মুকুকে নিয়ে আমার আর চিন্তা নাই
মুকুকে নিয়ে হয়েছে সম্প্রতি এই একটা মুশকিল যে সে বয়ঃপ্রাপ্ত হইয়াছে এবং রোজ রাতে তার আলাদা
আলাদা সঙ্গিনী চাই। কিন্তু আমাদের গ্রামে মেয়ে কুকুরেরা সংখ্যায় কড়ে গোণা আর বেশিরভাগই পুরুষ কুকুর। ফলে কামড়াকামড়ি লেগেই আছে। এবং প্রায়দিনই সে যখন ভোরে বাড়ি
ফেরে সারা শরীর
জুড়ে রক্ত গড়াচ্ছে,আমাকেই সেসমস্ত ক্ষতে
মলম লাগাতে হয়। কিন্তু পরদিন রাতেও
সে বেরোবেই। আটকে রাখবার চেষ্টা করেও
দেখেছি গ্রিলে তালা
লাগিয়ে। হয় মুকু
কান্নাকাটি জুড়ে দেবে
সে এমন যে সারারাত ধরে আমাকে
জেগে তার কান্না শুনতে হয়,নতুবা
নিজেই লাফিয়ে মুকু
জানে চাবিটা কোথায়
রাখা থাকে,চাবি
নিয়ে তালা খুলে
পগারপার।
গল্পকার দেব্জ্যোতি রায় |
আমি ওকে এরকমও বলেছিলাম যে,চিন্তা করিস
না। তোর সঙ্গিনী আমি ঠিক জোগাড়
করে আনব। আমাকে ক'টা দিন সময় দে। তোর ঘরে বসেই তখন তুই রোজ রাতে,তোকে ওই গুণ্ডা কুকুরগুলির দাঁত আর নখের সামনে দাঁড়াতে হবে না। কিন্তু সে শুনলে তবে তো ! ক'টা দিনের অপেক্ষাতেও ও রাজি নয়। তার চেয়েও বড় কথা,আমাকে বলেছিল,আমিও
তোমাদের রাজা-বাদশারা আগেকার কালে যেমনটা রোজ রাতে সঙ্গিনী পাল্টাত,আর এখন ভেব না যে আমি জানিনা,তোমাদের মাতব্বররা রোজ রাতে
যা করে,তুমি
পারবে সেরকম ব্যবস্থা করতে ? আমি তো শুনে কী বলব,থ ! নিজের সবকিছু ঘেঁটে গিয়ে সেই থেকে পরিচিতরা আমাকে ঘেঁটুদা,ঘেঁটুবাবু,ঘেঁটু বলেই ডাকে। নিজের বাপ-মায়ের দেওয়া
নামখানা কোথায় যে ক্রমে হারিয়ে গেল,আজও,থানায় ডাইরি,কাগজে ও টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়েও সে নামটা খুঁজে পাইনি
আর। আমি নিজেও
নিজেকে কেউ জিজ্ঞেস করলে,ব্যাঙ্কের পাসবই থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স,সর্বত্র,ওই নামেই পরিচিত করি।
এমনকী মুকুও আজকাল আমাকে
ভোরে ফিরে এসে বলে,তুমি এখন একটা লস্ট আইটেম। দেখছ তো কেমন
নিজেই নিজের সঙ্গিনী জোগাড় করছি। এ গ্রামে নেই তো অন্য গ্রামে,মেয়ে
কুকুরের কি অভাব
ভেবেছ ? আমাদের মধ্যে মেয়ে
জন্মালে তাকেও মায়ের
দুধ খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়। বড় মাছের কাঁটার ভাগ বা মাংসের হাড়ের,সেও পায়। শুধু নিজেকে একটু সতর্ক
থাকতে হয়। আর কোনো পুরুষ কুকুর
বা ধর,একটা
গোটা দল,তেড়ে
এলে নিজের বন্দুকের নলটা একটু তুলে
দেখাই। তাতেই কাজ হয়। কুত্তার বাচ্চারা যা ভীতু !
রোজ রাতে তুই তাহলে
এভাবেই মেয়েদেরকে তুলিস ?
তবে আর কী ! এ গ্রামের কুত্তাগুলো যারা আগে আমাকে কতবার
আঁচড়েছে,কামড়েছে,তুমিই
তো সেবা করতে,রাত জেগে,এখন আমার চেলা বনে গেছে। ওদেরকে অবশ্য
প্রসাদ দিতে হয়। ভাত ছেটালে কি কাকের অভাব ? তোমাদের যেমন আমাদেরও তেমন। শুধু তুমিই আজব্দি একটা কাকীমাও জোটাতে পারলে না।
মুকু ওর আত্মজীবনী লিখবে জানিয়েছে। বই হয়ে বেরোলে সেটাই নাকি
সারমেয় সমাজে বেস্ট
সেলার হবে।
ও হ্যাঁ,মুকু আমাকে
আগে কাকু বলত,এখন ঘেঁটু বলে ডাকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন