বুধবার, ৫ আগস্ট, ২০২০

লেখক যখন সম্পাদক -- বেণু সরকার


অজস্ত্র লালকালিতে পান্ডুলিপি রক্তিম হয়ে উঠতো...


লেখক ও সম্পাদক
বেণু সরকার

ম্যাকউইলিয়াম হাই স্কুলের সামনে পার্ক রোডের শুরুতে একটি কালভার্ট ছিল। দু’ধারে বসার জায়গা ছিল। তুমুল আড্ডা চলছিল। কবি কমলেশ রাহারায় মধ্যমণি। সঙ্গে জয়দেব গুপ্ত। ষাট দশকের শেষ দিক। কমলেশদা গান গাইতে পারতেন। তখনকার জলসায় তিনি গাইতেন। কিন্তু লেখালেখিও করতেন। পত্রিকা বের করার উৎসাহ দিলেন। কমলেশদা সম্পাদক। আমি ও জয়দেব বাবু সহকারী। রাত জেগে কোর্ট এলাকায় সুলেখা প্রেসে কাজ করতাম। মহালয়ার দিন (১৯৭০) পত্রিকা প্রকাশিত হল। হৈ হৈ করে ৫০০ কপি বিক্রি করতে বেগ পেতে হয়নি। লিখলেন অনেকে। এ সময়ের কিছু আগে আলিপুরদুয়ারে বেড়িয়েছে ‘তরাইয়ের কল্লোল’, ‘রোড সাইড’, ‘যন্ত্রনা’, ‘সোচ্চার’,’তল্লাশী’, ‘কবিতাপত্র’ ইত্যাদি। কমলেশদা অন্যত্র চলে গেলে দায়িত্ব পড়ল আমার ওপর । কিছুদিনের মধ্যেই টের পেলাম আমাদের যতোটা উৎসাহ, সেই পরিমানে পত্রিকা পয়সা দিয়ে কেনার মানুষের সংখ্যা কম। আমি, তপনকুমার ঘোষ, ছানু সাহা অনেক কষ্টে সংগ্রামের কাগজ দু’মাস পরপর বের করতে লাগলাম। ৫ টাকার একটি বিজ্ঞাপনের জন্য একটি দোকানে পাঁচ বার যেতাম। ১৫ টাকার একটি বিজ্ঞাপন পেলে বর্তে যেতাম। ১৯৭০ থেকে প্রচুর লিখেছি। সমগ্র বাংলার অসংখ্য কাগজে লিখতাম। মূলত কবিতাই।

ভাবলাম রেজিস্ট্রেশন পেলে বোধহয় ভালো হবে । ত্রিবৃত্ত পত্রিকার অনুষ্ঠানে কবি রনজিত দেবের সহযোগিতায় প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী আই.কে গুজরাল সঙ্গে দেখা করে ‘বিনিদ্র’র রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থাও করে ফেললাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় মহাশয়।


      কিন্তু সাহিত্য পত্রিকায় সম্ভবত সরকারি বিজ্ঞাপন পাওয়া মুশকিল। হলও তাই। তবুও চলতে লাগলো। তবুও পত্রিকা চলতে লাগলো। এল জরুরি অবস্থা। তখন প্রতিটি সংখ্যার সমস্ত পান্ডুলিপি তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগে দেখিয়ে আনতে হতো। অজস্ত্র লালকালিতে পান্ডুলিপি রক্তিম হয়ে উঠতো। আন্ডারলাইন করা অংশগুলো বাদ দিয়ে ছাপতে হতো। তখনকার দিনে একটা বড় বাধা ছিল। যেগুলো সত্যি কথা সেগুলো বলা সম্ভব হতো না। অথচ সাহিত্যে মিথ্যে বলা যায় না। পৃথিবীর সব দেশেই সমাজ জীবনের প্রতিফলন ঘটেছে সাহিত্যে।

   শুরু থেকেই উৎসাহ দিতেন জগন্নাথ বিশ্বাস, বিমলেন্দু বিষ্ণু, সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, অর্ণব সেন, বেণু দত্তরায়, সমীর চক্রবর্তী, বিমল ভট্টাচার্য সত্যেন্দ্র প্রসাদ বিশ্বাস, সুছন্দা রায় বিশ্বাস, রণজিৎ দেব, সমীর চট্টোপাধ্যায় এবং আরো অনেকে ।

         তুষারকান্তি ঘোষ, গৌরশঙ্কর ঘোষ, তুষার বন্ধ্যোপাধ্যায়, সনৎ চট্টোপাধ্যায়, শ্রীপদ দাস,
সুধীর বিষ্ণু, গিরিজাশঙ্কর রায়, বিমলেন্দু দাস এঁরাও কম সহযোগিতা করেননি ।
     
        

১৯৭৬ এর ঘোরতর বর্ষায় আমি চলে গেলাম ফুন্টশেলিঙে ‘ব্যাঙ্ক অফ ভুটানে’। এবার কবি বন্ধু দিবাকর রায় সম্পাদনার দায়িত্ব নিলেন। সঙ্গে সুজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, সুমিত ভাদুড়ি, ত্রিদিব চক্রবর্তী, আরো অনেকে। রমরমিয়ে চলতে লাগলো। ওঁদের উৎসাহে ভাঁটা পরেনি কোনদিন। অনেকগুল সংখ্যা ওঁরা বের করেছিলেন। আবার আশির দশকে তনুময় সরকার দায়িত্ব নিয়ে অনেকগুলো সংখ্যা বের করেছেন। সঙ্গে কল্যাণ হোড়, জয়শ্রী ঘোষ, বিশ্বজিৎ আচার্য, মধুমিতা চক্রবর্তী আরো অনেকে ছিলেন। নোতুনভাবে আবার সম্পাদনা শুরু করেছি আমি। লক্ষ্য ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। এখন পঞ্চাশ বছর হল পত্রিকার। এবছর একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করা যাবেনা হয়তো। বিশ্বব্যাপি ভাইরাসের সংক্রমণ। তবু চেষ্ঠা তো চালাতেই হবে।

     সাহিত্যের আঁতুড়ঘর লিটল ম্যাগাজিন। এখান থেকেই বড় মাপের লেখক-কবি হয়ে ওঠেন। নির্মাণ, বিনির্মাণের সমগ্রতায় ভরে ওঠে বিশ্বসাহিত্য। এর প্রথম স্ফুলিঙ্গ  লিটল ম্যাগ। ধীরে ধীরে অগ্নিগোলক। মিথ্যের বেসাতি নেই এখানে । সমাজের ক্লেদ পঙ্কিলতা আবর্জনার ডিটারজেন্ট হলো সাহিত্য ও সংস্কৃতি।


   প্রায় ২৮ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। সেই ভাষার চর্চা কোনদিন বন্ধ হবে না আশা করি। আর মফস্সল  বাংলাতেও  চলতে থাকবে সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশ, আড্ডা, সম্পাদনা
আর হৈ হুল্লোড়।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...