, বিষাদ মাখা মন খারাপ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে
গোধুলীর আলোতে।কবি ব্যক্ত করেন -" অলস কুকুরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বাদামী
শেয়াল" " সব কিছুব বিষাদ মাখা / নেমে আসা আলোয় মন খারাপ লেগে থাকে"
কবিতা (১১)। জীবন শুরু করার কোন পারফেক্ট সময় আছে কি!!! নাকি জীবনের কোন ব্যাখ্যা
দেওয়া যায়! জীবন মানেই একটা লড়াই।এ লড়াই এক তরফা জেতাও যায় আবার হার স্বীকারও করতে
হয়। ফ্রেমবন্দি জীবনে বড্ড কাটার যন্ত্রনা সহ্য করতে হয়। চারপাশে জড়িয়ে ধরে
অক্টোপাসের বন্ধন।ফ্রেমের বাইরে থেকেই কবি জীবনকে ভৈরবীর মূর্চ্ছনায় বাঁচিয়ে রাখতে
চেয়েছেন। আংশিক মুহূর্তের দহন,জল মাটির শরীরের শূন্য
খাঁচায় নির্মান হয় কবির যাপনের স্বরলিপি।যে স্বরলিপির সুরতরঙ্গে বাজে অপেরার কনসার্ট।কবি
লেখেন -" যে কোন জায়গা থেকে শুরু করা যায়
জীবন / ফ্রেমের বাইরেই থাকি/ জলে স্থলে অপেরা বাজে। শেষ কবিতা।(১২)।
বাংলা কবিতার প্রেক্ষাপটে কবি সুবীর সরকার নতুন বিপ্লব এনে দিয়েছেন।তাঁর এই লড়াই, এই জার্নিতে আমরাও সামিল হয়েছি। দীর্ঘজীবি হোক কবির
কলম। কবির জীবন।
পাঠ প্রতিক্রিয়া -- বাবলি সূত্রধর সাহা |
অপেরা
সুবীর সরকার
পাখিরা প্রকাশক
মূল্য - ২৫ টাকা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন