লিটল ম্যাগাজিন : উদ্দেশ্য ও সমস্যা |
লেখকের কয়েকটি গ্রন্থ |
লেখক ও সম্পাদক অলোক বিশ্বাস |
লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের পেছনে বহুস্তরিক উদ্দেশ্য থাকে। পত্রিকাটি কারা প্রকাশ করছেন, তাঁদের বয়স কেমন, সামাজিক সাংস্কৃতিক কোন শ্রেণীতে তাঁরা সংশ্লিষ্ট, পেশাগত পরিচয় কী, তাঁদের চেতনাগত ও চিন্তাগত অবস্থান কোন জায়গায়, তার উপরে নির্ভর করে পত্রিকার উদ্দেশ্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে একা নয়, কয়েকজন মিলে ছোটো পত্রিকা শুরু করছেন। একটি সাংস্কৃতিক চেতনাসম্পন্ন গ্রুপ তৈরি হচ্ছে। আবার সম্পূর্ণভাবে কেউ একা উদ্যোগ নিলেও পর্দার পেছনে অন্যরা হয়তো থাকছেন কোনোভাবে। প্রাথমিক অবস্থায় কিশোর বা তরুণদের একটি পত্রিকা প্রকাশের পেছনে নিজেদের লেখা অন্যদেরকে পড়াবো, নতুন কিছু লিখবো, এই ইচ্ছেটাই প্রাধান্য পায়। পারিবেশিক অবস্থা, সমসাময়িক সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রভাব, নিসর্গের প্রতি ভালোবাসা, দেশের সংকটের জন্য উদ্বেগ, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক, ব্যক্তিগত রোমান্টিসিজম ইত্যাদি কোনো না কোনো অবস্থার প্রভাব ব্যক্তির বা গ্রুপের মনন নির্মাণ করে। আর তিনি বা তাঁরা আত্মপ্রকাশের মাধ্যম খুঁজতে খুঁজতে কিভাবে এসে পড়েন লিটল ম্যাগাজিনের দুনিয়ায়। কেউ অন্য মাধ্যমেও যেমন, গানের গ্রুপ, নাটকের গ্রুপ, চিত্রশিল্পীদের গ্রুপ, ফিল্ম সংক্রান্ত কাজে যুক্ত হয়ে পড়েন। একটি অবস্থান আরেকটি অবস্থানের নির্ণায়ক।
অনেকসময় সদ্য গঠিত তরুণদের গ্রুপ সমসাময়িক কালে অন্য আর কী কী ভালো লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে, সেটা সম্পর্কে প্রত্যাশামতো ওয়াকিবহাল না হয়েই পত্রিকা প্রকাশ করে ফেলেন। সেই গ্রুপ বা বিশেষ ব্যক্তি সে-সময় চারপাশে অন্য কোনো লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের খবর সেভাবে না জানলেও, অভ্যাসবশত অনেকটাই জানেন, কোন কোন ব্যবসায়িক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়। আর জানেন বলেই ভবিষ্যতে একদিন ওইসব পত্রিকার লেখক হবার হাতছানি কাজ করে তাঁর বা তাঁদের মধ্যে। সেই উদ্দেশ্য কার্যকর করতে একটা পত্রিকা প্রকাশ করে, নিরন্তর সেইসব ব্যবসায়িক পত্রিকার লেখক সম্পাদকের সঙ্গে একটা সময়ের পরে যোগাযোগ রাখতে চেষ্টা করেন যাতে ভবিষ্যতে ওইসব ব্যবসায়িক পত্রিকায় চান্স পাওয়া যায়। যাঁরা লিটল ম্যাগাজিন করতে আসেন, তাঁদের কারো কারো এটাও একটা প্রবণতা। এই প্রবণতার কারণেই, নিজেদের ম্যাগাজিন প্রকাশের শুরু থেকেই তাঁরা ব্যবসায়িক পত্রিকায় যেসব গল্পকারেরা ও কবিরা লিখছেন তাঁদের বাড়ি যাতায়াত করতে থাকেন, সেইসব লেখকদের লেখা ছাপতে, তাঁদের প্যাম্পারিং করতে, বিভিন্ন সভায় তাঁদের পেছনে ঘুরঘুর করতে এবং নিজেরা অনুষ্ঠান করলে ব্যবসায়িক জগতের কোনো কবি সাহিত্যিককে সভাপতি বা বিশেষ অতিথির আসনে বসিয়ে দিতে উদ্যোগী হন। এমনকি পাঁচ সাত দশ বছর লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত থেকেও অনেক লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদকও এই কাজ করেন, কারণ লিটল ম্যাগাজিনের উদ্দেশ্যটাই তাঁরা গুলিয়ে ফেলছেন। ওপরের এই চিত্র অনেকের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলতে নাও পারে। সব গ্রুপই যে এভাবে শুরু করবেন, তা কিন্তু নয়। একটা লিটল ম্যাগাজিন গ্রুপের কার্যাবলী শুধুমাত্র ভালো লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ দিয়েই এগোতে পারে। প্রথমে একটা বিষয়ে স্পষ্ট হতে চাই যে, অবস্থান বিশেষে এক বা একাধিক উদ্দেশ্যে লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। এক সম্পাদককে জানি, তিনি অভিজ্ঞতার অভাবে ভাবতেন যে, কবিতা ইত্যাদি দিয়ে একটি পত্রিকা বার করলে অনেক বিক্রি হবে, এমনকি আর্থিক লাভও হবে বেশ। পরে তিনি দেখলেন, পত্রিকা তো বিক্রিই হচ্ছে না। তিনি সেখানেই ইতি টানলেন স্ত্রীর চাপে। লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদকের অন্যতম কাজ হবে এগিয়ে থাকা অন্যান্য লিটল ম্যাগাজিন যতো বেশি সম্ভব পড়া, বইপত্র ছাড়াও, নতুনতর ভালো লেখার প্রক্রিয়ায় আসা, নতুন লেখাকে চিহ্নিত করতে শেখা, ভালো লেখা সংগ্রহ করা এবং ব্যবসায়িক পত্রিকাকে এড়িয়ে চলা। ব্যবসায়িক পত্রিকার কাছে অবনত লেখকদের সংস্পর্শে এলেই একটি লিটল ম্যাগাজিনের স্বতন্ত্র উদ্দেশ্য মায়ের ভোগে যাবে। গেছেও। ব্যবসায়িক পত্রিকার কাছে যেসব লেখক নিজেদের বিক্রি করে দিয়েছেন তাঁদেরকে এড়িয়ে চলাই হবে লিটল ম্যাগাজিনের প্রবণতা। তার মানে এই নয় যে, একজন তরুণ কবি ব্যবসায়িক পত্রিকায় লিখবেন