সোমবার, ৩ আগস্ট, ২০২০

লেখক যখন সম্পাদক -- সুমন মল্লিক





              দ্বৈত সত্তার বিড়ম্বনা : একটি আত্মকথার সংক্ষিপ্ত দলিল

লেখক ও সম্পাদক  সুমন মল্লিক  
সাংসারিক সত্তা ও চাকরি সত্তা ছাড়াও আমার আরও দু’টি সত্তা রয়েছে – লেখক সত্তা ও সম্পাদক সত্তা ৷ পরের দু’টি সত্তাই এই লেখার আলোচ্য ও প্রতিপাদ্য বিষয় ৷ এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো যে, আমার লেখালেখির সামান্য জীবনের ঠিক পাশ দিয়ে সমতালে হেঁটে চলেছে পত্রিকা সম্পাদনার যে দায়িত্ব ও বিবিধ অভিজ্ঞতা, তা দু’ভাগে বিভক্ত ৷ দু’টি ভাগ দু’টি আলাদা আলাদা পত্রিকায় উপবিষ্ট ৷ প্রথম ভাগের পত্রিকাটির সম্পাদনার সাথে আর আমি যুক্ত নেই ৷ দ্বিতীয় ভাগের পত্রিকাটি (‘শিলিগুড়ি জংশন’ – একটি সাহিত্য ও শিল্প বিষয়ক পত্রিকা) বর্তমানে আমি সুভানের সাথে যৌথভাবে সম্পাদনা করছি ৷ নিজস্ব লেখালেখির পাশাপাশি এই সম্পাদনার কাজকে যথাযথভাবে চালিয়ে নিয়ে যাবার পথে দুই দিকই নানান বাধা ও সমস্যার সম্মুখিন হয়েছে এবং হচ্ছে ৷ সেগুলিই এখানে এক এক করে তুলে ধরছি ৷

১) নিজের লেখালেখি এবং পত্রিকার কাজ, দুটো একসাথে সমানভাবে চালনা করতে গিয়ে আমি নিজের সংসারধর্ম পালন করতে বহুলাংশেই ব্যর্থ হয়েছি ৷ চেষ্টা করিনি যে তা নয় ৷ কিন্তু সব চেষ্টা তো আর সফল হয় না ৷ আর এই ব্যর্থতার তির যতবার আমার দিকে ছুটে এসেছে, প্রত্যেকবার তার অভিমুখ আমি নিজের লেখালেখির দিকেই ঘুরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি ৷

পত্রিকার প্রচ্ছদ
২) পত্রিকার কাজকর্ম করতে গিয়ে, বিশেষত বিভিন্ন সংখ্যাগুলো করতে গিয়ে মূল যে সমস্যায় পড়তে হয়েছে, তা হ’ল অর্থনৈতিক সমস্যা ৷ নিজের পকেট থেকে বহু টাকা বেরিয়ে গেছে পত্রিকা করতে গিয়ে ৷ লিটল ম্যাগাজিনের জন্য বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করার অভিজ্ঞতা কার কেমন জানি না ; তবে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা খুবই কদর্য ৷ তার মধ্যেও খুবই অল্প সংখ্যক যারা বা যেসব সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান আমার সম্পাদিত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছেন, তাদের সবাইকে আজ এই নগণ্য লেখাটির মধ্য দিয়েই অপার ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই ৷ তবে মূল কথা যেটা তা হ’ল, এই অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তার কালো মেঘ বেশিরভাগ সময়েই আমার লেখালেখির ওপর ভেসে থাকতো ৷ কোন এক অসীম দৈববলে তা হয়তো কখনও ভেঙে নেমে আসেনি ৷

৩) পত্রিকার সংখ্যাগুলির কাজে যখনই নিমগ্ন হয়েছি, নিজের লেখক সত্তা ভীষণভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ৷ কোন কোন সময় এমনও হয়েছে যে দীর্ঘ কয়েক মাস আমি ঠিক মতো লিখতে পারিনি কিংবা লেখায় মনোনিবেশ করতে পারিনি ৷ এই সমস্যা আজও বিদ্যমান ৷ কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই সমস্যার সাথে পুরোটা না হলেও, অনেকটা মানিয়ে নিয়েছি ৷ তবে এ-কথা অনস্বীকার্য যে, সম্পাদনার কাজ করতে গিয়ে নিজের অনেক লেখাকে শব্দাক্ষরে প্রাণদান করতে পারিনি ৷

লেখকের কবিতা-গ্রন্থ 
৪) কখনও আবার এমন হয়েছে যে, চাকরির দিকটা সামলে চলতে গিয়ে সম্পাদনার কাজে কিছুটা অবহেলা করে ফেলেছি ৷ এদিকটা যেমন সত্য, তেমনি আরেকটা সত্য হ’ল, পত্রিকা সম্পাদনার কাজের জন্য বছরের মাঝেই নিজের চাকরিজীবনের বাৎসরিক ছুটিগুলির প্রায় সবটাই কখনও কখনও শেষ করে ফেলতাম ৷ আর এই দু’য়ের দড়ি টানাটানির মাঝে আমার লেখক সত্তা মাঝে মধ্যেই সময়িকভাবে লোপ পেত ৷

৫) একটি পত্রিকায় বেশ কয়েকজন সম্পাদক থাকলে একটা সময় পর তাদের মধ্যে মতানৈক্য এবং নানা সমস্যা দেখা দেয় ৷ ফলত তারা বিভক্ত হয়ে যান এবং অনেকে পত্রিকাটির সম্পাদনার সবরকম দায়িত্ব ও মায়া-মমতার টান থেকে নিজেকে মুক্ত করে বেরিয়ে যান ৷ এরকম ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আমার নিজেরই রয়েছে ৷ এই সমস্যার মূলে যে কারণটি রয়েছে তা হ’ল, সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যে সকলেই যদি কবি-লেখক হন এবং তাদের মধ্যে দু’একজনের যদি নামযশ বেশি হয় যায়, নিজের অজান্তেই যদি পরিচিতি বেশি হয়ে যায়, তাদের লেখালেখি যদি সব জায়গায় বাকিদের থেকে বেশি আলোচিত হয়, তবে বাকি কম আলোচিত সম্পাদকেরা নিজেদের অহেতুক বঞ্চিত মনে করেন এবং এর থেকেই তাদের মধ্যে জন্ম নেয় ঈর্ষা এবং একটা সময় পর তা কদর্য ও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে ৷
জেলাভিত্তিক কবিতা সংকলন

৬) পত্রিকা সম্পাদনা করতে গিয়ে আরও একটি বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয়েছে ৷ লেখালেখির সূত্রে লেখালেখি জগতের অনেকের সাথেই প্রত্যক্ষও পরোক্ষভাবে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে ৷ বই, অন্যান্য পত্রিকা বা স্যোশাল মিডিয়া ছাড়াও এদের অনেকের লেখাই পত্রিকা সম্পাদনার কাজ করতে গিয়ে পড়ি ৷ কিন্তু ব্যাপারটা হ’ল, কারও কারও লেখা অনিচ্ছা সত্ত্বেও পত্রিকাতে অনেক সময় রাখতে হয় ৷ এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার আমন্ত্রিত লেখকও থাকেন ৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেককে লেখা পাল্টে অন্য লেখা দিতে বলি ৷ কেউ পাল্টে দেন, কেউ আবার নীরব থাকেন এবং দীর্ঘ নীরবতার মধ্যে দিয়ে অনেকটা দূরে সরে যান ৷ এই অপ্রিয় চক্রে পড়ে কেউ কেউ তাদের ফেসবুক ও মনের বন্ধু-তালিকা থেকে আমাকে নির্বাসন দিয়েছেন ৷

     যাই হোক, শেষে এটুকুই বলতে চাই যে, নিজের লেখালেখি এবং পত্রিকা সম্পাদনা করা – এই দু’টি কাজকে পাশাপাশি সমানভাবে গতিময় রাখাটা বড়ই কঠিন কাজ, একটা চ্যালেঞ্জও বলা যায় ৷ পরে কী হবে জানি না ৷ তবে এই সময়ে দাঁড়িয়ে বলতে পারি, চ্যালেঞ্জটি আমি সাদরে গ্রহণ করেছি


লেখকের কয়েকটি কবিতা-গ্রন্থ     



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...