'শস্য যখন অফুরন্ত, এসো গড়ি তার যৌথ খামার'
লেখক ও সম্পাদক -রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায় |
কবিতা কী?
অনেক বিশিষ্ট ব্যখ্যা ও ব্যখ্যাতাকে ছেড়ে এসে নিজের ভেতরে নিজে
ডুব দিয়েছিলাম। গভীর ও গহন। এক অন্য
জগৎ। যেন সে এক অতল ঘাই দীঘির।
তখনো পুরোপুরি বড় হই নি, বইমেলার মাঠে
সদ্য চুরি করে ভাগে পাওয়া কবি সুভাষ মুখার্জী-র 'বাঘ ডেকেছিলো' খুলে শ্রী মৃণাল সেনকে
বলেছিলাম, একটা সই করে দেবেন!
সেটা কলকাতা ৭১ নয়, ৮৩।
ফিরে এসে লিখেছিলাম, ...এখনো শিয়ালেরা এপাড়ায় ওপাড়ায় / রাজারাণী সেজে বসে বাঘের
গন্ধ পায়...।
মনে হয়েছিলো, এটাই তো ভাষা। এই ভাষাতেই প্রকাশ ও স্বীকার করতে পারি আমার
চিরন্তন প্রেম ও পতাকাকে।
আ মোড অফ এক্সপ্রেশন এন্ড কনফেশন, টু।
সেটা তো গেলো একক মনোনিবেশ কিন্তু আমি তো একা নই। সুতরাং রঙে ও রেখায় তাকে আঁকতে হবে। দেখতে হবে। পাঠ ও উপলব্ধি করতে হবে। বহু দৃষ্টি ও ভাষ্যকোণ থেকে। এই গেল সৃষ্টি সুখের
উল্লাসে আমি একা এবং কয়েকজন।
ব্যক্তি ও সমষ্টি।
৮৩ তেই প্রথম স্কুলে 'দেওয়াল' পত্রিকা আর ৮৬ তে ছাপা। 'আঁধি থেকে বলছি'। সেসবের কিছু
কিছু এখনো গোপন
আস্তানায়।
'খামার' করতে আরো কিছু সময় লেগেছিলো। পত্রিকার ওপরে লেখা থাকতো:
'শস্য যখন অফুরন্ত, এসো গড়ি তার যৌথ খামার'।
সুতরাং সেই প্রেম আর পতাকার কাছে বারবার ফিরে যাওয়া। একা আর সমবেত।
সেই কোন আদি অনন্ত
থেকে
ভাঙার উল্টো পিঠে গড়া লিখে বসে আছি।
'রেফ' করেছি। তারপরে জার্নি ৯০ (journey90s.co.in)।
অনেক আগে সশব্দে টের পেয়েছি আমার সময়ের
নিঃশব্দ বিপ্লব হলো আন্তর্জাল। সেই কোন সময় থেকে জার্নি ছাপা ও আন্তর্জালে একই সাথে বেরিয়েছে। আমার
লেখাও কালক্রমে বদলেছে। কিন্তু ভাঙার সঙ্গে ছিলাম। মোহের সঙ্গে নয়। কোনো বুধ-সন্ধ্যে বা রবি-সকাল
নয়। প্রসঙ্গতঃ, কেউ কেউ মনে করতে
পারেন আমার প্রথম
কাব্যগ্রন্থ 'নাবিকজন্মের ভবিষ্য' গান্ধার থেকে প্রকাশিত হয়েছিলো। অন্যত্র কোথা
থেকে নয়।
ছোট পত্রিকার ক্ষেত্রেও তাই।
যা বুঝেছি ঠিক তাই করেছি।
আঁতুড় সে, মেধা-মনন-বোধ-বীক্ষণের বীজাগার।
সুতরাং, এই দুটো ভূমিকা বা সত্ত্বা, যদি আদৌ ভূমিকা বা সত্ত্বা হয়ে থাকে,
তবে তা একে অপরের
পরি-ও-সম-পূরক।
এখানে আমার কিছু বলার
নেই। পাঠক বলবেন। কবি বলবেন। যারা আমার সহায় হয়েছেন।
নয়াদশক (৯'য়াদশক) এই মুহূর্তে আমি সম্পাদনা করি। প্রথমে ব্লগ
(nayadashak.wordpress.com) ও পরে অনিয়মিত ওয়েবভাষ্য (nayadashak.co.in)।
তবু যতই মরচে পড়ুক
আমার প্রেম ও পতাকা থেকে আমি দূরে যেতে পারি
নি। শুধু মিছে
কোলাহল থেকে সরে গেছি।
সেটাই স্বাভাবিক। প্লাটফর্মটা ছিলো তো কবিতা লেখার। কেশী বা, পেশী
দেখানোর নয়।
কিন্তু দিনে দিনে সেটা
প্রায় গোষ্ঠী ও সংক্রমণের পর্যায়ে চলে গিয়ে অতিমারী রূপ ধারণ করেছিলো। তবে একথা আশার, যে আমার সময়েই আমি প্রত্যক্ষ করেছি বাংলা
কবিতার বাজার ও বাজারী পত্রিকা নির্ভরতা প্রায় শূন্য হয়ে এসেছিলো। বেশ কিছু ছোটপত্রিকা সময়োপযোগী নিরলস কাজ করে গিয়েছিলো। তিনটি মাত্র
ছন্দের প্রচলিত পরীক্ষা ও নিরীক্ষার বাইরে পদ্য নয়, কবিতা
লেখার কাজ শুরু
হয়েছিলো। যে ধারা
বহু প্রবাহে এখনো
অক্ষুণ্ন।
আন্তর্জাল এক অনন্ত সম্ভাবনা। শ্রাব্যে, দৃশ্যে ও উভয়ত। এটা আমরা ভাবতে
পেরেছিলাম। এখানেই আনন্দ। সাম্প্রতিক কোভিড এসে এই সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
সে অতি মন্দ না ভালো?
এ প্রশ্নই অবান্তর। কবিতা লেখা যদি আপনার
অধিকার জ্ঞান হয়, তাহলে আপনি অবশ্যি দায়িত্ববান।
ভাগ্যিস সমকাল ইতিহাস লেখে
না। সে দায় তার নেই।
তবে গবেষক তিনিই যিনি
ঠিক ছুঁয়ে ছেনে
জেনে নেবেন আমরা
ঠিক ছিলাম কিনা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন