শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৯

গল্পে -- প্রলয় নাগ



 আফসার আলির কথা 


আফসার আলির সঙ্গে আমারএকদিন দেখা হয়েছিলআপনারও যে-কোনো দিন দেখা হয়ে যেতে পারে একদুপুরে আফসার আলি আমারবাড়িরদরজায় ঠোকা মারে দেখিএকজোড়া চোখ চশমার ওপর দিয়ে উৎকণ্ঠার সঙ্গে উঁকি মারছে
---দাদাঘর ভাড়া পাওয়া যাবেবাইরে টু-লেট লাগানো দেখছি !
--- যাবে
ভেতরে নিয়ে বসালাম
-       কে থাকবে?
-       আমিআমার স্ত্রী আর দুবছরের মেয়ে
-       আপনি কী করেন?
-       কলেজে পড়াই
-       পার্মানেন্ট?
-       না?...পার্টটাইম
-       আপনার নাম?
-      আফসার আলি
আচ্ছা ফোন নম্বরটা রেখে যান দুএকদিনেইফোন করে জানিয়ে দেব

গল্পটুকু এইটুকুই। এর আগের গল্পে আফসার আলির সঙ্গে যাদের দেখা হয়েছিল তাদের গল্পটা একটু অন্যরকম 
খাওয়া প্রায় শেষের পথে নাজরিন মাংসের গামেলাটা আবার সামনে আনে,
--- শুভেন্দু-দাআরেকটু মাংস দেই?
--- নানাঅত খেতেই পারবো না বৌদি!
--- আরেএকটুখানি দেই?
নাজরিন হাতাতে মাংস তুলে শুভেন্দুর থালার সামনে অপেক্ষামাণ  শুভেন্দু দু'হাত দিয়ে থালা ঢেকে রেখেছেনা না এক পিসও না
--- আরে পারবে দাও তো..! আফসারও জোরাজুরি শুরু করে
-- নাবৌদি এক পিসও না মুকুন্দকে দাও ও মাংস খুব ভালোবাসে।
-- আচ্ছাআমার একটা অনুরোধএক পিস নাওআর জোর করব না
শুভেন্দু নিরুপায় নাজরিন এক পিসের জায়গায় তিন পিস ঢেলে দিল শুভেন্দুর মুখেইস,বৌদি কী যে করেন, খেতে পারব না!
তারপর মুকুন্দ, মিহির সকলকেই আবার পুনরায় বাটি ভর্তি করে মাংস দিল।এরপর এল ক্ষীর দইরসগোল্লা আলিপুরদুয়ার থেকে স্পেশালি আনিয়েছে---সে এক জমপেশ খাওয়া দাওয়ার আয়োজনমিহির মাংসের হাড়ের ভেতর তরলটুকু চুষতে চুষতে বলেআফসার-দা মাঝে মাঝে এভাবে  আমাদের নেমতন্ন করে খায়িও!
এরপরখাওয়া-দাওয়ার পাট চুকে গেলে আফসারের কলিগ-অতিথিরা বিদেয় হ

আফসার আলির আজ তৃতীয় বিবাহ বার্ষিকী তেমন কাওকেই নেমতন্ন করেনি কেবল কলেজের এই তিন সহকর্মীকে ছাড়া ভাড়াটে বাড়ির মালিককে বলেছিল মালিক-মালকিন এসেছিলেন উপহার নিয়ে খেয়ে-দেয়ে আশীর্বাদ করে পান চিবোতে চিবোতে আবার উপরে উঠে গেছেন
আফসার আলির বয়স বত্রিশস্ত্রী নাজরিনের পঁচিশ-ছাব্বিস হতে পারে কলেজের সমাজবিদ্যার চুক্তিভিত্তিক অধ্যাপক মাইনে কুঁড়ি হাজার কিংবা তার কিছু অধিক পাঁচ বছর ধরে এই বাড়ির ভাড়াটে তবে এই শহরটার সঙ্গে সম্পর্ক অনেক দিনের শহর থেকেই মফসসলের কলেজে পড়াতে যায় স্ত্রী সারাদিন একা থাকে দু'বছরের কন্যাকে নিয়েমাঝে স্কুল সার্ভিসের প্রস্তুতি নেয়।
নিচতলার দু'কামড়ার ঘরের হাজার তিনেক টাকা ভাড়া দেয় আজ ঘরটি সুন্দর করে সাজিয়েছে রঙিন আলো বেলুন আর খাটের চার কোণায় ঝুলিয়ে দিয়েছে রজনীগন্ধা স্ত্রীর জন্য পছন্দ করে শাড়ি এনেছেমেয়ের জন্য দু'সেট জামা প্যান্ট  নাজরিন আজ নিজে-কে সাজিয়েছেশরীরে মেখেছে সুগন্ধী যতই হোক আজ বিশেষ দিন বলে কথা!  আফসার আলী এসবের মধ্যেই স্ত্রীকে খুশি রাখতে চেষ্টা করেবিয়ে আগে দেওয়া কথাগুলো রাখতে চেষ্টা করে ফুটফুটেমেয়েটিকে আদর

সাত সকালে আফসার আলির দরজায় ঘা পড়ল ‘আফসারআফসার’? বাইরে থেকে বাড়ির মালিকের ডাক আফসারের ঘুম ভেঙেছে অনেক আগেই  বিছানায় শুয়ে শুয়েই গতরাতে আপলোড করা হোয়াটস অ্যাপ স্টেটাসের রিপ্লাই গুলো দেখছিল 
দরজার ছিটকিনি খুলতেই সূর্যের কিরণ তার মুখে ওপর এসে পড়ল বেশ বেলা হয়ে গেছে ‘শোন আফসারঘরটা ছেড়ে দিতে হবে দুদিনের মধ্যে!’
আফসার এই কথাটি শোনার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলনা কী বলবে সেটা গুছিয়ে ওঠার আগে বাড়ির মালিক আবার বলল ‘দুদিনের মধ্যে একটা বাড়ি দেখেনা ও!’ বাড়ির মালিক আবার সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল
আফসার এই কথা শুনতে যেমন প্রস্তুত ছিলনাতেমনি হ্যাঁ বা না বলার মতো তার কাছে কিছু ছিলনাগতকাল রাত পর্যন্ত তো সব ঠিক ছিল হঠাৎ মালিক কেন ঘর ছাড়তে বলছে?---এসবের অনুসন্ধানে লেগেছে নাই-নাই করে পাঁচ বছর এই বাড়িতেএই শহরেতো বারো চোদ্দ বছর হবেই কোনো দিন ভাড়া নিয়েও কোনো গোল বাঁধেনিতবে হঠাৎ কেন উঠে যেতে হবেএসব ভাবতে ভাবতে টুথব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে আফসার বাথরুমে ঢুকে পড়লতারপর কমোডের ওপর বসে অনুসন্ধান শুরু করল কিছুটা পেস্ট মিশ্রিত থু-থু ফেলল তারপর আবার কার্যকারণ খোঁজা শুরু কারণ খুঁজতে খুঁজতে সে ঢুকে পড়ল ক্ষীণ আলোর গলিতে সেখানেএকদল লোক জমা হয়েছে একটি লোক মাইকে চিৎকার করে করে কিছু বলছেমুহুর্মুহু হাততালি পড়ছে আফসার শুধু আধোআধো শুনতে পায়একটারেও রাখমুনাসব তাড়ামু এইবার শুধু আসতে দেন!’ লোকটা যে-দলে হয়েগলা ফাটাচ্ছিলতারাই তো কিছুদিনপরেইআবার ফিরে আসে ক্ষমতায়উল্লাসে ফেটেপড়েছিল আকাশ-বাতাস-নদী-নর্দমা--সবকিছু আফসার লোকটার মুখটা মনে করার চেষ্টা করে মুখ-টা খুব চেনা কিন্তু চেনা নয় এপাড়াতেই কিওর বাড়িআফসার কমোডের সুইচটি টিপে দেয়সমস্ত কিছু ধুয়ে সাফ হয়ে যায়
কলেজ  টিউশন পড়িয়ে আফসার বাড়িফিরে নিজের ঘরেনা-ঢুকে সোজা ওপরে উঠে গেল মালিকের দরজায় ঠোকা মারতেই ভেতর থেকে ছিটকিনি খোলার শব্দ তারপর দরজা হাঁ-হয়ে ভেতরে যাবার ইশারাআফসার লাল সোফায় বসে ব্যাগটি নামিয়ে রাখে পাশে  মালিক এসে বসে অন্য একটি সোফায়  আফসার কোনো রকম ভনিতানা-করেই বলল,
--দাদাবলুনতো…….!
আফসারের মুখের কথাটা কেড়ে নিয়ে মালিক বললআফসার আমি সব জানি সব বুঝিওরা না-হলে আমার চলাফেরা বন্ধ করে দেবেআমার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে
--- ওরা কারাআফসার জানতে চায়
--- ওরা তোমার আমার মতোই কতগুলো মানুষ!
আফসার কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে , তারপর উঠে আসে শুধু বলে আসেঠিক আছে!

গল্পটা কিন্তু এখানেই শেষ হতে পারত কিন্তু শেষ হল নাআফসার আলির গল্পটা চলতেই থাকলআমি পরদিন চিরকুট থেকে আফসার আলির নম্বরটা ডায়েল করি আমার কথার জবারে ওপাশ থেকে আফসার শুধু বলেঠিকআছে!এরপর থেকে আফসার আলির সঙ্গে রোজ দেখা হয়মাঝে মাঝেই একসাথে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিইবাড়িতে বাৎসরিক পুজা হলেআফসার আলিকে ডেকে বলি : ‘চলো আফসারপ্রতিমাটা একটু ধরতে হবে একা পারবো না'



২টি মন্তব্য:

  1. এরপর থেকে আফসার আলির সঙ্গে রোজ দেখা হয়, মাঝে মাঝেই একসাথে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিই, বাড়িতে বাৎসরিক পুজা হলে, আফসার আলিকে ডেকে বলি : ‘চলো আফসার, প্রতিমাটা একটু ধরতে হবে। একা পারবো না।
    অসাধারণ ❤
    পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় থাকলাম দাদা।

    উত্তরমুছুন

উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বনিক

  উৎসব সংখ্যা -২০২৩ প্রচ্ছদ শিল্পী - রিন্টু কার্যী সম্পাদক- শৌভিক বণিক উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন, একদম হাতে গোনা।  আর উৎসব  সংখ্যা ছাড়া উৎ...