না। তিনি লিখতেই পারেন। তিনি ব্যবসায়িক পত্রিকায় যুক্ত লেখকদের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখতেই পারেন, কিন্তু সেটা লিটল ম্যাগাজিনের মূল্যে নয়, লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনকে হেয় করে নয়। যেসব কবি-লেখক একদা লিটল ম্যাগাজিন থেকেই বড়ো হয়ে, পরে লিটল ম্যাগাজিনকে অবমাননা করছেন, তাঁদের লেখা অন্য লিটল ম্যাগাজিনে প্রকাশ না করার ভালো। ব্যবসায়িক পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত লেখক কবিরা লিটল ম্যাগাজিনকে এক্সপ্লয়েট করেন। আবার লিটল ম্যাগাজিনে লেখেন এমন কিছু কবিও নিজের বিজ্ঞাপন দেন এভাবে যে, তাঁর লেখা দেশ, আনন্দবাজার, সানন্দা পত্রিকায় এবং কিছু লিটল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়ে থাকে। কবিতা ক্যাম্পাসের জন্য কিছু কবিতা পাঠিয়ে কেউ কেউ নিচে লিখে দেন, তাঁর কবিতা আনন্দবাজার, দেশ, সানন্দা-টানন্দায় প্রকাশিত হয়েছে। দীর্ঘদিন লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে যুক্ত থাকা কোনো কবি সম্পাদকও এরকম আচরণ করেন। এটা ভালো কী মন্দ তার বিচার এখানে করতে বসিনি। আমি শুধু প্রবণতাটি উল্লেখ করলাম। লিটল ম্যাগাজিন আলোচনায় যেগুলোকে সমস্যা বলা হয়, সেগুলোকে সমস্যা না বলে প্রবণতা বলবো। লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে যুক্ত লেখক সম্পাদকের প্রবণতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। যাঁরা সবেমাত্র কলেজ জীবনে প্রবেশ করে বা কলেজ জীবন থেকে বেরোনোর ঠিক পরে পরেই পত্রিকা প্রকাশ করছেন আর যাঁরা অন্তত দশ বছর লেখালেখির জগতে থেকে তারপর পত্রিকা প্রকাশ করছেন, তাদের উভয়ের কাজের মাত্রাগত পার্থক্য থাকবেই। লিটল ম্যাগাজিনে নিবেদিত একজন ব্যক্তি প্যারালাল সাহিত্য করতেই ভালোবাসেন প্রাতিষ্ঠানিকতাকে উপেক্ষা করে, এই ছবিটা বৃহত্তর বাংলায় বিরল নয়।
এরকম প্রশ্ন আগে অনেকেই করেছেন, কী কী উদ্দেশ্যে কবিতা ক্যাম্পাস প্রকাশ করার কথা ভাবা হয়েছিল। প্রথমেই বলে রাখি, কবিতা ক্যাম্পাস শুরুতে একটা গ্রুপেরই পত্রিকা ছিল। অন্য পত্রিকা প্রকাশের পূর্ব অভিজ্ঞতা তাঁদের ছিল। তাঁরা প্রায় সকলেই ছিলেন সমমনস্ক। অর্থাৎ নিজেদের অন্যরকম লেখাটি প্রকাশের জন্য অন্য পত্রিকার দরবারে প্রাথমিকভাবে না গিয়ে সরাসরি নিজেদের যৌথভাবে করা কাগজেই প্রকাশ করা। আর একটা ব্যাপার, অন্য লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও, সেইসব ম্যাগাজিন আমাদের গুচ্ছগুচ্ছ কবিতা নাও ছাপতে পারে, যেটা আমরা পারবো একমাত্র আমাদের পত্রিকাতেই। যৌথভাবে কাজ করলে প্রচারও বেশি হবার সম্ভাবনা। কবিতা ক্যাম্পাসের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকা কবিরা প্রথম থেকেই, সেই অাটের দশকের শুরু থেকেই কবিতার অন্য ভুবন গড়ার স্বপ্ন দেখতেন এবং এ নিয়ে নিরন্তর তাঁদের আড্ডা ওয়ার্কশপ, আলোচনা চলতো। কবিতা ক্যাম্পাস প্রকাশের (প্রথম প্রকাশ ১৯৯১)আগে প্রত্যেকের কম বেশি অন্য পত্রিকা সম্পাদনার অভিজ্ঞতা ছিল। অর্থাৎ কবিতা ক্যাম্পাসের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত কবিরা হঠাৎ একদিন কবিতা ক্যাম্পাস প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিলেন এবং প্রকাশ করলেন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই, এমনটা কিন্তু ছিল না। কবিতা ক্যাম্পাস প্রথম দিকে প্রতিমাসে প্রকাশ পেতো সম্পাদক পরিবর্তন করে করে। এইভাবে বছর তিনেক চলেছিল। পরে যখন এক দুফর্মা ছাড়িয়ে পৃষ্ঠা সংখ্যা বাড়তে লাগলো, তখন ঘনঘন সম্পাদক পরিবর্তন হতো না। না হবার আর একটি কারণ ছিল, আগের মতো একফর্মার জায়গায় চার পাঁচ ছয় সাত ফর্মার আকারে কবিতা ক্যাম্পাস বেরোতে শুরু করলো। প্রতিমাসে প্রকাশ করা সম্ভব ছিল না তখন। ১৯৯৩-৯৪ আরো কয়েক জন এলেন কবিতা ক্যাম্পাসের সঙ্গে। কবি রঞ্জন মৈত্র এবং তার কিছু পরে কবি স্বপন রায়ের কবিতা ক্যাম্পাসে সরাসরি এসে পড়ার ফলে এই পত্রিকার গুণগত সম্প্রসারণ ঘটেছিল পূর্বেকার ঢিলেঢালা ভাব এবং কিছু ছলচাতুরি ছাড়িয়ে। এই সময় থেকে কবিতা ক্যাম্পাসের পূর্বেকার প্রবণতার অনেকটাই পরিবর্তন ঘটে। কবিতা ক্যাপশন লেখা হলো, নতুন কবিতার বাসভূমি, যা আগে ছিল না। পূর্বেকার অবস্থায় কিছু সংকীর্ণতা ও সুযোগ সন্ধানী মনোভাব কাজ করছিল এবং আরো বড়ো গুরুত্বপূর্ণ যেটা, একসময় বিষ ঢুকে পড়ছিল। একটি পত্রিকার মধ্যে থেকে গোপনে আর একটি পত্রিকা(ইডিয়টের পাঁচালি) প্রকাশ করা এবং সেটি সম্পর্কে সংগঠনেরই অন্যদের মিসলিড করা ইত্যাদি কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা কবিতা ক্যাম্পাসের মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহমূলক সম্পর্কের সূচনা করেছিল ওই ১৯৯৩-৯৪ সাল থেকেই। লিটল ম্যাগাজিন গ্রুপের এটাও এক নেগেটিভ প্রবণতা। এধরণের অভিজ্ঞতা খুঁজলে অনেক জায়গায় পাওয়া যাবে। কবিতা ক্যাম্পাসে শুধুমাত্র গ্রুপের সংশ্লিষ্ট কবিদের লেখা প্রকাশের জন্য আশির দশকের অন্যান্য কবিদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছিল, সেটা লক্ষ্য করছিলাম। তাঁরা আমাকে বারবার প্রশ্ন করছিলেন, কবিতা ক্যাম্পাসে তাঁদের লেখা প্রকাশের বাধা কোথায়। কবিতা ক্যাম্পাসে সরাসরি যুক্ত থাকা কবিদের বাইরে আশির অন্যান্য কবিদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাঁদের লেখা কবিতা ক্যাম্পাসে না থাকার কোনো যুক্তিই আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ফলে, কবিতা ক্যাম্পাসে গোষ্ঠিবদ্ধ লেখকেদেরই কেবল প্রাধান্য দেওয়ার ব্যাপারে আমার আপত্তি ও প্রতিবাদ একসময় তীব্র হয়ে উঠেছিল, যা কারো কারো পছন্দ হচ্ছিল না। প্রথম থেকেই কবিতা ক্যাম্পাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে থেকে এরকম বহু বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছি কিন্তু কবিতা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায়নি, একবার ছেড়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলেও।
আমি সর্বদা চাইতাম, কবিতা ক্যাম্পাস শুধু একটি কবিতার পত্রিকাই নয়, প্রকাশন হিসেবেও কাজ করুক। প্রকাশ করুক নতুন নতুন কবিতার বই। প্রত্যেকে, শুধু নিজের নয়, অন্য কবিদের কবিতার বইও প্রকাশ করুক। একসময় কবি ধীমান চক্রবর্তী বাড়ির ঠিকানা ব্যবহৃত হতো কবিতা ক্যাম্পাসে। সকলের ইচ্ছা অনুসারেই হয়েছিল। সেও কবিতা ক্যাম্পাসের অন্যতম ছিল। তার উদ্যোগে, বলা যায় একক উদ্যোগেই যখন কবিতা ক্যাম্পাস প্রকাশন থেকে পবিত্র মুখোপাধ্যায়, বারীন ঘোষাল, মঞ্জুষ দাশগুপ্ত, কমল চক্রবর্তী প্রমুখের বই প্রকাশিত হলো, আমি পুরোপুরি সমর্থন জানিয়েছিলাম এই উদ্যোগকে, যদিও সেই উদ্যোগের পেছনে উদ্যোগকারীর এককভাবে দ্রুত সিঁড়ি টপকানোর অভিযোগ উঠেছিল প্রবলভাবে। তথাপি আমার মনে হয়েছিল কবিতা ক্যাম্পাস সম্পর্কে যে গোষ্ঠিবদ্ধতার অভিযোগ উঠছে প্রায়ই, উক্ত উদ্যোগকারীর সেই প্রচেষ্টা, গোষ্ঠিবদ্ধতার ব্যাপারটিকে অন্তত ঠেকাবে। আমি চাইছিলাম প্রত্যেকে, নিজেদের বই প্রকাশ ছাড়াও, বাইরের অন্য কারো নাম সাজেস্ট করুক, নিজেও কিছুটা সেই লেখকের ম্যানুস্ক্রিপ্ট সংগ্রহের দায়িত্ব নিক।
একটি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনার গ্রুপ ভেঙে যাওয়ার পেছনে যেসব কারণ থাকে, সেগুলো মোটামুটিভাবে সর্বত্র সমান। এখানে আমি সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় প্রকাশিত পত্রিকার বন্ধ হয়ে যাওয়া বা সংকটে পড়ার কথা বলছি না। আমরা জানি যে, ভালো লেখা পাওয়ার অভাবের কারণে বুদ্ধদেব বসু কবিতা পত্রিকা প্রকাশ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কবিতা ক্যাম্পাস কোনোদিন বন্ধ হয়নি, কিন্তু বন্ধ করে দেবার প্রক্রিয়া চলেছিল, যা আমি কোনোদিন বাস্তবায়িত করতে দিইনি। কবিতা ক্যাম্পাস থেকে মুচলেকা দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে একজন সদস্য পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের আর্থিক সহযোগিতায় বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠান করতে গেলে, আমি এটা অনৈতিক কাজ হিসেবে গণ্য করে, পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের কাছে আবেদন করলে, ওই সরকারি সংস্থা উল্লিখিত অনুষ্ঠানটি বাতিল করে দিয়েছিল। কবিতা ক্যাম্পাসের রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারে কেউ এগিয়ে আসেনি। কারণ দেখানো হয়েছিল, সকলে চাকরিরত, তাই একটি পত্রিকার সম্পাদক বা প্রকাশক হিসেবে তাঁদের নাম রাখা সমীচীন হবে না। আমিই একমাত্র, যে কোনো চাকরি করতো না। কিন্তু, আমার নামে রেজিষ্ট্রেশন করার পর, তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছিল। মনে করা হচ্ছিল যে, আমি নাকি পত্রিকাকে কুক্ষিগত করতে চাইছি। কিন্তু, কিভাবে কুক্ষিগত করছি এবং কুক্ষিগত করলে আমার কী লাভ, সে বিষয়ে কেউ স্পষ্ট কিছু বলতে পারেনি। আমি কবিতা ক্যাম্পাসের মিটিংএ বলতাম, প্রত্যেককে পত্রিকার জন্য লেখা সংগ্রহ করতে হবে। ভালো লেখা। পোস্টে যে লেখা আসছে, সেই লেখার ওপর নির্ভর করলে চলবে না। আমি ছাড়া, ভালো লেখা সংগ্রহের কাজে, অংশগ্রহণের পর থেকেই খুব সক্রিয় ছিলেন কবি রঞ্জন মৈত্র। তাঁর সম্পাদনা ছিল একেবারে অন্য স্বাদের। বিজ্ঞাপন সংগ্রহের কাজেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। লেখা সংগ্রহ ছাড়াও, বিজ্ঞাপন সংগ্রহের কাজে, এবং বইমেলায় স্টল সংক্রান্ত ব্যাপারে, প্রেসের কাজে অনেক সময় দেবার কারণে, আমার প্রচুর সময় চলে যেতো বলে, নিজের লেখার ক্ষতি হতো। এই প্রবণতা আমি অন্য সম্পাদকের ক্ষেত্রেও আজকে দেখে থাকি। এটা একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ পত্রিকা সম্পাদকের কাছে, তিনি যখন প্রথমে একজন লেখক, পরে সম্পাদক। গ্রুপের আলোচনায় আমরা বলতাম, যদি রেজিস্ট্রেশন নাম্বার পাওয়া যায়, সরকারি বিজ্ঞাপন পেতে অসুবিধা হবে না। এই সিদ্ধান্ত আমার একার ছিল না। ১৬.