আবৃত্তি
অনেকদিন আপনার সাথে কথাটুকু বলতে পারিনি। কারণে অকারণে কেমন যেন কেমন যেন সূর্যের গতিবেগ পরিবর্তন হয়েছে বলেই বিশ্বাস করি। নইলে রোজ মার গালমন্দ আওয়াজ শুনে ঘুম ভাঙায় সজাগ লাগে? বোধকরি আবার একটাদিন। তবে একতদিনে বহুবার আপনাকে চিঠি লিখতে বসেছি। একথা মিথ্যে নয়। তবে কালির আঁচর গুলির ওপর প্রবাহমান গঙ্গা বয়ে গেলে শব্দসংখ্যা হ্রান্স পাবেই। আমারও তাই হয়েছে। পেট থেকে মাথার আনাচে কানাচে কোথাও নিঙড়ে শব্দ বের করতে পারিনা। তাই আমার অপরাধের জন্য আপনি শহরের যেখানে যেখানে পদধূলি ফেলিয়া গেছেন সেগুলি কুরিয়ে ক্ষমা ভিক্ষা চাইছি। এছাড়া আপনাকে তো সামনে পাইবার উপায় নেই।
যাই হোক, নিশ্চিত করি আপনার হাসিটা বহাল আছে। অবশ্যই আপনি নিজেই নিজের কর্তা; আপনার খুশি বা দুঃখ সুদর্শনচক্রের মতো আপনার নির্দেশ অনুযায়ী চালিত।
গত রোববার এক অনুষ্ঠানে গেছিলাম। অনুষ্ঠানটি ছিল ১৯ শে মে ভাষা শহীদের নিয়ে। অনুষ্ঠান কর্মী ও উপস্থিত গুণীজনেরা যথেষ্ঠ সম্মান দিয়েছেন। বরণও করেছেন। ঠিক সে সময় নিজেকে পঞ্চপাণ্ডবের ভীম গোছের মনে হচ্ছিল। শরীরটা কেমন জানি ফোলা ফোলা, জামা ছিঁড়ে যাবার মতো অভিপ্রায়। আপনি ভীমের পূর্বে ‘ছোটা’ শব্দটিও ব্যবহারও করতে পারেন। কিন্তু অনুষ্ঠানটির আড়াইঘণ্টা অতিক্রান্ত হয়ে যাবার পরও তিনজন বক্তব্য রাখলেন। দেখলাম তাহারা বক্তব্যের শুরুতে আমার উপস্থিতি উল্লেখ করছেন তবে তিনজন সর্বাঙ্গিন ভাষণে তীর্যক তীরটা আমার দিকেই রাখলেন। নিজেকে তখন আমসি ভাইপোর মতো নায়ক না ভিলেন চরিত্রটা দেব ঠাহর হচ্ছিল না। কারণ ভাষা দিবসে ভাষা নিয়ে বি.জে.পি না হয় এল বাঙালির এন.আর.সির জন্যে। কিন্তু লিটল ম্যাগাজিন মেলা, সম্পাদক তন্ময়ের ভাষা লইয়া কি কাম? তাহা নির্দেশ করিয়া কেহ বলিল না। যাই হোক মানুষ বড্ড বুদ্ধিজীবি বটে আমি সার্থজীবি। তাই উপস্থিতির সার্থে মিস্টির প্যাকেট নিয়ে বেড়িয়ে পড়লুম।
পরেরদিন একবন্ধু হলদিবাড়ি থেকে মালদা এল। রাতে ট্রেন কলকাতা যাওয়ার কথা। সারাদিন ঘরে বন্দি থাকার পর সন্ধেবেলা ঘরে এসে ওকে বেড়লাম রাত ১২টাই ট্রেন। ঘুরে তো আসি। ঘোরার পথে খাদ্য মেটের চচ্চরি, তরকা, তন্দুরি নিয়ে বসিলাম পুলিশ ক্লাবের একদম আকাশের কোনে। এক পুলিশ কর্তা, আমি এবং বন্ধুটি। খাদ্য এবং ভালোখাদ্য সহযোগে খাওয়া শুরু হল। পুলিশদাদা বন্ধুটিকে বলছেন, বোম তুমি নিচে কী দেখতে পাচ্ছ? বন্ধুটি বলে, সি.পি.এম এর পার্টি অফিস। - আরে না না, ওটা হনুমান পতাকা। বন্ধুটি বলে, আপনি মহান দাদা। এত সুন্দর জায়গা, এত বাতাস, আর বসে রয়েছি মন্দির দর্শনের পাশেই। জয় শ্রীরাম। আমি বললাম, সেদ্ধ ও ভেদ্য লয়ে জয় রাম। বন্ধুটির সময় হয়ে আসছে ট্রেন ধরার, পুলিশবাবু বলছেন, স্টেশন এইতো এখান থেকে দেখছে তোমায়। তন্ময় বাতাসে পৌঁছে দেবে, চিন্তা করনা। মনযোগ দাও মাংস এবং রামে। মন্দিরে।
বাতাসের গায়ে গায়ে স্টেশন পৌঁছে দেখি ট্রেনটি বন্ধুর অনুরাগ অভিমানে কাতর হইয়া ছাড়িয়া গেল। পিছু চাহিলনা। আমার আর বন্ধুটিকে কোনো চরিত্রে নাম দেওয়া হলনা। তবে পুলিশকর্তা ব্যবস্থা করিয়াছেন, এ.সি ছাড়িয়া স্লিপার। এসব কিছুনা, শব্দের অবনতি ঘটালে সে শব্দের অশ্লিলতার দোষে সব রাজনৈতিক শিষ্য ও পোষ্যদের পড়বেই । মাংস এবং রাম।
গতপরশু এক গ্রামে গেছিলাম। সিমেন্ট বেঁচতে। আসলে কংক্রিট দিয়ে সভ্যতা ঘটাতে। শহর ভিজিয়ে দেব যাবতীয় গ্রাম্য রঙ। জায়গাটি প্রচণ্ডদূর। শহর থেকে প্রায় ৩০/৩৫ কি.মি । যে পথ থেকে নামলাম গ্রামের উদ্দেশ্যে সেখান থেকে গন্তব্য শুধুই ফাঁকা। লোকহীন। ভিন্ন রকমের গাছ, প্রচন্ড রোদ, ফুল, মাঝেমাঝে তাড়ির বৈঠক।
ছায়াবিহীন একরোদের কাছে দাঁড়ালাম। কতটা ভিজিয়ে তুলতে পারে আমায়। জিভটা আগলে রাখলাম। যেমন ভাবে বৃষ্টির কাছে এলিয়ে রাখি এবং জিভের উপর এক এক ফোটা আঘাত পাই ঠিক তেমন। স্বজোড়ে জিভ উষ্ণ হয়ে উঠছে। ভিজিয়ে ফেলছে আপাদমস্তক। বৃষ্টি অথবা রোদ দুজনেই আমার কাছে নারী। আসলে নারী বা পুরুষ এসব একপ্রকার আদল এবং কর্মের ওপর নির্ভর। কখনও একটা শরীর পুরুষালী কাজ করে কখনো নারী সুলভ। শরীরগত পার্থক্য থাকলেও কর্মগত পার্থক্য নেয়। আমরা যখন যে সুলভে কাজে থাকি, সে চরিত্র বহন করি। যাইহোক সেই রোদ আমায় আষ্টে পৃষ্ঠে কামড়ে ধরার চেষ্টা করল। চেষ্টা চলছিল কে কাকে নারী করে তুলবে আমি নাকি রোদ! রোদেরো এক প্রকার গন্ধ রয়েছে। নিংড়ে নেওয়ার ক্ষমতা দুজনেরই আছে। শুধু একজন আরেকজনের ছেড়ে রাখতে হয়। সময় ফুড়িয়ে যাচ্ছে চললুম গন্তব্যে। পৌঁছালাম এমন এক জায়গায় যেখানে হাঁট বা বড়ো বাজার। কিন্তু এতবড়ো বাজারটাকে ঢেকে রেখেছে একখান বটগাছ। আর গাছটির ডালপালা যেখানে শেষ হয়েছে যেখানে সেখানে গোল করে সমস্ত দোকানি। এককোন থেকেও আকাশ দেখা যায়না। এক পুরুষালী লড়াই জিতে পৌঁছালাম আরেক পুরুষ লড়াইয়ের কাছে। গাছটি বলছে, আমি বেটা ছেলে, আমার স্তম্ভ। কী করে হয় বলুন? যে দাঁতাল সূর্য থেকে মেয়ে মানুষের মতো আঁচলে ঢেকে রেখেছে তাকে মা বা মেয়ের রূপ ছাড়া কিইবা দিই? যুদ্ধ আমার চলবেই, আমার কাস্টোমার টাকার ব্যাগ নিয়ে হাজির, সমস্ত আবেগ চেতনা থেকে বিসর্জন করে ব্যবসায়ী প্রমান করতে হবে নিজেকে। যথাযথ ব্যাগ ও নতুন কাস্টমার ধরে ফিরলাম শহরের মেজাজে।
কতদিন এভাবে নিজেকে রাখি শব্দের ডগায়। আমরা তো প্রতি মুহূর্তে এক শূন্যতার খোঁজ করি, তাই লুকিয়ে রাখতে রাখতে আপনার ভাষায় মিলিয়ে ফেললাম নিজেকে।
রাখি
একমেজাজ
২২-০৫-২০১৯
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন