মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০২০

লেখক যখন সম্পাদক -- অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়




                                     হয়তো তুমিও আমার সাথে সাথে  

লেখক ও সম্পাদক
অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়

বাংলা কবিতা তার ভবিষ্যত নিয়ে যে ভাষায় আজ কথা বলছে তাতে কবি হিসেবে বা সম্পাদক হিসেবে আমার দেখতে পাওয়া কিছু কিছু পথ হয়তো এরকম হতে পারে

চিরকালই এই ভাবনায় যারা ভাবিত হয়েছেন তারা কোথাও না কোথাও গিয়ে দশকে আটকে
গেছেন কবি আর কবিতাকে চিহ্নিত করেছেন সময়ের কবিতা বলে সময় একটা বিষয়
অবশ্যই কিন্তু কবি আর কবিতা সময়ের কাছে থেমে থাকে না, থাকে না নিজের সৃষ্টিকে সেখানে আটকে রাখতে কবি সব সময় আলোর পথ দেখানদিশা দেখান আর সেই কবিতাই পরবর্তী সময়ের কাছে , বলা ভাল পাঠক আর লেখকের কাছে অমূল্য সম্পদ হয়ে ওঠে আগামীর কবিতাকে আরো আগামীর করে তোলার জন্য সুতরাং দশক কোন বিষয় হয় না কবিতার জন্য কবিতাটাই আসল আর ক্রমান্বয়ে তৈরী হতে থাকা পাঠক



। আগামীর পাঠক কি চান? আগামীর কবি কি লিখবেন? এটাকে কোন ভাবধারায় বেঁধে রাখা যায় না আজ যাকে নতুন বলে চিহ্নিত করছি কাল তাকে আরো আরো নতুনের কাছেনতুনের দিকে পৌঁছে দেওয়াই কবির কাজ কবিতার কাজ আর এটা সবচাইতে ভাল আর পরিকল্পিত ভাবে উপস্থাপন করতে পারেন আমাদের লিটল ম্যাগাজিনগুলিসেক্ষেত্রে সম্পাদকের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অবশ্যই থাকে যিনি কালের কথা মাথায় রেখে তৈরী করে যান একের পর এক কবিতার পান্ডুলিপি কবির ভবিষ্যত আমার মনে হয় বা আমি বিশ্বাস করি লিটল ম্যাগাজিনই একমাত্র পথ যে ভবিষ্যতের কবিতাকে
নিয়ন্ত্রণ করে। চালিত করে আর তার সাথে সাথে গড়ে ওঠে নতুন কবি আর কবিতার ভবিষ্যত

কবিতা আমি কাছে শুধু একান্ত পাঠঅবশ্যই আমাদের কবিতা বিশ্বাসে,ভাবনায় যেখানে
নিজস্ব কবিতা যাপন জড়িয়ে আছে সেখানে প্রতিনিয়ত নিজেকে ডিঙিয়ে যাওয়া বা বলা
ভাল না পছন্দের তালিকাটা বারবার বাড়িয়ে তোলা হয়তো এটা হয়েই যায় নিজ
বসেঅভ্যাসে সেখানে নিজের কথা,নিজস্ব রাজনীতি, নিজের ভালবাসা...সব...সবটাই
ফিরে ফিরে আসে অন্য অন্য ভাবে আপন চেহারায়আমি স্ট্রাকচার টেকনিক শব্দ



ব্যবহার কোনোটাতেই আটকে থাকতে চাই নানিজস্ব সাক্ষর চর্চার মধ্য দিয়েই
একদিন তৈরী হয়ে যায় নিজের অলক্ষ্যেকিন্তু সেটাকে ভেঙে ফেলা দরকার কোন
শব্দই নতুন নয় যদি তার চেহারা নতুন না হয়তার ব্যবহার নতুন না হয় এখানেই এসে
যায় নির্মাণ আর জড়িয়ে যায় মেধাআর অনুশীলন যেকোন মুহুর্ত থেকেই কবিতা তুলে
আনাটাই কবির কাজকবির সৃষ্টিচারপাশের সবটাই আবশ্যকআর নিজের চোখনিজের
সাথে নিজের কথা বলার জায়গাএভাবেই কবিতা একান্তনিজের কবিতার জন্য বহু বহু
একান্ত পাঠনির্মাণ না হলে কবিতা হয় নানির্মাণ আর বিনির্মাণই কবিতার শেষ
কথাকবিতার পরবর্তী ভাবনানিজের প্রতি নিজেকে ক্রমশ পাঠক করে তোলা

যে রূপান্তর আজ বাংলা ভাষায় কবিতার জন্য এসেছে তাকে গ্রহণ করতে হবে তাকে
নিজের করতে হবেতাকে আত্মজ করে তুলতে হবে একে কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না
যে ভাষার পরিবর্তন হবে নাশব্দ ব্রক্ষ্মই থাকবে একটা শব্দের আর অন্য কোন
স্বীকার আমরা করবো না এই সময় এই সময়ের আর্থসামাজিক অবস্থান এই সময়ের
রাজনীতি এই সময়ের মানুষ সবাই তার নিজের নিজের নতুন চেহারায় আমাদের সামনে
উপস্থিত তাকে সামাজিক ভাবে ভালবাসার অংশ হিসেবে যন্ত্রণার কেন্দ্র হিসেবে যদি
গ্রহণ না করি তাহলে কবিতা পিছিয়েই যাবে কবি যা লেখেন তা সব সময়ই নিজের যাপন
থেকেই লিখে থাকেন হয়তো সেখানে স্মৃতি কল্পনা স্বপ্ন সবটাই মিলে মিশে যায় কিন্তু
আসল স্পার্কটা সেই প্রতিদিনের না পাওয়া না বলতে পারার থেকেই উঠে আসে নতুন
কে স্বীকার করা, তাকে লালন করা, তাকে জায়গা দেওয়া...আমাদের দায় আর দায়িত্বের
মধ্যেই পড়েএভাবেই বদলে যাওয়া ভাষা বদলে যাওয়া কবিতা আর কবি এগিয়ে যান
আরো আরো নতুনের দিকে ভবিষ্যতের দিকে। 

ইতিহাসটা যেমন আবশ্যক তেমনি ইতিহাসের থেকে বেরিয়ে যাওয়াটাও ভবিষ্যতের
কবিতার জন্য জরুরী আমি সব মনে রাখব সব পড়ে দেখব সমস্ত কবিতার
আন্দোলনকে মাথায় রেখেই যখন লিখতে যাব বা কাগজ করতে যাব তখন শুধু এটাই ভাবা
দরকার কোথায় লুকিয়ে আছে আমার স্বপ্নের লাইন গুলি কোথায় লুকিয়ে আছে আমাদের
সেই কবিতা যাকে এতদিন আমি খুঁজে বেড়াচ্ছিআমরা খুঁজে ফিরছি এভাবেই আমাদের
আগামী যাপন আর আগামীর কবিতা সন্ধান হয়তো একজন কবিকে, একটা কাগজকে
তার ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে দিতে পারে ভবিষ্যতের একজন করে তুলতে পারে আর
এতে সেই তথাকথিত ইতিহাসের কোন ভূমিকা থাকে নাকারণ ইতিহাস তার নিজের
আদলেই সকলের অলক্ষ্যে তৈরী হতে থাকে

বাংলা কবিতার আধুনিকতাকে মাথায় রেখে একথা বলা যায় যে আমাদের এই
আবহমানতার থেকে বেরিয়ে আসার সময়টা কালের হিসেবে খুব বেশীদিন হয়তো নয়। এটা
অবশ্যই আমার অভিমত কিছু আন্দোলন আর ইস্তাহার এখানে এসেছিল ঠিকই কিন্তু
তার বেশীর ভাগটাই ছিল পাশ্চাত্যের অনুকরণে। যদিও এই আন্দোলন বা ছিটকে যাওয়া

 কবি আর কবিতা ছিল বলেই আমাদের অন্যভাবে কথা বলার সাহস বেড়েছে পাঠক দেখেছেন এভাবেও কবিতা হতে পারেকবিতা সম্ভব সাথে সাথে আরো বলা যায় যে এর
আরেকটা সুফল হল আমাদের আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠার প্রবণতা বাকি পৃথিবীর কবিতার প্রতি আরো বেশী করে আমাদের আকর্ষণ আর তাকে চিনতে পারার চেষ্টা
আর সেই প্রচেষ্টা গুলি নিরলস চালিয়ে গেছে কম বেশি বেশ কিছু লিটল ম্যাগাজিন যাদেরপ্রশ্রয়ে আজ আমাদের কবিতা এইখানে এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে অন্তত এটুকু বলা যায়
...আজ নতুন কবি যেভাষায় কথা বলেন সেই ভাষা কোথাও না কোথাও গিয়ে কবিতারআন্তর্জাতিকতাকেই বারবার প্রমাণ করে

কবি কবিতা যাপন লিটল ম্যাগাজিন কবিতার ভবিষ্যত

লিটল ম্যাগাজিন অবশ্যই একটা নিজস্ব বার্তা পাঠকের কাছে পৌঁছে দেবার চেষ্টা করেআর সেটা সম্পাদক থেকে লেখকের ভাবনায় ভাবিত হবার জায়গা না থাকলে কোনো ভাবেইআগামীর কথা বলতে পারে না কবি নিজেই নিজের হাতিয়ার হয়ে ওঠেন আর এইআন্তর্জালের সময়ে একজন মানুষ যদি চান নিজেকে ভবিষ্যতের একজন করে তুলতেতাহলে সারা পৃথিবীর সমস্ত লেখালেখি তার হাতের মুঠোয়তিনি মুহুর্তের মধ্যে বলেদিতে পারেন কোথায় কি লেখা হচ্ছে বা নিজে সেই প্রেক্ষিতে ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন আন্তর্জাল আজকের কবিতার এক জরুরী বিষয় আর উপকরণওএকে
কোনভাবেই ভবিষ্যতের কবিতা থেকে সরিয়ে রাখা যাবে না এর ফল স্বরূপ আজ বাংলা
কবিতা আরো বেশী করে হয়ে উঠুক আন্তর্জাতিক আবার এটাও ঠিক যে এখানেই শেষ
কথা নয় দরকার সেই যাপন আর ইচ্ছাশক্তি যা কবিকে, একটা কাগজকে আলাদা করে
চিহ্নিত করবেএর জন্য প্রয়োজন নীরবে নিজের পথে চলাআর শান দিতে দিতে নিজের
কথাটুকু বলা বলতে পারার সেই স্বপ্নটাকে বুকেপিঠে আগলে রাখা প্রসঙ্গ সম্পাদক এবং তার নিজের লেখালেখি আর যাপিত অধ্যায়ে ভালমন্দের দোলাচল

২৫বছরের অতিক্রান্ত পথে আজ ২০২০তে এসে ভাবি হয়তো কোথাও না কোথাও গিয়ে
আমার কবিসত্ত্বা কি একটু হলেও বিঘ্নিত হল নাকি এভাবেই চলতে থাকা আমার
প্রাণশক্তি যা হারিয়ে গেলে হয়তো আমার লেখাও হারিয়ে যাবে এই প্রশ্ন নিজেকে
করার চাইতে বরং এভাবে বিষয়টিকে দেখা ভাল কাগজ আছে বলেই আমি এখনো জীবনের
৩ভাগ পার করে এসে এখনো সেই নতুনের সাথে যাকে দেখতে ভালবাসি, পড়তে ভালবাসি,
ভাবতে ভালবাসি নিজের লেখালেখি যদি বিঘ্নিত হয়ে থাকে তবে সেটা নিজের অপারগতা
কিমবা গাফিলতির জন্যই হয়েছেতার জন্য সম্পাদনাকে দোষ দিলে নিজের কাগজকে
প্রকারান্তরে দোষ দেওয়া হয়পাশাপাশি এটাও ভাবি কত কত নতুন লেখা পড়া এবং
ছাপার সৌভাগ্যে আমিও উচ্চারিত হতে পারি চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই সময় আমাকে এগিয়ে
নিয়ে যায় কত কত নতুন দেখতে ভাবতে সাহায্য করে এওতো এক অনন্য পাওনা হয়ে
থেকে যাবে আমার যাপিত অধ্যায়ে

তবে লিটল ম্যাগাজিন একটা আন্দোলন আর এই আন্দোলন করতে গেলে কিছু মানুষকে
একত্র হতেই হয় হাতে হাত ধরে চলার জন্য আজকের পৃথিবীতে এটার বড় অভাব বোধ
হয় এই অভাব ক্রমশ বাড়তেই থাকে আর সাথে কাগজ আর সম্পাদক সেই একলাই
হতে থাকেকেউ নেই একথা বললে মিথ্যে বলা হবে আবার অনেকেই আছে এটাও
বাস্তবে কখনই সত্যি হয় না হল না তবু চলুক যতটুকু আছে ততটুকু নিয়েই আসলে
কাগজ করতে গেলে একটা উৎসর্গ লাগে সেটা সব্বাইকে দিয়ে হয় না কারণ আমরা
শেষ পর্যন্ত মানুষ যতই আদর্শের কথা বলি না কেন এখনো পর্যন্ত লেখক সম্পাদক
বা সম্পাদনায় কোন কারুর সাথে কোন ছেদ আসেনি কারণ আমাদের কাগজের ইস্তাহার
স্পষ্ট যা আমরা উভয়েই মেনে নিয়েছি ভালবেসে নিজের করে

এভাবেই আশা, আমাদের কবিতা আর কবি আর লিটল ম্যাগাজিন উচ্চারণ করবে সেই না
বলা কথাগুলি যারা হয়ে উঠবেন অন্তত একজন কোথাও কোনো পাগল পাঠকের বেঁচে
থাকার শেষ ইচ্ছেটুকুঅন্য কোনো ভবিষ্যতের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিতে নিজের
পান্ডুলিপি তৈরি করতে নিঃশব্দে আর সংগোপনে জয় হোক পাঠকের লেখক সেই
ভালবাসা পাক কাগজ সকলের বিশ্বাস হয়ে উঠুক





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...