১০.১৯৯৮ তে যখন কবিতা ক্যাম্পাসের ডিক্লেয়ারেশন নাম্বার পাওয়া গেল এবং পরের বছরে যখন বইমেলায় কবিতা ক্যাম্পাস বেরোলো এবং রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম অনুসারে আমার নাম সম্পাদক, প্রকাশক ও স্বত্বাধিকারী হিসেবে কবিতা ক্যাম্পাসে ছাপা হলো, সেটা দেখে প্রচুর কানাঘুষো, রাগারাগি ও সন্দেহের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। মনোভাবটা এমন প্রকাশ পাচ্ছিল যে, আমি কবিতা ক্যাম্পাসকে কুক্ষিগত করতে চাইছি। কিন্তু সেটা আদৌ নয়। রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রসেস চলাকালীন সেই কাজের আপডেট আমি সকলকে জানতাম। রেজিস্ট্রেশন পাবার ব্যাপারটা দীর্ঘায়িত হয়েছিল। এতো জটিলতা এই ব্যাপারে আগে জানা থাকলে আমি ওই কাজে এগোতামই না। রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আমার নিজের প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয় হয়েছিল। আজকে কোনো সম্পাদক যখন রেজিস্ট্রেশনের প্রসেস জানতে চান, তাঁকে এই জটিল প্রসেসের কথা আগে জানিয়ে রাখি। যাইহোক, আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনোই চাইনি রেজিস্ট্রেশনের জন্য সব ক্ষেত্রে আমার নামটাই থাক। এসব ব্যাপারে আমার কোনো মোহই ছিল না। তাছাড়া, সরকারি বিজ্ঞাপন পেতে প্রচুর সময় দিতে হবে, এটা আমি জানতাম। অন্যরা সরকারি চাকরি করতো বলে, তাঁদের নাম রাখার অসুবিধা থাকায় কাকতালীয়ভাবে আমার নাম প্রকাশক, সম্পাদক ইত্যাদি হিসেবে রাখতে বাধ্য হয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এটা নিয়ে গ্রুপে এতো হ্যাজানো চলবে, আমি কল্পনাই করতে পারিনি। কারণ, এব্যাপারে আমার কোনো ব্যক্তিগত লাভালাভের প্রশ্ন জড়িত ছিল না। সকলে পত্রিকাটা ভালোভাবে করবো এটাই ছিল আমার দাবি। অসহযোগিতার নতুন ইতিহাস শুরু হলো তখন থেকেই। তখন থেকেই কেউ কেউ ভাবতে শুরু করলেন, কবিতা ক্যাম্পাস ছেড়ে অন্য পত্রিকা প্রকাশ করতে হবে। কয়েক বছরের মধ্যে হলোও তাই। বারীন ঘোষাল অব্যয় পত্রিকায় একটি গদ্য লিখে দিলেন, এমন টাইটেলে 'নতুন কবিতা ক্যাম্পাস'। তার কূট অর্থটা যে কী, সেই সময় অনেকেই ধরতে পেরেছিল।
পূর্বেই বলেছি, যখন তৎকালীন একজন সম্পাদক উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কবিতা ক্যাম্পাস পত্রিকায় সরাসরি যুক্ত লেখকদের বাইরের কারো কারো গ্রন্থ প্রকাশ করতে, আমি সর্বাগ্রে সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু একই উদ্যোগ আমি যখন নেওয়া শুরু করলাম, তখন বিরোধিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল। মলয় রায়চৌধুরী ত্রিস্তান জাঁরার কবিতার অনুবাদ নিয়ে একটি ছোটো বই প্রকাশ করতে চেয়ে আমাকে চিঠি লিখেছিলেন, গ্রুপের মধ্যে বিরোধিতা এসেছিল। প্রকাশ করতে দেওয়া হয়নি সেই অনুবাদ গ্রন্থ, এই অজুহাতে যে, মলয়দা হাংরি জেনারেশনের লোক। আসলে অনেকে এব্যাপারে হয়তো অন্য গন্ধ পাচ্ছিল। ওই বই প্রকাশের ইচ্ছা জানিয়ে মলয়দা আমাকে সম্বোধন করে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেই বই শেষ পর্যন্ত 'কালিমাটি' পত্রিকার প্রকাশন থেকে বেরোয়। একটি পত্রিকা কোনো গ্রুপের দ্বারা প্রকাশিত হতেই পারে, কিন্তু সেই গ্রুপে যদি কারো নতুন উদ্যোগকে পদে পদে বাধা দেওয়া হয়, তাহলে সেই গ্রুপ কখনোই টিকবে না। কবিতা ক্যাম্পাসের ক্ষেত্রেও এরকম ঘটেছিল। ২০০০ সাল থেকে পোস্টমডার্ন সন্দর্ভের দুজন ভাবুক মলয় ও সমীর রায়চৌধুরীর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। তাঁদের লেখা ওই সময় পর্বে কবিতা ক্যাম্পাসে প্রকাশের ফলে আমি সমালোচিত হচ্ছিলাম এই কারণে যে কবিতা ক্যাম্পাস 'নতুন কবিতা'-র কাজ থেকে ডিভিয়েট করে যাচ্ছে। কবিতা ক্যাম্পাস নাকি বারীন ঘোষাল নির্দেশিত পথ থেকে সরে যাচ্ছে, পরোক্ষে সেই সময় থেকে এরকম বোকা বোকা দর্শন সামনে আনা হতো। দুঃখের বিষয়, বারীনদাকে দেখেছি সেই সময় কবিতা ক্যাম্পাসের সমস্যা সম্পর্কে চুপ করে থাকতে। বলতে বাধ্য হচ্ছি, বারীনদাও চাইতেন, কবিতা ক্যাম্পাস তাঁর কবিতা ভাবনা ও ভাষার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রকাশিত