সোমবার, ৩ আগস্ট, ২০২০

লেখক যখন সম্পাদক -- সুকান্ত দাস


                                        আমি ও শাঙ্খিক             


লেখক ও সম্পাদক সুকান্ত দাস     
      ছোটবেলায় নদীমাতৃক কবিতা লেখা শেষ করে মনে হয়েছিল এই তো সিঁড়ি ঘর। কিছুটা ধাপ পার করা যাক। প্রেসগুলো বড় সেয়ানে। মাপের মতো সোজাসিধে কোন মূল্যতালিকাই নেই বা রাখেনা হয়তো। খবরটা জেনে নিতেই বন্ধুবর অর্ণবের ফোন। চল লিটিল ম্যাগ করি। বিশ্বাস করুন বেশ ছিলাম। বেঞ্চ বাজিয়ে গান করতাম, লোক ভাগিয়ে ব্যান্ড। এবার ডালে বসে ডাল ভাঙ্গার প্রসঙ্গ চলে এল। নবমুকুল সাহিত্য পত্রিকার  দুই সংখ্যার ঘর ভরানোর পর একা চলার দৈব ডাক। অতঃপর কোদাল চালানো


সত্যি বলতে জীবনে কোন আলাদা কষ্টের তাগিদ কখনও উপলব্ধ হয়নি। এরকম কোন দিব্যিও ছিলনা যে সাহিত্যের সাথে বসতবাড়ি করতেই হবে কিন্তু এমনটাই হল। গরলবারি মাথায় চড়ে গিয়েছিল। কি যেন চাইছি যা সহজ কিন্তু বলার স্পেস নেই। একটা নদীবক্ষের চর চাই যেখানে আমাদের উদ্ভ্রান্ত ভাবনাগুলোকে রেখে আসা যাবে। শাঙ্খিক কোন অলীক নাম নয়। রীতিমতো ভেবে চিন্তে অপার করা দেখা। সে দেখায় প্রতিবিম্ব ছিল নিজেকে আড়াল করে। ২০০৯ সাল। সদ্য


হায়ার সেকেন্ডারি দিয়েছি। হাতে মূলধন কম, সব টিফিন খরচা বাঁচিয়েও দেনা হয়ে গেছে অনেক। প্রেসে প্রথমবার,  তাই বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে ওঠেনি। প্রেমিকা মাতৃপ্রদত্ত স্বর্ণযুগল বিক্রি করতে চাইছে তাও হয়ে উঠছে না। পেপারস্নেই। শেষে এক মুসলিম স্বর্ণকার ভাই দয়া করেন। আমাদের পিতার জাত বড়ই অসহায় হয়। সে তো সদ্ভাবনা নিয়ে পিতৃত্বের একটু খোঁজ পেলেই আহ্লাদিত হয়ে পড়ে। প্রতিশ্রুতি ছিল তারুণ্যের অহঙ্কার বাঁচিয়ে রাখবার। কিন্তু একটা খরগোশ জীবনও ছিল। চোখের তবক না সরিয়ে দুনিয়া মনে হত সাদা পোশাক পরা কোন এক সম্ভ্রান্ত যুবক। সাহিত্য প্রশাসকের সংজ্ঞা বা গুরুত্ব কি? - এসব নৈর্ব্যক্তিক বোধমূলক প্রশ্নের উত্তরও জানা ছিলনা। কিন্তুকবিরাজের মাদুলি পরলে সে যাত্রায় ফাঁড়া কেটে যেতে পারতো।



কথা ছিল জীবনমুখী হয়ে উঠবে লেখালিখি। অথচ জীবন বিমুখেই একটা কাল্পনিক কথোপকথন উঠে এসেছে। প্রশ্ন ছিল সম্পাদনার নাকি লেখার জীবন বেছে নেওয়ার? প্রথমটি বেছে নেওয়াতে সহযোগিতার স্বাদ ছিল না। মনে রাখা উচিত ছিল লেখার জীবনে কাছের বলে কেউ হয়না। বিপক্ষ জিইয়ে রাখা মানুষগুলোই কাছের। অন্য ধারার ভাবনা বলে যে দিনের শুরুয়াৎ হয় আসলে তা সেই সমস্ত দিনগুলির রোদ্দুর থেকে ছিটকে আসা গোধূলি। গলির পথে সন্ধ্যা নামে খুব তাড়াতাড়ি। বিশেষ করে মফস্বলের। ভিড়ের মাঝে চলতে চলতে হঠাৎ আবিষ্কার করতেই হয় যে নাহ্আমি একলাই চলেছি ..


প্রাণীবিদ্যা ছিল প্রথম অনার্সের বিষয়। ক্লাসের মেয়েরা ছেলেদের না বলে চুপিচুপি ব্যবহারিক প্রণালী শিখে আসতো আর বলতো ছেলেরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতে গেছে। এই গল্পটা খুব মজাদার এবং প্রাসঙ্গিক। জীবনের সাথে দোলা খায়। তারপর একদিন জানলাম সব কনসেপ্ট- নাকি চুরি হয়ে যায়। সবাই আগের থেকেই জেনে বুঝে নিয়েছে বাংলা বাজারের হাল হকিকত। আমরা প্রান্তিক বলে রোজ গলা সাধি। গলা ভেঙ্গে যায়। রাগ হয় খুব। বারীনদা চিঠিতে লেখেন -- রাগ করতে শিখিনি বলেই জীবনে আর গান হল না সুকান্ত। হেসে ফেলি। রাগ কমে আসে।


বিহ্বল বাঁশির সুরটা সেই তখন থেকে আমাকে জাগিয়ে দিচ্ছে। কেন জাগছি? কোন খোঁজ সে আমাকে দেয়নি। শুধু উসকে দিয়েছে বারুদের মশলাগুলো। শান বাঁধানো পুকুরে পাতা পড়ে কিছুটা আলোড়ন ছিল। না পাওয়ার বাক্সে অনেক চোখ লাগালাম। কোথায় সহজ ঐশ্বর্য? কোথায় প্রচুর বিশ্বাস? শাঙ্খিক কি তবে নিছকই কিছু ঈর্ষাকাতর সাহিত্যিকের শিবির? যারা দিনের শেষে বলে দেন আমরা তো বড় হাউজেই লিখতে এসেছি। শাঙ্খিক কি? সে তো ডুবে গেছে।



ভরণপোষণের খরচা অনেক তবুও হাতির পেছনে বিস্তর জল ঘোলা করা হয়। গুঁজে দেবার প্রবণতাকে অস্বীকার করলে আমাদের সামাজিক চেতনা ভুল। মনের ভেতর রাসায়নিক বিক্রিয়া চলে। নিজের সাথে বিরোধ, ছায়াযুদ্ধ। এরপর একটা উজ্জ্বল তারিখ পেশ করে হাসিখুশি ভাবে দিনটা সূর্যমুখী করে তুলি। ঘন তরুতল নিমজ্জিত ছায়া। মনে হয় বিশ্বব্যাঙ্কটা গড়ে উঠবে এবার। মা স্বস্তিকা চিহ্ন এঁকে দেন।


এতসব প্রাপ্তির পর নিজস্ব লেখার ভেতর আর ডুবসাঁতার দিয়ে ওঠা হয়নি। হাত পা ভারী হয়ে ওঠে। সামনের বিকল্পগুলো জরা-ধর্ম প্রকাশ করছিল। সম্পাদক হয়ে ওঠার ম্যানেজমেন্ট কোর্স শেখা উচিৎ ছিল। অন্য কিছু ভাবছিলাম, যেমন- অবনী ঘোষের ইঁদুর মারা বিষ ভাল নাকি মাতা দেবযানীর তিন মিনিটে বশীকরণ বিদ্যা ? এতে ক্ষয় প্রাপ্তির সম্ভাবনা কম। আবার মিথোজীবীতার “The Key to Communication” তত্ত্বটি (আমি-আমরা তুমি-তোমরা ঘরানার) খুব আলোড়িত। বৈজ্ঞানিক সমাজভাবনার আঁকর। লসে রান করার অতৃপ্তি বা সুখ এসব থাকেনা। অনেকেই ভরসা রাখেন। তবে পৃথিবী দেখার সৌন্দর্য রাখা উচিৎ। ভেতরের বাদ দিয়েও বাইরেরটুকু দেখতে যেটুকু আনন্দ লেগে থাকে।

আমি তো সেই বিশ্বাসেই বারবার মেলে দিই গা – 



আরও কয়েকটি সংখ্যার পত্রিকার প্রচ্ছদ


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...