হোক। বারীনদার অতিচেতনা বিষয়ক ভাবনাকে সামনে রেখে কবিতা ক্যাম্পাসের যাবতীয় সংখ্যা হোক। আমি বারীনদাকে বলেছিলাম, তোমাদের কৌরবকে অতিচেতনা ভাবনার এবং নতুন কবিতা ভাবনার কাগজে পরিণত করছো না কেন। বারীনদা বলতেন, সেটা সম্ভব নয়। অর্থাৎ নিজের এক্তিয়ারে থাকা পত্রিকায় যেটা সম্ভব নয়, সেটা অন্যদের পত্রিকার মাধ্যমে চালিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা। আমি অন্যদের প্রতিক্রিয়ার কথা এখানে বলতে পারবো না, কিন্তু আমি এই রকমটা হতে দিতে চাইনি। ভালোবাসা আর অন্ধ আনুগত্য, এই দুটোর মধ্যে পার্থক্য উধাও হতে দেখেছিলাম। বারীনদার প্রতি কারো কারো অন্ধ আনুগত্যের কারণে কলকাতায় কারা রটিয়ে দিয়েছিল, কবিতা ক্যাম্পাস কৌরবেরই কলকাতাস্থিত শাখা। অথচ, কবিতা ক্যাম্পাসের কারণেই মূলত পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে বারীনদা নয়ের দশকের গোড়া থেকে প্রথম কভারেজ পেয়েছিলেন। কলকাতায় এর আগে বারীনদার লেখাকে প্রায় কেউ চিনতোই না। একসময় বারীনদা আঁচ করতে পেরেছিলেন কবিতা ক্যাম্পাস ভাঙতে যাচ্ছে এবং অন্য একটি পত্রিকা এঁদেরই কারো দ্বারা প্রকাশ হতে চলেছে এবং যাঁরা সেই পত্রিকা করবেন তাঁরা অনেক বেশি বারীনদার প্রতি অনুগত। বারীনদার কবিতা বিষয়ক ভূমিকার ব্যাপারে আমার কিছু প্রশ্ন থাকার কারণে, একটা সময় বারীনদা মনে করতে শুরু করলেন, আমি বারীনদার বিরোধিতা করছি। বারীনদার গদ্যের বইটি প্রকাশের পর, বারীনদার কাছে বহুবার কবিতা ক্যাম্পাসের জন্য গুচ্ছ কবিতা চেয়েছি। নানা কথা বলে, এমনকি বিরক্তি প্রকাশ করে বারীনদা এড়িয়ে গেছেন। সম্ভবত, ২০১১ সালে একটি সংখ্যায় বারীনদার একটি প্রশংসাসূচক চিঠি প্রকাশিত হয়। এর আগে অনেক চিঠি প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু ওই চিঠির সঙ্গে বারীনদার কবিতা ক্যাম্পাস সম্পর্কিত আচরণের অমিল দেখা যাচ্ছিল বেশি করে। আমি বুঝতে পারলাম, কবিতা ক্যাম্পাসে বারীনদার যা কভারেজ পাবার সেটা হয়ে গেছে, কবিতা ক্যাম্পাসের সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখার দরকার নেই। এমনকি কবিতা ক্যাম্পাস একটি সংখ্যা বইমেলায় বারীনদাকে দিতে গেলে, তিনি নিতে চাইলেন না, নানা অজুহাত দেখিয়ে। কিন্তু কিছু তরুণ কবি যখন তাঁদের পত্রিকা দিচ্ছিলেন, বারীনদা হাত বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন। তারপর থেকে বারীনদার কাছে আমি আর কোনো লেখা চাইনি। পত্রিকাও দিতে যাইনি। আটের দশকের কবিদের নিয়ে করা সংখ্যায় একটি গদ্য লিখতে বলেছিলাম, কিন্তু রাজী হননি। এসব সত্বেও বারীনদার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়নি। বারীনদার লেখার প্রতিও কখনো আমি অশ্রদ্ধা দেখাইনি। বইমেলায় আমরা একসঙ্গে ছবিও তুলেছি। চোখের সামনে দেখেছি কারো কারো প্রতি বারীনদার অতিমাত্রার মোহমগ্নতায় কৌরবের মতোও একটি ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা দিনকে দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
একসময় সমীর রায়চৌধুরীর পোস্টমডার্ন সংক্রান্ত সংকলন ও পোস্টমডার্ন বিষয়ক লেখা প্রকাশের (নিজের পৃথক কাগজে) ব্যাপারে কবিতা ক্যাম্পাসের একজনের সঙ্গে সমীরদার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও তাঁর সম্পর্কে কোনো কথা বলার সাহস কবিতা ক্যাম্পাসের কেউ করতো না, এমনকি বারীনদাও নয়। অথচ, অভিযোগের তীর আমার দিকেই উঠতো। সমীর রায়চৌধুরী প্রকাশিত একমাত্র হিন্দি পোস্টমডার্ন সংকলন ছাড়া কোনো সংকলনে আমার কবিতা ছিল না বা হাওয়া ৪৯ পত্রিকায় আমি লিখিনি। হ্যাঁ, মলয়দার কবিতার একটি বই 'কৌণপের লুচিমাংস' কবিতা ক্যাম্পাস থেকে আমি প্রকাশ করেছিলাম বিরোধিতা সত্বেও। সমীর রায়চৌধুরীর গদ্য প্রকাশ করেছিলাম কবিতা ক্যাম্পাসে বিরোধিতা সত্ত্বেও। রবীন্দ্র গুহর দুটো কবিতার বই এবং একটি গদ্যের বই 'নিমসাহিত্য বেত্তান্ত' প্রকাশ করেছিলাম বিরোধিতা সত্বেও। দেবীপ্রসাদ বন্দোপাধ্যায়ের
দুটি কবিতার বই প্রকাশ করেছিলাম অভ্যন্তরে সমালোচনা সত্বেও। অভিযোগ উঠছিল, এসবে নাকি কবিতার ক্যাম্পাসের 'নতুন কবিতা' বিষয়ক অতিচেতনার আন্দোলন নষ্ট হচ্ছে। কথা উঠছিল, আমরা কেন, বারীন ঘোষালের বই প্রকাশ করছি না। আমি স্পষ্ট জানিয়েছিলাম, বারীনদার স্ক্রিপ্ট কেউ সংগ্রহ করলেই প্রকাশ করা হবে। যাঁরা বারীনদার বই সেই সময়ে কবিতা ক্যাম্পাস থেকে প্রকাশের ব্যাপারে অতিমাত্রায় উত্তেজনা দেখাচ্ছিলেন, তাঁরা কিন্তু বারীনদার বইয়ের স্ক্রিপ্ট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হন। পরে আমি নিজে উদ্যোগ নিয়ে বারীনদার কবিতা বিষয়ক গদ্যের বই প্রকাশ করি 'কবিতার ভবিষ্যত' এই নামে। পুরো টেক্সট আগে দুই পর্বে কবিতা ক্যাম্পাসে বেরোয় ২০০২-৩ সালে, পরে বই আকারে। এই বই বেরোনোর পরে কবিতা ক্যাম্পাসে যুক্ত সমালোচনাকারীদের কোনো আনন্দ প্রকাশ করতে দেখিনি, আমাকে অভিনন্দন দেওয়া তো দূরের কথা। এখানে বলার এই যে, গ্রুপ করে একটি লিটল ম্যাগাজিন করলে তার প্রচুর জটিলতা তৈরি হয় পদে পদে। প্রত্যেকে ইগো সমস্যায় ভুগতে থাকেন। গ্রুপের একজনকে অন্য পত্রিকায় কভারেজ দেওয়া হলে, বাদবাকিরা মুষরে পড়েন। সংশ্লিষ্ট পত্রিকায় কেউ কেউ নিজের স্বাধীনতার কথা এবং পত্রিকার পাতায় নিজের বেশি লেখায় এক্সপোজড হওয়ার কথা ভাবেন, কিন্তু অন্যেরা সেই কাজ করতে গেলে বিরোধিতা করেন।
কবিতা ক্যাম্পাসের আপাদমস্তক চেটেপুটে খেয়েও ব্যবহারিক কাজে কেউ কেউ ছিলেন নিষ্ক্রিয়। শুধু নির্দেশ পালন করে আর দেয় অর্থ দিয়েই হাত ধুয়ে ফেলতেন। নিজ দায়িত্বে লেখা সংগ্রহের ব্যাপারে অনেক অজুহাত দেখাতেন, প্রেসে যাওয়ার কথা উঠলেই বিরক্ত হতেন, প্রুফ দেখার ব্যাপারে শুধু নিজের সমস্যার কথা বলতেন। শুধু সমালোচনায় আর খুঁত ধরতে পোক্ত ছিলেন। বহু কবি কবিতা ক্যাম্পাসে লেখার ব্যাপারে ১৯৯৬ সাল থেকে রঞ্জন মৈত্র ছাড়াও আমার সঙ্গে অনেক বেশি যোগাযোগ রাখতেন এবং তাঁদের লেখাও কিছু কিছু করে পরে কবিতা ক্যাম্পাসে প্রকাশিত হতে শুরু করেছিল পূর্বেকার সীমাবদ্ধতা সরিয়ে, হয়তো সেই কারণে গ্রুপের কেউ ভাবতেন কবিতা ক্যাম্পাসকে আমার মতো ব্যবহার করছি। যাইহোক, ২০০০ সালের পর থেকে বুঝে গেছিলাম, কবিতা ক্যাম্পাসের প্রকাশকে গতিশীল রাখতে হলে নতুন নতুন কাজ করা দরকার, জোর করেই। আরো অন্য ধরণের বই প্রকাশ করা দরকার, যেটা গ্রুপইজমের ফলে ধাক্কা খাচ্ছে। আমি যেসব লেখা সংগ্রহ করছি, কেউ কেউ মনে করতে লাগলো, সেগুলো কবিতা ক্যাম্পাসের 'নতুন কবিতা' আদর্শের সঙ্গে মিলছে না। অথচ, তাদেরও একই অধিকার ছিল সম্পাদক হিসেবে নিজের ইচ্ছামতো লেখা সংগ্রহ করা, কোনো বিতর্কিত চিঠি প্রকাশ করা। এটা তো করেই ছিলেন কবি রঞ্জন মৈত্র। সফলভাবেই করেছিলেন। আমি সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছিলাম রঞ্জনকে। যখন দেখলাম, বিরোধিতা করার জন্যই বিরোধিতা হচ্ছে, আমি স্থির করলাম, আমি আমার মতো কাজ করে যাবো। ফালতু বিরোধিতা শুনবো না। মলয় রায়চৌধুরী, রবীন্দ্র গুহ, দেবীপ্রসাদ বন্দোপাধ্যায় সহ আরো অনেকের বই হলো কবিতা ক্যাম্পাস থেকে। গল্পের সংকলন হলো। সাত দশকের কবিদের কবিতা নিয়ে 'ক্যানভাস সত্তর' গ্রন্থ প্রকাশিত হলো, নিজেদের গ্রন্থ প্রকাশের পাশাপাশি। কেউ কেউ আরো নিষ্ক্রিয় হতে থাকলো, কেবল সমালোচনা আর খুঁত ধরার কাজকেই সক্রিয় রাখতে চায় গ্রুপের মধ্যে। লিটল ম্যাগাজিন যখন কোনো গ্রুপের দ্বারা পরিচালিত হয়, তখন এইসব সমস্যা বা প্রবণতা, অনিবার্য। বহু পত্রিকা পরিবার এভাবেই ভেঙে গেছে। একজন একজন করে গ্রুপ থেকে বিভিন্ন কারণে চলে যাবে, এটা লিটল ম্যাগাজিনের দীর্ঘ দিনের ইতিহাস। কবিতা, পরিচয় থেকে শুরু করে অনেক পত্রিকার জীবনে এমন চিহ্ন রাখা আছে। কবিতা ক্যাম্পাস থেকে একে একে চলে যাবার ইঙ্গিত আমি অনেক আগেই পেয়েছিলাম। সেই ১৯৯৩ সাল থেকেই, যখন কবিতা ক্যাম্পাসের সঙ্গীরা কেউ গোপনে 'ইডিয়টের পাঁচালি' নামে একটি পত্রিকার প্রকাশ করে ফেললো। কিন্তু, সেই পত্রিকাও, পরিচালকরা বেশিদিন চালাতে পারেনি নিজেদের অন্তর্কলহের জন্য। সেই পত্রিকারই একজন সদস্য একান্ত আলোচনায় আমার বিভিন্ন প্রশ্নের ফাঁদে পড়ে 'ইডিয়টের পাঁচালি' প্রকাশের উদ্দেশ্য সহ যাবতীয় তথ্য আমাকে বলে দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই সংকীর্ণতার পরিণাম হেতু সেই পত্রিকার অকাল মৃত্যু ঘটে।
একেবারে প্রথম থেকেই কবিতা ক্যাম্পাসের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে যুক্ত থেকে কবিতা ক্যাম্পাসের কাজ করা আমার রক্ত মাংসের সঙ্গে মিশে গেছিলো। প্রয়াত কবি রতন দাস, যাঁর ভূমিকা কবিতা ক্যাম্পাসে চিরকাল সন্দেহপ্রবণ ছিল নানা কারণে। কবিতা ক্যাম্পাসে থাকাকালীন তিনি নিজের চিন্তার দ্বারা পরিচালিত না হয়ে অন্যের দ্বারা পরিচালিত হতেন। তবে রতন একটি অসাধারণ কাজ করেছিলেন। শিল্পী শংকর মজুমদারের অসাধারণ সব ছবি সংগ্রহ করে এনেছিল এবং সেইসব ছবি ধারাবাহিকভাবে কবিতা ক্যাম্পাসের প্রচ্ছদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এতে কবিতা ক্যাম্পাস মর্যাদা নিশ্চিতভাবে অনেক বেড়েছিল। পরে জেনেছিলাম, শিল্পী সম্ভবত দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন এবং যথেষ্ট অভিমানও দেখিয়েছিলেন, কবিতা ক্যাম্পাসের সেই সংখ্যার একটাও তাঁর কাছে পৌঁছয়নি বলে। একথা আমার রতন দাসের মুখ থেকেই শোনা। রতন, সামান্য বিজ্ঞাপন ও নিজের দেওয়া অর্থটি ছাড়া কবিতা ক্যাম্পাসের কোনো ভূমিকাই পালন করতেন না। একবার মাত্র 'কবিতার ভাষা', এই সংক্রান্ত একটি সংখ্যার জন্য তাঁকে সক্রিয় থাকতে দেখেছি ১৯৯৪ সালে। কবিতা ক্যাম্পাস থেকে সরে যাওয়ার পরে রতনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো থাকলেও, বহুবার অনুরোধ সত্ত্বেও রতন ২০১৩ সালে প্রয়াণের আগে পর্যন্ত কবিতা ক্যাম্পাসে আর লেখা দেয়নি। ২০১২ সাল থেকে যখন আটের দশকের কবিদের নিয়ে বিশেষ সংখ্যার কাজ শুরু করি, তখন, রতন নিজে থেকে লেখা দেয়নি, শুধুমাত্র জানিয়েছিল আমার ইচ্ছানুসারে লেখা সংকলনের জন্য রাখতে পারি, নাও রাখতে পারি। এবিষয়ে অনুমতি বা না-অনুমতির কোনো ব্যাপার নেই। কবিতা ক্যাম্পাস থেকে সরে যাওয়া সকলের কবিতাই রেখেছিলাম ওই সংকলনের জন্য। অন্যদের ক্ষেত্রেও একমাত্র রঞ্জন ছাড়া একই ঘটনা ঘটেছিল। যাইহোক, এনিয়ে কোনো বিশেষ জটিলতা তৈরি হয়নি। একই সঙ্গে ধীমান ও রতন কবিতা ক্যাম্পাস থেকে সরে যায় সই-সাবুদ করে। 'নতুন কবিতা' নামক পত্রিকা প্রকাশের আগে সরে যায় রঞ্জন ও স্বপন। আর একজন মাত্র ছিল আর কটি বছর প্রবল উচ্চচাপ নিয়ে। সেও কোনো হাতছানিতে আকৃষ্ট হচ্ছিল নিয়মিত। সম্ভবত ২০০৭ সাল নাগাদ তিনি সশরীরে বিদায় নেন, নিজেদের কবিতা বিষয়ক পারস্পরিক প্রভাবের বিতর্কে অকারণ জড়িয়ে পড়ে। এই বিষয়টি নিয়ে আমি বহুদিন আগে একটি গদ্যে বিস্তারিত লিখেছি বলে এখানে উল্লেখ করলাম না আর। একটি নতুন চিন্তার পত্রিকায় যদি বারবার সামন্ততান্ত্রিক মনোভাব ও পেটি বুর্জোয়া মনোভাব প্রকাশ পায় সর্বদা, তাহলে সেই পত্রিকা কখনোই প্রত্যাশা মতো চলতে পারে না। কিন্তু, একটা বিরাট পজিটিভ ব্যাপার আমাদের মধ্যে ছিল, যতোদিন একসঙ্গে কয়েকজন মিলে কবিতা ক্যাম্পাস করেছি, ততোদিন প্রকাশ্যে আমরা কেউ কারো বিরুদ্ধে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করিনি।
২০০০ সাল থেকেই অন্যান্য সকলে কবিতা ক্যাম্পাসের ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। সেই সময় আমি একটি ব্যবসায় অংশগ্রহণের ফলে একটি সংখ্যা মিলিতভাবে রঞ্জন ও স্বপন সম্পাদনা করে। গুণগতভাবে সেই সংখ্যা ছিল অতি নিম্নমানের। আমি বুঝেছিলাম, ওরা কবিতা ক্যাম্পাসের জন্য বাদবাকিদের মতো আর ভাবতে চাইছে না। এবিষয়ে কোনো বিতর্কে না গিয়ে আমি নিজেকেই প্রস্তুত করতে থাকি। কবিতা ক্যাম্পাস বন্ধ করে দিতে হবে, এই দাবি তুলেছিল একজন। আমি শুনিনি। কারণ, নামকরণ থেকে শুরু করে প্রথম দিন থেকে কবিতা ক্যাম্পাসের জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে গেছি। এতে আমার লেখার অন্তত সেই সময় খুব ক্ষতিগ্রস্ত হতো। ১৯৯৮ সাল থেকেই প্রেসের কাজ প্রায় আমাকেই দেখতে হতো পুরোটাই। কবিতা ক্যাম্পাস সত্তরের দশক সংখ্যার ৯৫ শতাংশ লেখা আমি সংগ্রহ করেছিলাম। বইমেলায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন থেকে শুরু করে কাগজপত্র সব আমাকে একাই সামলাতে হতো। একমাত্র মাঠে স্টল হবার সময়ে কেউ কেউ কিছুটা সময় দিতেন। এসব কারণে আমার নিজের লেখার পরিমাণ ছিল কবিতা ক্যাম্পাসে সবচেয়ে কম। বলা চলে একবিংশ শতকের প্রথম থেকেই উপলব্ধি করেছিলাম, গ্রুপ করে কবিতা ক্যাম্পাসের কোনো অগ্রগতি ঘটবে না আর। একই বৃত্তের মধ্যে থেকেও, সেখানে সম্পর্ক নষ্ট হয় মাত্র। লিটল ম্যাগাজিনের এটা করুণ চিত্র। দুচারজন মিলে একসঙ্গে শুরু করে বহু লিটল ম্যাগাজিন পরে বন্ধ হয়ে গেছে। সেইজন্য যতোই চ্যালেঞ্জ আসুক, লিটল ম্যাগাজিন ভালো হোক মন্দ হোক, দুএকজন মিলে করাই ভালো। বেশি সংখ্যক সম্পাদনায় থাকলেই লিটল ম্যাগাজিনের গুণগত মান ঠিক রাখা যায় না।
যাইহোক, গ্রুপ ভেঙে যাওয়ার পর থেকে, ২০২০ সাল পর্যন্ত কবিতা ক্যাম্পাসের বহু বর্ণময় সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে আমার একক সম্পাদনায়। এখন সারা পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও কর্ণাটক, আসাম, ত্রিপুরা, দিল্লি বাংলাদেশে কবিতা ক্যাম্পাস অনেক বেশি পরিচিত। বেশকিছু উল্লেখযোগ্য সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে ইতিমধ্যে স্বাধীনভাবে, গ্রুপ থাকলে যেটা কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। অনেক নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে কবিতা ক্যাম্পাস থেকে। নতুন নতুন সংকলন হয়েছে। কবিতার সাধারণ পাঠকই নন, যাঁরা বিভিন্ন দশক ধরে বাংলা কবিতা নিয়ে গবেষণা করছেন, তাঁদেরও কাজে লাগছে আজকের বহু সংখ্যা। পাঠকরাই জানাচ্ছেন, সংরক্ষণ করার মতো সংখ্যা হচ্ছে। গ্রুপ থাকাকালীন সামান্য কয়েক ফর্মার কাগজ হতো, তাই নিয়ে সর্বদা সন্দেহ, মনোমালিন্য ছিল। আজকে কবিতা ক্যাম্পাসের এক একটি সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ ফর্মার হয়, প্রচুর ম্যাটার থাকে। প্রেজেন্টেবল করে তোলা হয়েছে সম্পূর্ণভাবে, যা আগে কোনোভাবেই ছিল না।
সম্পাদক জানতে চেয়েছেন, পত্রিকা করতে গিয়ে লেখক সত্তার কোনো ঘাটতি হয় কিনা। একটা কথাই বলবো, অনেক বড়ো আকারে পত্রিকা করেও, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন মেলায় অংশগ্রহণ করেও, একাই প্রচুর পরিমাণ লেখা সংগ্রহ এবং প্রেসের কাজ সামলেও, বারবার বাংলাদেশে গিয়েও, বছরে প্রায় দুবার করে বাংলা একাডেমি বা অন্যত্র অনুষ্ঠান করেও, বিভিন্ন জেলায় নিয়মিত বহু অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েও, এমনকি নিয়মিত অন্য পত্রিকার সম্পাদককে সহযোগিতা করেও, আমার নিজের লেখার পরিমাণ আগের থেকে বহুগুণ বেড়ে গেছে। প্রায়ই শোনা যায় পত্রিকা সম্পাদনা করতে গিয়ে লেখক সত্তা নষ্ট হয়ে যায়। দুটি কাজের মধ্যে নাকি অনেক বৈপরীত্য আছে। এরকম ঘটনা দেখাও গেছে সম্পাদনা করতে করতে আর লেখক হওয়া সম্ভব হয়নি। এটা পরিস্থিতি ও লেখকের অবস্থার ওপর নির্ভর করে। আমরা বহু সম্পাদকের নাম জানি, যাঁরা সফল লেখক বা কবি। রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর সময় ছাড়িয়ে পরবর্তীতে বহু সফল লেখকের নাম আমরা জানি, যাঁরা সম্পাদক হিসেবেও যথেষ্ট সফল ছিলেন। আলোক সরকার, মনীন্দ্র গুপ্ত, প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত, ভূমেন্দ্র গুহ, সমীর রায়চৌধুরী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শামসের আনোয়ার, কমল চক্রবর্তী, দেবদাস আচার্য, উত্তম দাশ সহ বহু উল্লেখযোগ্য লেখক বিভিন্ন সময় পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন, যা বাঙালির কাছে গর্বের বিষয় হয়ে আছে। আমি আজও কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা পত্রিকার সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করে লিখি না। গত কুড়ি বছরে কবিতা নিয়ে অনেক গদ্য লিখেছি। বহু লিটল ম্যাগাজিনে আমার কবিতা প্রকাশিত হয়েছে, বাংলাদেশেও লিখেছি অনেক, যা কবিতা ক্যাম্পাসের গ্রুপে থাকার সময় সম্ভব হয়নি। গ্রুপে অবস্থানকালীন শুধু ছিল বাধা আর বাধা। সন্দেহের পর সন্দেহ। হতাশার পর হতাশা। আজকে আমি বিনা মানসিক চাপে আনন্দের সঙ্গে কবিতা ক্যাম্পাসের কাজ এবং নিজের লেখার কাজ চালিয়ে যেতে পারছি। বছরে আগে ১০-১২ টার বেশি কবিতা লিখতে পারতাম না। সে জায়গায় আজকে সারা বছরে দুটি চার ফর্মার বইয়ের উপযোগী লেখা লিখতে পারছি। বহু সম্পাদক আজকে আমার কাছে নিয়মিত কবিতা বিষয়ক গদ্য চাইছেন, সাক্ষাৎকার চাইছেন। অনেক কবিতা দিতে পারছি এখন। বাংলাদেশের এক একজন কবিকে নিয়ে সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিনে নিয়মিত লিখছি। সকলকে সময়ের অভাবে দেওয়া হয়ে ওঠে না। আজকে কবিতা ক্যাম্পাসের নতুন নতুন পরিকল্পনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন অজস্র নতুন চোখের পাঠক। বিভিন্ন সংকলন প্রকাশে অন্য পত্রিকার সম্পাদকরা আমার সহযোগিতা চাইছেন। বইমেলার সময় দূর দূরান্ত থেকে এসে কবিতা ক্যাম্পাস সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন পাঠকরা। কবিতা ক্যাম্পাস থেকে বই প্রকাশের ইচ্ছা প্রকাশ করছেন নতুন ভাবনার কবিরা। আজকে নতুন অপর লেখায় ভরা কবিতা ক্যাম্পাস প্রকাশ, কোনো সমস্যাই নয়। অনেক নতুন পরিকল্পনা আছে। ইতিমধ্যে ৯২ টা সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। আরো কিছু কাজ করে কবিতা ক্যাম্পাস প্রকাশ বন্ধ করে দেবো। মাঝে মাঝে বিভিন্ন জন এসে বলে যান, তোমার পূর্বের বন্ধুরা তো অনেক নেগেটিভ কমেন্ট করছে কবিতা ক্যাম্পাস নিয়ে। আমি তাঁদেরকে বলি, ওঁরা এখনকার কবিতা ক্যাম্পাস এবং আমার কবিতা না পড়েই অশিক্ষিতের মতো আচরণ করছেন। ওঁদের হতাশা দেখে ওঁদের প্রতি করুণা হয়। ওঁরা কবিতা ক্যাম্পাসের নিয়মিত প্রকাশ সহ্য করতে না পেরে কেউ কেউ হাত পা ছুঁড়ছেন। যাঁরা নেগেটিভ কথা বলছেন কেবল, তাঁরা আসলে হতাশ। তাঁদের লেখাও আর বিশেষ দেখা যায় না। একমাত্র বইমেলা এলে জড়ো হতে দেখা যায় কিছুটা। তারপর সারা বছর হাইবারনেশনে। কবিতা ক্যাম্পাসের পরিচিতি নিয়ে আজকে আর কোনো সচেতন পাঠক প্রশ্ন করে না। এখানে প্রকাশিত লেখার গুণমান নিয়ে যদি কেউ বেশি প্রশ্ন তোলে, তাকে অনুরোধ করি, একটা জবরদস্ত লেখা লিখে দেখাও তো কবিতা ক্যাম্পাসের জন্য। অতীতের বন্ধুদের প্রতি বারবার বলেছি, উদার খোলা মন নিয়ে কবিতা ক্যাম্পাসে লিখতে। তাঁরা লিখতে ভয় পান। তাঁদের কাগজে আমার লেখা তাঁরা প্রকাশ করবেন কিনা সেটা তাঁদের ব্যাপার। কিন্তু কবিতা ক্যাম্পাস তাঁদের সকলকে লেখার জন্য স্বাগত জানায় এখনো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন